ভার্চুয়াল জগতের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলো ফেসবুক।আর এখন দেশের অধিকাংশ মানুষ তাদের সময় কাটানোর জন্য ফেসবুক বেঁচে নিয়েছে।ফেসবুক এমন একটি মাধ্যম যেখান থেকে হাজারো তরুণ তরুণীরা প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তাদের জীবনের পথচলা শুরু করতেছে, তাদের মধ্যে কিছু সম্পর্ক টিকে থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কিছুদিন পর তাদের বিবাহ জীবন বিচ্ছেদ করতেছে। তবুও ফেসবুকে দিনকে দিন হাজারো মানুষ একজন আরেক জনের সাথে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। যাইহোক আসল কথায় আসি আমার জীবনের গল্পটা একটু আলাদা, সবাই তো ফেসবুকে প্রেম করে তাদের জীবন সঙ্গীকে বেঁচে নিচ্ছে কিন্তু আমার ভাগ্যে এখনো এমন কেউ আসেনি, যাকে আমার পথচলার সাথী হিসেবে বেঁচে নিব।
সবার জীবনে একজন না একজন প্রিয় মানুষ থাকে। সেই প্রিয় মানুষটির সাথে সারাজীবন কাটাতে ইচ্ছে করে। তেমনি আমার জীবনেও এমন একজন প্রিয় মানুষ আছে যার সাথে আমার সারাজীবন কাটাতে ইচ্ছে করে। তার মায়াবতী মুখখানা চোখ বন্ধ করলেই ভেসে ওঠে। প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই আগে তার ছবি দেখি যাতে সারাদিন ভালো কাটে। ঠিক ওর ছবি দেখলে আমার দিনটিও ভালো কাটে।
তবে আমার ভাগ্য এতটাই খারাপ যে আমার সেই প্রিয় মানুষ টিকে সামনা সামনি দেখা বা বাস্তবে দেখার সৌভাগ্য এখন পর্যন্ত হয়নি। তার মুখটা যেমন সুন্দর তেমনি নামটাও ভারি মিষ্টি। তার নাম সাদিয়া তাসমিন হলেও আমি তাকে পেত্নি বলে ডাকি। পেত্নি বলে যখন ওকে ডাকি ও একটুও রাগ করে না। কারণ সবার তো একটা না একটা আদরের ডাকনাম আছে তেমনি পেত্নিটাও আমার দেওয়া আদরের ডাকনাম। এই নামটার পিছনে অনেক বড় একটা ইতিহাস আছে যা আপনাদের বলে বোঝাতে পারব না তাই আর নামের ইতিহাসে না যাই। তার সাথে যোগাযোগ হয় ফেসবুকে। সেখান থেকেই তার সাথে আমার পরিচয়, সেখান থেকেই একটু একটু করে ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা। বাট ভালোবাসাটা ছিলো এক তরফা। সে কোনদিন ও আমায় ভালোবাসে নি।তবে ভালো না বাসারো একটা কারণ আছে।
কারণ টা হলো সে আমার চেয়ে বয়সে বড় আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি আর সে চট্টগ্রামের একটা ইউনিভার্সিটির অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ব্যাবসা বিভাগের ছাত্রী। ভেবে দেখুন তো এত কম বয়সের একটা ছেলেকে সে কিভাবে ভালোবাসবে। ভালো বাসুক আর নাইবা বাসুক আমি তাকে ভালোবাসি এটাই সত্য আর এটাই আমার কাছে বড় একটা আনন্দ যে আমি তো সাদিয়াকে ভালোবাসি। সাদিয়াকে নিয়ে রোজ ফেসবুকে স্টাটাস দিতাম সেটাতে সে লাইক কমেন্ট করত অনেক খুশি হতাম আমি এই ভেবে যে আমার প্রিয় মানুষটি তো আমার পোষ্টে কমেন্ট করেছে। এমনটা করতে করতে ঘুমিয়ে পরতাম। একদিন রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম……………….
হঠাৎ একদিন সাদিয়া আমাদের বাড়িতে বেরাতে আসলো। তাকে দেখে আমি অবাক হয়ে দারিয়ে রইলাম। কারণ সে আমার বাড়িতে বেরাতে আসবে সেটা আমি কখনোই জানতাম না। তাকে দেখেই আমি বললাম পেত্নি তুমি আমাদের এইখানে? সে বললো বারে আমি বুঝি আসতে পারিনা! আমি বললাম কেন পারবিনা একশবার পারবি চল এবার বাড়িতে যাই। বাড়িতে ডুগতেই মা আমায় জিগ্যেস করলো কে এটা? আমি মাকে বললাম মা এটা আমার ফেসবুকের বান্ধুবি। মা তখন সাদিয়া ঘরে নিয়ে গেলো। তখন আমি এত খুশি হয়েছিলাম যা বলে বোঝাতে পারব না। কারণ আমার স্বপ্নের মানুষটি আমার বাড়িতে এসেছে বলে কথা খুশি না হয়ে থাকতে পারি।
আমি বাজার গিয়ে সবকিছুই খরিদ করে আনলাম। তারপর মা সবকিছু রান্না করলো। এদিকে সাদিয়া ফ্রেস হয়ে টিভি দেখতেছে আমিও তার সাথে টিভি দেখতে দেখতে গল্প করতে লাগলাম। সে বললো আমায় তোদের গ্রাম ঘুরতে নিয়ে যাবি না আমি বললাম কেন যাব না মায়ের রান্না হলেই দুজনে খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে ঘুড়তে যাব, সে বললো ঠিকআছে।
একটুপর মা সব রান্না করে আমাকে আর সাদিয়াকে খেতে দিলো দুজনেই পেট পুরে খেয়ে আবার টিভি দেখতে শুরু করলাম। এক ঘন্টা দেখতে না দেখতেই সাদিয়া বললো, তুই নাকি আমায় ঘুরতে নিয়ে যাবি? আমি বললাম চল তা। সে ঘরে গিয়ে সেজে গুজে আমার সামনে এসে বললো চল? আমি তো তার দিক থেকে চোখ সরাতেই পারতেছিলাম না, এত সুন্দর লাগতেছিলো সাদিয়াকে মনে হয়েছিলো রুপকথার রাজকুমারী। সে বললো কি দেখতেছিস? আমি কিছুনা বলেই দুজনে বেরিয়ে পরলাম ঘুরতে।
গ্রামের রাস্তা দিয়ে দুজনেই হাটতেছি, সাদিয়া আমায় এটা ওটা জিগ্যেস করতেছে আমি সেটার উত্তর দিতেছি। আর একটু এগিয়ে দুজনেই রেল লাইনে গিয়ে বসলাম। সাদিয়া একটা লাইনে আর আমি একটা লাইনে বসে আছি। আমি শুধু তার দিকেই দেখতেছি। সে অনেক কিছু বলতেছে আর আমি এক ঘেয়ামি হয়ে তার মুখখানা দেখতেছি। একটু পরে সাদিয়াকে বললাম আমি তোমায় একটা কথা বলবো, কথাটা সেই এক বছর থেকে বলতে চাইতেছি কিন্তু সাহস পাইনি, সে বললো তারাতারি বলে ফেল সময় নষ্ট করিস না। আমি বললাম,, আমি তোকে ভালো….।মা ডাকতেছে আসিফ, আসিফ এই কখন ঘুম থেকে উঠবি সকাল যে হয়ে গেছে, আমি একবারে ঘুম থেকে উঠে পরলাম, গা টা ঘেমে গিয়েছিলো, মাকেকে বললাম একটু দেরি করে ডাকতে পারো নাই, কথাটা বলতেই পারলাম না। মা বলতেছে কি কথা আমি বললাম কিছুনা।
সাদিয়া যে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলো সেটা সত্যি না আমার ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে এসেছিলো।তাকে ভালোবাসি কথাটা না বলতেই স্বপ্নটা ভেংগে গেছে।আমার বুকের ভিতরটা কেমন করতেছিলো কারণ স্বপ্নেও তাকে বলতে পারলাম না যে আমি তোকে ভালোবাসি আর বাস্তবে কিভাবে বলব। মনটা যেন একনিমিশেই খারাপ হয়ে গেছিলো। মনে হচ্ছিলো আমি মনেহয় আর সাদিয়াকে কোনদিন ও পাবনা। সে হয়ত অন্য কারো হয়ে যাবে। তার কিছু স্বৃতি নিয়েই হয়ত আমাকে বাঁচতে হবে। তবে এটা সত্যি হয়ত আমি সাদিয়াকে ধিরে ধিরে নিজের অজান্তেই অনেক ভালোবেসে ফেলছি এটা হয়ত সে বিশ্বাস করবে না।
সব সম্পর্কের শেষটা পূর্ণতা পায় না, কিছু সম্পর্ক অপূর্ণ থেকে যায়।তেমনি সাদিয়াকে নিয়ে আমার স্বপ্নের সম্পর্কটা।
——সমাপ্ত—–