কয়েকদিন ধরে শ্রাবণী একটা বিষয় লক্ষ্য করছে। আজ তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুম থেকে শ্রাবণী বের হয়ে পিয়াসকে ফোন দিলো। বেশ কয়েকবার রিং হলো কিন্তু পিয়াস ফোন রিসিভ করলো না। তাই ছোট করে একটা এসএমএস দিয়ে শ্রাবণী অপেক্ষা করতে লাগলো পিয়াসের ফোনের জন্য। ঘন্টা দুয়েক পর পিয়াস ফোন দিতেই শ্রাবণী ফোন সাথে সাথেই রিসিভ করে বললো,
-পিয়াস, আমার পিরিয়ড হচ্ছে না পিয়াস অবাক হয়ে বললো,
— ঠিক বুঝলাম না শ্রাবণী বললো,
– মেয়েদের যে প্রতিমাসে মাসিক হয় সেটা আমার হচ্ছে না। শ্রাবণীর এই কথা শুনে পিয়াস বললো,
— হয়তো কোন সমস্যা হয়েছে তাই এই মাসে হয় নি।
– পিয়াস, আমার দুইমাস ধরে পিরিয়ড হচ্ছে না।
— মানে? এইবার শ্রাবণী কিছুটা রেগে গিয়ে বললো,
– আমি যে প্রেগন্যান্ট তুমি কি সেই মানেটা বুঝতে পারছো না?
শ্রাবণীর কথা শুনে পিয়াস কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলো। শ্রাবণী বার বার পিয়াসকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু পিয়াসের সেই দিকে খেয়াল নেই কারণ পিয়াসের মাথায় তখন হাজারটা চিন্তা ঘুরে বেড়াচ্ছে কয়েকদিন পর পিয়াস আর শ্রাবণী ক্লিনিকের একটা কোণায় বসে আছে। পিয়াস ফোনের দিকে তাকিয়ে ফোন টিপছে আর শ্রাবণী ওর সাদা ওড়না দিয়ে বারবার চোখের জল মুছছে। বারবার কাজল দেওয়া চোখের জল মুছার জন্য সাদা ওড়নার মাঝে কালো কালো দাগ লেগে গেছে। শ্রাবণী পিয়াসের হাতটা ধরে বললো,
– পিয়াস প্লিজ আমি বাচ্চাটা নষ্ট করতে চাই না। আমি জানি আমাদের সম্পর্কটা আমাদের দুই পরিবার মেনে নিবে। তাহলে শুধু শুধু কেন আমরা আমাদের প্রথম সন্তানটাকে মেরে ফেলবো? পিয়াস বিরক্ত হয়ে শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে বললো,
— তোমায় বারবার না করার পরেও তুমি কেন এই কথাটা আবার বলছো? দেখো এখনো আমার পড়াশোনা শেষ হয় নি। পড়াশোনা শেষ করবো তারপর নিজে কিছু করবো তারপর কিছু সময় নিয়ে বিয়ে করবো। এই মুহুর্তে আমি সংসার আর সন্তাদের দ্বায়িত্ব নিতে পারবো না। শ্রাবণী রেগে গিয়ে বললো,
– সব কিছু যখন সময় নিয়ে করবে তাহলে শারীরিক ক্ষুধাটাও পরে সময় নিয়ে মিটাতে। আমি তো আর এমনি এমনি প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় নি। দিনের পর দিন আমার ভালোবাসা প্রমাণ করার জন্য তোমার খালি ফ্ল্যাটে পড়ে রয়েছি…
শ্রাবণীর রাগ দেখে পিয়াস আরো রেগে গিয়ে বললো,
— আমি ভালো ছেলে দেখেই কয়েক বছর পরে হলেও তোমায় বিয়ে করবো। যদি অন্য ছেলেদের মত হতাম তাহলে অস্বীকার করতাম যে তোমার পেঠের বাচ্চা আমার না।
শ্রাবণী অবাক হয়ে পিয়াসের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। কালো ফ্রেমের সাদা চশমার আড়ালে মায়াবী চোখগুলো দেখে শ্রাবণী পিয়াসের প্রেমে পড়েছিলো। এটাই কি সেই পিয়াস যে পিয়াসকে শ্রাবণী নিজের চেয়েও বেশি ভালোবেসে ছিলো। মুহূর্তের মাঝে পিয়াসকে খুব অচেনা মনে হচ্ছে। পিয়াস যখন টান দিয়ে হাতটা সরিয়ে ফেলে তখন শ্রাবণীর পিয়াসের হাতের কাটা দাগটা চোখে পড়লো। শ্রাবণী যখন পিয়াসের সাথে শারিরীক সম্পর্ক করতে রাজি হচ্ছিলো না তখন পিয়াস ওর হাতটা কেটে ফেলে। পিয়াসের রক্তাক্ত হাত দেখে নিজের ভালোবাসা প্রমাণ করার জন্য সে শারীরিক সম্পর্ক করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলো পিয়াস আর শ্রাবণীর বিয়ে হয়েছে ৪ বছর হলো। বিয়ের ৩ বছরের পর থেকে শ্রাবণী চেষ্টা করছে কনসিভ করতে কিন্তু হচ্ছে না। রাতে যখন সবাই মিলে একসাথে খাচ্ছিলো তখন পিয়াসের মা পিয়াসকে বললো,
~ এইভাবে আর কত দিন। আমারও তো ইচ্ছে হয় নাতী নাতনির মুখ দেখতে না কি? কি এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করলি যার বাচ্চা দেওয়ার ক্ষমতা নাই। পিয়াসের নিরব থাকা দেখে শ্রাবণী খাবার রেখেই উঠে গেলো। আর পিয়াসের মা তখন শ্রাবণীকে শুনিয়ে শুনিয়ে চিৎকার করে বললো,
~ পেঠে সন্তান ধারণ করার ক্ষমতা নাই আর শরীর ভরা তেজ শ্রাবণীকে এইসব কথা প্রতিনিয়তই শুনতে হয়। কিন্তু শ্রাবণী কোন জবাব দিতে পারে না। শুধু পিয়াসের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে পিয়াসের জবারের আশায়। কিন্তু পিয়াস কোন জবাব না দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে এই মুহূর্তে পিয়াস আর শ্রাবণী ডাক্তারের সামনে বসে আছে। ডাক্তার রোমানা হক রিপোর্ট গুলো ভালো করে দেখে শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে বললো,
~ একটা কথা বলি কিছু মনে করেন না যে। আপনি কি কোন কারণে এবরশন করে ছিলেন? শ্রাবণী কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো। পাশে বসে থাকা পিয়াস বললো,
— হে করেছিলো ডাক্তার রোমানা হক বললো,
~ এবরশন করানোর সময় কিছু সমস্যা হয়েছিলো আর এজন্যই আপনার স্ত্রী কখনো মা হতে পারবে না।
কথাটা শুনে শ্রাবণী বিন্দু পরিমাণ অবাক হয় নি কারণ ওটা ওর প্রাপ্য ছিলো। রাতে যখন শ্রাবণী বিছানার একপাশে শুয়ে ছিলো তখন পিয়াস শ্রাবণীর পাশে এসে বসলো। তারপর মাথাটা নিচু করে শ্রাবণীকে বললো,
— তুমি কি আমার সাথে থাকবে না কি ডিভোর্স দিবে আমায়? শ্রাবণী অবাক হয়ে বললো,
– মানে কি? পিয়াস বললো,
— সব ছেলেরি বাবা হওয়ার ইচ্ছে আছে। তুমি যেহেতু মা হতেই পারবে না সেহেতু আমাকে অন্য একটা বিয়ে করতেই হবে। কারণ আমার বাবা হতে হবে শ্রাবণী মুচকি হেসে বললো,
– আজকে আমার মা হতে না পারার পেছনে কে দায়ী বলো তো? শ্রাবণীর কথা শুনে পিয়াস চুপ করে রইলো। শ্রাবণী আবার হেসে বললো,
– আজ বাবা হতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে দিন সেই ইচ্ছেটা কোথায় ছিলো? সব ছেলেদের বাবা হতে ইচ্ছে করে কিন্তু মেয়েদের কি মা হতে ইচ্ছে করে না? শ্রাবণী এইবার পিয়াসের চোখে চোখ রেখে বললো,
– আমার জীবনের প্রথম ভুল ছিলো তোমার কালো ফ্রেমের সাদা চশমার আড়ালে লোভী চোখ গুলোকে মায়াবী ভেবে ভুল করেছিলাম
দ্বিতীয় ভুল হলো, ভালোবাসার প্রমাণ দিতে গিয়ে নিজের সতীত্ব তোমার কাছে বিসর্জন দিয়েছিলাম অথচ আমার বুঝা উচিত ছিলো সে সম্পর্কে শারীরিক ক্ষুধা মেটানোর প্রয়াস থাকে সেটা আর যায় হোক ভালোবাসা না। আমার তৃতীয় ভুলটা ছিলো, তোমার কথায় বাধ্য হয়ে নিষ্পাপ একটা প্রাণ কে মেরে ফেলা অথচ আমার বুঝা উচিৎ ছিলো একটা খুনী কখনো ভালো মানুষ হতে পারে না। আর আমার চতুর্থ আর সবচেয়ে বড় ভুলটা ছিলো এতকিছুর পরেও তোমার মত অমানুষের সাথে আমি এতগুলো বছর একসাথে ছিলাম।
কিছু মনে করো না পিয়াস তোমার যেমন আজ ইচ্ছে করছে বাবা হতে তেমনি আমারও আজ ইচ্ছে করছে তোমার মুখে থুতু দিতে সেই রাতেই শ্রাবণী পিয়াসের মুখে থুতু দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় দেড় বছর পর অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বের হয়ে পিয়াসকে মুচকি হেসে বললো, আপনি ছেলের বাবা হয়েছেন। পিয়াস সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানকে কোলে নিয়ে ওর কপালে চুমু খেলো। আর ফ্যানে ঝুলে থাকা শ্রাবণীর লাশটার সাথে পুলিশ একটা চিরকুট পেলো আর তাতে লেখা ছিলো, আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। আমি আমার কর্মফল ভোগ করেছি…
বিঃদ্রঃ- আজ তুমি যার কথায় ভুল করছো কাল দেখবে দিন শেষে সে সুখে আছে আর তোমার প্রাণ বিহীন নিথর দেহটা ফ্যানের সাথে ঝুলছে