দীর্ঘদিন সামিন ভাইয়ের সাথে প্রেম করার পর আপা শেষ পর্যন্ত একজন বয়স্ক ধূর্ত ব্যবসায়ীকে বিয়ে করল। দুলাভাইয়ের অঢেল টাকা। বিয়ের পর প্রথম যখন আপা আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসলো ওর চোখে মুখে কেমন একটা সুখি সুখি ভাব। দু’দিনেই বড্ড পাল্টে গেছে। দামি শাড়ি আর গা ভর্তি গহনা। দেখলে মনে হয় স্বর্নের দোকান নিলামে উঠেছে। এমনিতেই আপাটা অসম্ভব সুন্দরী। এত ভারী সাজে ওকে কেমন দেবীর মত লাগছিল। মা আপাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই ফেললেন।
আপাও অবশ্য কান্নার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ওর চোখে পানিটা কেমন যেন আসে না। ওকে আমি কখনো কাঁদতে দেখিনি। সামিন ভাইকে হারিয়েও না আর নতুন ঠিকানায় পাড়ি দেওয়ার সময়ও না। বরং অন্যের কান্না দেখলে ও বিরক্তই হয়। আপাকে ছেড়ে দিয়ে এবার সবাই দুলাভাইকে নিয়ে পড়ল। আমার কেন জানি এসব হইচই একদমই ভালো লাগছিল না। আমি সবার থেকে একটু দূরে দূরেই থাকছিলাম। দুপুরে খাবারের পর বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিলাম। কোন ফাঁকে আপা এসে পেছনে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারিনি। হঠাৎ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরায় চমকে উঠলাম।
: কেমন ভয় পাইয়ে দিলাম! আপার কন্ঠে দুষ্টুমি। কিন্তু আমি তীব্রভাবে প্রতিবাদ করলাম।
–নাহ্। ভয় কেন পাব। একটু অন্যমনস্ক ছিলাম। আপা মুখ ভেঙচে বলল,
: অন্যমনস্ক না ছাই! তনি, তুই এখনো ছোট্ট খুকীর মত ভয় পাস।
আমার হঠাৎই খুব রাগ হতে লাগল। আমি মোটেই ছোট খুকী নই। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়া একটা মেয়ে কি বাচ্চা? কিন্তু পরিবারের কেউ বুঝতেই চায় না আমি বড় হয়েছি। আমাকে ছোট খুকী প্রমান করার সে কি চেষ্টা! পরিবারের বাইরে আর একটা মানুষ আছে যার চোখে আমি কখনো বড় হতে পারব না। সামিন ভাই!
: অ্যাই, তনি? কি ভাবছিস। আপা আমাকে ঈষৎ ধাক্কা দিল। সামিন ভাইয়ের কথা ভাবছিলাম মনে হতেই আরও লজ্জা লাগল।
–কিছু না। এমনি।
: আসার পর থেকেই দেখছি তুই কেমন মন মরা হয়ে আছিস। কি হয়েছে?
–কিছু নাতো! এমনি ভালো লাগছে না।
: সব কিছুতেই খালি এমনি। এ তো তোর ছোট বেলার রোগ। আচ্ছা বাদ দে। দ্যাখ, আমার গলার হারটা দ্যাখ। কি সুন্দর ডিজাইন না? তোর দুলাভাই গিফ্ট করেছে। বাসর রাতে। আপার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল। একটুও কৃত্রিমতা নেই তাতে। ও আবারও বলতে শুরু করল,
: শাড়িটার দাম জানিস? এরকম একটা না, বেশ অনেকগুলো আছে। তোকে একটা দেব ভাবছি। শোন কোন রংটা তোর ভালো লাগে? লাল? নাহ্ মানাবে না। তোর গায়ের রংটা তো একটু ময়লা। লালে কটকটে লাগবে। তাহলে,
–আপা শোন, আপাকে মাঝ পথে থামিয়ে দিলাম। ওর এসব বকবকানি আমার একদম সহ্য হচ্ছিল না। আপার বলার খুব ইচ্ছে ছিল। একটু ক্ষুন্ন হয়েই তাকাল।
: কিছু বলবি?
