আজ আমার ব্রেকআপ।
রাত ১১ টা! বাড়ীর ছাদে একা একা বসে আছি। একি গান বাজছে দুই ঘণ্টা থেকে, এর মধ্যে দুই বার কারেন্ট গেছে এসেছে। ১ লিটার 7up প্রায় শেষের পথে, সিগারেট খায় না না হলে এতক্ষণে হয় তো ২ প্যাকেট শেষ করে দিতাম।
।।
চশমা পরা মেয়েটাকে যেন কিছুতেই ভুলতে ভুলতে পারছি না। ফার্স্ট সাইট লাভ বলে ইংরেজিতে মনে হয় একটা কথা আছে। তবে এটা হয়তো তেমন কিছু না, মেয়েটাকে যে প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়েছিলাম সেটা কিন্তু না, কারণ আমি পিচ্চি না, আর আবেগের বয়স আর আমার নাই। ১ বছর পর গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করবো। কিন্তু অনেক কষ্ট করেও আবেগ ধরে রাখতে পারলাম না। ঘটনা টা আজ বিকেলের কথা।
।।
রুয়েটের সামনে চায়ের দোকানে বসে আছি। কানে ইয়ার-ফোন দিয়ে ভদ্র ছেলের মতো গান শুনছিলাম।
সামনে এক ভাইয়া এসে বসলো, তারপর সেই আপুটা, আপু কেন বলছি পরে বলবো।
আমার খুব মাথা ব্যাথা করছিলো, তাই চা খাচ্ছিলাম আর ফেসবুকে ইতিহাস পড়ছিলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে ভাইয়াটা চলে গেলো।
ছোট বেলা থেকে আমি মেয়েদের থেকে ১০০ হাত দূরে, কিন্তু ভার্সিটি লেভেলে এসে বুঝলাম, ভালো হওয়া ভালো তবে অতিরিক্তি ভালো ভালো না।
।।
তাই এক বুক সাহস নিয়ে আপুকে সালাম দিলাম।
আপুকে জিজ্ঞেস করলাম উনি রুয়েটে পড়ে কি না? উনি হ্যাঁ উত্তর দিলেন।
আমি রুয়েট-এ একটা কোর্স করছি, আর এখান থেকে এমএসসি করার ইচ্ছা তাই ওনাকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকলাম, জানতে পারলাম উনি রুয়েটের ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী। যদিও বয়সের দিক দিয়ে মনে হয়না যে উনি আমার বড়, কিন্তু সম্মানের খাতিরে আপু ডাকলাম,
।।
আপু আমার প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর খুব হাঁসি মুখে উত্তর। এতো একটা ভালো মনের মানুষের প্রেমে আমি পড়বো না কীভাবে? অনেকক্ষণ মনটা কে বেঁধে রেখেও আর রাখতে পারলাম না। আপু আর আপুর বাই-সাইকেলের প্রেমে পড়ে গেলাম,
ক্ষণিকের মধ্যে একবার ভাবলাম, রুয়েটের মধ্যে এভাবে আমি আর আমার মিষ্টি আপুটা সাইকেল চালিয়ে ক্লাশ করতে যাচ্ছি।
।।
রাতে আপু ফোন দিয়ে বলছে, আজ কি কি শিখালা? IP এখন ভালো করে বসাতে পারছো তো? নাকি এখন ও সমস্যা? সমস্যা হলে কাল একটু আগে এসো, ঐ চায়ের দোকানে এসো। আমি শিখিয়ে দিবো। মেয়েরা ও যে রং চা পছন্দ করে এটা ওনাকে না দেখলে হয়তো বিশ্বাস করতাম না।
হয়তো ভোর ৫ টায় ফোন দিয়ে বলতো, এখন ও ঘুমাচ্ছো? যাও উঠো। নামাযে যাও। তারপর পড়তে বসবা, তোমাকে ফার্স্ট হতে হবে।
।।
হয়তো মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে বলতো, সাবধানে বাসায় যেও।
হয়তো মাঝে মাঝে মধ্য রাতে ফোন দিয়ে বলতো, আজ চাঁদটা দেখো কতো ভালো লাগছে?
আবার মাঝে মাঝে বলতো, জানো আমার এই বান্ধবীর ঝগড়া হয়েছে, আচ্ছা আমাদের ঝগড়া হয় না কেন?
আমি বলতাম, ওদের মধ্যে ভালোবাসা বেশি কিন্তু বিশ্বাস কম। আর আমাদের মাঝে হয়তো ভালোবাসা কম হলেও বিশ্বাস অনেক বেশি তাই।
।।
হয়তো এই কথা শুনে সে অভিমান করতো। আমি তাকে বিনা গিটারে আমার কোকিল কণ্ঠের গান শুনাতাম, তখন আমার মন রাখার জন্য বলতো, অনেক ভালো হয়েছে। থ্যাংকস। অথচ জানি আমার গলার গান শুনে মাইক ফেটে যাবে।
।।
যে দিন রুয়েটে যেতাম না! বড্ড অভিমান করে ফোন করতো, জানো! আজ একা একা চা খাইতেছি, তুমি কেন আজ আসলা না?
আমার তখন অজান্তেই চোখের কোণে এক ফোঁটা জল চলে আসতো।
কারণ আমি তাকে তখন কোন উত্তর দিতে পারতাম না।
।।
ওনার মতো মানুষ যে ঝগড়া করতো না সেটা আমি জানি, যার এতো মায়্যা ভরা একটা মুখ সে কি ঝগড়া করতে পারতো? হয়তো আমার ওপর অভিমান করতো, আমি সেই সুযোগই দিতাম না।
।।
যাকে প্রথম বার দেখেই আমার মন ভালো গেছে, তার মতো মানুষের কেন মন খারাপ হতে দিবো?
।।
জানি এসব সম্ভব না।
যা দেখছি সব দিবা স্বপ্ন। কিছু মানুষ স্বপ্ন দেখতে পারে না। কোথায় আপু কোথায় আমি?
আমি বিএসসি পাশ করে রুয়েটে এমএসসি করার স্বপ্ন দেখছি, আর মেয়েটা রুয়েট থেকে বের হয়ে হয়তো বুয়েট বা বিদেশে যাবার স্বপ্ন দেখছে।
বাবা অনেক কষ্ট করে পেনশানের টাকা দিয়ে বেসরকারি তে পড়াচ্ছে। ছেলে হিসাবে অনেক দায়িত্ব আছে আমার, এখন এই দিকে মন দিলে হয়তো দিনের পর দিন ভালোবাসা আরও গভীর হবে, যা ভবিষ্যতে আমাকে অনেক কষ্ট দিবে।
।।
আমাকে আমার কথা ভাবার আগে আমার পরিবারের কথা ভাবতে হবে। কারণ বাড়ীর একটায় ছেলে আমি, আমাকে নিয়ে আমার বাবার অনেক স্বপ্ন, তাই নিজের স্বপ্ন ভালোবাসা কে আড়াল করে ওনার স্বপ্নটায় আগে পূরণ করি।
।।
তাই এই ভালোবাসার ইতি এখানেই। আজ রাতেই ব্রেক-আপ।
ব্রেক-আপ মেয়েটার সাথে আমার না। ব্রেক আপ আমার নিজের সাথেই।
ব্রেক আপ আমার শরীরএর সাথে মনের। ব্রেক আপ দায়িত্বের সাথে ভালোবাসার। ব্রেক আপ বাস্তবতার কাছে আবেগের।
।।
অনেক রাত হয়েছে! যায় সকালে আবার বাচ্চারা প্রাইভেট পড়তে আসবে।
ভালো থাকুক এই সব মানুষ গুলো। সুখে থাকুক তারা।
…………………………………… সমাপ্ত …………………………