রাস্তায় আনমনা হয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দেখা হয়ে গেলো কলেজ লাইফের এক বান্ধবী নীলার সাথে। আসলে বান্ধবী না সাময়িক সময়ের জন্য প্রেমিকা ও ছিলো। মেয়েটা খুব ভালো ছিলো তার সাথে যদি আমার বিয়েটা হতো আজ আমাকে এতো টেনশন নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হতোনা! কিরে সাইম এত আনমনা হয়ে কোথায় যাচ্ছো? নীলা নাকি? কি অবস্থা কেমন আছো? হ্যাঁ নীলা! এইতো ভালো, তোমার কি খবর বলো?
ভালো নাইরে! জীবনের শ্রেষ্ঠ প্যারাময় সময়টা পার করতেছি, আচ্ছা চলো আজ অনেক দিন পর দেখা একটু হাঁটি আর হাঁটতে হাঁটতে না হয় কথা হবে। আচ্ছা চলো। দুজনে হাঁটতে লাগলাম । হাঁটতে হাঁটতে যে কখন একটা কাশবনের কিনারায় চলে আসলাম টেরই পাইনি। মনে হলো কলেজ লাইফে দুজনে যেভাবে হাঁটতাম, হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যেতাম সেই দিন গুলো আবার ফিরে পেলাম। কি মশাই আমরা কি এভাবে হাঁটতে হাঁটতে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে দেবো নাকি? কোন কথা নাই শুধু হাঁটতেই আছো কিছু বলতেছনা!
আমরা হাঁটতে হাঁটতে এতদূরে চলে আসলাম একবার খেয়ালও করিনি। আসলে অনেকদিন পর তোমাকে পেয়েছি তো তাই কল্পনা সাগরে ডুবে ছিলাম। ডুবে থাকলে তো হবেনা! ডুবে যখন ছিলে তখন ঠিক ছিল কিন্তু এখন অন্যজনের কল্পনাই ডুবে থাকাটাই মঙ্গল হবে। শোন এখানে “নীলা আর সাইম” কথা বলতেছে অন্যজনকে এখানে টানার কি দরকার? চলো আমরা আমাদের হারিয়ে যাওয়ার দিন গুলো মনে করে মন টাকে একটু শান্তি দেয়! তোমার কথা শুনে কিন্তু আমার স্বাভাবিক লাগতেছেনা! তুমি কি জানো জীবনের কষ্টগুলো কারো সাথে শেয়ার করলেই মনে অনেক প্রশান্তি আসে? আমার কাছে যেগুলো অশান্তি সেগুলো বললে তুমি হাসবে।বলোনা প্লিজ! অনেক দিন মন খুলে হাসিনা।
তোমার সাথে আমার ব্রেকাপ হয়ে যাওয়ার পর আমি একদম লাগামহীন গরুর মতো হয়ে গেছিলাম, শুধু এদিক ওদিক ছুটে চলতাম। কেউ কোন ভালো কথা বললেও আমার খারাপ লাগতো।মানে পাগলপ্রায়। সেই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বাবা-মা বিয়ে করিয়ে দেয়। বিয়ে করে বউ কি চালাবো বউ উল্টো আমাকেই চালাই। মা নাকি ওকে দ্বায়িত্ব দিছে আমাকে ঠিক করার। তাই সেও বউয়ের নই আমার গার্ডিয়ানের ভূমিকা রাখতেছে। পারতেছিনা কিছু করতে পারতেছিনা সইতে। নীলা এসব শুনে হাসতে হাসতে বললো, বাহ্ ভালো তো চায়ের দামে শরবত পাইছো মিয়া, বউও সাথে গার্ডিয়ান ফ্রি।
আমার চোখের কোণায় চোখের পানি চিকচিক করতেছে আর নীলা হাসতেছে। বলছিলাম আমার কাহিনি বললে তুমি হাসবে তাই বলতে চাইনি। আরে না, আচ্ছা হাসবোনা এবার বল কি হয়েছে। না বলবোনা, বললে তুমি হাসবে। হাসবোনা বললাম তো, বলো! বিয়ের পর কোনদিন অক্ষত অবস্থায় অফিস যেতে পারিনি। প্রতিদিন যাওয়ার আগে রিয়া (বউয়ের নাম) ওর ঠোঁটে একদম কড়া করে লাল, গোলাপি লিপস্টিক লাগিয়ে আমার ঠোঁটের কোণায় একটা চুমা দেয়! দিতে বারন করলে আমাকে ভয় দেখায় মায়ের। জিজ্ঞেস করছিলাম এটা কেনো করে সে। সে বললো রাস্তায় যেনো কোন মেয়ের নজর না পড়ে সবাই দেখেই যেনো বুঝে নেয় আমি বিবাহিত।
এটাতে অবাক হওয়ার কি আছে? খুব বেশি ভালবাসেই বলেই কিন্তু এটা করে! ভালবাসা না ছাই!!তো আর কি হয়েছে বলোনা! শার্টের বোতামে ইচ্ছা করে ওর চুল লাগিয়ে দেয় দেখে যেনো সবাই ঐটাই বুঝে যে আমি বিবাহিত এবং বের হওয়ার সময় বউয়ের সাথে ইয়ে ইয়ে করে বের হয়! হাউ সুইট, আজ বাসায় গিয়ে আমিও আবিরের (নীলার বর) সাথে এটাই করবো, কতো রোমান্টিক তোমার বউ।
নীলার হাসি দেখে আমার গাঁ জ্বলতেছে। কেনো যে আমি ওকে এসব কথা বলতে গেলাম। তুমি হাসতেছো? আমার মনের অবস্থাটা বুঝার চেষ্টা করো। আমি কেমন আছি! আমার জায়গায় থাকলে তোমার কেমন লাগতো? আমার তো অনেক ভালো লাগতেছে, তোমার বউ এত রোমান্টিক হবে চিন্তাই করিনি। তও আর কি কি করে শুনি! আচ্ছা চলো লেকের পাড়ে বসে কথা বলি। চলো। লেকের পাড়ে গিয়ে পা নামিয়ে দিয়ে দুজনে বসলাম।
কখনো ম্যান্স পারফিউম মেখে আমি বের হইতে পারিনা! সবসময় ওর পারফিউম গুলোই আমাকে মেখে দেয়। এটা সব থেকে বেশী বিরক্তির ঠোঁটের লিপস্টিক বাইরে গিয়ে ধুয়ে ফেলত পারি আর চুল দিলে বাইরে গিয়ে ছিড়ে ফেলতে পারি! কিন্তু পারফিউম? পারফিউম তো আর কিছু করা যায়না। এ নিয়ে অফিসের সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। বিশ্বাস করো নীলা অনেক প্যারার মধ্যে আছি। পারলে এই মেয়েকে ছেড়ে দিতে পারি মতো কোন প্ল্যান থাকলে দাও। আমি ওকে নিয়ে আর থাকতে পারবোনা! একে আমি ডিবোর্স দিবই।
নীলা হাসতে হাসতে আমার গায়ে ধাক্কা দিলে আমি লেকের মধ্যে পড়ে যায়! ডুব দিয়ে উঠে দেখলাম নীলা নাই, রিয়া এক হাতে বালতি আরেক হাতে রান্নার খুন্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর বলতেছে এতক্ষণ এগুলো কি বললে? আমি খুব খারাপ তাইনা? আমাকে ডিবোর্স দিবে? আর হ্যাঁ নীলাটা কে শুনি! আজ তুমি ঘুমের মধ্যে থেকে এসব কথা বলছো বলে জানতে পারলাম নাহলে হয়তো কখনো জানাই হতোনা। ও এসব বলতেছে আর হু হু করে কান্না করতেছে!