সাকিব তার অর্ধ নগ্ন শরীরটাকে তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রেখেছে আর তার পাশে শুয়ে থাকা শ্রাবণী ওর নগ্ন শরীরটাকে বিছানার চাদর দিয়ে কোন রকমভাবে ঢেকে রেখেছে। সাকিব সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে মুখে থাকা জ্বলন্ত সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে শ্রাবণীকে বললো,
— পরের শনিবার একটু তাড়াতাড়ি এসো গাল বেয়ে পড়া কৃষ্ণবর্ণের চোখের জলটা মুছতে মুছতে শ্রাবণী বললো,
– তুমি বলেছিলে আজকের পর আমায় মুক্তি দিবে। সাকিব জ্বলন্ত সিগারেটের ছাইটা ফেলতে ফেলতে বললো,
— তোমায় মুক্তি দিতে ইচ্ছে হয় না। তোমার শরীরের ঘ্রাণ আমার পাগল করে তুলে। শনিবার ঠিক ১১টার সময় চলে আসবে। যদি ১১ঃ ১০ বেজে যায় তাহলে তোমার নগ্ন শরীর পুরো দেশ দেখবে…
কথাটা শেষ করে সাকিব জ্বলন্ত সিগারেটটা শ্রাবণীর হাতে চেপে ধরে মুচকি হাসলো। শ্রাবণীর ফর্সা হাতটা নিমিষেই জ্বলসে গেলো কিন্তু এতে শ্রাবণীর বিন্দু পরিমাণ যন্ত্রনা হচ্ছে না কারণ এত চেয়ে হাজার গুণ বেশি যন্ত্রণা ওর বুকের ভিতর চেপে আছে…
রাতে খাবারের সময় পিয়াস খেয়াল করলো ওর স্ত্রী শ্রাবণীর হাতটা পুড়ে গেছে। বিয়ের পর থেকে পিয়াস খেয়াল করছে শ্রাবণী কি নিয়ে যেন সারাক্ষণ চিন্তা করে। প্রয়োজন বাদে শ্রাবণী পিয়াসের সাথে খুব একটা কথা বলে না। পিয়াস যদি কোন প্রশ্ন করে শ্রাবণী শুধু তার উত্তর দেয়। পিয়াস প্রথমে ভেবেছিলো হঠাৎ করে বাবা মাকে ছেড়ে এসেছে দেখে হয়তো মন খারাপ থাকে কিন্তু ইদানিং মনে হচ্ছে বিষয়টা অন্য কিছু হবে পিয়াস শ্রাবণীকে বললো,
— হাত পুড়েছে কিভাবে? শ্রাবণী কিছুটা চমকে গিয়ে উত্তর দিলো,
– রান্না করতে গিয়ে পিয়াস টেবিলের ড্রয়ার থেকে মলমটা বের করে শ্রাবণীর হাতে লাগিয়ে শ্রাবণীকে বললো,
–তুমি আমার কে? শ্রাবণী মাথাটা নিচু করে উত্তর দিলো,
– স্ত্রী পিয়াস শ্রাবণীর মাথায় হাত রেখে বললো,
— স্ত্রী শব্দের মানে জানো? শুধু তিন বার কবুল বললে আর সাথে সাথে তুমি আমার স্ত্রী হয়ে গেলে বিষয়টা কিন্তু তা না। স্ত্রী হতে হলে নিজের মনের সম্মতি থাকতে হয়। তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী। মানে আমার শরীরের অর্ধেকটা অংশ। কয়েকদিন আগেও আমি একা ছিলাম কিন্তু এখন তুমি আমার অর্ধেকটা জুড়ে আছো। আমি এখন চাইলেও একা সুখী হতে পারবো না কারণ অর্ধেক সুখ তোমায় নিতে হবে। তেমনি তুমি চাইলেও একা কষ্ট পেতে পারবে না। কারণ তোমার কষ্টের অর্ধেক ভাগ আমায় দিতে হবে। যদি তুমি না দাও আখিরাতে তোমার প্রতি আমার দাবী থাকবে। আমি আল্লাহকে বলবো তুমি আমায় ঠকিয়েছো৷ আমার ভাগের কষ্টটা তুমি আমায় দাও নি শ্রাবণী পিয়াসের কথাগুলো শুনছিলো আর চোখের জল ফেলছিলো। পিয়াস শ্রাবণীর চোখের জলটা মুছতে মুছতে বললো,
— আমায় বলো কি হয়েছে? শ্রাবণী বললো,
– আমার একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিলো। আমি ওর জন্য এতটাই পাগল ছিলাম আর এতটাই বিশ্বাস করতাম যে, ও যা বলতো আমি তাই করতাম। আস্তে আস্তে আমাদের সম্পর্কটা গভীর হয়ে যায়। আমি বুঝতে পারতাম যে আমি অন্যায় করছি কিন্তু ওর(সাকিব) প্রেমে অন্ধছিলাম দেখে ওকে না করতে পারি নি। যখন আপনার সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে তখন আমি সাকিবকে বললাম আমায় বিয়ে করতে কিন্তু সাকিব না করে দিলো ও আমায় বিয়ে করতে পারবে না। আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করবো। সুইসাইড করতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পারি নি। সুইসাইড করতে অনেক সাহসের দরকার হয় যা আমার নেই। এখন আপনার সাথে আমার বিয়ের পর সাকিব আমায় এখনো ব্লাকমেইল করছে। প্রতি শনিবার ও আমায় ডাকে। যদি না যায় তাহলে আমাদের কিছু ঘনিষ্ট মুহূর্তের ছবি ও ইন্টারনেটে দিয়ে দিবে….
রাত ১২ঃ৪০ বাজে। সাকিব মিতু নামের একটা মেয়ের সাথে প্রেমের আলাপ করছে। হঠাৎ ও খেয়াল করলো পাশের রুম থেকে কিসের যেন একটা আওয়াজ আসছে। সাকিব সিলিং ফ্যানটা বন্ধ করে দিলো। এখন শব্দের আওয়াজটা স্পষ্ট শুনতে পারছে। ওর ছোট বোন কান্না করছে। সাকিব ওর বোনের রুমে উঁকি দিয়ে দেখে ওর বোন ফ্যানের সাথে নিজের ওড়না বাঁধছে । সাকিব দৌড়ে ওর রুমে এসে ওর বোনকে থাপ্পড় মেরে বললো,
— তুই এইসব কি করছিস? ওর বোন কাঁদতে কাঁদতে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– ভাইয়া আমি ভুল করে ফেলেছি। যাকে বিশ্বাস করেছিলাম সে আমায় ধোঁকা দিয়েছে…
বোনের মুখ থেকে এতটুকু কথাশুনে সাকিব বুঝতে পারলো ওর বোনের সাথে কি কি হয়েছে কারণ সে নিজেও অন্যের বোনের সাথে সেইম কাজটা করেছে। এই মূহুর্তে ওর মনে পড়ছে আজ শ্রাবণীর সাথে এমনটা না করলে হয়তো ওর বোনের সাথে এতবড় সর্বনাশ হতো না শ্রাবণী নিজের দিকে তাকিয়ে পিয়াসকে বললো,
– আমি আপনাকে ঠকিয়েছি। আমায় এই রাতটুকু সময় দেন। কাল সকালে আমি আমার বাবার বাসায় চলে যাবো পিয়াস শ্রাবণীর হাতটা ছেড়ে দিয়ে পাশে থাকা ঘড়িতে ৫ টাই এ্যালাম দিয়ে বললো,
— আজকের পর কোন শানিবারে তুমি বাসা থেকে বের হবে না। এখন থেকে প্রতিদিন ৫ টাই ঘুম থেকে উঠে আমার সাথে ফজরের নামাজ পরে আল্লাহ কাছে নিজের কৃতকর্মের জন্য মাফ চাইবে। কথা দিচ্ছি তোমায় না নিয়ে আমি জান্নাতে প্রবেশ করবো না। আর মনে রেখো তোমার যেকোন পরিস্থিতিতে আমি তোমার সাথে আছি একপাশে পিয়াস ঘুমাচ্ছে আর অন্য পাশে শ্রাবণী জেগে চোখের জল ফেলছে তবে আজকের চোখের জলটা অন্যদিনের চোখের জলের চেয়ে ভিন্ন….