– এভাবে আর কত নেহা? এবার তো কিছু একটা করো। (নিলয়)
– কি করবো বলো? চেষ্টা কি আর আমি কম করছি? বুঝতেই তো পারছো না এখান সবকিছু কেমন যেন হয়ে গেছে। (নেহা)
– দেখো নেহা যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। (নিলয়)
– দেখো বাবু, বললাম তো আমি চেষ্টা করছি আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো ঠিকই একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। (নেহা)
– সেটা আর কবে? আমার বিয়ের পর? শোনো নেহা বাসায় আমার জন্য মেয়ে দেখছে। বাবা একদমই লেট করতে চাচ্ছে না। ইন্জিনিয়ার মেয়ে,বিসিএস পাশ করা মেয়ে বাবার কাছে আমাকে বিয়ে করার জন্য আসছে। আমিই কেবল তোমার জন্য অনেক কষ্টে বিয়ে আটকে রাখছি। যা করবা খুব তাড়াতাড়ি করবা। (নিলয়)
নেহা নিলয়ের দিকে তাকিয়ে রইল চুপচাপ। নেহার মনটা একদম খারাপ হয়ে গেল। নিলয়কে সে কত ভালোবাসে। সেই ভার্সিটি থেকে তাদের প্রেম। প্রথম দেখায় নেহা আবিরের প্রেমে পড়ে যায়। নিলয় হালকা মেখাপ করে আসতো আর এসব দেখেই নেহা নিলয়ের প্রেমে পড়ে যায়। আর নিলয় ছিল একদম চুপচাপ গোলগাল স্বভাবের একটি ছেলে। খুব সুন্দর না হলেও মায়াবী দেখতে ছিল ও। মেয়েরা অনেকেই তাকে পটানোর চেষ্টা করতো কিন্তু নেহা নামের মেয়েটা ছিল একদম আলাদা। সারাক্ষন নেহা নিলয়ের পিছনে ঘুর ঘুর করতো। একসময় নিলয় আর না পেরে নেহার প্রেমে পড়েই যায়। দুজনেই চুপ হয়ে তাদের পুরোনো স্মৃতিগুলো ভাবছে। নেহা বললো…
– চাকরি তো ধরার চেষ্টা করছি বাবু.. তুমি দেইখো সব ঠিক হয়ে যাবে।
– নাহ নেহা কিছুই ঠিক হবে না। কোনো বাবা’ই চাই না কোনো বেকার মেয়ের সাথে নিজের ছেলের বিয়ে দিতে। তাড়াতাড়ি কিছু করবা না হলে তুমি আমাকে হারাবে বলে দিলাম। নিলয় কথাটি কলেই সোজা হাটা দিল। নেহা পার্কের ঐ বেঞ্চে বসে নিলয়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। প্রচন্ড অভিমানী নিলয়। নেহাকে সে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু নেহা বেকার হওয়াতে বাড়িতেও নেহার কথা বলতে পারছে না।
– বাবা নিলয়, আগামী কাল তোকে মেয়ে পক্ষ দেখতে আসবে। বাসায় থাকিস। মেয়ে কিন্তু ডক্টর বুঝলি? দেখতে অনেক সুন্দর।
বাবার কথা শুনে নিলয় যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। নেহার চেনা সরল মুখটা তার চোখে ভাসতে লাগল। হুহু করে বুকটা যেন কেমন করে উঠল তার। বাবাকে সে নেহার ব্যাপারে জানাতে পারবে না। কারন বাবা তো তখনি জানতে চাইবে মেয়ে কি করে। কিভাবে সে বলবে মেয়ে বেকার? কাঁদতে কাঁদতে নিলয় তার রুমে গেল। ফোন বের করে নেহাকে কল দিল..
– বাবু এ জীবনে তোমাকে আর হবো না। (নিলয়)
– কেনো জান? কি হয়েছে? আমি তো মরিনি। (নেহা)
– কাল মেয়ে পক্ষ দেখতে আসছে। মেয়ে ডক্টর।
– তো কি হয়েছে? দেখতে আসলেই কি বিয়ে হয়ে যাবে? (নেহা)
– আমার খুব ভয় করছে। যদি বিয়ে করে নেয়।
– আরে না বাবু, কিছু হবে না। চিন্তা করো না।
দুজনে কিছুক্ষন কথা বলে ফোনটা রেখে দিল। আজ বিকেলে নিলয়কে মেয়ে পক্ষ দেখতে এসেছে। নিলয় তাদের সামনে বসে আছে। মেয়েটির নাম তাহিফা। নিলয় বেশ বিরক্ত হচ্ছে। কারন তাহিফা নিলয়ের দিকে বারবার তাকাচ্ছে। এতে নিলয় বেশ বিরক্ত হচ্ছে।
– বুঝলেন ভাইসাব ছেলে আমাদের বেশ পছন্দ হয়েছে। তা বাবা তুমি কি কি জানো? (তাহিফার বাবা)
– ও সব জানে.. ঘোরাঘুরি থেকে শুরু করে,ফোন চাপা,বাঁদরামি করা, শুয়ে থাকা, গেমস খেলা, কেউ রান্না করে দিলে গপ গপ করে খাওয়া সবই পারে। (নিলয়ের বাবা)
– বাহ বাহ এরাকম ছেলেই তো আমাদের পছন্দ। বাইরের সব কাজের গুনই তো ওর আছে দেখছি। আমরা আজকেই বিয়েটা সেরে ফেলতে চাই ভাইসাব। এমন ছেলে আমরা হাতছাড়া করতে চাই না। (তাহিফার বাবা)
– বাবা আমার না ছেলের সাথে একটু আলাদা কথা বলা দরকার। প্লিজ যায়? (তাহিফা)
– ঠিক আছে মা যাও। (নিলয়ের বাবা)
দুজনে নিলয়ের রুমে বসে আছে। তাহিফা নিলয়ের রুমটা বেশ ভালোভাবে দেখছে। আহ কত অগছালো ছেলে নিলয়। এমন ছেলেকেই তো তাহিফা মনে মনে চেয়ে এসেছে। তাহিফা নিলয়ের দিকে বারবার তাকাচ্ছে।
এ দিকে নিলয় নেহার কথা ভেবেই চলেছে। নিলয় ভাবলো তাহিফাকে সে সব খুলে বলবে। হয়ত সে মেনে নিতে পারে। নিলয় এসব ভেবে বলল..
– দেখুন মিস আমি এ বিয়ে করবো না। আমি একজনকে ভালোবাসি। তাহিফা প্রথম নিলয়ের মুখে কথাটি শুনে বেশ চমকে যায়। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে..
– কোনো ব্যাপার না। এখানকার ছেলেদের এমন ভালোবাসা থাকতেই পারে। বুঝেন না গোলপোষ্টে গোলকিপার থাকতেই পারে তবে কি খেলোয়াড় গোল দেয় না? দেয়,,তেমনি আপনার জিএফ আছে তো কি হয়েছে আপনাকে কি বিয়ে করা যাবে না? (তাহিফা)
– আমি কিন্তু বিয়ের পর ওর হাত ধরে পালাবো।
– আপনাকে আটকে রাখবো। আমি আপনাকেই বিয়ে করবো বলে দিলাম।
নিলয়ের বিয়ে হয়ে গেল। কেমন যেন লাগছে তার। একটা অচেনা মেয়ে তাকে টাচ করবে এটা সে মানতে পারছে না। যখন তাদের বাড়ি থেকে বের হবে তখন নিলয়ের ফোন বেজে উঠে। নিলয় দেখে এটা নেহার ফোন। ফোন রিসিভ করতেই নেহা বলল..
– বাবু আমাদের আর কোনো টেনশন নেই। (নেহার)
– তোর টেনশনের নিখুচি করে। আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
নেহা আর কিছু বলতে পারলো না। কেবল নির্বাক চেয়ে রইল সাদা কাগজে লেখা এপোয়েটমেন্ট লেটারের দিকে। সে এখন কি করবো তার মাথায় আসছে না। এই কাগজের আর কোনো মূল্য নেই।