–আপা, সামিন ভাইয়ের সাথে তুই এমন না করলেও পারতি। আপা যেন আকাশ থেকে পড়ল।
: আমি আবার কি করলাম? রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছিল।
–কি করেছিস মানে! সামিন ভাই তোকে সত্যি ভালোবাসে। তুইও তো তাকে ভালবাসতি।
: ভালোবাসতাম। এখন আর বাসি না। কারন আমি এখন অন্যের স্ত্রী।
–সেটা তোর নিজের দোষে। বিয়েটা না করলে কি হত?
: আচ্ছাহ্! তোর বাবা মা কতদিন আমাকে ঘরে বসিয়ে খাওয়াতো? ওই ভবঘুরে বাউন্ডুলের জন্য কেউ অপেক্ষা করতে পারে না। ্োি্িআমি রাগে তখন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছি।
–ভবঘুরে বাউন্ডুলে? সেটা প্রেম করার সময় মনে ছিল না?
: তনি! তুই কি এখন একটা বাইরের ছেলেকে নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করবি? নিজের বোনের সাথে?
তোর কাছে আসাই আমার ভুল হয়েছে। বিয়ে হওয়ার সাথে সাথে যে আমি ঘরের এতটা পর হয়ে গেছি বুঝতে পারিনি। আমার বোন এখন আমাকে কথা শোনাচ্ছে।
–আপা, তুই কথা অন্য দিকে নিচ্ছিস। আমি মোটেই ওভাবে বলিনি।
: তুই এটাই বলেছিস। তোর সাথে কথা বলাই আমার ভুল হয়েছে।
আপা রাগে আগুন হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমার ইচ্ছা করছিল চিৎকার করে বলি, “আপা, তুই একটা স্বার্থপর, লোভী, প্রতারক। সামিন ভাইকে তুই ধোঁকা দিয়েছিস।” কিন্তু পরমুহূর্তে মনে হল, সত্যিই তো! আমি নিজের বোনকে কেন দোষ দিচ্ছি? ও স্বার্থপর হোক লোভী প্রতারক যাই হোক না কেন ও তো আমারই বোন। কিন্তু সামিন ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে কেন নিজের বোনের সাথে ঝগড়া করছি? সামিন ভাই আমার কে? হুহ! অজান্তেই চোখের কোনে জল চলে এল। সামিন ভাই আমার আপার প্রাক্তন। আর আমার? আমার প্রথম কৈশোরের ভালোবাসা।
আপার ক্লাসমেট ছিলেন সামিন ভাই। আমরা একই এলাকায় থাকতাম। স্কুল জীবন থেকে সামিন ভাইকে দেখছি। পাঁচ ফুট আট কি নয় ইঞ্চি লম্বা গৌর বর্নের লিকলিকে দেহ। যেন বাতাসেই উড়ে যাবে। চোখের দৃষ্টিটা বেশ প্রখর আর মায়াবীও বটে। চুলগুলো কোঁকড়ানো। মুখটা গোলগাল। কেমন গোবেচারা ভাব। চশমা পড়ায় আরও কিউট লাগত। কন্ঠটা বেশ গুরু গম্ভীর। যখন আবৃত্তি করতেন, কবিতারা তার কন্ঠে জীবন্ত হয়ে উঠত। কলেজে কালচারাল প্রোগ্রামে তিনি একবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন। আপার সাথে আমিও গিয়েছিলাম। সেদিন কবিতা শোনার পর থেকে দুটো লাইন আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল। আজও চোখ বন্ধ করলেই কানে বাজে সামিন ভাইয়ের কন্ঠে হৃদয় ছোঁয়া আবৃত্তি, “যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াব আমি বিষপান করে মরে যাব” সামিন ভাই আমাকে নির্বাসনই দিয়েছেন। কিন্তু আমি বিষপান করে মরে যাই নি। আমি বিষের পেয়ালা হাতে অপেক্ষা করেছি। যদি সামিন ভাই কখনো আমায় ডাকেন। তিনি কিন্তু আমাকে ডেকেছিলেন। একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে।
: খুকী শোনো, আমি আড়চোখে পেছনে তাকালাম।
: তুমি অনিমার বোন না?
–হ্যাঁ। আমি তার বোন। কিন্তু খুকী নই। আমার নাম তনিমা। সামিন ভাই খুব মিষ্টি করে হাসলেন।
: তাইতো! আমার বড্ড ভুল হয়ে গেছে। তুমি তো শুধু খুকী নও। তুমি হলে তনিমা খুকী। আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল। কিন্তু কিছু বললাম না।
: আচ্ছা, অনিমা কলেজে আসছে না কেন বলতো! আমি অন্য দিকে তাকিয়ে জবাব দিলাম।
–আপুর জ্বর। তাই আসেনি।
: জ্বর? জ্বর কিভাবে আসল? ওহ্! ওকে বলেছিলাম বৃষ্টিতে ভেজার দরকার নেই। তাও শুনল না। জিজ্ঞেস করেই ফেললাম।
–আপনি ওর সাথে ছিলেন?
: হ্যাঁ, আমরা একসাথেই তো ভিজেছি।
কেন জানি না আমার মন খারাপ লাগছিল। খুব মন খারাপ। তারা একসাথে বৃষ্টিতে ভিজেছিল এই কথাটা ভেবে সেদিন সারা রাত আমি কেঁদেছি। আমি তখনও প্রেম ভালোবাসা ব্যাপারটা ঠিক তেমন করে বুঝি না। কিন্তু আপা কেন সামিন ভাইয়ের সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে গেল? আমার প্রচুর রাগ হচ্ছিল। সামিন ভাইকে আমি ভালোবাসি কিনা জানি না। কিন্তু সে আমার। সময় গড়াতে থাকল। আপা-সামিন ভাই কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে উঠলেন। আমিও কলেজে পা দিলাম। ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে পারলাম। আপা আর সামিন ভাইয়ের মধ্যে অন্যরকম একটা সম্পর্ক আছে। আপা প্রায়ই কলেজ ফাঁকি দিয়ে সামিন ভাইয়ের সাথে ঘুরে বেড়াতো। এমনকি বিকালে মাকে বলে আমরা যখন দু’বোন হাঁটতে বেরোতাম, সামিন ভাইও আসতেন। আসলে বিকালটা ওদের ছিল। আমাকে নিয়ে হাঁটতে বেরোনো তো একটা বাহানা। আমি তো কেবলই তাদের গোপন প্রনয়ের পাহারাদার। আপাকে আমি খুব ভালোবাসতাম। ও আমার থেকে অনেক বেশি সুন্দর। ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি। কিন্তু কখনো ওকে হিংসা করিনি। সামিন ভাইকে পাওয়ার জন্যও না। কেন করব হিংসা? ও তো আমারই বোন। ওরা একে অপরকে ভালোবাসে। ভালো থাকুক আমার ভালোবাসা, আমার বোনের কাছে।
কিন্তু না। আপা হুট করে বিয়েটা করে ফেলল। সামিন ভাইকে একেবারে অকূল পাথারে ফেলে দিল। আমি এটা কিছুতেই মানতে পারি না। সামিন ভাই কষ্টে আছেন। আমি কি তার পাশে দাঁড়াতে পারি? তাতে তো আমার খুশীই হওয়া উচিত। কিন্তু নাহ্। আমি পারি না। আপা সামিন ভাইয়ের মনে যে ব্যথা দিয়েছে সেখানে নতুন সৃষ্টি অসম্ভব। একটা দীর্ঘশ্বাসে বাস্তবে ফিরে আসি। বৃষ্টি থেমে গেছে। কিন্তু এতক্ষন যে আমার চোখ দিয়েও বৃষ্টি পড়ছিল খেয়াল করিনি। গাল বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা পড়ে কখন যেন বুকের কাপরটাই ভিজে গেছে! আপা দুলাভাই তিনদিন আমাদের বাসায় ছিল। কিন্তু ওই ঘটনার পর থেকে আপা সবার সাথে স্বাভাবিক থাকলেও আমার সাথে আর একটা কথাও বলেনি। দুলাভাইয়ের সাথে আমার সেটুকুই কথা হয়েছে যেটুকু না বললেই নয়। ওরা যখন যাচ্ছিল আমি আর এগিয়ে দিতেও যাই নি। ঘরে দরজা বন্ধ করে বসেছিলাম। হঠাৎ দরজায় কেউ নক করল। আমি বিরক্তি নিয়েই দরজা খুললাম। আপা দাঁড়িয়ে আছে।
: ভেতরে আসব?
–আমার ঘরে আসতে তোর অনুমতি লাগবে, আপা?
: নাহ্, আমাদের ছোট্ট খুকী তো এখন বড় হয়ে গেছে। বড়দের মত কথা বলে। তার ঘরে ঢুকতে অনুমতি লাগবে না?
আপার জন্য আমার খুব মন খারাপ হল। সত্যি ওকে সেদিন ওরকম করে বলা আমার উচিত হয়নি। তবু রাগটা কমেনি এখনো। আপা আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
: জানিস তনি, আমার কোন উপায় ছিল নারে। বাবা ঘরে প্যারালাইজড। মাও অসুস্থ। পেনশনের টাকায় কোন মতে সংসারটা চলে। তোর পড়ালেখার খরচও বেড়ে যাচ্ছে। কি করে চলবে বলত? আমাদের তো একটা ভাইও নেই। সংসারের বড় মেয়ে হিসেবে আমিও তো কিছু করতে পারছিলাম না। তোর দুলাভাইকে দ্যাখ্। ততটাও খারাপ না যেটা তুই ভাবছিস। আমাদের পরিবারটাকে এখনি নিজের বলে ভাবে। একটানা কথাগুলো বলে আপা যেন একটু হাঁপিয়ে গেল। আবার দম নিয়ে বলতে লাগল।
: আমি যা করেছি সব বুঝে শুনেই করেছি। জেনে বুঝে সামিনকে কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু কার জন্য, তনি? কিসের জন্য?
আপার চোখে পানি চলে এল। আমিও আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। আপাকে জড়িয়ে ধরে জোরে কেঁদে ফেলালাম। আপাও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আমি ফিসফিস করে বললাম,
–আমাকে ক্ষমা করে দে, আপা। আমি তোকে সত্যি ভুল বুঝেছিলাম।
: কাঁদিস না,পাগলি। আমি জানি, তুই সামিনকে ভালোবাসিস। যদি কখনো পারিস ওর পাশে দাঁড়াস। আমি আসছি।
আপা চলে গেল। কিন্তু আমি সত্যিই সামিন ভাইয়ের পাশে দাঁড়াবার কোন চেষ্টা করলাম না। ভালোবাসি। কিন্তু ভালোবাসার মানুষের কাছে অন্যের প্রতিরূপ হয়ে থাকতে পারব না। যে হৃদয় আমার বোন টুকরো টুকরো করে ভেঙে ফেলেছে, সে হৃদয় জোড়ার দায়িত্ব আমি নেই নি।
বেশ অনেকগুলো বছর কেটে গেছে। বাবা মা দু’জনেই গত হয়েছেন। আমি এখন একাই থাকি। পড়ালেখা শেষ করে এখন একটা বাচ্চাদের স্কুলে পড়াই। আপাও ওর সংসার নিয়ে খুব ভালো আছে। ওর খুব কিউট দু’টো বাচ্চাও আছে। দুলাভাই সত্যিই ভালোমানুষ। এতদিনে প্রমান হয়েই গেছে। আমাদের পুরো পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আমার পড়ার খরচ জুগিয়েছেন। কখনো কৃতজ্ঞতা জানাতে গেলে বলতেন, “চাকরি করে শোধ দিয়ে দিও।” দায়িত্বের চূড়ান্ত করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার আমাকে বিয়ে দেয়ার চেষ্টাও করেছেন। আমি রাজি হইনি। একাই তো বেশ ভালো আছি। এই দীর্ঘ সময়ে সামিন ভাইয়ের খবর নেয়া হয় নি কখনো। আপার বিয়ের পরপরই এলাকা ছেড়েছিলেন। তারপর থেকে নিখোঁজ। কে জানে কেমন আছেন। ভালোবাসলেই যে খোঁজ নিতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। আর আমি তো আজীবন দূরে থেকেই ভালোবাসলাম।
সেদিন স্কুল থেকে ফিরছিলাম। বর্ষার দিন, হুটহাট বৃষ্টি নেমে যায়। আজও তাই হল। ভাগ্যিস ছাতাটা সঙ্গে ছিল। হঠাৎ বৃষ্টি নামায় ছাতা মাথায় দিয়ে টং দোকানটার পাশে দাঁড়ালাম। রাস্তার পথচারীরা যে যেখানে পারল বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে গেল। কেউ ছাতা খুলল আবার কেউ কেউ দোকানের ছাউনির নিচে দাঁড়াল। মুহূর্ত কয়েকের মধ্যে পায়ে হাঁটা রাস্তাটা জনশূন্য হয়ে গেল। কিন্তু হঠাৎ লক্ষ করলাম একটা লোক রাস্তার পাশে মাঠের মাঝখানে দুহাত প্রসারিত করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টি যে তাকে সুঁচ বিদ্ধ করছে সেদিকে তার খেয়াল নেই। আমার দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু পাঁচ ফুট আট কি নয় ইঞ্চি লম্বা গৌরবর্নের দেহে কোকড়া চুলের অধিকারী ব্যক্তিটিকে চিনতে আমার একটুও ভুল হয় নি। আমি ছাতা মাথায় মন্ত্র মুগ্ধের মত এগিয়ে চললাম সেই মূর্তির মত স্থির মানুষটির দিকে। বৃষ্টির বেগ ক্রমশ বাড়ছিল। কাছে যেতে যেতে শুনতে পেলাম তিনি কিছু একটা আবৃত্তি করছেন। আমি তার পেছনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে ডাকলাম।
: সামিন ভাই!
সামিন ভাই উদভ্রান্তের মত দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকালেন। বৃষ্টির সাথে কোথা থেকে যেন দমকা হাওয়া যোগ হয়েছে। ছাতাটা ধরে রাখতে পারছিলাম না। সামিন ভাই এতদিন পর কোথা থেকে উদয় হয়েছেন সে প্রশ্ন আমার মনে জাগল না। জাগরন ঘটল একটা সুপ্ত ইচ্ছার যা এতদিন আমার অবচেতন মনে সযত্নে তুলে রাখা ছিল। আমি ছাতাটা হাত থেকে ছেড়ে দিলাম। তারপর মনের সবটুকু ব্যাকুলতা নিয়ে সামিন ভাইয়ের নির্লিপ্ত চোখে চোখ রেখে বললাম, সামিন ভাই, আমি কি আপনার সাথে একটু বৃষ্টিতে ভিজতে পারি? সামিন ভাই কোন জবাব দিলেন না। তিনি একমনে আবৃত্তি করে চলেছেন, “যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াব আমি বিষপান করে মরে যাব”