“যে মেয়েটার সঙ্গে আজ রাতে আমি রুমডেট করতে যাচ্ছি, সে আসলে আমার ডিপার্টমেন্টের এক জুনিয়রের গার্লফ্রেন্ড। ওর নাম কি জানিস?”
“কি?”
“প্রেমা৷ নামটা জোস না?”
“হু।”
“নামে এবং রূপের গুণে দেবী টাইপ হলেও সে লোভী টাইপ মেয়ে। দুইটা মাত্র টোঁপ ফেলতেই কাবু হয়ে গেছে!”
“আচ্ছা, বেশ।”
“আজ রাতে তিন নাম্বার টোঁপ ফেলব। এবং বাজি ধরে বলতে পারি, সে তখন হাসিমুখে নিজের জামাকাপড় খুলে আমার বুকের উপর লুটিয়ে পড়বে!”
“হু।”
“এইসব গল্প তোর ভালো লাগবে না জানি। আমি কিন্তু খুব মজা পাই। পৈশাচিক মজা।”
আমি ফিরে তাকালাম। শফিকের চোখজোড়া আনন্দে চকচক করছে। অসুস্থ ধারার আনন্দ। প্রেমা নামের মেয়েটা হল ওর পঞ্চম শিকার। এর আগেও চারটা মেয়েকে এইভাবে প্রেমিকের বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়ে এসে শয্যাশায়ী করেছে। চারটা গল্পই আমার জানা।
প্রথম দিকে এইগুলা যখন বলত মজা পেতাম। তিন নাম্বার মেয়েটা ছিল অল্প বয়সী। ক্লাস নাইন কিংবা টেনের ছাত্রী। এই মেয়েটাকে নিয়ে সে যাতে খেলা না করে, অনেক রিকুয়েস্ট করেছি। রিকুয়েস্ট কানে নেয় নি। শুয়ারের মত বারবার মাথা ঝাকিয়ে একটা কথাই বলেছে,
“ক্ষমা নাই। ক্ষমার দিন ফুরায়ে গেছে। মেয়ে জাতির উপর থেকে বিশ্বাস আমার উঠে গেছে। এইবার প্রতিশোধের পালা।”
“তুই একটা নষ্ট টাইপ মেয়ের সাথে প্রেম করেছিলি৷ সে তোকে কাঁদিয়েছে। তাই বলে তুই জগতের সকল প্রেমিক প্রেমিকাদের কাঁদাবি? ঘেন্না করবি?”
“ঘেন্না আমি কাউকেই করি না বন্ধু। আমি শুধু একটা খেলা খেলি। এই খেলাটা আমার পেমিকা শিখিয়ে গিয়েছে, how to pay latthi to you hubby. ভালোবাসার বুকে কেমনে লাত্থি দিতে হয়। নিজে প্রথমে লাত্থি খেয়েছি। এখন দশগুণ শক্তি নিয়ে তা শোধ করে বেড়াচ্ছি।”
“নিজের প্রেমিকার উপর তো শোধ নিতে পারছিস না। ওর দেওয়া ঘায়ের জ্বালা মেটাতে নিরপরাধ সব মেয়েদের নিয়ে খেলা করছিস।”
“নিরপরাধ? হা হা হা, নাহ! কেউই নিরপরাধ নয়৷ একেকটা মানুষ আপাদমস্তক লোভের ডিব্বা!”
“তুই ভুল জানিস।”
“নাহ। আমি ঠিক জানি। আজ রাতে যে মেয়েটা আমার বাসায় আসবে, ওরে কেমনে কাবু করছি জানিস?”
“উহু।”
“অবিকল আমার প্রেমিকার মত। নির্ভেজাল একটা সিনিয়রের মতো ওদের সঙ্গে মিশেছি৷ ওদের মধ্যে যখন মান-অভিমান হইত, সাদা মনে উপদেশ দিয়েছি। ভালো ভালো উপদেশ। আমি আসলে অপেক্ষা করছিলাম। লম্বা-চওড়া একটা ব্রেক-আপ এর অপেক্ষা। বড়সড় ঝগড়া। আর এইটা ত হয়ই তাই না? প্রতিটা কাপলের মধ্যেই এইগুলা হয়…”
“হু।”
“দীর্ঘ অপেক্ষার পর ফাইনালি আমি একটা মওকা পেয়েছি। সপ্তাহখানেক আগে মাঝরাতে তারেকের কল পেলাম। প্রেমার সাথে ঝগড়া হয়েছে। প্রেমা তাকে ফেসবুকে ব্লক দিয়েছে। ফোন নাম্বার ব্লক করে দিছে। ছেলেটা আমাকে কল দিয়ে রিকুয়েস্ট করছিল, আমি যেন প্রেমাকে বুঝাই৷ ওর হয়ে উকালতি করি। উকালতি আমি ঠিকই করেছি, কিন্তু একটু অন্য লাইনে… হা হা হা!”
“তুই একটা অসুস্থ মানুষ। কথা বলতে ইচ্ছে হয় না তোর সঙ্গে।”
“জানি জানি, তবুও- আমার এই কর্ম আমি করিয়া রে যাব, বন্ধু রে… হা হা হা!”
“বেকুবের মত হাসছিস কেন?”
“আনন্দে হাসছি বন্ধু। বেশুমার আনন্দ। তারেক এবং প্রেমার মতো একটা দুর্দান্ত কাপলের ভেতরে ঢুকে গিয়ে মেয়েটাকে বিছানায় নিয়ে আসা… ওহ, তুই বুঝবি না। বাইরে থেকে ওদের খুব সুখী মনে হয়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে শালারা দারুণ অসুখী ছিল। মেয়েটার বয়স বাড়ছে। ছেলেটার জব হচ্ছে না। মেয়েটা ভালোবাসে রবীন্দ্রসংগীত। ছেলেটা ছিল কাঠকুট্টা। লাস্ট কয়েকমাসে তুই আমার টাইমলাইনে একটা জিনিস খেয়াল করেছিস?”
“কি জিনিস?”
“আমি খুব ফুল, পাখি আর কিউট কিউট পশুপাখির ছবি দিতাম। এইগুলা আমাকে বাজার থেকে কিনতে হয়েছে, প্রেমার চোখে সাধুপুরুষ সাজার জন্য! ওর মনে কোমল আবেশ ছড়িয়ে দেবার জন্যে।”
“হু।”
“রবীন্দ্রনাথের প্যানপ্যানানি আমার দুইচোখের বিষ। তবুও এই বাল শুনেছি… কবিতার লাইন কপি করে পোস্ট করেছি, এই মেয়েটার বুকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য।”
“ধাক্কা খেয়েছে?”
“খুব। বললাম না, বাইরে থেকে খুব শৈল্পিক ভাব দেখালেও লোভী টাইপ মেয়ে। ওর জন্মদিনের এক সপ্তাহ আগে ব্রেক-আপ হয়েছে। মাঝখানে আমি না থাকলে আবারও প্যাঁচ-আপ হয়ে যেত। কিন্তু আমি তা হতে দিচ্ছি না।”
“তুই কি করবি?” “কি করব মানে? এরমধ্যে অনেক কিছু করে ফেলেছি। পারফিউম ইউজ করলে মন ভালো থাকে, এই সান্ত্বনার টোঁপ ফেলে দামী দামী পারফিউম গিফট করেছি। নিজের গাড়িতে করে ওকে পদ্মার পাড় থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে এসেছি। শিল্পকলায় আলো-আঁধারিতে পাশাপাশি বসে যৌন-সুড়সুড়ি জাগানিয়া নাটক দেখিয়েছি। এই সময়ের ছেলেমেয়েরা গ্লামার পছন্দ করে। শিল্পকলা পছন্দ করে। আমি গ্লামার দেখিয়েছি। আজ রাতে শিল্পকলা দেখাব!” শফিক খুব আয়েশ করে একটা সিগারেট জ্বালায়। নাক-মুখ প্লাবিত করে ভুরভুরিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে। আমি ম্লান কণ্ঠে জানতে চাই, “তুই কি সারাজীবন এইসবই করে বেড়াবি? ভালো হবি না আর?”
“উহু। ভালো হবার শখ আমার মিটে গেছে বন্ধু৷ এক সময় আমি খুব ভালো ছেলে ছিলাম। টেকা ছিল না। ভালো চাকরি ছিল না। শুধুমাত্র এই অপরাধে প্রেমিকার লাত্থি খাইছি। এখন আমি ভালো ছেলে নই। কিন্তু প্রচুর টাকা-পয়সার মালিক। এখন দুনিয়ার তাবৎ প্রেমিকারা আমারে ভালোবাসে।” “ভুল বলছিস। সকল মেয়েরা নয়। শুধুমাত্র লোভী এবং হাবা টাইপ মেয়ে।”
“হা, তুই ঠিকই বলেছিস। লোভী এবং হাবা টাইপ মেয়েরা। কিন্তু তাদের সংখ্যাও তো এই শহরে কম নয় সোনা হাজারে হাজার… লাখে লাখে… হে হে হে!” শফিক, আমার এক কালের ভালো বন্ধু শফিক। সে আজ রাতে ডিপার্টমেন্টের এক জুনিয়রের গার্লফ্রেন্ডকে নিজের রুমে নিয়ে আসবে। এই খুশিতে ওর চোখজোড়া চকচক করছে৷ বুকের ভেতর আনন্দ ধারা উতলে উঠছে। অসুস্থ ধারার আনন্দ। আমি শুধু ওর গল্পটাই শুনতে পারি। আর শুধু লিখতে পারি। এরচাইতে বেশি কিছু করার সাধ্য আমার নেই।
এক সময় সে খুব ভালো ছেলে ছিল। টেকা ছিল না। শুধুমাত্র এই কারণে ওর গার্লফ্রেন্ড বেইমানি করল ডিপার্টমেন্টের এক সিনিয়রের সঙ্গে একান্তে লাইন মেরে বিয়ে করে ফেলল। পরে শুনেছি সেই সিনিয়র নাকি আগে থেকেই শফিকের গার্লফ্রেন্ডকে পছন্দ করত। মাঝেমধ্যে ভাইয়া টাইপ ইমেজ দেখিয়ে কথাও কইত। শফিকের দুরবস্থার সুযোগ কাজে লাগিয়ে সে মেয়েটাকে ভাগিয়ে নেয়। এই ঘায়ের যন্ত্রণা থেকে শফিক এখনো মুক্তি পায় নি। সে এখন স্বঘোষিত নষ্ট ছেলে। প্রচুর টাকা-পয়সার মালিক। দুনিয়ার তাবৎ লোভী ও হাবা টাইপ মেয়েরা এখন ওর শিকার “শফিক “হা!” “একদিন তুই বিয়ে করবি, বউ হবে, বাচ্চাকাচ্চা হবে আমার কথা শেষ হবার আগেই সে সুতীব্র বিতৃষ্ণা মাখা গলায় খেঁকিয়ে উঠে,
“বিয়ে? আমি? হা হা হা! তুই একটা গরু শালা! বিয়েসাদী এই জীবনে আমি আর করিব না বন্ধু! আমি শুধু টেকপয়সা কামাব, আর শুধু শিল্পকলা করে বেড়াব… আর শুধু টেকাপয়সা কামাব… আর শুধু শিল্পকলা করে বেড়াব… আর শুধু টেকাপয়সা কামাব… আর শুধু…