অবশেষে মুক্তি

অবশেষে মুক্তি

ঃ- ছেলে কোথায় থাকে?? (শিমুর মা)
ঃ-লন্ডনে থাকে সেই যায়গায় বাড়ি ঘর সব কিছু তোমার মেয়ে সুখে থাকবে।।।(রায়বান্নি)
ঃ-তুমি কথা বলে দেখো আমার একমাত্র মেয়ে। যদি সুখি হয় তাহলে তো ভাল হবে।।। (শিমুর মা খুশি হয়ে)
ঃ- তোমার মেয়ের ছবি আর ঠিকানা দাও।আর আমাকে কিন্তু যা বলেছি তা দিতে হবে।। (রায়বান্নী)
ঃ- আরে পাবে পাবে। এই নাও ছবি আর ঠিকানা।।

ঠিকানা আর নাম্বার নিয়ে রায়বান্নি চলে গেলো সাথে ১০০ টাকা নিয়ে।।। শিমুর মা খুব খুশি তাদের বংশ ভাল বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। বিয়ের পর লন্ডনে নিয়ে যাবে।।তার এক মেয়ে এক ছেলে। স্বামী নেই। বাবা মরা মেয়েটা যদি সুখী হয়। শিমু বড়। তাই বড় বোন বিদেশে গেলে ছোট ভাইকেও নিয়ে যাবে।।।

দুইদিন পর – শিমু নীল শাড়ি পরে বসে আছে। এমনিতে সে দেখতে সুন্দরী, আর শাড়িতে অপূর্ব লাগছে। পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছে। পাত্রের মা ছাড়া কেউ নেই।।তাই মা সব।। পাত্রের নাম সাঈদ। সে চুপচাপ বসে আছে।।। সাঈদের মা প্রশ্ন করলেন

=কিসে পড় তুমি মা??
= আসসালামু আলাইকুম। জ্বী আমি ডিগ্রীতে পড়ছি । এইবার new admission নিয়েছি,এম সি কলেজে।(নিচু সরে)
=তোমার নাম কি শুধু শিমু নাকি অন্য কিছু আছে।।
=জ্বী আমি সাদিয়া রহমান শিমু।।

ঠিক আছে।। এইভাবে নানান প্রশ্ন শেষে এইবার যেতে বললেন।। শিমু আবার সালাম দিয়ে উঠে গেলো।।
শিমু চলে যাবার পর অনেক সময় গল্প করলেন। সাঈদ চুপচাপ আছে।। এর মধ্যে কাজের মেয়ে নাস্তা এনে দিল একগাদা।।

এখন প্রশ্ন হতে পারে আমি কে?? আমি হলাম শিমুর এক আত্মীয় তবে আপন কেউ নই ,আপনের মত।।। নাস্তা খাওয়া শেষে শিমুর মা ভাত খাওয়ার কথা বলছেন কিন্তু তারা আজ না বলে ১০০০০ টাকার সালামী দিয়ে বিদায় জানালো। রাতে সাঈদের মা কল দিলেন এবং বললেন বিয়েটা তাড়াতাড়ি হলে ভাল হয় আমাদের আবার এই সপ্তাহের মধ্যে চলে যেতে হবে। শিমুর মা বললেন,” তাহলে তো ভাল হয়।” আবার বললেন সাঈদের মা,” তবে বিয়াইন আগামীকাল হলে ভাল হয় আমার। আপনার আত্মীয় স্বজন থাকলে পিছিয়ে দিব।।” শিমুর মা আর কি বলবেন রাজি হয়ে গেলেন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে।।

ছয়মাস পর শিমু লন্ডন চলে গেলো।।শাশুড়ি হিসেবে সাঈদের মা খুব খুব ভাল। নিজের মেয়ের মত দেখেন।।।
এইভাবে চলতে লাগলো এক বছর।। একবছর পর শুরু হল নির্যাতন। শিমু দেখতে সুন্দর আর সাঈদ অতটা ভালোনা। তাই সে ভাবে টাকার লোভে শিমু তাকে বিয়ে করেছে। এজন্য সে প্রতিদিন নির্যাতন করত তার উপর। কখনও হাত ব্লেড দিয়ে কেটে দিত, কখনও বেল্ট দিয়ে মারতো। শাশুড়ি শিমুকে ধৈর্য্য ধরতে বলতেন। শিমুর কষ্টে তিনিও কাঁদতেন। একদিন জাহানারা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর চিন্তা করেন বউ মার জন্য। এত সুন্দর মেয়ে কে কিভাবে পারে নির্যাতন করতে।

সাঈদ ব্যাস্ত থাকায় শিমু একা তার শাশুড়িকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এর মধ্যে জাহানারা বেগম চালাকি করে ছেলে এলে তাকে মাথায় হাত রেখে ওয়াদা করানন যে শিমুকে মুক্তি দেবে। সাঈদের মন নরম হলো। সে মায়ের মাথায় হাত রেখে কথা দিলো। রাতে প্রচন্ড ব্যথাশুরু হয় এবং জাহানারা বেগম মারা যান।।শিমুর কি যে কান্না। যেন নিজের মা । কিছুদিন পর শিমু তার ফুফুর বাসায় উঠে, এবং সাঈদ কে ডিভোর্স লেটার উকিলের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়।।

আবার শুনতে পেলাম, শিমুর জন্য পাত্র খুঁজা হচ্ছে। তবে কে করবে বিয়ে। আমি একটা ছোটখাট অফিসে কাজ করি। মাথায় হাজার চিন্তা। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। বাবা মা না থাকলেও এক ছোট ভাই আছে। আর চাচার ঘরে থাকি। নানা কথা শুনতে হয় চাচীর মুখ থেকে। সহ্য করে থাকি। কিছু বলা যায় না। অবহেলায় পেয়ে পেয়ে লেখাপড়া করেছি।। আমার আব্বুর সব যায়গা চাচী কৌশলে নিয়ে নিয়েছে। চাচা প্রায়ই বাহিরে থাকেন। উনার ও একটা মেয়ে আছে, জারা ।। ভীষণ ভালো। আমাদের কে নিজের ভাইয়ের মত দেখে। তবে চাচীর সামনে একটু কড়াভাবে কথা বলে। পরে আবার ক্ষমাও চায়। একদিন দেখলাম চাচা আর তাহমিনা রহমান কি যেন বলছেন। কার বিয়ে কথা আমাকে দেখে উনি খুশি হলেন। কারণ মাঝে মধ্যে উনার টুকটাক কাজ করে দেই।। তাহমিনা রহমান হলেন শিমুর মা।।আমাকে দেখে বললেন,”কেমন আছো বাবা।”

:- ভাল আছি । এই বলে চলে আসলাম। রাতে জারা এসে বলল

জারাঃ- ভাই মিষ্টি কই??

আমিঃ- কিসের মিষ্টি???

জারাঃ- বাহ রে তোমার বিয়ে।।

আমিঃ- (অবাক) কার বিয়ে? আমার? কে বলল??

জারাঃ- আম্মু বলছে।।।।তবে এও বলেছে আপদ গুলা দূর হলে ভাল।।

আমিঃ- যা এখান থেকে। কিছুটা লজ্জায় পড়ে গেলাম।।

জারাও খুব ভাল ওর মা কি বলে না বলে সব বলবে।।।।।।। তবে কাকে বিয়ে করছি না করছি কিছুই জানি না।।আমি চাচার রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছি, শুনতে পেলাম চাচা চাচীর চেঁচামিচি!! চাচী বললেন এত কিছু না জানলেও চলবে এবার আপদ দূর হবে ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করবে।।।ওর ছোট বাদর কে বল চলে যেতে আমার ঘৃণা হয় ওদের কে দেখলে।।।চাচা বারবার চুপ করতে বলার পরও কিছুতেই থামছে না। পরের দিন চাচা এসে বললেন “বাবা কিচ্ছু দিতে পারি নি আমাকে ক্ষমা করিস। আর বিয়ে করছিস, একটা কথা, যাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবি তাকে কষ্ট দিস না।”

এই বলে চাচা কেঁদে দিলেন । আবার বললেন ” দুইদিন পর তোমার বিয়ে।। মেয়ে খুব ভাল। আশা করি এইকাজে চাচা তোমাকে ঠকাবো না।। তবে কাউ কে দাওয়াত না দিতে বলছে তোমার চাচী।” আমি ,জারা আর রাশেদ যাব। তোমার জন্য এই পাঞ্জাবী কিনেছি নাও। আমি বললাম থাক চাচা । চাচা ধমক দিয়ে হাতে ধরিয়ে দিলেন।।।।। মেয়েটা একা এসেছে আর আমি চাচা জারা ছোট ভাই।। যথা সময় বিয়ে হয়েছে চাচা আমার আর রাশেদের জন্য একটা ফ্লাট বুকিং দিলেন।। যাইহোক দেখলাম সব সাজানো। আমার রুমে ঢুকতেই মেয়েটি এসে পায়ে ধরে সালাম করল। কিন্তু মজার বিষয়, মেয়েটির নাম আর জানা হয় নি। সারাদিন চাচী কথা মাথায় ঘুরছে।এইটা ভাবছি কিন্তু মেয়েটির সালাম শব্দটা বৃহৎ হওয়ায় চমকে উঠালাম আর মনে হচ্ছে খুব পরিচিত মানুষ। ঘোমটা খুলতেই অবাক ।

:-একি শি শি শিম শিমু তুমি।।।

শিমুঃ- কেন পছন্দ হয় নি/?

আমিঃ- কেন হবে না। (মনের খুশি কাকে দেখাই)

শিমুঃ-তাহলে অবাক হচ্ছো কেন?

আমিঃ-সেই যে গেলে একে বারে গেলে । আমি তো ভাবছি হয়তো পোড়া কপাল আমার । জন্মের পর থেকে আর সৌভাগ্য হবে না? কিন্তু এই যে চাঁদ পেয়েছি। বলেই শিমুকে জড়িয়ে ধরতে যাব ঠিক তখন বলল আগে নামাজ টা আদায় করি।। আমার ইমামতি তে নামাজ শেষ হল।। শিমু আমার ব্যাপারে সব জানে আবার সে জড়িয়ে কাঁদছে কারণ এইতো সুখের দিন শিমুর। অবশেষে মেয়েটি নিষ্টুর নরক থেকে মুক্তি পেলো।।। আমি ও আমার পছন্দের মানুষ কে খুজে পেলাম।।এইজন্য চাচাকে ও সৃষ্টিকর্তা কে ধন্যবাদ,অবশেষে মুক্তি দেওয়া জন্য।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত