সাব্বির- ভাই দুই টাহা দিবেন!
-ঐ পোলা কিছু করতে পারিস না? এভাবে ভিক্ষা করছিস?
সাব্বির- ভাই আমার হাত ভাঙ্গা, ডাক্তার কাজ করতে নিষেধ করছে।
-এই ধর পাঁচ টাকা!
।।
সাব্বির খুশী হয়ে রাস্তার অন্য পাশে চলে গেলো।।
রাত ৯ টা! সাব্বির একটা হোটেলে চলে গেলো!
।।
সাব্বির- বস, সালাম!
নীরব-(হোটেলের ম্যানেজার) কিরে আজ কতো টাকা ইনকাম হলো?
সাব্বির- বেশি না সতেরো টাকা। এই নেন ১০ টাকা!
নীরব- এই সেলিম(হোটেল বয়)
সেলিম- জি ভাই বলেন।
নীরব- সাব্বিরের জন্য এক প্লেট ভাত আর একটা ডিম নিয়ে আসো।
।।
নীরব- সাব্বির! তুই কাজ টা কিন্তু ঠিক করছিস না, তুই পড়তে ভালবাসিস, আমি সেটা সম্মান করি,
কিন্তু এভাবে মিথ্যা বলে টাকা নিচ্ছিস, যদি কোন দিন ধরা পড়িস? এর চাইতে তুই হোটেলে এক বেলা কাজ কর,
আর তোকে ১০-২০ টাকায় আমি তিন বেলা খেতে দিচ্ছি, একদিন মালিক জানতে পারলে আমাকেও চাকুরী থেকে বের করে দিবে।
।।
সাব্বির- ভাই, আমি এখন ক্লাশ ফাইবে! আর তিন মাস পর ঠিক কাজ করা শুরু করবো, শুনেছি হাই- স্কুলে উঠলে বেশি স্কুল যেতে হয় না।
নীরব- গত সপ্তাহে যে তোর পরীক্ষা ছিল কতো নাম্বার পেয়েছিস?
সাব্বির- ৫০০ এর মধ্যে ৪৬৬
নীরব- খুব ভালো! আর এই নে একটা খাতা আর একটা কলম, বেশি করে অংক করবি। খাওয়া শেষ করে হোটেলের পিছনে চলে যাবি,
ওখানে একটা লাইট জালানো থাকে। তুই ওখানে গিয়ে পড়বি।
।।
এই হচ্ছে সাব্বির! নিজের বলতে কেউ নাই, ঢাকা শহরের একটা বস্তি তে সে মানুষ! একবার দুর্ঘটনা বশত তার হাত ভেঙ্গে যায়,
তখন এই এই নীরব নামের ছেলেটা তার হোটেল মালিকের হাত-পা ধরে সাব্বিরের ভাঙ্গা হাত ঠিক করে।
।।
সাব্বির তেমন কোন কাজ করে না, কারণ সে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্কুলে থাকে, আর সন্ধার পর সে হাতে ব্যান্ডিজ করে ভিক্ষা করে।
।।
আর নীরব! গ্রাম থেকে এসেছে! ভালো চাকুরী পায় নি তাই হোটেলে কাজ করে আপাতত নিজের খরচ কোন রকম চালিয়ে নেয়।
।।
কয়েক মাস পরের কথা!
সামনে সাব্বিরের সমাপনী পরীক্ষা!
সাব্বির- ভাই আজ ইনকাম তেমন হয় নি, মাত্র ১৫ টাকা
নীরব- তোর কাছে রেখে দে! তুই হোটেলের পিছনে যা আমি আসছি।
নীরব একটা প্লেটে করে সাব্বিরের জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছে। সাব্বির ভাতে মুখ দিবে ঠিক এই সময় মালিক এসে হাজির!
।।
মালিক- এটা কি তোর বাপের ভাত, ভিখারির ছেলে! যা এখান থেকে সব!
।।
সে দিন রাতে সাব্বির ভাত খেতে পেলো না, নীরবের ও চাকুরী চলে গেলো।
সাব্বির- ভাই আমার জন্য আপনার এই সমস্যা হলো। আমাকে মাফ করে দিবেন!
নীরব- সেটা কোন ব্যাপার না, তোকে আজ ভাত খাওয়াতে পারলাম না! তুই পড়া ছাড়িস না।
সাব্বির- আপনি এখন কোথায় যাবেন?
নীরব- আমার এক ভাই আছে আপাতও ওখানে যাবো, তবে আমি আসবো। সামনে পরীক্ষা তুই চিন্তা করিস না।
।।
এভাবে কয়েক দিন পর সাব্বিরের পরীক্ষা চলে আসলো, সাব্বির পরিক্ষাও শেষ করলো।
আজ দুই দিন থেকে সাব্বির পানি আর রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া একটা বাসি রুটি ছাড়া কিছু খায় নি।
পরীক্ষা শেষ করে সে নীরব ভাইকে বলেছিল যে সে আর ভিক্ষা করবে না, সে কাজ খুজতে শুরু করলো।
কিন্তু কোথায় সে কাজ পেলো না, রাত ৯ টা সেই হোটেলের সামনে খিদেই আর এক পা চলতে পারছে না সাব্বির।।
সাব্বির- মালিক, আমি দুই দিন থেকে কিছু খায় নি, আমাকে খেতে দিন, আমি কাল সারা দিন আপনার হোটেলে কাজ করবো।
মালিক- দূর হও, ভিখারির বাচ্চা!
সাব্বির চুপ করে হোটেলের পিছনে চলে গেলো, সে জানে ওখানে কিছু বাসি খাবার গুলো পড়ে থাকে!
সাব্বির ডাস্টবিন খুঁজে কিছু পেয়েও গেলো, সে ওগুলো খেতে শুরু করলো, রাস্তার পাশ দিয়ে একজন দৌড় দিলো, সে একটা ব্যাগ ফেলে দিলো,
পিছন থেকে কিছু মানুষ চোর চোর বলে দৌড় দিয়ে আসছে।
সাব্বিরের পাশে ব্যাগ দেখে তাকে মারতে শুরু করলো!
পরে মহিলা এসে বলল, আমার যে ব্যাগ নিয়েছে সে বড় ছেলে, ওর দাড়ি আছে, এতো পিচ্চি, এ ঐ ছেলে না!
কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।
– এই দেখতো ছেলেটা মরে গেলো না তো।
– কোন সারা শব্দ নাই তো।
– দেখি দেখি, এতো মরে গেছে, চল সবাই এখান থেকে সরে পড়ি না হলে কেসে পড়ে যাবো।
।।
পরের দিন নিউজ পেপারে আসলো, রাস্তার পাড়ে একটা বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া গেছে।
।।
দুই মাস পরের কথা!
নীরব মিষ্টি নিয়ে সেই এলাকাতে এসেছে, আজ সে অনেক খুশী কারণ একে তো তার একটা কোম্পানিতে ভালো চাকুরী হয়েছে
আর দ্বিতীয় হলো আজ সাব্বিরের রেজাল্ট হয়েছে সে এই শহরের প্রথম হয়েছে, তার রেজাল্ট দেখে পড়াশুনার খরচ
একটা কোম্পানি চালাবে বলেছে, কিন্তু সে এলাকাতে এসে তার মাথায় বাজ পড়লো। দুই মাস থেকে নাকি সাব্বিরকে কেউ দেখে নি।
অনেক খুজার পর ও নীরব আর সাব্বিরকে আর খুঁজে পেলো না…।
…………………………………..সমাপ্ত……………………………….