স্বার্থপরতা

স্বার্থপরতা

-হাই

-……!

-সাদিক,আমি আফসা!

-ওহ। আগে বলবি না? আমি মনে করলাম কে না কে! কেমন আছিস?

-এখনো তোর পুরোনো অভ্যাস টা আছে, সাদিক। ভালোই আছি। তুই কেমন?

-এই তো আছি ভালোই। বাকি সবাই কেমন আছে?

-মিথ্যা বলা শিখলি কবে থেকে?

-কি ভাবে বুঝলি মিথ্যা বলছি?

-তুই এখন ছাদে আছিস! আর সাথে নিকোটিন পোড়াচ্ছিস!

-হুম। অভ্যাস যেমন টা!

-অভ্যাস না এটা। এটাকে পেইন কিলার বলে!

-কেন বলছিস এরকম টা?

-কেন? কেন এমন টা করলি তুই?

-কি রকম??

-সবকিছু লুকানোর অভ্যাস টা আছে এখনো তোর!

-হয়তো!

-একটু পরিবর্তন হতে পারিস না?

-প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে যে!

-উহু! মিথ্যা বলেছিস! তুই কেন বাধা দিলি না? একবারো কি বলতে পারলি না!

-ধুর পাগলি! ততক্ষনে একবার কবুল বলে ফেলেছিস!কি করে তোর কপাল ভাঙী??

-……..

-কি রে চুপ কেন? যাই হোক। পুরোনো কথা বাদ দে। আমার আইডি কোথায় পেলি?

-তুই এই…. পেইজের লেখক! তবে চিনতে পারতাম না, যদি না নিক নেম টা দেখতাম?

-কি নিক নেম দেয়া?

-স্মৃতির লোকান্তর…!

-মনে রেখেছিস সবই?

-কেন রাখবো না বল? কিন্তু তুই এতটা স্বার্থপর হইলি কি করে?

-ধুর বাদ দে না!

-কথা ঘুরাচ্ছিস কেন সাদিক?

-কই নাতো??

-তোর উট পাখির স্বভাব টা গেলো না?

-কেমন?

-উট পাখি যেমন শত্রু দেখলে ভয়ে গর্তে মাথা লুকিয়ে ভাবে কেউ দেখছে না, তেমন টা। কিন্তু বাহির হতে পুরো শরীরটাই দেখা যায়!

-খোচা দিচ্ছিস?

-না! সত্যিটা বলছি। একবারো কি বলতে পারতি না?

-তোর কোন অনুভূতি ছিলো না আমার প্রতি!

-…………!

-কিরে কাঁদছিস কেন পাগলি?

-তুই কেমনে বুঝলি??

-আমি অনুভব করতে পারি যে তোকে!

-তাহলে বলতে পারলি না কেন?

-তুই এখন রুমের লাইট নিভিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে নিরবে কান্না করছিস!

-তুই কিন্তু কথা ঘুরাচ্ছিস সাদিক!

-তুই কি ঘুরাচ্ছিস না?

-……….!

-কিরে? চুপ কেন? আর এসব কি ভাবে জানলি?

-তোর প্রতিটা লিখা পড়ি আমি!

-কিন্তু কিভাবে বুঝলি লিখক টা আমিই??

-নিক নেম দিবার পর সুবিধা হইছে!

-তাই?

-হুম!

-আচ্ছা আসি রে।ভালো থাকিস!

-…..!

আফসার যখন বিয়ে ঠিক হলো তখনো চাকরির আবেদন আর পরীক্ষা দিয়ে চলেছি। ভেবে ছিলাম একটা চাকরি পেলেই আফসাকে সব খুলে বলবো আমার অনুভূতির কথা! কিন্তু না! বলতে পারি নি। আফসা যখন প্রথমবার কবুল বললো তখন চাকরির জয়েন্টের ফোন আসে। তখন নিজে খুব কেঁদেছিলাম আড়ালে! কিছু
করতে পারি নি।

দুজন এক সাথেই পড়েছি ছয় টা বছর। প্রথম থেকেই আফসার প্রতি একটা অন্য রকম অনুভূতি কাজ করতো! কিন্তু সেটা কখনো প্রকাশ করতে পারতাম না। যখন প্রকাশ করতে পারতাম না তখন রাত্রে ভীষন কষ্ট হতো! আর সেটা আজো অপ্রকাশিতই থেকে গেলো!

যখন বুঝতে পারলাম তার প্রতি অনুভূতির নাম ভালোবাসা তখন আমি বেকার! আর নিশ্চয় বেকারের জন্য বিয়ে নয়! তাই আফসার সুখের জন্য নিজেকে দমিয়ে রাখলাম। ভালো যোগ্য পাত্র খুজে বের করলাম আফসার জন্য। বিয়ের সব দায়িত্ব আমার উপর ছিলো। ভরসা রেখেছিলাম নিজের উপর যে আফসা কবুল বলার আগেও যদি চাকরি হবার ফোন আসে তাহলেও বিয়ে টা ভেঙে দিবো যা কিছুই হোক না কেন! চাকরি তো হলো তবে কবুল বলার পর!যার কোন মূল্য নেই। পরিবারের জন্য চাকরিটা ধরে রাখা। নয়তো কোনদিন সাধক সন্ন্যাসী হয়ে যেতাম শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত উপন্যাসের মতো!সেখানে তার নায়িকা পিয়ারির ও এমন দশা হয়েছিলো!

না! আর চালানো যাবে না এই আইডি! নিক নেম সব কিছু বাদ দিতে হবে! তা না হলে কষ্ট গুলো মাথা চাড়া দিয়ে বিদ্রোহ করবে যা থামিয়ে রেখেছি নিকোটিনের দ্বারা!

আমি যে স্বার্থপর………!

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত