-” তুই কই ?”
-” সেটা জানার জন্য নিশ্চয় ফোন করোনি ? কেন ফোন করেছ, সেটা বলো।”
-” তুই এভাবে কথা বলছিস কেন ?”
-“তুমি হয়ত খেয়াল করনি,আমি সব সময় এভাবেই কথা বলি।”
-“তুই সব সময় কিভাবে কথা বলিস সেটা আমার খেয়াল করার দরকার নাই।তবে তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলবি না।”
-” আচ্ছা যাও তোমার সাথে এভাবে কথা বলব না।”
-“তুই এখন কোথায় ?”
-“রাস্তায় রোদের মধ্যে দাঁড়ায় আছি।”
-“রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ?”
-“ভিটামিন ডি খাচ্ছি।”
-“হঠাৎ ভিটামিন ডি খাওয়ার কি হলো ? তোর শরীরে কি ভিটামিন ডি এর কোন অভাব আছে ?”
-“না আমার শরীরে ভিটামিন ডি এর কোন অভাব নাই।আমার শরীরে A,B থেকে Z পর্যন্ত সব ভিটামিনই অতিরিক্ত আছে। এটা নিয়ে তোমার মাথা ঘামাতে হবে না।তুমি যে কারণে ফোন করেছ, তা ঝটপট বলে ফেল।আমার হাতে সময় কম।”
-“আমি বুঝিনা তুই একটা বেকার মানুষ,কিন্তু তোরে যখনই কোনো ব্যাপারে খুঁজি, দেখি তুই ব্যস্ত। আচ্ছা তুই সব সময় এত ব্যস্ত থাকিস কেন ?”
-“খালা শোনো যারা কাজের মানুষ, তারা তাদের একমুখী কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর যারা বেকার মানুষ তারা সর্বমুখী কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে।যে কারণে দুনিয়ার সব বেকার মানুষই সব সময় ব্যস্ত । আমার ব্যাখ্যা কি তুমি কি বুঝতে পেরেছো।”
-“না পারিনি।কারণ দুনিয়ার সব বেকারের ব্যস্ততা বোঝার আমার কোনো দরকার নাই। তুই এই মুহূর্তে কি নিয়ে ব্যস্ত সেটা আমার জানা দরকার।”
-“ খালা শোনো, তুমি খামাখা প্যাচাচ্ছো। আমি এইমাত্র ঈদের নামাজ শেষ করেছি।এখন হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম।কিন্তু তোমার ফোনের কারনে এখন হাঁটতেও পারছি না।রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে কথা বলছি।”
-” তুই দাঁড়িয়ে কথা বলবি কেন ? হাঁটতে হাঁটতে কথা বল। ”
-” হাঁটতে হাঁটতে কথা বলা যাবে না। সমস্যা আছে।”
-” কেন ! ইমু তুই কি অ্যাক্সিডেন্ট করেছিস ? কোথাও ব্যাথা পেয়েছিস ? ওমা এখন কি হবে ?”
-” খালা ইউ আর সো নেগেটিভ।আমি বুঝিনা, সব সময় তোমার মাথায় প্রথমেই নেগেটিভ চিন্তা আসে কেন ? আমি অ্যাক্সিডেন্ট করিনি।”
-” তা হলে তোর হাঁটতে সমস্যা কোথায় ?”
ইমুর এখন প্রশ্নের উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু ও জানে ওর খালা একজন নাছোড়বান্দা টাইপ মহিলা । উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত প্রশ্ন করেই যাবেন।লাইন কাটলেও আবার ফোন দেবেন। আর কোন কারনে ফোন না ধরলে বাসায় ফোন দিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড বাঁধিয়ে বসবেন। হয়তো বলবেন, “তোরা সবাই হাসপাতালে, থানায় খোঁজ নে । মনে হয় ছেলেটা অ্যাক্সিডেন্ট করেছে, আর না হয় মলম পার্টি ধরেছে।” অতএব চুপ করে থাকা যাবেনা, খালার প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে।
-“খালা শোনো তেমন কিছু না। আসলে ঈদগাহে হুজুর বলেছেন , নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে দোওয়া পড়তে পড়তে বাসায় ফিরতে। এতে নাকি অনেক সওয়াব । তোমার সাথে কথা বলে বলে হাঁটলে দোওয়া পড়া মিস হয়ে যাবে। তাই ঠিক করেছি কথা শেষ করে দোওয়া পড়তে পড়তে হাঁটবো।”
কথাটি বলেই ইমু পড়তে শুরু করল,”আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর লা ইলা হা ইল্লাল্লা হু আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ। আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর ….”
-“ভণ্ড।সারা বছর তোমার নামাজ পড়ার খবর নাই। আর এখন তুমি একদিনে ঈদের নামাজ আর দোওয়া পইড়া আমলনামা ভইরা ফেলবা,না ?”
-“খালা,আমার আমলনামা নিয়ে তোমার চিন্তা করার কোন দরকার নাই, তুমি কি কারণে ফোন করেছ সেটা তাড়াতাড়ি বলে ফেলো।”
-” শুন আমি এক জটিল সমস্যায় পড়েছি।”
-“তোমার তো সব সমস্যাই জটিল। তা তোমার সমস্যার কথা খালুকে না বলে আমাকে বলছো কেন ?”
-” ওরে বলা যাবে না। এটা প্রেসটিজ ইস্যু। তোর খালু এমনিতেই সবসময় বলে আমি নাকি নকল করে পাশ করছি। আর এখন যদি এই সমস্যা নিয়ে তার কাছে যাই, তাহলে আর ইজ্জত থাকবে না। আর তাছাড়া তুই হলি গিয়ে সাহিত্যিক মানুষ। এই সমস্যার সমাধানে তুইই উপযুক্ত ব্যক্তি।”
-” শোনো বাংলায় পড়লেই কেউ সাহিত্যিক হয়ে যায় না। আমি সাহিত্যের স-ও জানি না।অন্য কোন সাবজেক্টে চান্স পাইনি।বাংলায় পেয়েছি,তাই বাংলায় ভর্তি হয়েছি।এখন পাশ করার জন্য কিছু না বুঝেই প্রশ্নের উত্তর মুখস্হ করছি।”
-” ও তুই যাই বলিস না কেন, তুইই আমাদের হুমায়ুন আহমেদ। তুইই আমাদের রবীন্দ্রনাথ ।”
-” আচ্ছা বুঝলাম আমিই হুমায়ুন আহমেদ। তা হুমায়ুন আহমেদ এখন দোওয়া পড়বেন,তার সময়ের অনেক দাম। অথচ তুমি কথা বলে তার মূল্যবান সময় নষ্ট করছ। সরাসরি মুল পয়েন্টে আসো।”
-“আচ্ছা বলতো ঈদ হবে,না ইদ হবে।আর মোবারক হবে,না মুবারক হবে। এই নিয়ে সমস্যায় পড়েছি। সারা জীবন লিখলাম একভাবে , আর এখন ফেসবুকে দেখলাম এই বানান নিয়ে নাকি বিতর্ক শুরু হয়েছে।”
-” তাতে তোমার সমস্যা কোথায়, খালা ? ঈদের দিন সকাল বেলা কোথায় রান্না বান্না করে স্বামীরে খাওয়াবা, তা না। তুমি বানান নিয়া মাথা ঘামাচ্ছ।কেনো ?”
-” আরে আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডদের ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে হবে না ? তা এখন আমি কি ভুল বানানে শুভেচ্ছা জানাব ? শত হলেও আমি একজন সাহিত্যিকের খালা। একটা ভাব আছে না ?”
-” সেটা অবশ্য ঠিক বলেছ।হুমায়ুন আহমেদের খালা তো আর বাংলা বানান ভুল লিখতে পারে না।এটা মান ইজ্জতের ব্যাপার।”
-“এখন বল, বানান কোনটা লিখব ? ”
-” লেখার কী দরকার। তুমি স্টিকার দিয়ে শুভেচ্ছা জানাও।”
-” সবারে তো আর স্টিকার দেওয়া যায় না। তুই কি বানানটা বলবি ? নাকি তুই নিজেও জানিস না, কোনটা সঠিক ।”
-” শোনো আমি নিজের নাম ছাড়া কোন বানানই ঠিক করে লিখতে পারিনা।আমার কাছে মনে হয় সব বানানই ঠিক। আবার সব বানানই ভুল।”
-“তুই কি আমার সাথে ফাজলামি করছিস ? মনে রাখিস আমি কিন্তু তোর খালা,ভাবি না। ”
-” খালা তোমারে একটা ভালো পরামর্শ দেই।যেহেতু বাংলা বানান নিয়ে ভেজাল লাগছে, তুমি ইংলিশে লিখে দাও।আর যদি ইংলিশেও সমস্যা হয়,তাহলে তুমি আরবি, হিন্দি,উর্দু এমনকি উগান্ডার ভাষায়ও লিখতে পারো। আচ্ছা উগান্ডার ভাষা কি তোমার জানা আছে ? জানা না থাকলে বলো উগান্ডার ভাষা শিক্ষার একটি বই কিনে তোমাকে পাঠিয়ে দেই।”
-” হারামজাদা । তোরে ফোন করাই আমার ভুল হইছে।”
-“গালি দাও কেন ? আমিতো তোমাকে ভাল পরামর্শই দিলাম। এটা পচ্ছন্দ না হলে বল আমি তোমাকে অন্য একটা পরামর্শ দেই।”
-“তোর সাহায্য আমার লাগবে না।তুই দোওয়া পড় আর আমলনামা ভারী কর,যা।”
-“রাগ করছ কেন ? আচ্ছা ঈদ সেলামির জন্য কখন বাসায় আসব ?”
-“খবরদার । তোকে যেন আগামী এক বছর আমার বাসার আশেপাশে না দেখি । ”
-“নিষেধাজ্ঞাটা সেলামি নেওয়ার পর জারি করলে হয় না।”
-” আমি কিন্তু সিরিয়াস, বাসায় আসলে তোরে আমি খুন করে ফেলব।আর শুন শুধু বাসায় না। তুই আগামী একবছর মিরপুরেই আসবি না।”
-“উরলাক খেরেগি।বাই চাম্বড খেয়ারটাই।”
-“ঐ হারামজাদা, তুই আমারে গালি দিলি !”
-“নাউজুবিল্লাহ। এটা কি বললা খালা।আমি তোমারে গালি দিতে পারি ! এটা মঙ্গোলিয়ান ভাষা।এর অর্থ হলো-রাগ করো না। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
-“তোর মঙ্গোলিয়ান ভাষার গুষ্ঠি কিলাই। হারামজাদা,ফোন রাখ। আর এটা কি ভাষা জানিস ? এটা হলো খাঁটি বাংলা ভাষা।”
বলেই লাইন কেটে দেয় খালা। ইমুর মুখে দুষ্টুমির হাসি ফুটে ওঠে।ওর খালাটা এমনই,কিছুটা পাগলা কিসিমের। নিজের একমাত্র সন্তান পরিবার নিয়ে আমেরিকায় থাকে। ইমুই এখন সব। ইমুকে তিনি নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসেন। যেকোন সমস্যা, যেকোন প্রয়োজনেই ইমুকে তার লাগবে।ইমু জানে একটু পরেই খালা আবার ফোন দেবেন। খালা ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করার আগেই দোওয়া পড়তে পড়তে বাসায় ফিরতে হবে। ইমু দোওয়া পড়তে পড়তে বাসার দিকে পা বাড়ায় ,”আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ।”