প্রতিদিন সবার আগে এসে এভাবে বসে থাকো কেন? সকাল সকাল ভার্সিটির পরিবেশটা অনেক ভাল লাগে। পাখির কিচিরমিচিরে সব কিছু পুলোকিত হলেও মনে হয় সময় কোথাও থেমে গিয়ে সবকিছু শান্ত করে দিয়েছে। এরকম পরিবেশে নিজেকে একা একা ভাবতে অনেক ভাল লাগে। তাছাড়া নতুন নতুন ভার্সিটিতে এসেছি। এটার প্রতিটি অংশের কথাগুলো আমি শুনতে চাই। কারো সাথে খুব একটা কথা হয় না।
এখানে এসে গুটি কয়েকজনের সাথে কথা বলে বন্ধু বানাতে পেরেছি। তাছাড়া খ্যাত বলে একটা কথা আছে যেটা আমাদের বলে দিয়েছে কিছু বড় আপু। তাই আমাদের সাথে অনেকেই মেশে না। প্রতিদিনের ন্যায় আজও ভার্সিটিতে একা সবার আগে এসে বসে আছি। কিছু পরেই এক স্যার এসে উপরের কথাটি বললেন। প্রতিদিন সবার আগে এসে এভাবে বসে থাকো কেন? আমি স্যারের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে উঠে দাড়িয়ে বললাম, ভাল লাগে স্যার তাই। তাছাড়া আপনি যে কারনে সবার আগে আসেন আমিও ঠিক একারনেই আগে আসি। স্যার এবার আমার সামনে এসে বললেন, তো আমি কি কারনে আসি? আমি বললাম, ভালবাসা স্যার।
যখন কোন মানুষ একা একাই নিজের জিবন রচনা করে তখন সেই মানুষটি নিজের ভালবাসাগুলো সবার মাঝে দেখতে চায়। সবার সুখের হাসি বা কান্নার মাঝে নিজের কিছু প্রতিদান আশা করে। সবাইকে ভাল রেখেও যখন রাত গভীর হয়ে যায় তখন নিজের একাকিত্ব ঘুম থেকে নিজেকে জাগিয়ে দেয়। অনেক চেষ্টা করেও আর ঘুমানো সম্ভব হয় না। প্রতিটা সময়েই মনে হয় অনেক মানুষকে ভাল রেখেছেন। অনেকের ভাল থাকার কারন আপনি। কিন্তু এবার আপনি একটু অবসরে যেতে চান। আপনিও চান এবার আপনার দায়িত্বটা অন্য কেউ নিয়ে নেক। কেউ যুক্তি দিয়ে নয় বরং ভালবাসা দিয়ে আপনাকে শাষন করুক। অনেক নিজের মত চলেছেন এবার কেউ আপনাকে পরিচালিত করুক। প্রতিটা মুহুর্তেই অবাক করে দিক আপনার। এসব কিছু চিন্তা করতে করতে যখন মসজিদে আজানের শব্দ শুনতে পান তখন আপনি নামাজে চলে যান। তারপর কিছু না খেয়েই এই ভার্সিটিতে আসেন সকালে একটা রং চা খাবেন বলে। আমিও একারনেই এসেছি। স্যার একটুও অবাক হলেন না এসব শুনে।
মৃদু হেসে স্যার আমাকে বললেন, চা খাবে আমার সাথে। আমিও মুচকি হেসে জবাব দিলাম, অবশ্যই স্যার। অনেকদিনের ইচ্ছে। আজ পুরন হতে চলেছে তবে। তারপর স্যারসহ ক্যান্টিনের বাইরে ডালিম গাছের নিচে বসে দু কাপ চায়ের সাথে সময় পার করতে লাগলাম। স্যার এবার বলল, তুমি এতসব যা বললে সব কিন্তু নিজের মত করে বললে। আমি বললাম, পুরোটাই সত্যি স্যার। তাছাড়া আরও একটা কারন আছে। সেটা বলতে চাচ্ছি না। স্যার এবার হেসেই বললেন, তুমি যেটা বলতে চাচ্ছ না সেটা আমি জানি। আমিও হেসেই বললাম, অবশ্যই জানেন স্যার। একটা প্রশ্ন করি স্যার। স্যার বললেন, হুম কর। আমি বললাম, অনেকদিন পর আপনার মত কাউকে দেখে কেমন লাগছে।
স্যার এবার বললেন, তুমি ঠিকি বলেছিল একটা কথা। আমি সত্যি এবার একটু বিশ্রাম চাই। তবে যার কাছে নিজেকে রাখতে চাই তাকে আমি আজ পর্যন্ত বুঝতে পারিনি। অন্য সবার সমস্যা সমাধান করার পর যখন তাদের মাঝে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে, সেই হাসিটা নিয়ে হয়ত এই কঠিন বাস্তবতার জিবনে বেঁচে থাকা যায় তবে একটা সময় নিজেকে তীব্র একা লাগে। এবার তোমার প্রশ্নের উত্তর, হ্যা ভাল লাগছে, সত্যি অনেক ভাল লাগছে। আমি বললাম, যাকে আপনি চান তাকে আপনি বুঝতে পারবেন না, তার মনকেও পড়তে পারবেন না এটাই স্বাভাবিক। কারন যদি জানতে পারেন এসব তবে আপনাকে সে অবাক করবে কিভাবে। স্যার এবার আমার দিকে তাকালো। ঘড়িতে দেখলাম, আটটা পনরো বাজে। আমি স্যারকে বললাম, এবার মনে হয় আপনাকে যেতে হবে স্যার। স্যার হেসে দাড়িয়ে বললেন, খ্যাতটা সব জেনে গিয়েছে। আমার পাশে চায়ের কাপটা রেখে বললেন, চায়ের বিলটা দিয়ে দিও।
আমিও হেসে বললাম, পাওনা থাকলো স্যার। এবার একটু পরিচয় দিয়ে দিই। আমি ফাহিম। যার সাথে এতোক্ষন কথা বললাম উনি হলেন শাহিন স্যার। ভার্সিটিতে পড়াকালীন উনি CR ছিলেন। তাই বের হওয়ার পর এই ভার্সিটিতেই এক ম্যাম সহ জয়েন করেন। আর হ্যা আমাদের ক্লাসে কিছু বড়লোকের আদরের দুলালী আছে যারা আমাদের কয়েকজন ছেলেকে দেখে খ্যাত বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। সেদিন তাদের কথায় হেসেছিলাম। খ্যাত বলার কারন হিসেবে দেখলাম নিজের কাপড় চোপড় একটু ঢোলাঢালা এটাই। অন্যদের মত জিন্স প্যান্ট, টিশার্ট আর চোকে সানগ্লাস ছিল না বলেই খ্যাত। রাজন, আহাদ এরা মনে হয় সেদিন একটু মন খারাপ করেছিল। আমি তাদের বলেছিলাম, বাদ দে। এসব আর মনে করার দরকার নেই। ওরা বলল, একটা মেয়ে এভাবে বলল আর কিছু বলব না আমরা। আমি বললাম, ওদের বাবার টাকা পয়সা অনেক, অনেক ক্ষমতাশালীও। তোরা কিছু করতে পারবি না। উল্টো তোদেরি সমস্যা হবে।
ওরা এবার চুপ থাকলো। আমি এবার বললাম, কেউ তোকে কিছু টাকা দিল। কিন্তু তুই বিনা কারনে টাকাটা নিতে রাজি হলি না। তাহলে টাকাটা কার কাছে থাকবে। ওরা বলল, যে টাকা দিতে এসেছিল তার কাছে। আমি বললাম, তেমনি ওই মেয়েদের কথা ওদের কাছেই আছে। ওরা এবার মুখটা সম্প্রসারিত করে বলল, তাহলে ওরাই খ্যাত। আমি হাসলাম তখন। ওরাও তখন অনেক কথার বলি ফুটাতে শুরু করলো। একটু পরে ক্লাসে গেলাম। রাজন, আহাদ, আমি আর কয়েকজন পাশাপাশি বসার চেষ্টা করি। কিন্তু আজ দেখছি তাদের পাশের জায়গা গুলো ফাকা নেই। তাই ডানপাশের সারীর দিকে বসতে হল। সামনে ছিল সেই স্মার্ট মেয়েগুলো। একেকজনে এতো পরিমানে পারফিউম দিয়েছে যে রুম ফ্রেশার এর কাজ এসবেই হয়ে যাচ্ছে। মুখে আটা ময়দা, চোখে কাজল, চুলে গ্লো করছে, হাতে ক্যালকুলেটারের চেয়েও বড় ফোন, নোখ ইয়া বড় বড় দেখে মনে হচ্ছে বিয়ে খেতে এসেছে।
যত বড় ফোন অথচ মনে হয় না কেউ ক্যালকুলেটর এনেছে। ও সরি আবার খ্যাতের মত ট্যাবগুলোকে ফোন বলছি। ক্লাসে যে শুধু বড়লোকের দুলালী আছে তা নয় কয়েকটা বড়লোকের দুলালরা এখানে আছে। তারা আবার চুলে স্পাইক, চোখে সানগ্লাস, হাতে রিজব্যান্ড,শার্টের সব বোতাল খোলা রেখেই ক্লাসে এসেছে। এটাই হয়তবা স্মার্টনেস তাদের কাছে। এসব দেখে নিজের দিকে তাকালাম। নরমাল একটা জিন্স, একটা ফুল শার্ট আর একটা ব্যাগ। এটা মনে হয় খ্যাত। এসব চিন্তা হতেই হেসে পরলাম আমি। একজন দুলালী পিছনে তাকিয়ে আবার সামনে দেখলো। আমি এবার ব্যাগ থেকে খাতাটা বের করে কিছু লিখব তখনি সামনে থেকে একজন ডাকলো। এই ছেলে। খাতার দিকে তাকিয়েই বললাম, ফাহিম। ফাহিম বলে ডাকা হয় আমাকে। একটু পরে শুনতে পেলাম, এই খ্যাতটাকে ডাকছি শুনছেনা।
এবারও আমি খাতার দিকে তাকিয়ে কিছু লিখছি। একজন সামনে চলে আসল। খাতার দিকে মাথা নিচু করে তাকিয়ে আমি কেবল তার পা দেখতে পেলাম। পায়জামা না কি যেন বলে ওটাই পরে আছে। ভাবলাম জিন্স নেই এই মেয়ে হয়তো ওদের মত হবে না। আমি মাথা নিচু করেই বললাম, আমাকে ফাহিম বলে ডাকে শুনতে পাননি নাকি। আপনাকে কে কি ডাকে এটা আমি শুনতে আসিনি। আমরা কয়েকজন পরে এসেছি। এখানে বসব, আপনি অন্য কোথাও বসুন। আমি বললাম, আপনারা অন্য কোথাও বসছেন না কেন। মেয়েটি এবার রেগে গিয়ে বলল, এই ছেলে তুই উটবি না আমি অন্য ব্যবস্থা করব। আমি এবার মাথাটা উঠিয়ে তার দিকে তাকালাম। হালকা মেকাপ থাকলেও বুঝলাম ইনি যথেষ্ঠ সুন্দরী আর বাপের ছোট দুলালী। আমি কিছু বলতে যাব কিন্তু তখনি ক্লাসের এক দুলাল এসে সানগ্লাস খুলতে খুলতে বলল, কি হয়েছে মাধবী, কোন সমস্যা। মেয়েটির নাম তবে মাধবী। মেয়েটি সেই দুলালের দিকে তাকিয়ে বলল, আমরা কয়েকজন পরে এসেছি এখানে বসতে চাচ্ছি কিন্তু এই ছেলে উটছেই না।
মেয়েটাকে দেখে মনে হল, সে তার বড় ভাইকে কমপ্লেইন করছে। ছেলেটা কিছু বলতে যাবে তখন আরো কয়েকটা মেয়ে এসে বলল, তুই উটবি, না তোকে অন্যভাবে উঠাতে হবে। ছেলেটা এবার শার্টের কাপড় জোরানো শুরু করল। তখনি অনু ম্যাম ক্লাসে ঢুকলেন। সবাই তখন সামনে তাকিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি একটু মুচকি হেসে বললাম, এখন তো কিছু করার নেই। তবে আমি পেছনে যাচ্ছি আপনারা বসুন এখানে। বলেই হেসে উঠে পিছনে চলে আসলাম। সবাই রাগে তাকিয়ে বসে পড়ল। এরপর অনু ম্যাম ক্লাস শুরু করলেন। এদিকে রাজন আর আহাদ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আজ ভাল বাঁচা বাচছিস। ম্যাম না আসলে আজ তোকে ক্লাসেই পিটাতো ওরা। ওরা শুধু মেয়ে না একেকটা গুন্ডা। আমি ওদের বললাম, ভুল বললি। ওরা গুন্ডি। এবার ওরা হাসলো একটু। কিছু পরে ম্যাম বলল, আজ তো জব জমা দেওয়ার তারিখ ছিল। সবাই নিয়ে এসেছো? কেউ কিছু বলছে না। আমি জব করেছি তবে কিছু বলছি না।
কেউ কিছু বলছিনা দেখে ম্যাম এবার রেগে গেলেন। আমি এবার দাড়িয়ে বললাম, আমি নিয়ে এসেছি ম্যাম। আমার সাথে আরও কয়েকজন দাড়ালো। আদরের দুলালীদের মধ্যে কেবল দুজন আর দুলালদের মধ্যে একজন আর বাকি কয়েকজন আমরা। ম্যাম আমাদের জবগুলো জমা নিলেন। সাইন করার সময় একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করলাম। ম্যাম শাহিন স্যারের কলম ব্যবহার করছে। যেই কলমটা শাহিন স্যার কিছুদিন আগে ব্যবহার করতো। এখন অনেক কিছু ঘুরছে মাথায়। স্যার মনে হয় কলমটা হারিয়ে ফেলেছে নয়ত ম্যাম কোনভাবে নিয়েছে। কলমটা একটু দামী আর সবখানে পাওয়া যায় না। ভার্সিটির আশে পাশে তো নয়ই। তবে কি ম্যাম এটা স্যারের থেকে। না না কি ভাবছি। এসব ভাবতেই ভাবতেই ম্যাম সাইন করে জবগুলো নিয়ে চলে গেলেন। কয়েকজন দুলালী সঙ্গে কিছু দুলাল আমার দিকে এগিয়ে আসল। এক দুলাল বলল, আজ জব না দিলে হত না।
সবাই তো চুপ ছিল তুই কেন আগ বাড়িয়ে দিতে গেলি। এক দুলালী বলল, এইসব খ্যাত ছেলেদের নিয়ে কি ক্লাস করা যায়। আমি এবার যারা জব জমা দিল তাদের দিকে তাকালাম। যে আদরের দুলাল জব জমা দিল ও এসে বলল, কষ্ট করে জব করেছি জমা দিয়েছি। এতে এতো রিয়েক্টের কি আছে। আর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোকে এরা এতো কিছু বলছে আর তুই চুপ করে আছিস কেন। আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম। এবার কয়েকটা দুলাল এগিয়ে এসে বলল, তুই যদি আজ জবটা না দিতি তবে ম্যাম অন্যদিন জমা নিত। এখন শুধুই আমরা জবটা মিস করলাম না? আমি এবার বললাম, আচ্ছা পরের দিনে জমা দিস আমরা সবাই রিকুয়েস্ট করব ম্যামকে। তখন কয়েকটা দুলালী বলল, ন্যাকা, জুতো মেরে গরু দান। দরকার নেই কোন করুনার। আমি এবার একটা হাসি দিলাম।
তারপর ওই জব জমা দেওয়া দুলালকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। আমি ফাহিম। ওই বড়লোকের দুলাল বলল, আমি সায়েম। তারপর রাজন, আহাদ আরও কয়েকজন মিলে ক্যান্টিনে গেলাম। সেখানে সবাইকে চা অফার করলাম। তখন আরও কিছু দুলাল আসল ক্যান্টিনে। ওরা এসে আমাদের সাথে জয়েন করল। সবার সাথে পরিচিত হলাম। যেই ছেলে পিটানোর জন্য হাতের শার্ট উঠাচ্ছিল সেও অনেকটা লজ্জা নিয়ে কথা বলল। অনেক মজা করলাম আমরা। ঠিক তখনি কে যেন ডাকলো। এই ছেলে। আমি ভেবেছি অন্য কাউকে। তখনি দেখি কে যেন বলল ঐ খ্যাত তোকেই ডাকছি। মেজাজটা এবার তুমুল উপরে উঠে গেল। তারপর দেখলাম এক বড় আপু ডাকছে। আমি একপা দুপা করে গেলাম তার কাছে। কাছে যেতেই বলল, নাম কি? বললাম, ফাহিম। ওরা কয়েকজন হাসলো। ফাহিম এটা কোন নাম হল।
আমি বুঝলাম না এই নামে এতো হাসার কি আছে। ওরা হাসি থামিয়ে বলল, ওখানে এতো হাসাহাসি কেন। দেখছিস না আমরা এপাশে বসে আছি। আদবকায়দা কি ভুলে গেছিস। আমি বুঝলাম, আপুটা ধরে বাধে রেগ দিচ্ছে। তাই আমিও মজা করার চিন্তা করলাম। একটু জোরে হাসতে হাসতে বললাম, ওহ হো আপনি জানেন আজ ক্লাসে কি হয়েছে। ক্লাসে আজ মেয়েরা কেউ জব নিয়ে আসে নি আর আমরা কয়েকজন জব জমা দিয়েছি। এটা নিয়ে তাদের কি রাগ বলবেন না আর।আমি হাসতে হাসতে এসব বলছি আর সামনের বড় আপুরা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম ক্লাসমেটরা সবাই চুপ করে দাড়িয়ে এদিকেই দেখছে। কেউ কিছু বলছেনা দেখে আমি বললাম, কি আপু কিছু বলছেন না কেন। এবার সামনের আপুটা বলল,দেখে তো মনে হয় আমাদের থেকেও বড় কিন্তু এখন প্রথম বর্ষে পরে আছিস কেন।
আমি এবার একটু পার্ট নিয়ে বললাম, বড় মনে হলে বড়দের সম্মান করতে শিখুন। বলেই চলে এসেছি। পরেরদিন আবার সকালে সবার আগে এসে বসে আছি। শাহিন স্যার একটু পরেই এসে বললেন, অনেক ভাবলাম কিন্তু মানতে পারলাম না তোমার সকালে আসার কারনটা। তুমিও কি কাউকে ভালবেসে আসও। আমি বললাম, জি স্যার। আপনায় ভালবাসি। তবেকি জানেন স্যার আপনার হারানো কলমটা আমি খুজে পেয়েছি। স্যার এবার একটু অবাক হয়ে বলল, আমার কলম হারিয়েছে এটা তুমি কিভাবে জানো। আমি বললাম সেটাতো অনু ম্যামের ব্যাগ দেখলেই বুঝবেন। একটা কথা জানেন স্যার ভালবাসা হল ছায়ার বিপরীত। আপনি এক পা এগোলে ছায়া এক পা সরে যাবে কিন্তু ভালবাসা এক পা এগিয়ে আসবে। আমার মনে হয় এবার আপনার পা বাড়ানোর সময় হয়েছে। কেন বুঝছেন না উনিও বিয়ে করছেন না। স্যার এবার কাছে এসে বলল, খ্যাত ছেলেটা যে এত কিছু ডিটেক্ট করতে পারে এটা জানতাম না। আচ্ছা একটা কথা বলবে। আমি বললাম, আসলে ডিপ্লোমার পর একটু সময় বেশি নিয়েছিলাম পাবলিকে চান্সের জন্য।
তাই একটু বয়স মনে হয়। মনে মনে বলছি এসব মিথ্যে আমাদের বলতে হয় স্যার। স্যার বললেন, তুমি কিভাবে বুঝলে আমি তোমার বয়স নিয়ে প্রশ্ন করব? আমি আস্তে করে বললাম, প্রফেশনই এধরনের তো কি করব। বিরবির করে কিছু বলছি দেখে স্যার বলল, কি কিছু বলছো। আমি একটু হাসি দিয়ে বললাম, মনে হল স্যার। স্যার আর কিছু না বলেই চলে গেল। একটু পর দেখলাম সেই বড় আপু আসছে। আমার সামনে এসে বলল, এতো সকাল সকাল এসেছিস কেন। আমি এবার হাসতে হাসতে বললাম, আমাকে তুই করে বলতে খারাপ লাগে আপনার তাই না। বড় আপু একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলল, খারাপ কেন লাগবে। আমি এবার হাসতে হাসতে বললাম, আমি কিন্তু চোখের ভাষা পড়তে জানি। আপনি আমাকে তুমি করে বলতে পারেন। আপুটা এবার অবাক হয়ে তাকালো। আমি বললাম, তা আপনার নাম কি মিস……। উনি বললেন, নিশী।
আমি বললাম, তো মিস নিশী আপনি আজ হঠাত এতো সকাল সকাল। উনি বললেন, এই ছেলে তোমার সাহস তো কম নয় আমাকে নাম ধরে ডাকছো। তুমি জানো আমি কে। আমি বললাম, হুম জানি কিছুটা। আপনি আমাদের সম্মানিত ভিসি স্যারের একমাত্র মেয়ে। আপনি খুবই ঝগড়াটে। ক্যান্টিনের সিংগারা আপনার অনেক পছন্দ। ছোট থেকেই সবার খুব আদরের। আর সবচেয়ে খারাপ হল আপনার জেদ বেশি। আর একটু ভাল দিক হল আপনি নিজের পায়ে দাড়াতে চান সেটাও অবশ্য জেদের বসেই। কি ঠিক বললাম কি? মেয়েটি আশ্চর্য হয়ে এদিকে তাকিয়ে আছে। আমি এবার তার কাছে গিয়ে বললাম, আমাকে তুই করে ডাকতে আপনার ভাল লাগে না এটাও আমি জানি। আপনি তুমি করেই ডাকতে পারেন।বলেই ক্লাসে আসলাম।ভার্সিটি শেষ করেই দেখলাম মিস নিশী তার বন্ধুদের সাথে কোথায় জানি যাচ্ছেন। অগত্যা আমাকেও যেতে হল। কিন্তু সে জানে না আমি আসছি। আমাকে তো আর এমনি তার জন্য রাখা হয় নি। একটু পরেই যখন গাড়ি ফাকা রাস্তায় চলতে শুরু করেছে তখনি দেখলাম দুটো গাড়ি এসে তাদের আটকালো।
সবাই অনেক আতংকিত হল। কিন্তু তারা ঠিক নিশীকেই তুলে নিল। বাকিরা কিছুই করতে পারলো না। আমি দুর থেকে দেখছি। নিশীকে তুলে নিয়ে যখন ওরা গাড়ি নিয়ে চলে গেল তখন আমি ওখানে আসলাম। ওদের সামনে যেয়েই বললাম, এ কি হল। সর্বনাশ। এতগুলো স্মার্ট মেয়ে থাকতেও কিভাবে একটা মেয়েকে নিয়ে তারা চলে যায়। এখন কি হবে। ওই মেয়েদের অবস্থা একদম সচনীয়। তারপর বললাম, আপনারা নিশীর বাড়ি যান। উনার বাবাকে বলবেন সব। সাথে এটাও বলবেন আমি ওর সাথেই আছি। আর হ্যা, আর যেন কেউ না জানে এসব। তারপর আমি বাইকটা নিয়ে চলে গেলাম। একটা গোডাউন ঘর। সামনে তিনটি গাড়ি। এর আগে দুটো ছিল। তার মানে নিশ্চয়ই এবার মাথাটা সহ এসেছে। গোডাউনের পিছনের দিকে গেলাম। ছোট ছোট ফুটো রয়েছে। দেখার চেষ্টা করলাম কিন্তু হল না। ভাবলাম ফোর্স ডাকবো কি না। পরে ভাবলাম ফোর্স ডাকলে রোমান্স হবে না। তাই সামনে এসে মেইন দরজা দিয়ে উকি মেরে দেখলাম একজন চেয়ারে বসে আছে আর বাকিরা দাড়িয়ে।
১৩ জনের মত প্রায়। দুজনের হাতে A-605 বন্দুক যা সাধারনত বড় অফিসারদের হাতে থাকে। কিন্তু এরা গুন্ডা। যাই হোক নিশীকে ওরা মাটিতে ফেলে রেখেছে। আমি এবার ভিতরে ঢুকে বললাম, আমি জানি মেয়েটা একটু সুন্দরী তাই বলে এভাবে দাড়িয়ে সবাই মিলে তাকিয়ে থাকবি। সবাই আমার দিকে তাকালো। দুজন গান তাক করল আমার দিকে। নিশীও মাথা উঠিয়েছে। ওদের মাথাটা বলল, মি. ফাহিম। যাকে পুলিশের তাসের টেক্কা বলা হয়। সন্ত্রাস জগতের হাঙ্গর বলে খ্যাত আপনি। আপনাকে এখানে আশা করিনি। আমি বললাম, আমিও। তবে আমার সমন্ধে অনেক কিছুই জানেন দেখছি। উনি হাসলেন। বললেন, অনেক মিশনে আপনি সফল হয়েছেন কিন্তু আপনার শেষটা যে আমার হাতে হবে এটা জানতাম না। আমি বললাম, আপনার হাতে শেষ হওয়াটাও একটা ভাগ্যের ব্যাপার। উনি এবার উঠে দাড়িয়ে কোমর থেকে বন্দুক বের করে আমার দিকে তাক করলেন। বললেন, গুড বাই মি. ফাহিম। আমি বললাম, একটা শেষ ইচ্ছে ছিল। উনি বললেন, আপনি এখনও চালাকি করার কথা ভাবছেন।
আমি বললাম, ঠিক তা না। আসলে মিস নিশীর কাছে জানার ছিল যে উনি আমাকে পছন্দ করেন কিনা। ভার্সিটিতে উনি একটু কথা বলার চেষ্টা করতেন তো। আমি সামনে এগিয়ে গেলে উনি বলল দাড়ান। আপনাদের লুলুপুচুর এখন কোন সময় নেই। আমি এবার তার দিকে তাকিয়ে বললাম, দেখুন আমাকে আপনি কেমন চেনেন জানি না। তবে আমি মরে যেয়েও আমার মিশন সফল করব এটাতো আপনি জানেন। বাইরে ফোর্স দাড়িয়ে আছে। আপনাদের বের হওয়ার চান্স নেই। আপনার হাতে এখন দুটো অপশন। আমাকে আর ওকে মেরে ফেলে আকাশে প্রেম করার জন্য পাঠিয়ে দিন তারপর স্যারেন্ডার করুন। নয়তো এখনি নত স্বীকার করে আপনার সাজা টা একটু কমাতে পারেন। আমি সাহায্য করব এ ব্যাপারে। তবে আমাকে একদিন ডিনারে ইনভাইট করতে হবে। লোকটা অনেক ক্রধিত হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি কানে ব্লুটুথ এয়ারফোনে হাত দিয়ে বললাম, রেডি টু ফায়ার।
বাকিরা সবাই এবার ভয় পেয়ে গেল। আমি এবার উনার সামনে গিয়ে বললাম, কোনটা ঠিক করলেন। উনি অগ্নি চোখে দাড়িয়ে। আমি আস্তে আস্তে সামনে গিয়ে এবার তার হাত থেকে বন্দুকটা নিলাম। উনি বললেন, আমি বিশ্বাস করলাম আপনাকে। বাকি দুজনও বন্দুক নামিয়ে ফেলেছে। এবার তাদের থেকেও বন্দুকগুলো নিলাম। মাথাটা বলল, আপনার কিচাই কত টাকা লাগবে বলুন। আমি এবার এদের মাথাটার কাছে গিয়ে বললাম, আচ্ছা আপনি আমাকে চেনেন কিভাবে। উনি বললেন এর আগেও আপনি আমার কাজে বাধা দিয়েছেন। আপনাকে না চিনে কি পারি। আপনার সব খবর আমি জানি। শুধু এটাই জানতাম না এই মেয়েকে আপনি ফলো করছেন। আমি বললাম, আপনি আরও অনেক কিছুই জানেন না। এই যেমন আমি মিশনে গেলে কখনও ফোর্স নিয়ে যাই না। গেলেও যেসব ঘটনা কয়েকদিন আগে হয়েছে সেসব। আর এটাতো কিছুক্ষন আগেই হল। তাই ফোর্স নিয়ে আসার প্রশ্নই উঠে না।
উনি এবার আমার দিকে ক্রধিত রুপে তাকিয়ে তার লোকদের বললেন, এই ধর ওকে। আমি একটু পিছিয়ে দুটো বন্দুক তাদের দিকে তাক করে বললাম, মরার ইচ্ছা হলে আসতে পারো। কেউ আর আসলো না। একজনকে ডেকে নিলাম। বললাম, তোর নাম কি। ও বলল, শরীফ। ওকে বললাম, এখন আমি যা যা করতে বলব তাই যদি করিস তবে তোকে ছেড়ে দিব। ছেলে অনেক খুশী হল। বলল, কি করমু ওস্তাদ কোন। আমিও একটু হেসে বললাম, তেমন কিছু না। এদের সবাইকে বেধে ফেল। আর প্রথমে এই মেয়েটার বাধন খুলে দে। এর মধ্যে আবার একজন দৌড়ে আসতে লাগলো। কিছু করার ছিল না। গুলিটা ওর পায়ে চালিয়ে দিলাম। শরীফ এবার ভয় পেয়ে নিশীর বাধন খুলে দিল। নিশী ছাড়া পেয়ে দৌড়ে আমার পিছনে এসে দাড়ালো। দেখলাম ও কাঁপছে। একে একে সবাইকে শরীফ ভালভাবে বাধলো। বাধা শেষ হলে আমার কাছে এসে বলল, ওস্তাদ সবাইরে বাধছি। আমি বললাম ওকে তুই যা এবার।
ও দৌড়িয়ে বেরিয়ে গেল। আমি এবার ফোনটা বের করে স্যার কে ফোন দিলাম। বললাম, স্যার মাথাটাকে ধরেছি। ফোর্স পাঠিয়ে নিয়ে যান। ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো, নিশী ঠিক আছে তো। আমি বললাম, জি স্যার ঠিক আছে। আমি এদের নেতার কাছে এগিয়ে গিয়েয়ে বললাম, বেইমানদের সাথে একটু বেইমানী করতে হয়। আর ওটাতে আমি দক্ষ। ছোট ছেলেমেয়েরা কি ক্ষতি করেছিল তোর। কিছুক্ষন পর ফোর্স আসলো। আমি ফর্মালিটি শেষ করে এবার নিশীকে নিয়ে বের হয়ে তার বাসায় আসলাম। এতোক্ষনে নিশী একটাবারের জন্যও আমার হাত ছাড়ে নি। তার বাসায় তাকে পৌছে দিয়ে আমি আবার কোন অজানা উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরি। কিছুতেই ছাড়ছিল না আমায় সে।তবুও আসতেই হবে। আমি মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাই না।এবার একটু সব কিছু বলি। কয়েকদিন ধরে কিছু লোক সব বড় বড় লোকদের টার্গেট করছে। তারা তাদের ছেলে অথবা মেয়েকে তুলে নিয়ে বড় রকমের টাকা আদায় করছে। যারা টাকা দিতে অস্বীকার করত তাদের মেয়ে অথবা ছেলেকে পঙ্গু করে ছেড়ে দিত।
এসবে পুলিশ একবার তাদের ধরেও ফেলেছিল কিন্তু এরা কেউই এদের মেইন নেতাকে জানে না। কিছুদিন পর যখন কয়েকজন গোয়েন্দা থেকে জানা যায় যে ওইসব লোক ভার্সিটির আশে পাশে অবস্থান করছে। তখন উপর থেকে আমায় এ মিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দীর্ঘ তিনমাস ধরে প্রথম বর্ষের ছেলেমেয়েদের সাথে ক্লাস করেছি। তাদের কি সব কথা বাত্রা। ভার্সিটিতে প্রথমে আসার কারন হল এটাই। এর পর বাকি সব কিছু তো জানেনই। রাত বাড়ছে। চাঁদনী বেড়েই চলেছে। কবর স্থানের পাশে বসে আছি। মা বাবা কেউ বেঁচে নেই আমার। একটা বড় বোন ছিল যে আমাকে মানুষ করেছে। কিন্তু কিছু মানুষ তাকেও চিরদিনের মত বিদায় করে দিল আমার থেকে। এসব ডাকাতি, সন্ত্রাসী দমনের জন্যই আমি আজ একজন সিক্রেট ডিটেক্টিভ অফিসার হিসেবে কাজ করছি। অনেক কষ্ট করেছি এই পোস্টে জবটা করার জন্য। প্রতিটা দিন আমি কবর স্থানে এসে বুবুর সাথে কথা বলি। বুবুকে বলি আজ কার ভাই বা বোনকে বাঁচালাম। কার কি ফিরিয়ে দিলাম।
এসব বলার পর আমি অনুভব করতে পারি আমার বুবু আমার পাশে বসে আছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর বলছে, এভাবেই সব মানুষের মাঝে আমাকে খুজে নিস ভাই। জানি তোর এভাবে বাঁচতে কষ্ট হয়। কিন্তু কি করবি বল। আল্লাহ হয়ত চায়নি তুই আমার কাছে সারাজিবন থাক। তাছাড়া আমি সবসময় তোর পাশে আছি রে। প্রতিদিনের এই কল্পনাটাই আমার চোখে পানি এনে দেয়। আমি কাঁদতে কাঁদতে বলি, আমায় একটু জড়িয়ে ধর না বুবু। আমাকে একটু ঠাই দেনা তোর বাহুতে। একটু জড়িয়ে ধর না বুবু। জড়িয়ে ধর না বলে কাঁদতে থাকি। কিন্তু এই কান্নাটা থামানোর জন্য কেউ নেই আমার। চোখের পানি গালেই শুকিয়ে যায় যেটা মুছে দেওয়ারও কেউ নেই। আধার কমতে শুরু করেছে। পাখির ডাক আবছা আবছা শোনা যাচ্ছে। উঠে দাড়ালাম। তবে আজ গন্তব্য ভার্সিটি নয়। আজ যেতে অন্য কোথাও কারও ভাই বোনকে আলাদা হতে না দেওয়ার জন্য।
তিন বছর পর, আজ শাহিন স্যার এবং অনু ম্যাডামের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকি। সেদিন স্যারের সাথে কথা বলার পর স্যার সব কিছু বুঝে নেয়। পরে ম্যামকে প্রোপজ করে। এরপর বিয়ে। আজ দ্বীতীয় বিবাহ বার্ষিকিতে তাদের ছাত্রছাত্রী রাই একটা ছোটখাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সেখানেই স্যারকে কিছু বলার জন্য বলা হয়েছে। স্যার তাদের ধন্যবাদ দিল অনেক। কখনও এসব হবে চিন্তাও করেন নি। তবে এবার তিনি বললেন, আজ আমি কিছু বলব না। যার জন্য আমরা আজ এই দিনটা দেখছি আমি আজ তার জন্য কিছু বলতে চাই। বলতে চাই সেই খ্যাত ছেলেটির কথা। যে প্রায় তিন বছর আগে ভার্সিটি ছেড়ে চলে গিয়েছে। যে সবার আগে ভার্সিটিতে আসতো।
আমি একটা চিঠি পড়ে শোনাতে চাই আজ। যেটা তোমাদের উদ্দেশ্যে। প্রিয়, আমার চতুর্থ অপুর্ন গ্রাজুয়েশনের ক্লাসমেটরা। আশা করি ভালই আছিস। হ্যা রে আমি তোদের সেই খ্যাত বন্ধুটি বলছি। সেদিনের জবটা অনু ম্যাম পরে জমা নিয়েছিল কি? নেয় নি তাই না? হাহাহা। অনেক রেগে আছিস তোরা তাই না? কি করব বল আমার কিছুই করার নেই। সেদিন ক্যান্টিনে তোদের সবাইকে একসাথে দেখতে পেয়ে অনেক ভাল লেগেছিল জানিস। আর একটা কথা বলি। পোশাক দেখে কখনও খ্যাত, স্মার্টনেস বিবেচনা করিস না। যদি পেশাকেই সব হত তাহলে বিল গেটস, মার্ক জাকারবাগ এর দুনিয়ার সবচেয়ে ঝ্যাত মানুষ হত। তারা প্রায়ই এক কাপড়ে থাকে। বিশেষ করে জাকারবাগ। একটা সাদা ঢোলা গেন্জি সাথে ঢোলা সিম্পল একটা জিন্স। তাকে কিন্তু কেউ খ্যাত বলে না।
আর স্মার্টনেস হল যে কোন পরিবেশে নিজের মানিয়ে নেওয়ার প্রবনতা। একটা বস্তিতে গিয়ে বা কোন পার্টিতে গিয়ে সবার সাথে যে কোন পর্যায়ে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াই হল স্মার্টনেস। আমি হয়তবা এটাকে কিছু মনে করিনি। কিন্তু রাজন আহাদ রা এসবে একটু কষ্ট পায়। তাই এসব নিয়ে আর কাউকে ছোট করিস না। সবাই তোরা ভাল থাক এটাই আশা করি। আর হ্যা নিশী। বড় আপু। মন খারাপ করবেন না প্লিজ। আমি আবারও কাউকে হারতে চাই না। তাই আপনাকে আমার সঙ্গে নিতে পারলাম না। ভয় হয় যদি আপনিও ছেড়ে যান। তবে আজ যদি ক্যান্টিনে দেখা হয় তবে কিন্তু তুমি করে বলতে হবে। আর অসংখ্য ভালবাসা রইল স্যার ম্যামের জন্য। সেদিন জবটা জমা না দিলে এসব কিছুই হত না। আর স্যার এক কাপ চা পাওনা আছে কিন্তু। ইতি, আপনার ছাত্র ফাহিম। এসব শুনে সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেল।
নিশী এবার ক্রন্দনমুখে উঠে দাড়ালো। সবাই একসাথে এখন ক্যান্টিনের দিকে আসছে। মিথ্যে হাসিগুলো আর নাই বা দিলাম। নিজের ভালমন্দ গুলোকে এবার প্রকাশ করতে চাই। ভাবছি অনেকদিন নিশীকে দেখা হয় না। এবার না হয় এক পা আমিই এগিয়ে যাই। এখন তো শাহিন স্যারের মত আমারও ইচ্ছে হয় যে কেউ আমার দায়িত্ব নিক। আমাকে কেউ অবাক করুক, কেউ মিষ্টি শাষন করুক। কেউ একটু ভালবাসা দিয়ে জড়িয়ে নিক এই একলা পথের মানুষটাকে….