অদৃশ্য বন্ধু

অদৃশ্য বন্ধু

গ্রামের নাম সুলতানপুর ৷ নামের মতই এক প্রকার সুলতানীত্ব বিরাজ করে গ্রামটির মধ্যে ৷ যত দূর চোখ যায় চারদিকে

সবুজ লাবন্য ঘেরা ফসলের জমি অার জমি ৷ একে বেকে বয়ে চলে গ্রামের পথ ৷ অার রাস্তার দুপাশ দিয়ে পাহারাদার হয়ে

দাড়িয়ে অাছে সরি সরি অশংক মেহগুনি গাছ ৷ গ্রামের দুপাশ বেয়ে বয়ে চলে ছোট ছোট দুটি নদী ৷ গ্রামের মানুষের প্রাদান

ও সখের পছন্দের কাজ হল মাছ ধরা অার ফসলের জমি চাষাবাদ করা ৷ গায়েঁর পথ ধরে চলতে গেলে এক অন্য রকম অনুভূতির

কাজ করে মনে মধ্যে ৷ কিছির মিছির কন্ঠে পাঁখির গুনগুনি করা গান ৷ হলে হলে বয়ে যাওয়া মিষ্টি বাতাস এবং চারদিকে সবুজ

শ্যামল ছায়া ঘেরা পটভূমি এসব মিলিয়ে সত্যিই এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে মনে ৷ এই রকম প্রাকৃতিক প্রতিকূলে

বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের দুই তরুণ যুবক কে নিয়েই অামার অাজকের এই গল্প টা শুরু করতে যাচ্ছি ৷ ইমন অার রেহান ৷

সম্পর্কে তারা চাচাতো জেটাতো ভাই ৷ ইমন রেহানের চেয়ে প্রায় ছয় মাসের বড় ৷ সম বয়সীও ধরতে পারেন তাদের ৷

গ্রামের ছোট বড় সকলের মুখে মুখে এই দুই জনের নাম ৷ কারণ রেহানের একটা অন্য ধরণের গুণের অধিকারি ৷

পারিবারিক কারণে রেহানে এস এস সি পাশ টা করা হল না ৷ দশম শ্রেনী হতেই তাকে লেখাপড়া ছাড়তে হয় ৷

অাপনাদের গুণের কথা বললাম না তা হল রেহান অল্প শিক্ষিত হলেও সে যেকোনো সমস্যা খুব সুন্দর করে সমাদান দিতে পারে ৷

মানে তার অপূর্ব পরিচালনা করার ক্ষমতা অাছে তার ৷ অপরদিকে ইমন বিবিএস ফাইনাল পরীক্ষার ছাত্র ৷ তাও অাবার একাউন্টিং এর ৷

রেহান পরিচালনায় অার ইমন হিসাব কিতাবে নিপুন ৷ তাই গ্রামের যেকোনো ছোট বড় অনুষ্ঠান বা সমস্যা হোক তাদের পরার্মশ

খুবই গুরুত্ব দেয় গ্রামের ছোট বড় সকলেই ৷ খুবই হাসি খুঁশি নিয়ে সবার সাথে কথা বলে তারা তাই তাদের নাম সবার মুখে মুখে শোভা পাই ৷

এসব এর পাশাপাশি খেলাধুলা ও হাসি টাট্টা মজা দুষ্টুমি দিয়েও খুব জনপ্রিয় ছিল তারা দুই জন বন্ধুদের মাঝে ৷

প্রাকৃতির কোলে এভাবে খেলতে খেলতে দিন কাটচ্ছিল তাদের ৷ কালের বির্বতনে সময়ের পিছু টানে জীর্বিকা নির্বাহের প্রচেষ্টায়

তাদের পৃথক করে দেয় ৷ কিন্তু অন্তরের অন্তস্থল হতে ৷ ইমন এখন একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে একাউন্ট ম্যানাজার পদে কাজ

করে অার রেহান শহরের কোন এক বড় কাপড়ের দোকানে ভাল বেতনে সেল ম্যান এর চাকরি করে ৷ তারপরে তাদের বন্ধুত্বের

কিংচিত পরিমান পরিবর্তন হয় নি ৷ তবে হ্যাঁ যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে তাদের বন্ধুত্বও অাপডেইট হয়েছে ৷ এখন তাদের

