চাঁদের উপর খুবই বিরক্ত আনিক৷ দিনে দিনে চাঁদ মাত্রা ছাড়িয়ে বিরক্ত করো যাচ্ছে অনিককে৷ যেটা অনিক মোটেও পছন্দ করে না৷ অনিক আর চাঁদ একই অফিসে কর্মরত। চাঁদ অনিকের সিনিয়র। অনিক যেদিন অফিসে জয়েন করে সেদিন প্রথম দেখাতেই অনিকের উপর ফিদা হয়ে যায় চাঁদ। চাঁদ সিনিয়র হয়ে অনিককে পছন্দ, ভালোবাসে যেটা অফিসের অনেকেই সামনে না বললেও পিছনে কানাঘুষো করে। অনিক চাকরিটা ছেড়ে দিতে চাইলেও পারছে না৷ এ চাকরিটা দিয়েই এখন কোন মতে টিকে আছে৷
কয়েকমাস ধরেই তমার পিছনে লেগে আছে অনিক৷ অনিক যে ফ্লাটে বাসা ভাড়া থাকে সে ফ্লাটে টিউশনি করে তমা। দুই পা সামনে এগিয়ে গিয়েও কোন এক অজানা ভয়ে পিছনে চলে আসে অনিক৷ তমাকে সামনে গিয়ে কয়েকবার ভালোবাসার কথা বললেও তমা রাজি হয়নি৷ কোন মেয়েই চায়না বেকার ছেলের সাথে প্রেম করতে। চাকরি পাওয়ার পর তমার সামনে গিয়ে দাড়ালেও অনিককে কোন পাত্তা দেয় না তমা। প্রতিদিন সকালে তমাকে একটিবার দেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকে অনিক। ঠিক তেমনি আজও অপেক্ষা করে আছে। অনিক সামনে তাকিয়ে দেখলো তমা আসছে৷ তমাকে দেখেই লাজুক চোখে তমার দিকে তাকাতে লাগলো।
নীল কালারের শার্ট খুবই পছন্দের তমার। রুমমেট থেকে নীল কালারের শার্ট ধার নিয়ে সেটা পরে তমার জন্য অপেক্ষা করে আছে অনিক৷ আনিক খুব আশা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু তমা কোন পাত্তা না দিয়েই চলে গেলো৷ তমার অবহেলা সহ্য হচ্ছে না অনিকের৷ অফিসে যেতে ইচ্ছে না থাকা সত্বেও অফিসের দিকে রওনা করলো৷ দেরি করে অফিসে আসার জন্য সব কলিগ কেই বসের বকা খেতে হয়। কিন্তু এই একটা জায়গায় অনিক বেঁচে যায়৷ চাদেঁর কারনে কেউ অনিককে কিছু বলতে পারে না৷ অনিক নিজের অফিস টেবিলে বসে আছে৷ চাঁদ পিয়ন কে দিয়ে খবর পাঠালো অনিকের কাছে, চাঁদের সাথে দেখা করার জন্য। সকালে তমার অবহেলার পর এখন আবার চাঁদের বিরক্ত। যেটা অনিক নিতে পারছে না আর৷ লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘা হেলিয়ে বসে থাকলো। পাশে থেকে এক কলিগ অনিককে উদ্দেশ্য করে বললো, ” ভাই, সত্যি আপনার চাঁদ কপাল, অফিসের সুন্দরী মেয়ে আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। কলিগের কথা শুনে অনিকের খুব রাগ হলো৷ বিরক্তি নিয়ে চাঁদের সাথে দেখা করার জন্য টেবিল থেকে বের হলো। অনিক চাঁদের সামনে বসে আছে৷ চাঁদ একা একা বকবক করেই যাচ্ছে। কিন্তু সেদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই অনিকের। অনিকের খেয়াল নেই দেখে চাঁদ খুব রেগে গেলো৷ রিগে গিয়ে করুন শুরু বললো ;
— অনিক, আমি তোমার সাথে কথা বলছি
– জ্বি ম্যাডাম বলুন, আমি শুনছি ।
— কতবার বারন করেছি তোমায়, ম্যাডাম ডাকবে না।
– তাহলে কি বলে ডাকবো?
— আমার নাম ধরে বলতে পারো না৷
চাঁদের কথা শুনে অনিকের খুব হাসি পেলো৷ হাসতে হাসতে বললো, ” ম্যাডাম আমি বেয়াদব না, যে সিনিয়রের নাম ধরে ডাকবো৷ চাঁদের উদ্দেশ্য কথা গুলো বলেই চাঁদের সামানে চলে যেতে লাগলো৷ চাঁদ অনিক বলে ডাক দেওয়াতে অনিক পিছন ফিরে তাকালো৷ পিছনে তাকাতেই চাঁদ বললো, ” নীল শার্টে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। চাঁদের কথা শুনে বিরক্তি নিয়ে নিজের টেবিলে এসে বসলো৷
তমার ফেসবুক আইডি ঘেটে অনিক জানতে পারলো আজ তমার জন্মদিন। খুব সকালে উঠে পান্জাবী পরে সেজেগুজে গোলাপ নিয়ে তমার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো৷ তমা প্রতিদিনের মতো একই সময়ে আসলো৷ তমাকে দেখে তমার সামনে দৌড়ে গিয়ে দারালো। অনিককে সামনে দাড়ানো দেখে বিরক্তি সুরে তমা বললো ;
— কিছু বললেন?
– শুভ জন্মদিন তমা।
— আমার জন্মদিন আপনি কি করে জানলেন?
– তোমার জন্মদিন আর আমি জানবো না।
— ধন্যবাদ উইশ করার জন্য। আসি
তমার মুখে “আসি ” শুনাতে একটা ধাক্কা খেলো অনিক৷ তমা চলে যাচ্ছে। অনিক পিছন থেকে তমাকে ডাক দিলো৷ অনিকের ডাক শুনে বিরক্তি নিয়ে দাড়ালো তমা৷ তমাকে দাড়াতে দেখে অনিক মনে মনে খুব খুশি হলো৷ তমার সামনে এসে দাড়ালো অনিক। তমাকে উদ্দেশ্য করে অনিক বললো ;
– তমা, একটা কথা বলার আছে
— আমি খুব ভালো করেই জানি আপনি এখন কি বলবেন৷ দেখুন এসব প্রেম পিরিতি আমাকে দিয়ে হবেনা৷ আমি
আপনাকে অনেকবার বলছি আজও বলছি আমি পারবো না৷ প্লিজ আমাকে আর বিরক্ত করবেন না৷ সকালবেলা তমার অপমানের পর আর অফিসে যায়নি অনিক৷ অনিক অফিসে না আসাতে চাঁদ বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো৷ সন্ধ্যা গরিয়ে রাত নেমে আসছে৷ অনিক বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেটের স্বাদ নিচ্ছে। সিগারেট অনিকের পছন্দ না হলেও আজ সিগারেট কে খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। পকেটে ফোন বেজেই চলছে। ফোন বের করে দেখলো চাঁদের কল। অনিচ্ছা থাকা সত্বেও কলটি রিসিভ করলো অনিক৷ কল রিসিভ করার পর ওপাশ থেকে চাঁদ বললো ;
— অনিক, আজ অফিসে আসলে না যে।
– একটু অসুস্থ ম্যাডাম। তাই অাসতে পারিনি।
— হঠাৎ কি হলো তোমার, কাল অফিস থেকে যাওয়ার সময় ও তো ভালো ছিলো৷
– তেমন কিছু না, হালকা জ্বর।
— এখন কেমন আছো?
– জ্বি ভালোই।দু’জনেই চুপ করে আছে৷ চাঁদ নিরবতা ভাঙ্গলো ;
— অনিক কিছু বলছো না যে?
– জ্বি, কি বলবো
— তুমি বললে আমি তোমার ছুটির ব্যাবস্হা করে দিতে পারি, ছুটি নিবে?
– আমি কি আপনার থেকে ছুটি চাইছি। আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।
— অনিক, একটু ভালো করে কথা বলতে পারো না
– জ্বি খুব পারি, বলুন কি বলতে হবে
— এভাবে বলো কেনো অনিক৷ আমার খুব কষ্ট হয়৷ ভালো না বাসো অন্তত একটু ভালো করে কথা বলো।
– আমাকে দিয়ে এসব কিছুই হয়না৷
— আচ্ছা হতে হবে না৷ কি করছো এখন।
– আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।
— চাঁদটা দেখো কত সুন্দর। কত মায়া
– আকাশের চাঁদ আমার ভাল্লাগে না৷ রাখি
চাকরিটা ছেড়ে দিলো অনিক। সবার মুখে বাজে কথা শুনতে মোটেও ভালো লাগে না৷ রাস্তার পাশে দাড়িয়ে সিগারেট টানছে৷ সিগারেট খাওয়া যেনো এখন অভ্যাস হয়ে গেছে৷ রিকশায় এক ছেলের হাত ধরে বসে থাকতে দেখলো তমাকে৷ অনিক তমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ অনিকের দিকে চোখ পড়াতেই তমা চোখ নামিয়ে ফেললো৷ অনিকের নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। ভালোবাসার এই প্রতিদান৷ অনিকের নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছে। একা হওয়ারই কথা। একমাত্র চাঁদ ছিলো অনিককে ভালোবাসার, কিন্তু চাঁদ ও বিয়ে করে নিলো৷ অনিক উম্মাদের মতো হাসতে লাগলো। অনিকের চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে ” আমাকে ভালোবাসার কেউ নেই, কেউ কখনো ভালোবাসতেই পারে না৷ অনিকের চোখ দিয়ে পানি ঝড়ে পড়ছে৷ হয়তো অনিকের এই চোখের পানির মুল্য কেউ কখনো বুঝতেই পারেনি৷