পরাজিত ভালোবাসার, জয়ী জীবন

পরাজিত ভালোবাসার, জয়ী জীবন

– স্যার, আমার স্ত্রী…

বিজয় তার কোম্পানীর এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হাসানের কথায় সংবিদ ফিরে পেলো…
একটা সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে…
হাসানের স্ত্রী…
আজ বিজয়ের মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীর ২ বছর ফুর্তি ,
সে উপলক্ষেই বিজয় একটা বিশেষ পার্টির আয়োজন করলো ,
আর তাতে সে তার কোম্পানীর সকল ব্যাক্তিদের দাওয়াত করলো…
পাশাপাশি , সবার পরিবার কেও আ্সার জন্য ইনভাইট করেছিল…
হাসান তার কোম্পানীর এসিসট্যান্ট ম্যানেজার… বেতন খুব একটা কম নয় ,
৪০ হাজার টাকা…
হাসান নতুন জয়েন করেছে , বিজয় ই তার ইন্টারভিউ নিয়েছিলো ,
ক্যানো জানি হাসান কে যোগ্য মনে করে বিজয় জয়েন করতে বললো…

হাসান তার স্ত্রীকে তার স্যারের কথা অনেক বলেছে , এটাও বলেছে যে , তার স্যার এতো বড় কোম্পানীর মালিক ,

তার এত টাকা যে , এতটাকা কে খাবে , এটা কোম্পানীর কেউই ভেবে পায়…
এমন কথায় হাসানের স্ত্রী উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করে ,
– ক্যানো ?
– কারন স্যার এখনো বিয়েই করেনি… হাসিখুশি থাকেন সবসময়… যেনো , পৃথীবির সবচেয়ে সুখী মানুষ সে ,

তবে মাঝে মাঝেই কেমন জানি আনমোনা হয়ে যান…
– তাহলে তো তোমার স্যার কে দেখতে হয় , একদিন নিয়ে যেয়ো তো…
– ওকে , আগামী মাসে আমাদের কোম্পানীর ২ বছর ফুর্তি , স্যার মনে হয় একটা পার্টি করবে , সেখানে তোমাকে নিয়ে যাবো নে…
– ঠিক আছে…
………
আজ হাসান তার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছে…
স্যারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে তাই…
স্যার অন্যদিকে ফিরে কিছু একটা কাজ করছিল…
– স্যার ?
– হুম, হাসান কিছু বলবে ( অন্যদিকে থেকেই রিপ্লে দিলো বিজয়)
– স্যার আমার স্ত্রী , আপনার সাথে দেখা করতে চাচ্ছিলো , তাই নিয়ে আসলাম…
– খুব ভালো করেছো… (তখনো হাসান অন্যদিকে ফিরে আছে)
..
কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত…
………
– আসসালামু আলাইকুম স্যার (হাসান কোনো একটা কাজে অন্যদিকে গেলো , তাতে সুযোগ পেয়ে ,হাসানের স্ত্রী সালাম দিলো)
হঠাৎ কাজ থামিয়ে দিলো বিজয়…
কন্ঠটা কেমন জানি পরিচিত মনে হলো…
এবার বিজয় অন্যদিকে ফিরে থাকতে পারলো না..
মনে অনেক পরিচিত একটা কন্ঠই সে শুনতে পেলো…
ফিরে তাকালো বিজয়…
একি সামনে দাঁড়িয়ে অধরা…
হ্যা সেই অধরা , যে ৪ বছর আগে বিজয়কে ছুড়ে ফেলেছিলো ,
অবসান ঘটিয়েছিলো ৩ বছরের একটা সম্পর্ককে , আর সেই ছিটকে যাওয়া বিজয় আজো বিয়ে করেনি…
খুজেনি অন্য কোনো অধরাকে…
সেই অধরা এখানে আসলো কিভাবে ?
…..
অধরাও তার হাসি মুখটা হঠাৎ চুপসে ফেললো…
যেনো, উজ্জ্বল নক্ষত্রে কালো মেঘের ছায়া ভর করলো…
অজান্তেই সে বলে ফেললো,
– বিজয় তুমি ?
—–
বিজয় নিজেকে সামলে বিলো ,
এটা তো তার হারিয়ে যাওয়া অধরা না , এ হাসানের স্ত্রী , এ তার এ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হাসানের স্ত্রী… এখন তো বিজয়ের কেউ নেই..

.. যা ছিল , সবই অতীত…
– ……… ( বিজয় চুপচাপ বসে আছে)
– কি হলো ?
– আপনি বসুন, হাসান আপনার কথা আমাকে অনেক বলেছে (অচেনা বিজয় এর বহিঃপ্রকাশ)
– হাসান আর কি বলেছে ?
– আপনারা অনেক সুখী একটা ফ্যামিলী…
– হুম… কিন্তু তুমি এখানে ?
– আপনি ভূল করছেন… আমি মানে ?
– বিজয়, আমাকে ভূল বুঝাবা না ,শত হোক ৩ টা বছর তোমার সাথে আমি কাটিয়েছি…
– অতীত সেটা…
– হুম, হাসানের কাছে শুনলাম , তুমি নাকি বিয়ে করোনি , ক্যানো?
– আরেকটা অধরা কে খুজে পাইনি তাই…
– খুজেছিলে ?
– না…
– ক্যানো ?
– বিশ্বাস ছিলো, অধরা পৃথিবীতে একটাই… আর সে আমাকে ছুড়ে দিলো ,২য় আর কে হবে ?
– একটা মেয়ের জন্য ?
– ভূল করছো, সে একটা মেয়ে ছিলো না , আমার একটা পৃথিবী ছিলো… যে পৃথিবীতে আজো আমি আরেকজনকে ঢুকাতে পারিনি…
– ………… (অধরা নিশ্চুপ)
…….
এরই মধ্যে , হাসান চলে আসলো ,
– স্যার , সব রেডি…
– ওকে হাসান যাও, আসতেছি…
– তুমিও আসো অধরা…
বলেই আবার চলে গেলো হাসান…
– হাসানকে আজকের এই ঘটনা বলতে যেয়ো না , তাতে করে সে কষ্ট পাবে…
– …………… ( তখনো নিশ্চুপ অধরা , চোখের কোনে অশ্রু জমছে)

আজ অধরা বুঝতে পারছে , সে এমন একজনকে হারিয়েছে , যে শুধু ভালোবাসা দিয়েই অধরার জীবনটিকে সুখী করে দিতে পারতো…
– চলো , অনুষ্টান শুরু হবে…
– একটা কথা মিলে গেলো তোমার ( অধরার জিজ্ঞাসা)
– কী ?
– তোমার শেষ কথাটা ছিলো , এমন একটা সময় আমাদের আবার দেখা হবে , যেদিন “আমি হব ভালোবাসায় বিজয়ী আর তুমি হবে দর্শক” ।

সত্যিই আমি আজ দর্শক হয়ে গেলাম…
– অতীত বাদ দাও , হাসানকে নিয়ে তুমি সুখে থাকো…
……
অনুষ্টানের বাকী সময়টা ভালো ভাবেই হলো , এর মধ্যে অধরা বিজয়ের সাথে কয়েকবার কথা বলতে চাইলো

কিন্তু বিজয় সেটাকে প্রশ্রয় না দিয়ে এড়িয়ে গেলো…
…………………………
সত্যিই বিজয় আজ নিজেকে অনেক ফ্রি মনে হচ্ছে ,
বুকে জমে থাকা কষ্টটা সে আজ মুক্ত করে দিলো…
৪ বছর আগে , বিজয়কে অযোগ্য বলে অধরা চলে গিয়েছিল..
– আমি তোমার সাথে থাকতে পারবো না ( অধরার হঠাৎ এমন কথায় কি বলবে বুঝতে পারছিল না বিজয়)
– মানে কি ? থাকতে পারবা না মানে ?
– দেখো , তোমার কোনো চাকুরী নেই, তুমি বেকার , তোমার ফ্যামিলিও এতটা ভালো না যে তোমাকে সাপোর্ট দিবে …

আর এমন বেকার ছেলের সাথে আমার বাবা-মা কখনই বিয়ে দিবে না…
– আর আমাদের ৩ বছরের সম্পর্ক ?
– ভূলে যাও…
– অধরা , এটা হয় না… আমি তোমাকে ভালোবাসি। হ্যা , এটা ঠিক যে, আমার এখন কোনো চাকুরী নেই । কিন্তু সবসময় তো এমনটা থাকবে না ,

চাকুরী পেয়ে যাব…
– যখন পাবে তখন দেখা যাবে , এখন আমি তোমার সাথে থাকতে পারব না…

সেই যে গেলো অধরা , আর কোনোদিন বিজয় অধরাকে দেখেনি , যোগাযোগের অনেক চেষ্টা বিজয় করেছিল কিন্তু অধরা সুযোগ দেয়নি…

হঠাৎ একদিন বিজয় শুনলো ,
কোনো এক চাকুরীজীবী ছেলের সাথে অধরার বিয়ে হয়ে গেছে…
বিজয় খুব কষ্ট পেয়েছিল সেদিন, আড়ালে কেদেও ছিল ,
সেদিনই বিজয় প্রতিজ্ঞা করেছিল ,
সে চাকুরী করবে না… বরং সে এমন কিছু করবে , যেখানে সে অনেকের চাকুরী দিতে পারবে…
তারই হাতে গড়া এই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি…
সেখানেই কাকতালীয় ভাবে চাকুরী করছে অধরার স্বামী হাসান…

সত্যিই ,
বিজয় আজ জয়ের হাসি হাসছে
আর অধরা আজ পরাজিত…

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত