আমাকে একটা সুযোগ দাউ

আমাকে একটা সুযোগ দাউ

আজ আমি মারা গিয়েছি।এক্সিডেন্ট করে মারা গেলাম।পরিবার এর কিছু আপনজন কান্না করছে।আর কিছু লোক আমাকে তাড়াতাড়ি দাফন করার ব্যাবস্থা করছে।আসছ নামাজ এর পর আমার জানাজা নামাজ পড়ে সবাই আমাকে ছোট সাড়ে তিন হাত এর কবরে শুইয়ে দিয়ে গেলো।বাবা কাঁদছে ভাই কাঁদছে। আমি নিরব হয়ে দেখছি।আমি জানি আমার ডাক তাদের কাছে পৌঁছাবেনা। এখন আমি লাশ।এই সুন্দর বিকেলে আমাকে একটা অন্ধকার কবরে রেখে সবাই চলে যাচ্ছে।।অন্ধকার দেখে ছোট থেকেই ভয় পাই।তাই চিল্লানো শুরু করি বাবা আমাকে রেখে যেয়ো না।কেউ আমার ডাক শুনেনি।সবাই চলে গেলো।।বাহিরে কত আলো। আর আমি এই অন্ধকার এ একা বসে রইলাম।।

কিছুক্ষণ পর দুটি আলো দেখতে পেলাম।কিন্তু আলো দুটি স্পষ্ট নয়।আলো দুটি কাছে আসলো আসলে তারা আলো নয় ফেরেশতা। ফেরেশতা নূর এর তৈরী এটা আমি বেচে থাকতে জানতাম। এখন তা জানি না তাই তারা আমার কাছে এখন শুধুই আলো।আলো দুটি আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমার রব কে? প্রেশ্ন শুনে আমি অবাক হই।আমি যখন বেচে ছিলাম তখন এই প্রশ্নের উত্তার আমি পারতাম।কিন্তু এখন এই প্রশ্ন কত অচেনা লাগছে। আমি চুপ করে রইলাম। তখন আবার আলো দুটি জিজ্ঞাস করলো তোমার রাসূল কে? এটার উত্তর ও আমার জানা নেই। তারপর তারা আবার আমাকে জিজ্ঞেস করলো তোমার দীন কী? এবার ও আমি চুপ। আমি মাথা নিচু করে রইলাম।আলো দুটি চলে গেলো।

আমি আমার সুন্দর দেহের কাছে কিছু সাপ বিচ্ছু দেখিতে পেলাম।ছোট থেকেই সাপ এ আমার খুব ভয়।আমি পালাতে চাইলাম।কিন্তু পাড়লাম মা।সাপ আমার দেহে ছোবল মারিছিলো।আমি শুধু কেঁদে যাচ্ছিলাম।সাপ চলে গেলো।আমি আমার দেহের পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম।আমার সুন্দর চুল জড়ে যাচ্ছে।এক সময় এই চুল নিয়ে কত স্টাইল করেছি।এই চুলে কত জেল, শ্যাম্পু লাগিয়েছি।আজ আমার চুল।গুলো রুক্ষ। দেখলাম আমার শরীরের মাংস পচে যাচ্ছে।সে কী বিশ্রী গন্ধ নিজেরই বমি আসছে।এক সময় এই শরীর এ কত না পারফিউম উড়িয়েছি।আমার মস্তিষ্ক পচে আমার কান দিয়ে বের হচ্ছে।।ধীরে ধীরে আমার শরীর কংকাল এ পরিণত হলো।আমার সুন্দর চেহারা নিয়ে আগে কতই না অহংকার করেছি।আজ সেই চেহারা দেখলে ভূত ও ভয় পাবে।

কিছু সময় পর আলো গুলো আবার এলো। আমাকে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে।আমি কিছুই বুঝতেছি না।আমাকে নামাজ এর কথা জিজ্ঞেস করলো।জীবনে জুম্মার নামাজ ছেড়ে তেমন কোন নামাজ পড়িনি।।একটা আলো তার খাতায় লিখলো আমি কোন নামাজ পড়িনি তখন আমি প্রতিবাদ এর সুরে বললাম আমি জুম্বার নামাজ পড়েছি।একটা আলো হেসে উঠলো আর বল্লো।তোমার নামাজ হয়নি উলটে পাপ হয়েছে।আমি বললাম কেনো।এটা তো চিটিং।আলো বল্লো।তুমি নিজে থেকে কী নামাজ পড়তে?.তুমি লোক দেখানো নামাজ পড়তে।তোমার মা বাবার ভয় এ সপ্তাহে একদিন নামাজ পড়তে।আল্লাহ এর ভয় এ নামাজ পড়তে না। মনে মনে ভাবলাম কথা তো ঠিক।।এভাবে আলোর খাতায়। আমার নামাজ শুণ্য লিখা হলো।একটা আলো আমাকে জিজ্ঞেস করলো কোনদিন কাউকে কুনজরে দেখেছো?মানে যেনা করেছোরেছো?আমি চুপ করে রইলাম।কারন আমি জীবনে অনেক ক্রাশ খেয়েছি।এমন সময় আমার চোখ আপনা আপনি বলতে শুরু করলো।আমি তিন দিন আগেও এক মেয়ের উপর ক্রাশ খেয়েছি।চোখ আমার সব ক্রাশের কথা বলে দিলো।আলো আমার যেনার হিসাব খাতায় লিখলো।আমি তখন বললাম এতে আমার দোষ নেই সব মেয়েরাই বেপর্দা হয়ে ঘোরে।

এর জন্য তো মেয়ে গুলো দায়ী।মেয়ে গুলোর শাস্তি হওয়া উচিত।এক আলো হেসে বল্লো মেয়ে গুলোর শাস্তি হবে।কঠিন শাস্তি হবে।কারন ওই মেয়ে গুলোর জন্য তোমার মত আরো অনেক ছেলে যেনা করছে।তবে তোমার ও শাস্তি হবে।আমি বললাম কেনো।আলো বল্লো মেয়ে গুলো শুধু পর্দার কথা বলা হয়নি তোমাদেরও যেনা করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।মেয়ে গুলো যখন উগ্র ভাবে চল্লো তখন তুমি চোখ বন্ধ রাখতে পারতে।তুমি তা করোনি।তুমি আরো আগ্রহ নিয়ে তাকিয়েছ। কথায় যুক্তি আছে তাই আমিমি চুপ।এবার তারা আমারর পর্দার কথা বল্লো।আমি বললাম পর্দা তো মেয়েদের জন্য আমি তো ছেলে।আলো হেসে বল্লো।ভুল তুমি।পর্দা তোমার জন্য ও ছিলো।আমি বললাম কেমন?আলো বল্লো টাখনোর উপর জামা পড়া।সাথে ঢিলাজামা পড়া।তখনি মনে পড়লো আমি তো সারাজীবন টাইট জিন্স পড়েছি।ফিটিং শার্ট পড়েছি।।আমার পর্দার জায়গায়ও আমি শুন্য পেলাম।।

এবাবে আমার হাত, পা, সবকিছুর হিসাব নেওয়া হলো আমিমি সব জায়গা শুন্য পেলাম।আলো গুলো আমাকে একটা দরজার সামনে নিয়ে গেলো। দরজার সামনে দাড়িয়েই আমি অনুভব করছিলাম ভেতর এ অনেক গরম তার পর আলো গুলো আমাকে দরজার উপারে এক আলোর হাতে তুলে দিলো।উফফ কী গরম।।বেচে থাকতে সব সময় এসির নিচে থাকতাম।আর এখানে শুধু আগুন আর আগুন।।একটু পর আলো টা আমাকে এক বড় আগুনের লাভার মাঝে নিক্ষেপ করলো।আমার পুরো শরীর জলে যাচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে।আমি চিৎকার করছি।আমাকে বাচাও।কেউ আমার কথা শুনলো না।কিছুক্ষন পর আমাকে আগুনের লাভা থেকে তুলে এনে একটি গরম করাত দিয়ে আমার টাখনুর নিচে কাটতে থাকলো।আমি বার বার বলছলাম থামো থামো।আমাকে ক্ষামা করে দাও।আমার গলাটা খুব শুকিয়ে গেছে আমি একটু পানি চাইলাম আলো টা আমাকে এক গ্লাস পুজ খেতে দিলো।আমি পুজ দেখে খেতে চাইলাম না।আলো আমাকে জোড় করে খাওয়ালো।।একটু পর একটা বড় রড় গরম করে আমার চোখ উপড়ে ফেলা হলো।

আমার হাত কেটে ফেলা হলো।কিছুক্ষণ পর আমার সব শরীর আবার জোড়া লাগানো হলো।আমি তখন বললাম।আমাকে একটা সুযোগ আবার দাউ আমি সত্যি আল্লাহ এর প্রিয় বান্দা হবো।কেউ আমাকে সুযোগ দিতে রাজী নয়।তখন আমি রেগে গিয়ে বললাম আমার আরো হায়াত আছে।আমি তো এক্সিডেন্ট এ মরেছি।আমাকে আমার বাকী জীবন টুকু দাউ।কেউ আমার কথায় কান দিল না।দিন দিন আমার শাস্তি বেড়েই যাচ্ছে।আমি প্রতিদিন একটা সুযোগ চাই।।আমাকে একটা সুযোগ দাউ।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত