দুইবছর রিলেশনের পর আজ দুই পরিবারের সম্মিততে সাকিব আর অরিনের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।সাকিব পড়াশুনা শেষ করে ওর বাবার ব্যবসা সামলাচ্ছে। সাকিব বাসর ঘরের সামনে দাড়িয়ে আছে।সাকিবকে ওর বন্ধুরা বাসর ঘরে ঢুকিয়ে দিলো।সাকিবকে ঘরে ঢুকতে দেখে অরিন বিছানা থেকে উঠে এসে ওকে সালাম করলো। সাকিব অরিনকে বিছানায় বসালো।তারপর বলল:
সাকিবঃ-জানো আমি এই দিনটাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতাম।
অরিনঃ-ও আচ্ছা তাই।ঠিক তাহলে আজ আমরা সারারাত গল্প করে কাটিয়ে দিবো কেমন?
সাকিবঃ-ঠিক আছে।
অরিনঃ-আমরা তো সবসময় সুখের গল্প করেছি, আজ তুমি তোমার জীবনে ঘটে যাওয়া কোন দুঃখের কথা বলবে?
সাকিবঃ-দুঃখের কথা শুনবে।(দীর্ঘশ্বাস ফেলল)
অরিনঃ-হুম বলো।
সাকিবঃ-আমার একটা ছোট ভাই ছিলো।দেখতে অনেক সুন্দর, আর মায়াবী।
অরিনঃ-ভাই ছিলো! কিন্তু আমি তো জানতাম তুমি বাবা-মার একমাত্র ছেলে।আর সে কোথায়?
সাকিবঃ-ও তো আমাদের ছেড়ে সেই কবে এমন জায়গায় গেছে যেখান থেকে কেউ আসতে পারে না।
অরিনঃ-কিভাবে ও মারা গেছে?
সাকিবঃ-তাহলে বলছি শুনো।
আমার যখন ৭ বছর তখন আমার ভাই সিয়ামের জন্ম হয়।তবে ও আমার নিজের ভাই হলেও সিয়ামকে আমি সহ্য করতে পারতাম না।ওর কোন কাজই আমার ভালো লাগতো না। যখন কোন কাজ করতাম তখন এসে আমার কাছে এটা ওটা নিবে বলে বায়না ধরতো।তখন রেগে গিয়ে হয়তো গালি দিতাম বা দুই একটা মারধর ও করতাম ঈদের কয়েকদিন আগে আমি আমার মার্কেট করে নিয়ে বাসায় আসলাম।তখন আমি ইন্টারে পড়তাম। সিয়াম আমায় এসে বলল:
সিয়ামঃ-ভাইয়া তুমি তো তোমার মার্কেট করলএ আমাকে মার্কেটে নিয়ে যাবে না?
আমিঃ-তুই বাবার সাথে যাস।
সিয়ামঃ-বাবা তোমার সাথে যেতে বলেছে আর আমি তোমার সাথেই যাবো।
আমিঃ-সিয়াম জেদ করিস না আমি তোকে নিয়ে যেতে পারবো না। তখন মা এসে বলল:
মাঃ-নিয়ে যা,তোরই তো ছোট ভাই।
আমিঃ-আমি পারবো না মা।
মাঃ-তুই ওর সাথে ভালো ব্যবহার করিস না এখন আবার ওকে মার্কেটেও নিয়ে যেতে চাইছিস না তোর সমস্যাটা কি?
মার কথায় বাধ্য হয়ে মার্কেট নিয়ে গেছিলাম।মার্কেটে হাঁটার সময় বার বার হাত চেপে ধরতো তখন রেগে গিয়ে বকতাম।একদিন আমি আমার প্র্যাকটিকাল করছিলাম এমন সময় ও এসে আমার খাতায় দাগ দিলো।তখন ইচ্ছা মতো সিয়ামকে পিটালাম। আর প্রতিদিন সিয়াম আমার সাথে ঘুমাতে চাইতো।আমি নিতে চাইতাম না কিন্তু মা-বাবার কথা ভেবে ওকে আমার কাছে নিতাম।
একদিন রাতে ঘুমাচ্ছি হঠাৎ ও জোরে জোরে কেশে উঠলো আমি বেশ কয়টা ধমক দিলাম।তারপর আবার ও কেশে উঠলো।তখন ওর দিকে তাকাতেই থমকে গেলাম।দেখলাম ওর কাশির সাথে রক্ত বের হচ্ছে।তখনি আমি মা-বাবা কে চিৎকার দিয়ে ডাকলাম।মা তো সিয়াম কে দেখে কান্না শুরু করে দিলো। পরেরদিন ওকে হসপিতালে নিয়ে যাওয়া হলো। তারপর সেখানে বিভিন্ন পরিক্ষা নিরিক্ষার পর ডাক্তার জানালো ওর ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে। কথাটা শুনার পর মা-বাবা দুইজনে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলো। আমি দুর থেকে দেখছিলাম।আমার সেদিন খুব খারাপ লাগছিলো ওর সাথে এমন ব্যবহার করায়। দিন দিন সিয়ামের শরির আরো খারাপ হতে লাগলো। আমি রাতে শুয়ে আছি।পাশের ঘরে মা সিয়ামকে নিয়ে বসে আছে।সিয়াম মা কে বলছিলো:
সিয়ামঃ-মা যখন ভাইয়া আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে তখন আমার খুব কষ্ট হয়।স্কুলে যখন আমার বন্ধুরা তার ভাইদের সাথে স্কুলে যায় তখন আমারো খুব ইচ্ছে হয় আমার ভাইয়ার সাথে স্কুলে আসার,খেলা করার কিন্তু ভাইয়া তো আমায় সহ্য করতে পারে না।কেন এমন করে মা?
মাঃ-জানি না বাবা।
একথা শুনার পর দেখলাম আমার অজান্তেই চোখে পানি চলে আসছে।মনে মনে ভাবলাম”সত্যিই তো আমি ওকে সহ্য করতে পারি না,ও তো আমার নিজের মায়ের পেটের ভাই তবু ওর সাথে এমন ব্যবহার করি কেন? ওর অবস্থা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেলো।হসপিতালে ওকে ভর্তি করানো হলো?একটু একটু কথা বলছে।আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম তখন আমাকে বলল:
সিয়ামঃ-ভাইয়া আমি মনে হয় আর বাঁচবো না তাই না?
আমিঃ-কিচ্ছু হবে না তোর ভাই।আমি আছি তো তোর পাশে।আমি তোকে স্কুলে নিয়ে যাবো,তোর সাথে খেলবো।সবকিছু করবো।তুই চিন্তা করিস না ভাই একদম ঠিক হয়ে যাবি।
তখন শেষ বারের মতো ওর হাসিটা দেখলাম।আস্তে আস্তে ও চোখ বন্ধ করে ফেলল।জরিয়ে ধরে খুব কান্না করলাম।বার বার ওকে দেওয়া কষ্টগুলোর কথা ভেবে আরো বেশি কান্না আসছিলো।কখনো ওকে একটু স্নেহ ভরা কথা বলিনি।সবসময় ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি।
ধোয়ানোর পর যখন ওকে দেখেনোর জন্য রাখা হলো তখন সুরমা চোখে কতটা মায়াবী লাগছিলো।ইচ্ছে করছিলো না ওকে একা ছেড়ে দিই।কিন্তু আমার যে আর কিছু করার নেই।তারপর সবাই মিলে গিয়ে রেখে আসলাম অন্ধকার কবরে।বাড়িতে আসার পর বাড়িটা কেমন শূন্য শন্য লাগছিলো।সিয়ামের কথা ভেবে বুকটা ভারি হয়ে আসছিলো।
আজকের পর থেকে কেউ আর আমার সাথে এটা ওটা নেওয়ার জন্য বায় না ধরবে না।রাতে ভয় পেলে কেউ আর আমায় জড়িয়ে ধরবে না।মাফ করে দিস তোর এই পাষাণ হৃদয়ের ভাইটাকে। গল্পটা শেষ করার পর দেখলো অরিনের চোখে পানি।অরিন সাকিব কে বলল:
অরিনঃ-সিয়ামের কি দোষ ছিলো যে ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে?
সাকিবঃ-কিছু করে নি ওকে আমি বোঝা মনে করতাম?কিন্তু এখন বুঝতে পারছি ও আসলে আমার দেহেরই এক অংশ ছিলো।
অরিনঃ-কষ্ট পেয়ো না,অযু করে এসো যাও।দুইজনে নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন সিয়াম যেখানেই থাকে ভালো থাকে।
সাকিবঃ-হুম।