বন্ধুত্বের প্রতিছব্বি হয়ে Whatsapps, Facebook, IMO, Viber সক্ষী হয়ে অাছে ৷ এগুলোর মধ্যেই তাদের বন্ধুত্বের চিত্র ফুটে উঠে ৷

শত কাজের ব্যাস্ততার ফাকেঁ তাদের কথা হয় প্রতিনিয়ত ৷ ছুটির দিনগুলোতে তারা তাদের পুরুনো ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করে ৷

ছুটি দিনগুলো খুব জমিয়ে কাটাতে পছন্দ করত তারা ৷ এভাবে কাটে গেল অারো কয়েকটা বছর ৷ খুব মজাক মাস্তি অানন্দ দুষ্টুমিতে

বলতে গেলে সুখে কাটছিল তাদের দিন গুলো ৷ কিন্তু প্রকৃতির এক নিষ্ঠুর নিয়ম সুখের দিনগুলো বেশি দিন থাকে না অার সুখ

কখনো একা অাসে না ৷ সুখের পিছনে লুকিয়ে থাকে কষ্টের কালো প্রতিছব্বি ৷ তারা এটা ভুলে গিয়েছিল ৷ দুঃখে কালো মেঘ

যে তাদের জীবনে ঘনিয়ে অাসছে তা সম্পর্কে তারা অজ্ঞ ছিল ৷ দুঃখের কাল বৈশাখী ঝড় তাদের দিকে তেড়ে অাসছিল সেটার

জন্য তারা মুটেও প্রস্তুত ছিল না ৷ সময়টা ছিল গ্রীষ্মকাল ৷ চারদিকে গ্রীষ্মের ছুটি চলছে ৷ দুই বন্ধুও তাদের কাজ হতে অবসর নিয়ে

গ্রামে এসেছে গ্রীষ্মের ছুটি অন্যান্য বন্ধুদের সাথে পুরুনো ঐতিহ্য রুপে পালন করতে ৷ দিনটা ছিল সম্ভবত শুক্রুবার কোনো

এক ছায়াঘেরা শান্তিপূর্ণ বসার জায়গা বৈঠকখানায় অন্যান্য বন্ধুদের সাথে অাড্ডায় জমে ছিল দুই বন্ধু ৷ এমন সময় পথ দিয়ে

তাদের সমবয়সী কোনো এক তরুনের অাগমন ঘটতেছে ৷ চেহেরা টা দুই বন্ধুর কাছে নতুন ৷ তারা অাগে এই চেহেরা টা কোথাও

দৃষ্টিপাত করে নি ৷ এমতবস্থায় জানার উদ্দেশ্যে রেহান তার অন্য এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলো দুস্ত মালটা কে রে ?? তখন তার

ঐ বন্ধু অাগমনকৃত তরুনের সম্পর্কে বনর্না দিতে লাগলো ৷ দুস্ত মালটার নাম তামিম ৷ অামাদের গ্রামে নতুন এসেছে ৷

কোনো এক পাঁকা দেওয়ালের দিকে ইশারা করে বললো ঐ ঘরটাতে থাকে ৷ নিরবতা ভেঙ্গে এবার রেহান অাবার সুর তুলল ৷

রেগিং করার উদ্দেশ্যে বলল দুস্ত নতুন যখন অাসছে তাহলে তো তাকে গ্রামের রীতি নীতি ও নিয়ম কানুন শিখাতে হবে ৷

কি বলিস ইমন ?? ইমনও হুমমমম বলে সম্মতির প্রকাশ দেয় ৷ অন্যরাও এই দুই বন্ধুর মতের উপর এক মত হয়ে সম্মতির প্রকাশ করে ৷

অার সাথে সাথে হা হা হা হা হা হা করে সবার মুখ হতে এক অদ্ভুত হাসি বেরিয়ে এসে হাওয়ার সাথে মিলিয়ে গেল ৷

এতক্ষনে সমালোচিত তরুনের পর্দাপণ ঘটে বৈঠকখানায় ৷ সবার সাথে সালাম ও হ্যান্ডশেক করে পরিচিত হল তামিম ৷

পরিচয় পর্ব শেষ হতে না হতে রেহান বললো চল মামারা চটপটি খেয়ে অাসি এই বলে তামিম কে সহ সবাইকে সাথে নিয়ে

চটপটির দোকান গিয়ে চটপটি খেল সবাই ৷ খাওয়া শেষে রেগিং এর উদ্দেশ্যে রেহান বললো অাজ অামাদের সব বিল

অামাদের নতুন বন্ধু দিবে বলে বিলটা তামিম এর হাতে ধরিয়ে দিয়ে সবাই চলে অাসলো ৷ তামিমও কিছু বলতে পারলো না হয়তো বন্ধুত্বে স্বার্থে ৷

তখন কিন্তু তামিমের কাছে টাঁকা ছিল না হাতে ঘড়িটা জমা দিল এবং পরে টাকা দিয়ে তা ছাড়িয়ে নিয়ে গেল ৷ এভাবে কেটে গেল দু’চার দিন ৷

তামিম সবর্দা চেষ্টা করতো ইমন অার রেহান কে বুঝাতে সেও তাদের অন্য বন্ধুদের মত ভালো বন্ধু হবে ৷

কিন্তু ইমন ও রেহান তাকে ততটা গুরুত্ব দিত না ৷ কিছুটা বিরক্ত বোধ করতে তার সাথে কথা বলতে হয়তো তামিম নতুন ছিল বলে ৷

তাই তারা সব সময় চাইতো তামিমকে রেগিং করতে তামিমকে বিপদে ফেলতে ৷ তামিম কিন্তু কিছু বলতো না

নিরবে সয়ে যেত বন্ধুত্বের সকল প্রহার ৷ এইতো সেইদিনের কথা দুই বন্ধু কথা বলছি অার রেহান বললো দুস্ত কিছু ভালো লাগছে না ৷

শুধু বোরিং লাগছে ৷ বোরিং কাঁটাতে কিছু একটা করতে হবে ৷ এমন সময় তামিমের পার্দাপনে দুই বন্ধু দৃষ্টি কাঁড়ে ৷

ইতি মধ্যে রেহান তার বোরিংপনা কাঁটাতে ফন্দি রটে ফেলে মাথায় অার তামিম কে বললো দুস্ত অামি একটা পাশের গ্রামের

মেয়েকে ভালোবাসি কিন্তু বলতে পারছি না ৷ তাই একটা চিঠি লিখলাম তুই দুস্তের হয়ে এই চিঠিটা ঐ মেয়েটি হাতে দিয়ে অাসবি ৷

কি পারবি না ?? তামিম জানতো চিঠি দিতে গেলে বিপদ হতে পারে তারপরেও বন্ধুত্বের স্বার্থে বললো সে পারবে

এবং চিঠিটা নিয়ে গিয়ে দিল মেয়েটাকে ৷ এবং ফল স্বরুপ মেয়েটার দুটা থাপ্পর ও অনেকক্ষানি গালি অার অপমান উপহার ফেল ৷

শুধু তা নয় ঐ গ্রামের কিছু বড় ভাইদের কিছু উত্তম মাধ্যম খেয়ে হাত ভেঙ্গে বাড়ি পথ ধরেছিল তামিম ৷ অন্যদিকে তামিমের উপর

বয়ে যাওয়া ঝড়ের গতি দেখে দুই বন্ধু খুব মজা নিচ্ছিল অার জোরে জোরে হাসছিল ৷ এমনকি তামিমের কি হল তা পয়র্ন্ত দেখতে যায় নি তারা ৷

তামিম ধীরে ধীরে সুস্থ হল এবং সব ভুলে সব দোষ নিজের কাঁদে নিয়ে রেহান ও ইমনকে বুঝাতে চেয়েছিল সেও তাদের

অনেক ভালো বন্ধু ৷ কিন্তু তামিম কে ঘিরে কোনো এক বিষাদর অনুভূতি দুই বন্ধু মধ্যে সবর্দা কাজ করতো ৷ তাই তারা তামিমকে

তাদের ভালো বন্ধুত্বের দলে অন্তরর্ভূক্ত করতে পারছে না ৷ তাদের মধ্যে এখনো তামিমের উপর রেগিং রেগিং ভাবটা প্রকাশ পাই ৷

একদিন তো তারা তাদের রেগিং এর সর্বচ্চো সীমা ছাড়িয়ে গেল ৷ যার মাশুল তাদের এভাবে দিতে তা তারা স্বপ্নেও ভাবে নি ৷

রেহান অন্যদিনের মত তার বোরিং কাটাতে ফোন দিল তামিম কে অার বললো ইমন এক্সিডেন্ট করেছে অার এখন হাসপাতালে অাছে ৷

তার খুবই রক্তের প্রয়োজন তুই কই তামিম তাড়াতাড়ি অায় ৷ অথছ ইমনের কিছুই হয় নি ৷৷ অন্যদিকে তামিম বন্ধু এই অবস্থা খবর শুণে

একেবারে পাগল হয়ে গেছে ৷ উচু নিচুঁ কিছু না ভেবে সাইকেল নিয়ে পড়ি দিতে লাগলো হাসপাতালে দিকে ৷ মনে শুধুই একটাই কথাই

ঘুরপাক খাচ্ছে যেভাবে হোক বন্ধুকে বাঁচাতে হবে ৷ অার তাই বেপরোয়ার মত সাইকেল চালাচ্ছে খুব দ্রুত ৷ তার মাথায় খেয়াল

ছিল না যে তার সাইকেলের ব্রেক ঠিকমত কাজ করে ৷ তারপরও সে চলছে হসপিটালের দিকে অার পথিমধ্যে রাস্তা ক্রস করতে

গিয়ে তামিম দূর্রঘটনার শিকার হয় তার সাইকেল টা সজোড়ে তেড়ে অাসা ট্রাক এর সাথে ধাক্কা লাগে ৷ এখন তামিম ও রেহানের খুব ভালো বন্ধু ৷

ইমনের মত তামিমের সাথে বন্ধুত্ব জমে রেহানের ৷ রেহান সব সময় কথা বলে তামিমের সাথে সুখ দুঃখের সব কথা শেয়ার করে

তামিমের সাথে উঠতে বসতে সব সময় তামিমের পরার্মশ নেয় রেহান ৷ কিন্তু দুঃখের বিষয় হল রেহান ছাড়া তামিম কে অার কেউ দেখতে পাই না ৷

তামিম রেহান সবচেয়ে ভালো অদৃশ্য বন্ধু ৷ অাসলে ঐদিনের দূর্রঘটনায় তামিম পূথিবির মায়া ত্যাগ করে ইহকাল ছেড়ে পরকালের পড়ি জমাই ৷

অার যেতে যেতে তার বন্ধুত্বের প্রমান দিয়ে তার প্রাপ্য বন্ধুত্ব অর্জন করে যায় ৷ অাসলে প্রত্যক মানুষের জীবনে অনিশ্চিতার

সত্বেও অনেক কিছু হয়ে যায় ৷ অনেক কালবৈশাখী ঝড় বেয়ে যায় ৷ অনেক সময় মজাও সাজার রুপ নিতে দেরি করে না ৷

অার সেই সাজার মাশুল দিয়ে হয় অাজীবন ৷ অনেকে এই সাজা কাটিয়ে উঠতে পারলেও অনেকের পক্ষে তা কাটিয়ে উঠা সম্ভব না ৷

তামিমের মৃত্যুর বয়ে যাওয়া ঝড়টা ইমন কাটিয়ে উঠতে পারলেও রেহানের পক্ষে তা এখনো কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয় নি

সম্ভবত হবেও না কোনোদিন ৷ অার তামিম “”অদৃশ্য বন্ধু””হয়ে থাকবে অাজীবন রেহানে ৷
জীবন চলতে থাকে অাপন গতিতে ৷ অার জীবন সুন্দর লাগে শুধু বন্ধুদের জন্য ৷ কারণ তাদের সাথে অামার শেয়ার করতে

পারি জীবনে সব না বলা কথা সুখ দুঃখ অানন্দ মজা ইত্যাদি ৷ মনে সব সময় এই ভরসাটা থাকে অামার বিপদে অার কেউ

পাশে অাসুক বা না অাসুক অামার বন্ধুরা অামার পাশে থাকবে অাজীবন ৷ অার নিজের সর্বচ্ছো দিয়ে সাহায্য করবে অামাকে ৷

কারণ সত্যিকারের বন্ধুত্ব হল গুপ্তধনের মত ৷ যে এটা খুঁজে পেল তার চেয়ে খুস নসিব সৌভাগ্যবান ব্যাক্তি পৃথিবিতে অার দ্বিত্বীয় হবে না ৷

যাকে বার বার দূরে ঠেলে দেওয়ার পরও নিজের সর্বচ্ছো দিয়ে পাশে থাকতে চাই ধরে নিবেন ইনি অাপনার সেই গুপ্তধন ৷

অার তার সাথে এমন কিছু করবেন যাতে অাপনাকে অাপনার গুপ্তধন হারাতে হয় ৷ কারণ

“”অদৃশ্যমান বন্ধুদের চেয়ে দৃশ্যমান বন্ধু লক্ষগুন ভালো “””” ৷

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত