ভালোবাসায় ধোকা

ভালোবাসায় ধোকা

বিয়ে বিয়ে করে গুনে গুনে পঁচিশটা বছর পার করেছি তাও বিয়ে আর হইলোনা। ধূর বাবা ভাল্লাগেনা! ঐ দিকে আমার বান্ধবী কালো মোটকীর মত দেখতে তাও সে জামাই নিয়ে কত মজা করে! আমাকে দেখাইয়া আরও বেশি রোমান্স করে। কি কমু দেখলে শরীরে জ্বা্লা ধরে।মনে হয় হাসতে হাসতে গায়ের উপরে এসে পড়ে। বলেন, তহন কি করতে ইচ্ছা করে, চিল্লাইয়া কানতে মন ধরে। আর পারিনারে সইতে এই রঙ উল্লাস বইতে। আর এ দিকে আমি এত সুন্দরী হয়েও কারও নজরে পড়িনা। কত জনে প্রেমের প্রস্তাব দিছে গ্রহন করিনাই অহংকার দেখাইয়া বিদায় কইরা দিছি।

আমি এত সুন্দর দেখতে, যার তার লগে বিয়া বইমু নাকি? আর এখন কাইন্দা মরছি বিয়ে হয়না বইল্যা। কত লজ্জা আমার,বিয়ার কথা কি কারও কাছে কওন যায়? আপনারাই বলেন? হাজার হোক আমি মাইয়া মানুষতো? লজ্জা বলে একটা জিনিস আছেতো নাকি? জীবনে কত সখ আছিলো স্বামীর সাথে একই চেয়ারে দুইজনে বইয়া হলে গিয়া সিনেমা দেহুম, সে আর হইলো কই? জীবন যৌবন সব তামা হইয়া যাইতাছে। আল্লাহ কি আমার মনডা একটি পড়বার পারে না? আর সহ্য করুম না, সবাই ফেইস বুক চালায়, আমার কি দোষ! আমিও পাশের বাসার স্মার্ট আন্টিরে দিয়া একাউন্ট খুলছি। দেখি এবার মনের মত কাউরে পাওন যায় কি না! আপনারা হাসবেন না।

আমার চেহারা দেখতে খারাপ না, তয় সামনের দুইটা দাঁত একটু লম্বা। তাতে কি? গায়ের রং দুধে আলতা। দেখতে পরীর লাহান। কি সুন্দর কথা কই, খৈই যেমনে ফুটে আমিও তেমনি কথা কই। একবার বিয়াডা খালি হইতে দেন, দেহেন আমার স্বামীরে নিয়া আমি নায়ক নায়িকার অভিনয় করুম। হেরে বানামু সালমান খান আর আমি হমু রানী মূখার্জী। কি কন ঝুটি মানাইবো না? এই জন্যেইতো সুন্দর পোলা খুঁজি। একাউন্ট খুইল্যেই নাম দিছি “এঞ্জেল জরিনা সুন্দরী”। কি কন নামডা কেমন হইছে? অনেক সুন্দর নাম। প্রথম দিনেই অনেক রিকু পাইছি। খালি রিকু আসতেই আছে। আহা আল্লাহ এতদিন পরে মুখ তুইল্যা চাইছে। পাশের বাড়ির কাঞ্চন হেও আমারে দেখলেই চোখ টিপ দিতো। কিন্তু তহন হেরে আমার পছন্দ হয়নাই। হেইওতো বিয়া করছে তিন বাচ্ছার বাপ হইয়া গেলো কিন্তু আমার বসন্ত এখনও আইলোনা। এদিকে আমার সোনার যৌবন অঙার হইয়া গেলো, তাও কাউরে পাইতাছিনা।

আজ প্রথম দিন সবার সাথে হাই হ্যালো করছি। কাল থেকে হইবো আসল খেলা। একজনের নাম রাজকুমার তাও আবার বয়স বিশ। অনেক সুন্দর কইরা কথা কইছে। দেহি হেইডারে পটান যাই কি না! আরো চার পাঁচটা আছে,কি সুন্দর শুদ্ধ ভাষায় কথা কয়। আমিতো গ্রামে ছিলাম তাই ভাষাডাও গাইয়া ছিল, এখন দুই তিন মাস ধইরা ঢাকায় আইছি। শুদ্ধ ভাষা কওনের চেষ্টা করতাছি। এখন ভাষাটাকে পরিবর্তন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতাছি। একজন সরাসরি বিয়ার প্রস্তাব দিছে। হে কইলো প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী করে,সারা দিন বাসায় থাকবোনা। না তয় কেমনে রোমান্স করুম।

না না চলবোনা। আরে ফ্রি না থাকলে অভিনয় করবো কেমনে? আমার কত সখ ওরে নিয়া ছবি করুম। আজ আরেকজনের সাথে পরিচয় হইছে, হে কইছে আমার সাথে দেখা করবো! না বাবা দেখা করমু কেমনে! খালা, খালু কইছে ঢাকা শহরের অলি গলিতে চোর বদমাইশ বইসা থাকে, একলা পাইলেই কাম সারছে। আমি না করেছি, না বাবা যাবনা। আচ্ছা এক কাম করন যায়না? ওরে যদি বলি বাসায় দেখা করতে, তয় কেমন হয়? না না এটা করা যাইবো না। সবাই কি মনে করবো। আইজ একজনের সাথে পরামর্শ করছি, হে কইছে পার্কে দেখা করতে। পাশের বাসার কেরামত ভাই আমাকে নিয়া পার্কে বসাইয়া দিয়া দূরে দাঁড়াইয়া থাকবো। এখন ঠিক আছে, যাওয়াই যায়। পরিচিত মানুষ উনি, নিশ্চই কোনও ক্ষতি করবে না। আইজ রাজকুমারের সাথে কথা কমু দেখি হে কি কয়!

রাজকুমার নামের ছেলেটি ছবি দিছে। কি সুন্দর দেখতে! এক্কেরে নায়কের লাহান। বুঝছি হেরে দিয়াই হইবো।
আমার ছবি দিবনা। আমার ছবি তেমন একটা সুন্দর হয়না। এফবিতে কিছু চাইতে হয়না ফ্রিতে অনেক কিছুই দিয়ে দেয়। কি অাশ্চর্য্য ছবি না চাইলেও দিয়া দেয়।এতদিন বুঝি নাই, ফেইস বুক কারে কয়? না চাইতেই যেখানে অনেক কিছু পাওন যায় এর নামই ফেইস বুক। ভালোই হইছে সারা দিন যা কথা কই,সেই আনন্দেই কাজ করন যায়। ওমা রাজ কুমার দেহি মেসেজ দিছে,না আর কাম করুম না,পরে করুম আগে ওর সাথে ডেট ফাইনাল করি।

আমি,হাই রাজকুমার!

রাজ কুমার,হাই সুন্দরী!

আমি, কেমন আছেন?

রাজকুমার,খুব ভালো আছি সুইট হার্ট। কালকে কিন্তু তোমার ছবি দিবা। না হয় পার্কে গিয়ে তোমাকে চিনবো কি করে?

আমি,আরে ধূর ছবি লাগবেনা। আমি এখন ছবি তুলতে পারবোনা। রাজ কুমার,আরে জান্টুস, ময়না পাখি কি বল এসব? তোমাকে একটি বার দেখার জন্য মনটা আনচান করতেছে। প্লিজ প্লিজ ছবি তুলে দাও।

আমি, তোমাকে বলছি আমি এখন ছবি তুলতে পররবোনা। ক্যামেরা নষ্ট হয়ে গেছে। তাইতো দিতে পারছিনা।

রাজ কুমার,ওকে টিয়ে পাখি রাগ করোনা। আমার কলিজা সোনা পাখি তুমি কষ্ট পেয়েছো?

আমি,না কষ্ট পাইনি।

রাজকুমার,ওকে তাহলে কাল তুমি কি কালার শাড়ি পড়বে?

আমি,টকটকে লাল শাড়ি পড়বো। তুমি কি পড়বে?

রাজ কুমার, আমি নীল পাঞ্জাবী জিন্স পড়বো। আচ্ছা কয়টায় আসবে তুমি?

আমি, তুমি বলো।

রাজকুমার, ঠিক আছে বিকাল চারটায় তুমি রমনা পার্কের বটমূলে আসবে ওকে?

আমি,আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু তুমি অনেক আগে এসে বসে থাকবে। তোমাকে দেখতে না পেলে আমি ভয় পাবো।
পরে কিন্তু রাগ করে চলে আসবো। রাজকুমারর, আরে কি বলো জানের জান আসমানের চাঁন, তোমারে ছাড়া বাঁচেনা পরান। তুমি যদি বলো ভোর থেকেই বসে থকবো। আজ রাত ঘুমোবনা শুধু তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখবো।

আমি, আচ্ছা ঠিক আছে সোনা , আমার প্রান প্রিয় ময়না। তাহলে আজ রাখি চাঁদের জোছনা। তোমায় নিয়ে আমার মনে কত বাসনা, আজ রাত তো আমিও ঘুমাবোনা। তোমার স্বপ্নেই আজ বিভোর থাকবো, তাহলে এখন রাখি কাজ আছে। রাজকুমার, আচ্ছা তুমি কি কাজ কর? সব সময় শুধু কাজ আছে বলে রেখে দাও।

আমি,আরে বুঝনা? সংসারে থাকলে কত কাজ করতে হয়। ঘর ঘুচাতে, রান্না-বান্না করতে অনেক সময় লাগে। আচ্ছা রাখছি বাই। কাজে মন বসেনা,কখন পার্কে যাব দেখা করবো! মনের ভিতর রোমান্সের ঢেউ উঠতেছে। কেমনে দেখা করুম, কেমনে শুদ্ধ ভাষায় কথা কমু! আজ রাতে না ঘুমিয়ে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার জন্য প্র্যাক্টিস করতে হবে। ইশশশ সময় যায়না! আয়নার সামনে নিজেকে দেখে মনে হচ্ছে রূপবতী কন্যা বনলতা সেন। আহারে রাজকুমার তোমাকে পাইলে মসজিদে পাঁচটা মোমবাতি দিমু। যাই পাশের বাসার স্মার্ট আন্টিরে গিয়া কই একটা সুন্দর লাল শাড়ি,ব্যাগ,চুড়ি কানের দুল, হাইহিল জুতো, গলার বাহারী একখান সেট আমাকে দিতে। উনার পড়নে কি সুন্দর সুন্দর কাপড় দেখি! মন চায় উনার মত সাইজ্যা বেড়াইতে। আচ্ছা আগে চাইয়া দেখি দেয় কিনা।

আমি, ঐ স্মার্ট আন্টি একটু গেইটটা খোলতো! স্মার্ট আন্টি,কিরে এই অবেলায় এলি কেন? আমার কষ্ট লাগছে শুয়ে আছি।এখন তুই যা পরে আসিস।

আমি,আরে আন্টি খোলতো!

আমি তোমার পা টিপে দিব,তেল মালিশ করে দিব, প্লিজ একটু খোল। স্মার্ট আন্টি, ঠিক আছে দাঁড়া আসছি। উনার পা টিপতে টিপতে আমি জিনিস গুলো চাইছি ভয়ে ভয়ে। আন্টি আপনার কাছে একটা জিনস চাইবো বলেন দিবেন কি না! শুধু এক ঘন্টার জন্য!

আন্টি, আচ্ছা শুনি কি চাস? তারপর তো দেয়া না দেয়া, তোর মনে যে কি ঢুকছে কি জানি!

আমি, একখান লাল শাড়ি আর তার সাথে মেচিং করে পড়নের সব দিবেন এক ঘন্টার জন্য।

আন্টি,কোথায় যাবি তুই?

আমি,আন্টি আমার বন্ধুর বিয়েতে যাবো।

আন্টি, এইতো ক’দিন হলো ঢাকায় এলে,এর মধ্যে বন্ধু ঝুটিয়ে ফেলেছিস? চমৎকার! তোর এলেম আছে দেখছি!

আমি,আন্টি তুমি যে কি বল! আচ্ছা আন্টি দিয়ে দাও। খালা এসে আমাকে না পেলে চিৎকার চেচামেচি করবে।

আন্টি,ওকে নিয়ে যা। নষ্ট করিসনা কিন্তু বুঝলি?

আমি,আরে চিন্তা করোনা।সময় মত ঘরে পৌঁছাইয়া দিমু। উনার থেকে জিনিস গুলো নিয়া দৌড়াইয়া বাসায় আসলাম। এই কেরামত ভাই ওঠতো, এই জিনিস গুলো রাখতো একটু! খালা দেখলে রাগ করবো।

বাসায় আইসাই তরিঘরি করে কাম কাজ করে খালাকে বললাম আজ বিকেলে একটু বেরোবো। খালা,এই তুই কি কিছু চিনিস? পরে একা একা বাসায় আসতে পারবি? জ্বী খালা পারুম। আমি এখন অনেক কিছুই চিনি জানি। খালা,ঠিক আছে বাসা ভালোভাবে লক করে যাস।আমি অফিসে গেলাম। আমি,ঠিক আছে খালা। খালা যাওয়ার পর চুল গুলো শ্যাম্পু করে, বাসের সাবান দিয়ে ঘষে মেজে এক ঘন্টা ধরে গোসল করেছি। স্মার্ট আন্টির দেয়া শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে সব পড়েছি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজেকে চিনতে পারছিনা। একেবারে যোগ্য রাজকুমারী লাগছে।গায়ের রং এমনিতেই সাদা বেশি মেকাপ করতে হয়নি। সাথে নিয়েছি সাইড ব্যাগ আর চোখে রঙীন চশমা। আরে নিজের রুপ দেখে নিজেই লজ্জা পাচ্ছি।

দরজা লক করে সিঁড়ি দিয়ে নামছি একে একে সবাই আমাকে তীর্যক দৃষ্টিতে দেখছে। সবাই বলছে আরে একি উনি কখন এ বাসায় উঠেছেন? আগেতো দেখিনি? আমি মুচকী হাসি দিয়ে নীচে চলে গেলাম। কিন্তু একটা সমস্যা হাই হিল জুতো পড়ে ঠিক করে হাঁটতে পারছিনা। এই যে কেরামত ভাই দরজা খুলেন আমি রেডি। কেরামত,কে কে আপনি? আরে এভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছেন কেন? আরে কেরামত ভাই ঘুমিয়ে পড়লে নাকি? আমি জরিনা। কেরামত,ওমা আপনি কে? এখন বাড়ি ভাড়া দেওয়া হবেনা, যানতো? আমি, আহারে কেররামত ভাই আমি জরিনাগো, চিনতে পারছোনা? জরিনা সুন্দরী গো এঞ্জেল জরিনা। কেরামত, ওহ তুই আগে বলবিতো! ইশশ তোকে চেনাই যাচ্ছেনা।

ওকে পাঁচ মিনিট ওয়েট কর এখনি রেডি হয়ে আসছি। ওকে আমি বাইরে দাঁড়াইছি। কেরামত, ওকে চল কিন্তু সন্ধ্যার আগেই আসত হবে। হুমম ঠিক আছে। একটা সি এন জি নিয়ে সোজা চলে গেলাম রমনার বটমূলে। একটা ছেলেকে দেখতে পাচ্ছি নীল পাঞ্জাবি পড়ে হাতে গোলাপ গুচ্ছ, বসে আছে এক কোণে। মোবাইলটা অন করেই দেখি অনেক গুলো মেসেজ। তাড়াতাড়ি রিপ্লাই দিয়ে বললাম কইগো তুমি? আমি এসেছি লাল শাড়ি পড়ে হাতে রজনী গন্ধা ষ্টিক। মেসেজ পেয়ে নীচু করা মুখ উঁচু করে আমার দিকে তাকিয়ে একটা রাজ্য জয় করা হাসি দিয়েই হাই কেমন আছো? কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠল। খুব সুন্দর দেখতে, লম্বা,স্বাস্থ্য ফিট,চোখে চশমা পড়নে জিন্স। হুমম ভালো আছি। খুশিতে মনটা অজান্তেই নেচে উঠলো। রাজকৃমার,আমি আসিফ ইকবাল।

আপনার নামটা? হুমম আমি তুলি, এঞ্জেল জরিনা সুন্দরী। রাজকুমার, আপনি আমার কল্পনা থেকেও বেশি সু্ন্দরী। ধূরর কি যে বলেন! আপনি আমার কল্পনার হিরু। কি সুন্দর গোলাপ! আপনি কি করে জানলেন আমার গোলাপ পছন্দ? রাজকুমার, আমি মন থেকে ভালোবাসিতো তাই জেনে ফেলেছি। এই নিন রজনী গন্ধ্যা! রাজকুমার, ওহ মাই গড ! আপনার পছন্দের তারিফ করতে হয়। রজনী গন্ধ্যা আমার খুব প্রিয় ফুল। কি খাবে বলো? চলো বসে বসে বাদাম খাই আর গল্প করি। ওকে চলো। রাজকুমার, আমি আর তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। আজই বিয়ে করতে চাই। ওমা কি বল সত্যি? মনে মনে আমিও খুব খুশি। আজ যে কাপড় চোপড় পড়ে এসেছি পরে হয়ত আর পাবোনা। তাই আমিও বললাম, এস ইউর উইশ। ঢাকা থেকে দুই তিন মাসেই কিছু ইংলিশ ক্যাপচার করেছি যাতে কেউ বুঝতেই না পারে আমি মূর্খ। আরে আমিতো কেলাস টু’তেও পড়ি নাই।

রাজকুমার, চল সন্ধ্যার আগেই বিয়ার কাজটা সেরে ফেলি। পার্ক থেকে বেরিয়েই দেখি কেরামত ভাই সি এন জি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাস তাতেই উঠে পড়লাম। কাজী অফিসে পৌঁছেই দেখি অনেক গুলো বিয়ের মহড়া চলছে। আমরাও সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে পড়ি। বিয়ে সেরে দু’জন দু’জন কে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে। রাজকুমার, তুমি বাসায় চলে যাবে? আমিতো ভাবছি আমার সাথেই যাবে। তাহলে যে আমাদের বাসর বাসি হয়ে যাবে তুলি। কি বল আমিতো বাসায় কিছু বলে আসিনি। তাহলে এখন কি করা যায়? রাজকুমার,আচ্ছা তুলি সত্যি করে বলতো তুমি কাকে বেশি ভালোবাস? আমাকে না কি তোমার বাবা মাকে? আমি কি বলবো গদ গদ হয়ে বলেই দিলাম, কি বলো জান আমি তোমাকেই বেশি ভালোবাসি। রাজকুমার,তাহলে চলো আমার সাথে।

কেরামত ভাইকে একটু দূরে ডেকে নিয়ে বাসার চাবি বুঝিয়ে দিয়েই চলে গেলাম রাজকুমার আসিফের সাথে। ইশশ আমিতো স্বপ্নের মধ্যে চলে গেলাম। আজ এত দিন পর আমার মনের কল্পনার বাস্বায়ন হতে যাচ্ছে। আজ পৃথিবীকে চিৎকার করে জানাতে ইচ্ছে করছে, আমি পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ। আমার মনের মানুষের সন্ধেন পেয়েছি। তার হাত ধরেইে আমি সুখের নীড় গড়তে যাচ্ছি।

হে পৃথিবী তুমি আমায় আজ যা দিয়েছো তা আমি খুব যত্ন করে মাথায় তুলে রাখবো। আমার হাত ওর হাতের মধ্যে নিয়ে খুব রোমান্টিক ভাবে আমার কাঁধে মাথাটা রেখেছে। সুখের মধ্যে আমি হারিয়ে গেছি। আমিও তার মাথায় হাত দিয়ে আদরে বিলি কেটে দিচ্ছি। আজ আমি সফলতার শেষ ধাপে পদার্পন করছি। আমিও আস্তে আস্তে ওর বুকে মাথা রেখে স্বপ্ন সুখ আঁকছি। প্রেম পবনের নাও ভাসিয়ে আজ চলেছি সুখের নীড়ে। হারিয়ে যাচ্ছি প্রেম ভূবনের ভীড়ে।

নতুন চিন্তনে সাজাবো বাসর নিয়তী চলছে কাটেনা প্রহর, চলেছে প্রিয়সী গাড়ির বহর। সুখের ছবি বইবে প্রদীপের নহর। এই যে ড্রাইভার ভাই থামেন থামেন! সি এন জি থেকে নেমেই একটা দশ তলা বিল্ডং দেখতে পেলাম। মনটা খুশিতে বাক বাকুম করে উঠছে। আহারে কতদিনের স্বপ্ন আজ দশ তলায় নরম গদীতে শুয়ে আঁচলে চাবি নিয়ে সারা বাড়িময় ঘুরে বেড়াবো। ও আমাকে বলছে শোন আমার কলিজার ধন টুকটুকি, আমার আমার আমেরিকার বন্ধু রাসেলের বাসা এটা। ওর মা একটু খিটখিটে স্বভাবের মহিলা।তুমি কয়েকদিন একটু মানিয়ে চলবে। কিছুদিনের মধ্যেই তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে যাবো বুঝছো? ওকে ঠিক আছে আসিফ।কলিং বেল বাজাতেই একজন ভদ্র মহিলা গেইট খোলে আমার আদি অন্ত দেখতে লাগলেন। কিছু বূঝে উঠার আগেই আসিফ ঐ মহিলাকে ডেকে একটু আলাদা কথা বলতে একটু দূরে গেলো।

আসিফ, আন্টি আপনি বলেছিলেন কাজের মেয়ে লাগবে। কাউকে খুঁজে পাইনি তাই আমার বউকেই নিয়ে এলাম। আজই বিয়ে করেছি, আমরা দু’জন ই আপনার বাসায় কাজ করবো। আপনি শুধু একটা ঘরের ব্যবস্থা করেন।বুঝেন ই তো নতুন বউ! (কানে কানে)

আন্টি, ওকে বুঝতে পারছি। কিন্তু তোমার বউয়ের যে ভাব নমুনা দেখেতো মনে হয়না কাজ করবে!

