এসএসসি পাশ করে পা দিলাম ইন্টার মিডিয়েটে নতুন কলেজ নতুন সব ফ্রেন্ড,এক কথায় উড়ুউড়ু।
সময়টা ছিল ২০১৬ শীতের সময় তবু যেন বাঁধ মানে না।স্ট্যাইলিস ড্যাসিং আর সেটিং এ ফিটিং ফিটিং ভাব।
প্রচন্ড শীত তবু যেনো ভাব কমে না,স্যাইকেলের প্যাডেল মারিয়ে মারিয়ে শার্টের বোতাম খুলে চলতেছি।
হঠ্যাৎ একদল মেয়ে যাচ্ছে সূর্য উঁকি দিচ্ছে মনের ভিতর যেন ধাক্কা দিল।মেয়ে গুলাকে পাশ কেটে চলে আসলাম আবার
পিছনে ফিরে তাকালাম একটা মেয়ে এমন হাসি দিল মন কাইড়া নিলো।
.
কলেজে এসে পরিচিতদের বললাম কে ওহ।হ্যাঁ ওর নাম অবন্তিকা মেয়েটা হিন্দু,মনের কোণে বাড়ি মেরে দিল।
ক্লাশ করতাছি এভাবেই রোজ চাহনি মেয়েটার উপর ক্রাশ না খেয়ে পারলাম না।একদিন দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে আছি আচমকা স্যারের ধমক।
স্যার:প্রবলেম কি তোমাদের দুজনে ক্লাশ বাদ দিয়ে তাকাতাকি।
আমি:সরি স্যার ভুল হইছে।
ওমনি আমার হাতে বেত দিয়ে দুই তিনটা বসিয়ে দিল।
স্যার:শ্যার্টের বোতাম আকটাও নি কেন স্টুপিড।
আমি:সরি স্যার।
অবন্তিকার মনটা খারাপ হয়ে গেল,ক্লাশ শেষে বাড়ি ফিরছি শার্টের বোতাম লাগিয়ে অবন্তিকার সাথে দেখা।
অবন্তিকা:এই থামো ফারদিন তোমার সাথে কথা আছে।
ফারদিন:আমতা আমতা করে কি বলেন।
জীবনের প্রথম মেয়ে তো তাই দুই চারটা করলে ঠিক হয়ে যাবে।
.
মেয়েটা অন্য ধর্মের হলেও একদম আলাদা মনমানসিকতা।
অবন্তিকা:কি আপনি আপনি করো।
ফারদিন:হুম স স স সরি।
অবন্তিকা:সব কথাতে সরি বলো কেনো।
ফারদিন:এ এ এমনি।
অবন্তিকা:হাতটা দেখি তো।
ফারদিন:কেন।
অবন্তিকা:ইশ কতটা লাল হয়ে গেছে,ক্লাশের ভিতরে না তাকালে পারতে।
ফারদিন:বা রে তুমিও তো তাকিয়ে ছিলা।
অবন্তিকা:চুপ আর সব সময় শার্টের বোতাম খোলা রাখো কেন।
ফারদিন:ইটস নিউ স্ট্যাইল এক্কেরে দিল ওয়ালে দুলহান।
অবন্তিকা:তুমি প্রচুর মুভি দেখো নাকি।
ফারদিন:হুম।
অবন্তিকা:কার মুভি বেশি দেখো।
ফারদিন:শাহরুখ,তিনি তো স্টার নন তিনি আমার গুরু।
অবন্তিকা:আমাকে সাইকেলে চড়াবে।
ওরে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি।
.
মনের ভিতর বাত্তি জ্বলে উঠলো।
ফারদিন:চল,কই বসবা।
অবন্তিকা:সামনে বসবো।
অবন্তিকা সামনে বসে আছে ফারদিন জীবনের প্রথম কোনও মেয়ের চুলের গন্ধ পেল।নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না,
চুল শুকতে শুকতে অবন্তিকার ঘাড়ে একটা চুমো খেলো।
ফারদিন:এত সুন্দর চুল শ্যাম্পু করো বুঝি।
অবন্তিকা:হুম,চুমো খেলে কেন।
ফারদিন:এমনি।
অবন্তিকা:এমনি কেন সেটা বলবা আজ।
ফারদিন:কচু।
অবন্তিকা:কচু কাটাকাটি।
দুজনে হাসতে হাসতে শেষ,এভাবে রোজ ওরা কলেজে যেত আসতো কখনও বা নদীর ধারে দূরের
পাখির উড়ন্ত ডানার ঝাপসার শব্দে,নিজেদের হারিয়ে ফেলত।
.
প্রায় একটা বছর অতিবাহিত হলো,অবন্তিকা দৌড়ে আসল।
ফারদিন:কি হইছে দৌড়ে আসলা যে।
অবন্তিকা:আমার বাড়ি থেকে বিয়ে ঠিক করছে।
ফারদিন:এতো তারাতারি কেন।
অবন্তিকা:জানিনা।
ফারদিন:ওহ।
অবন্তিকা:আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।
ফারদিন:দ্যাখো তুমি হিন্দু আমি মুসলিম আমাদের সমাজ এটা মেনে নেবে না।
অবন্তিকা চড় বসিয়ে।
অবন্তিকা:তাহলে কেন আমার জীবনে এলে জবাব দাও।
ফারদিন:প্লিজ তুমি বোঝার চেষ্টা করো।
অবন্তিকা চলে গেল।
আজ বাড়িতে যাচ্ছে সাইকেলে বাট আজ সাইকেলের সামনে অবন্তিকা নেই,বুকের বাম পাশটা তীব্র ব্যাথা অনুভব করছি।
.
তিন চারদিন পর আমার ইয়ারমেট তৃষ্ণা আমার কাছে আসলো,হাতে একটা কাগজ দিল।
অবন্তিকার লেখা চিঠি_জানি এ জীবনে হয়ত স্রষ্ঠার লিখনে তোমার আমার লেখা নেই হয়ত মরনের পর স্বর্গে তোমায় পাব,
আমি চলে গেলাম হয়ত ফিরে আসবো না।ভালবাসা কোনও ঠুনকো হাওয়া নয় যে ভেঙ্গে যাবে আমাকে একবার দেখতে
এসো তোমার ঐই শার্টের নিচে গেঞ্জি পড়ে সেই সাইকেলে চড়ে,জানি আর আমার ভাগ্যে ঐই সাইকেলে চড়া হবে না
তোমার মাঝে আমি বেঁচে থাকবো ভেঙ্গে পড়ো না।
চিঠিটা পড়ে দৌড়ে অবন্তির বাড়ি গেলাম দেখি অবন্তি সাদা কাপড়ে জড়িয়ে আছে। সবাই ফুলের বিছানায় করে নিয়ে
যাচ্ছে হরি বল বলো হরি।অবন্তির শেষ কৃতকার্য সম্পন্ন করার জন্য শশ্মানে কাঠের উপর শুইয়া মুখে আগুন দেবে।
ফারদিন:আংকেল আমি অবন্তিকাকে ভালবাসতাম অবন্তিকাকে আমি অগ্নি মুখক করবো।
হ্যাঁ আমি ওকে আগুনে পুড়ে দিলাম ঝলসে যাচ্ছে,সাথে আমার হৃদয়টাও ঝলসে।
হঠ্যাৎ অবন্তিকার মুখ সামনে ভেসে উঠল।
অবন্তিকা:ফারদিন কাদো কেন এই তো আমি তোমার সাথে সবসময়।
ফারদিন:আমাকে ছেড়ে এভাবে চলে যাবে।
অবন্তিকা:সমাজ ধর্ম সবার উর্ধে দাড়ায়।
ফারদিন:হুম।
অবন্তিকা:তুমি সবসময় শার্টের নিচে গেঞ্জি পড়বা।
হয়ত এটা ফারদিনের ভ্রম ছিল। আজ একটা বছর পর সেই সাইকেলে সেই মডেলে কলেজে যাচ্ছি কে যেন একজনকে ডাক দিল অবন্তিকা।