এই তোকে না বলছি আমার ঘরে ঢুকবি না। কে দিছে তোকে এতো সাহস ? কখনও নিজের চেহারা আয়নায় দেখেছিস ? কি বাজে দেখতে । আমি কখনও তোকে স্বামী হিসাবে মানতে পারবো না। কেন আমার জীবন টা নষ্ট করে দিলি ? শুধু বাবার জন্য তোকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। না হলে আমার মতো একটা সুন্দরী মেয়ে তোকে কিছু তেই বিয়ে করতো না। এখনই এই ঘর থেকে বেরিয়ে যা বলছি না হলে সব কিছু ভেঙে চুড়ে তছনছ করে ফেলবো। রোজ রাতে আমার জন্য এক গ্লাস দুধ তোকে কে আনতে বলে।
এই বলে রাফানের হাত থেকে দুধের গ্লাস নিয়ে ভেঙে ফেললাম । হনহন করে বাইরে চলে গেলাম । রাফান হয়তো রোজ কার মতো সব পরিস্কার করছে। কিন্তু না আমার রাগ এখনও একটু ও কমে নি। বারান্দায় দাড়িয়ে সাপের মতো ফোসফোস করতে লাগলাম ।
এবার আমার পরিচয় টা আপনাদের বলি। যার এতো গুনের কথা আপনারা পড়ছেন । আমি নোলক। সুন্দরী এক কথায় বলা চলে। কারণ তাঁর প্রমান অনেক বার পেয়েছি । যখন পাড়ার ছেলে দের থেকে হাজার টা প্রেম পত্র পেয়েছিলাম । অনেক ইচ্ছে ছিল কোনও এক রাজ পুত্রের গলায় মালা পড়িয়ে হাতে হাত রেখে সারা দুনিয়া ঘুরে বেরাবো। কিন্তু না আমার সেই সপ্ন কিছুতেই পূরণ হয়নি। এর একমাত্র কারণ আমার ভিলেন বাবা। সে তাঁর একমাত্র বন্ধুর ছেলে রায়ান তাঁর সাথে বিয়ে ঠিক করে ফেললো। ভেবেছিলাম বাড়ি থেকে পালিয়ে যাব। কিন্তু না সেই টাও পারিনি আমার আরেক ভিলেন মামার কারণে । এই মামা আর বাবা দুই ভিলেন মিলে আমার বিয়ে টা দিয়ে দিল তাদের পছন্দের ছেলের সাথে। রায়ান দেখতে কালো । কিন্তু ওর চোখ দুটো ঠিক যেন হারিয়ে যাওয়ার মতো সুন্দর । কিন্তু না আমি ওর চোখের সাগরে হারিয়ে যেতে চাই না। ওকে দেখলেই আমার মেজাজ গরম হয়ে যায় । ঠিক যেন গরম তেলে মাছ ভাজার মতো।
নোলক এখানে দাড়িয়ে আছো কেন ? অনেক রাত হয়েছে চলো ঘুমাতে । বাইরে অনেক ঠাণ্ডা পড়েছে তোমার ঠাণ্ডা লেগে যাবে। হঠাৎ করে রায়ান এর কথা শুনে বাস্তব এ ফিরে এলাম। ও আমার একটা হাত ধরতেই আমি চিংড়ি মাছের মতো লাফিয়ে উঠে বললাম এই তুই আমাকে সপর্শ করলি কেন ? রায়ান এবার মন টা খারাপ করে বললো ওহ সরি। চলো রুমে চলো। আমি এবার আরো একটু ভাব নিয়ে বললাম এই রুমে শুধু আমি একা থাকবো । অন্য কেউ না। রায়ান বললো তাহলে আমি কোথায় ঘুমাবো। আমি বললাম জাহান্নামে। এই বলে রুমে ঢুকেই জোড়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম ।কম্বল টা জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম । এক বার ও ভাবলাম না কেউ একজন আমার দেওয়া কষ্ট বুকে নিয়ে বাইরের ঠাণ্ডার মধ্যে নিজের গায়ে দেওয়া চাদর জড়িয়ে নিয়ে গুটিসুটি দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।
আমার হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে গেল । বাইরে আলো ফুটেছে । তাঁর মানে সকাল অনেক আগেই হয়েছে । এমন সময় দরজায় আঘাত করার শব্দ । কে আবার বারান্দায় দাড়িয়ে আছে । হঠাত্ করে কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেল। রায়ান কে আমি বাইরে রেখে দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । তার মানে এই ঠাণ্ডার মধ্যে ও সারা রাত ওখানে ছিল । এখন যদি কিছু হয়। যদি ঠান্ডা লেগে মরে টরে যায় । নির্ঘাত আমার এই খুনের জন্য ফাঁসি দেওয়া হবে । একি করলাম !! নাহ বড্ড ভুল করে ফেললাম। আরো জোড়ে দরজার এবার আঘাত করতে লাগলো। আমি আরো ভয় পেলাম । ভয়ে ভয়ে দরজা খুলতেই রায়ান আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো এতো দেরি কেন করলে দরজা খুলতে আমি তো ভয় পেয়ে ছিলাম তোমার আবার কিছু হলো নাতো। অনেক দেরি হয়ে গেছে । আজ অফিসে একটা জরুরি মিটিং ছিল । আমি তৈরি হয়ে চলে যাচ্ছি । বাইরে থেকে খেয়ে নেব। আর তোমার খাবার আমি দারোয়ান কে দিয়ে পাঠিয়ে দেব। এই বলে রায়ান ওয়াশ রুমে চলে গেল । আমি হা করে ওর কথা শুনছিলাম । আচ্ছা ও এতো ভাল কেন ? আমি কি ওর প্রেম এ পড়ে যাচ্ছি । না না কখনও না। আমি কিছু তেই ওর প্রেম পড়বো না। আমি তো ওকে পছন্দ করি না। তাহলে আমার কিসের চিন্তা । আর কিছু দিন যাক তারপর ওকে বলবো আমাকে তুমি ডিভোর্স দেও। তোমার সাথে থাকা আমার সম্ভব না।
বসে বসে একটা গল্পের ব্ই পড়েছিলাম । হঠাৎ করে একটা বান্ধবীর ফোন এলো। রিসিভ করতে ও পাশ থেকে কেঁদে উঠে বললো নোলক রাতুল আমাকে ঠকিয়েছে ? আমি বুঝতে পারছি না কি বলছে ও । আমার ছোট বেলার বন্ধু জুথি। এইতো কিছু দিন আগে ওর বিয়ে হয়েছে । চার বছরের প্রেম করার পর বিয়ে । জুথির বর টা ভিষন সুন্দর । একে বারে সিনেমার নায়ক । আমরা সব বান্ধবী রা জুথির কপাল দেখে হিংসা করতাম । এতো সুন্দর জামাই পেয়েছে । আর আজ হঠাৎ করে ফোন করে বলছে রাতুল ঠকিয়েছে । আমি অবাক হয়ে বললাম কি বলিস এই সব রাতুল কেন ঠকিয়েছে । তুই আর রাতুল সবাই কে ফাঁকি দিয়ে গোপনে বিয়ে করলি। রাতুল তোকে ছাড়া বাঁচবে না এই জন্যে । আর আজ কি এমন হলো যে এই কথা বলছিস ?
আমার কথা শুনে জুথি কেঁদে উঠে বললো নোলক তুই তো সব জানিস । আমাদের দুই পরিবারের কেউ মেনে নেয়নি । শুধু নিজেরা পছন্দ করে বিয়ে করেছি বলে। আর এখন রাতুল বলছে ওকে ওর পরিবার অন্য জায়গায় বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে । আর সেইটাই করবে এখন রাতুল । নোলক এই পৃথিবীতে চেহারা সব কিছু না রে। সব থেকে তাঁর মন টাই আসল। চেহারা দেখে মনের বিচার করা যায় না । আচ্ছা আমি রাখি । মন টা খুব খারাপ । যদি রাতুলের হাত পা ধরতে হয় আমি তাই করবো। কারণ রাতুলের সন্তান আমার গর্ভে। এই বলে জুথি ফোন টা কেটে দিল।
আমি জুথির কথা শুনে থ মেরে বসে আছি । বার বার একটা কথা কানে বেজে উঠছে । “”এই পৃথিবীতে চেহারা সব কিছু না মন টাই আসল””। কিন্তু আমি এখন কি করবো । আমি যে রায়ান কে ডিভোর্স দেব বলে ঠিক করেছি। আমার এক এক করে ওর সব সৃতি মনে উঠতে লাগলো। আমাদের ছয় মাস হয়েছে বিয়ে হয়েছে । আজ পর্যন্ত রায়ান আমাকে জোর করে সপর্শ করেনি। আমি ওকে ভিষন ভাবে কষ্ট দিয়েছি কিন্তু কখনও প্রতিবাদ করেনি। আমার দেওয়া সব কষ্ট হাসিমুখে সয়ে গেছে । কাল রাতে আমি ওকে ফাইনাল ডিসিশন বলে ছিলাম যে দুই দিন পর আমরা উকিলের কাছে যাব। আমি সব কথা বলে ঠিক করে রেখেছি। রায়ান আমার কথা শুনে চুপ করে ছিল । ওর ওই অদ্ভুত চোখ জোড়াতে পানি টলমল করছিল । কিন্তু না আমি সেই পানি দেখে ও ওর প্রতি কোনও মায়া উপলব্ধি করিনি।
আমি কি অনেক বড়ো ভুল করছি ?? না না আমি আমার কালো জামাইকে ভালোবেসে সুখী হতে চাই। কিন্তু রায়ান কেন আসছে না বাসায় ? ওর তো অনেক আগেই অফিস ছুটি হয়ে গেছে । তাহলে ও এতো দেরি করছে কেন ? আমার মনটা অনেক ছটফট করছে । ওর কোনও বিপদ হলো নাতো ? একবার ওর ফোনে ফোন করে দেখি । আমি রায়ান কে পাগলের মতো ফোন করতে লাগলাম । কিন্তু না ফোন ধরছে না। আমি অস্থির হয়ে গেলাম । রায়ান যদি সত্যিই আমাকে ডিভোর্স দেয়!! ওফফফ আমি পাগল হয়ে যাব। আমি ছোট বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম । বললাম রায়ান আমি তোমাকে নিয়ে সুখী হতে চাই। তুমি কোথায় ?
এমন সময় হঠাত্ করে আমার ফোন বেজে উঠলো। আমি রিসিভ করতে বাবা বললো মা নোলক রায়ান এক্সসিডেনট করেছে ও এখন হাসপাতালে তুই তাড়াতাড়ি করে চলে আয়। বাবার কথা টা শুনে আমার হাত থেকে ফোন টা পড়ে গেল । আমি পাগলের মতো হাসপাতালে ছুটে গেলাম । দেখি রায়ান ঘুমিয়ে আছে । বাবা বললো তুই পারলি না রত্ন চিনতে । রায়ানের শুধু গায়ের রং টা দেখলি। ওর মন দেখলি না। ও তোকে নিজের থেকে ও বেশি ভালবাসে। তাইতো তোর মুখে ডিভোর্স এর কথা শুনে আমার কাছে এসে সব বললো ।ছোট্ট শিশুর মতো কেঁদেছিল আমাকে জড়িয়ে ধরে । আমি ওকে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না । শুধু একটা কথা বারবার বলছিল আমি নোলকের সুখের জন্য সব কিছু করতে পারি।
আমি বাবার কথা শুনে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম । রায়ান আমি তোমাকে ফিরে পেতে চাই। আমি রায়ানের পাশে বসে কাঁদতে লাগলাম । হঠাত্ করে ওর জ্ঞান ফিরে এলো। ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে । ওর সেই অদ্ভুত চোখ । আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। রায়ান এশারা করে ওর কাছে ডাকলো। আমি আর পারলাম না নিজেকে ধরে রাখতে । ওর বুকে মাথা রেখে কাঁদতে লাগলাম । ও আমার মাথায় আদর করতে লাগলো। আমার চোখের জলে ওর জামা ভিজে যাচ্ছে । যাক ,, আমি আজকে আমার সব চোখের পানিতে ওকে ভাসিয়ে নিতে চাই ভালবাসার অথৈ সমুদ্রে।
দুজনে ডুবে মরতে চাই সেই নীল জলে। হারিয়ে যেতে চাই গভীরে আরোও গভীরে । যে খানে কেউ খুঁজে পাবে না। সবার দৃষ্টির বাইরে । যে খানে থাকবো শুধু আমরা দুজন শুধুই দুজন ।