আসিফ, আরে আন্টি আপনি ভাববেন না। বিয়ে করে এনেছি এখন আর যেতে পারবেনা।

আন্টি,হাহাহা ওকে ঠিক আছে।

আসিফ,এই গুলগুলি এসো ভিতরে এসো।

ভিতরে গিয়ে দেখি সুন্দর ঘোছানো টিপটপ একটা রুম। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। রান্নাঘরে হাঁড়ি পাতিল অনেক সাজানো ঘুছানো। রাত এগারোটা বাজে পাতিলে মাংস আর মাছের তরকারি। আরেকটাতে অল্প ভাত। এই ভাতে আমার পেট ভরবেনা। তাই অল্প ভাত ফুটিয়ে দু’জনে খুব তৃপ্তি করে খেলাম। খুব রোমাঞ্চ মনে বাসর কাটলো আমাদের। সকালে উঠেই বাসার আন্টি দরজা ধাক্কাচ্ছে, এই আসিফ ওঠো তাড়াতাড়ি! মাত্র আরামে চোখটা বুজেছি আর এই বুড়িটা আরাম হারাম করে দিয়ে চিৎকার করে ডেকেই যাচ্ছে।

আসিফ, কি হয়েছে আন্টি!

ছাদে যাও গিয়ে গাছের গোড়ায় পানি দাও। আর আজ বাসায় মেহমান আসবে সিড়ি গুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে ঝকঝকে করবে।

আসিফ, জ্বী আন্টি।

আন্টি, এই শোন তোমার বউকে বলো নাস্তা বানাতে। আজ অনেক রান্না আছে, ডেকে তোল বউকে মসলা বেটে তরকারি রান্না করতে হবে। আমার সাহেব বাটা মসলার তরকরি ছাড়া খেতে পারেন না।

তুলি, এ্যাই এখানে কি হচ্ছে আসিফ! উফফ শান্তিতে একটু ঘুমোতে পারবোনা? ধূরর চিল্লাচিল্লি আর ভাল্লাগেনা?

আন্টি, ওরে আমার পাট রানীরে ওঠো বলছি! তাড়েতাড়ি থালা বাসন মেজে রান্না কর। আজ বাসায় মেহমান আসছে সব ঘর ঝাট দিয়ে ভালো ভাবে মুছবে।

তুলি, এ্যাই আসিফ কি হচ্ছে এসব? আমি কি কাজের বৃয়া যে এত চাপ নিব। চল আসিফ তোমার বাসায় চলো।

আন্টি, এ্যাই পাট রানী এত লেকচার দিওনা। আসিফের কবে বাসা ছিল? ও আমার বাসায় দশ বছর যাবৎ কাজ করে।

তুলি, কি? এত বড় ধোকা? আন্টি ঝাড়ু কোথায় ওরে আজ ঝাড়ু পিটা করমু।

আন্টি, এ্যাই মেয়ে তুমি কোন নবাব নন্দিনী শুনি? আমি এ্যা ইয়ে মানে মানে আমতা আমতা করছি।

আন্টি, ইয়ে ইয়ে মানে কি?

আমি, কিছুনা।

আসিফ, কি হলো বলো তোমার বাবা বড় ব্যবসা, মা চাকরি করে।

আন্টি, আরে ধূরর কি বলো তুমি?

খোঁজ নিয়ে দেখ ও নিজেও হয়তো কোনও কাজের মেয়ে! আর না হয় চোর ডাকাত হবে! এই যে আন্টি মূখ সামলে কথা বলুন। কাজ করতে পারি ঠিক আছে! তাই বলে চোর ডাকাত নই!

আসিফ, তার মানে তুমিও ধোকা দিছো?

আমি, আমার স্বপ্নডারে একেবারে জীবন্ত কবর দিয়া দিল?

আহারে কত স্বপ্ন ছিল আমার বর কে নিয়ে সিনেমা করবো। দাঁড়া তোরে দেখাইতাছি মজা! আমারে মিছা কথা কইয়া ফান্দে ফালাইছস? এত বড় ধোকা!

আসিফ, আরে তুই এত বড় মিছা কথা কেমনে কইলি? তুইওতো বড় লোকের মেয়ে সাইজা অভিনয় কইরা আমারে ফাসাইছস? তোরেও দেখাইতাছি মজা!

—–আমি এখন যাই, যে যুদ্ধ লাগছে, আমি বাবা এসবে নাই, কি বলেন আপনারা ভাই? টাটা বাই বাই।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত