একটি ভুল সিদ্ধান্ত

একটি ভুল সিদ্ধান্ত

এখন ভোর রাত। আমি আটতলার ওপরে দাড়িয়ে আছি। নীচে এখনো একটা দুইটা গাড়ি দেখা যাচ্ছে। আমি ছাদের রেলিং এ উঠে দাড়ালাম এখুনি লফিয়ে পরবো আর সব শেষ। বেঁচে থেকে লাভ কি। যাকে ভালোবাসতাম সে আজ অন্য কারো ঘর করছে। ওর পায়ে পর্যন্ত পরেছি কিন্তু ও আমার কাছে থাকতে রাজি না। কেনই বা থাকবে আমি তো বেকার আর ওর বরের তো বিশাল ব্যাবসা। শেষবারের মতো বুক ভরে নিশ্বাআস নিয়ে রেলিং থেকে লাফ দিলাম। মনে হচ্ছে আকাশে উড়ছি।

এরপরই যন্ত্রণায় চিৎকার দিলাম। মনে হচ্ছে হাত পা সব গুড়ো হয়ে গেছে। শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তের ধারা রাস্তা ভিজিয়ে দিচ্ছে। যন্ত্রণায় চিৎকার করতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না। কতক্ষন জানিনা তবে ফজরের আজানের শব্দ কানে ভেসে আসল। আমি উঠে দাড়ালাম। এখন কোনো যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে না। একটুপর আব্বু নামাজের জন্য বাইরে আসবে তার আগেই বাসায় যেতে হবে। কিছু না ভেবেই বাসার দিকে হাটা ধরলাম কিন্তু মানুষজনের কোলাহলে সেদিকে আবার ফিরলাম। আমি তো উঠে চলে এসেছি তাহলে ওখানে এত জটলা কিসের। এগিয়ে গিয়ে যা দেখলাম তাতে আরেকবার চিৎকার করতে ইচ্ছা হলো।আমি পরে আছি সেখানে। মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে মুখের এক সাইড থেতলে গেছে। হাত ভেঙে শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেছে। রক্তে রাস্তার পিচ লাল রং ধারণ করেছে। কি বিভ্যৎস দৃশ্য।

কিছুক্ষণ পর আব্বুকে দেখলাম নিচে নামছে। জটলা দেখে এদিকেই আসছে। আমি তাকে আটকানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু সে আমাকে দেখেই নি এমন ভাবে হেটে সেদিকে গেল। গিয়ে প্রথমে আমাকে ঠিক চিনতে পারল না। পরে যখন চিনতে পারল কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর আমার উপর আছরে পড়ে কাদঁতে লাগল। এরপর পাগলের মতো হাতের পার্লস খুজতে লাগলো। বুকে মাথা লাগিয়ে হার্টবিট খুজতে লাগল। হার্ট পান্চ করলো। বাট অনেক দেরি হয়ে গেছে। ততক্ষনে পুলিশ চলে এসেছে। আমাকে তুলে বাসায়আনা হলো। আমার মা নামাজ পড়ে বোধহয় রান্নাঘরের দিকে আসছিল আমার লাশ আনতে দেখে প্রথমে কিছুই বুঝলেন না।

বাবা আস্তে করে মায়ের কাধে হাত রাখলেন। একজন কনস্টেবল আমার মুখ থেকে চাদর সরিয়ে দিল।আমার মা বুক ফাটানো একটা আর্তনাদ করে বেহুস হয়ে গেল। আমার ছোট বোনটি ঘুমাচ্ছিল। মায়ের চিৎকারে ঘুম ঘুম চোখে এ ঘরে এল। আমার লাশের দিকে তাকিয়ে ওর ঘুম উধাও হয়ে গেল। দু তিনবার চোখ কচলে তাকালো কিন্তু একই দৃশ্য দেখে আমার বুকে আছরে পরল। ওর চিৎকারে পুরো বাড়ি বোধহয় কাপছিল। কিছুক্ষনের মধ্যেই পুরো বাড়ি মানুষে ভরে গেল। পুলিশ ইনভেস্টিগেট করে বলল ইটস্ এটেম্প টু সুসাইড। আমার ঘর সার্চ করে আমার লেখা সুসাইট নোটটা সবাইকে দেখালো। সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে আমারই হাতে লেখা কয়েকটা শব্দ।
‘ রিধিকে ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। ভীষণ ভালোবাসি ওকে। আজ ও বিয়ে করে আমায় ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছে। তাই আমিও যাচ্ছি।’

ইতি
সাহিন চিঠিটা বুকে জরিয়ে বাবা আরেকদফা চিৎকার করলেন।আর বললেন, ওই মেয়ের ভালোবাসা তোর কাছে এতই বড় হয়ে গেল যে আমাদের বাইশ বছরের ভালোবাসা এভাবে উপেক্ষা করে চলে গেলি।

সত্যিই তো আমার বাবা মা তো আমাকে কখনো কোনো কষ্ট দেয়নি। একমাত্র ছেলে হিসেবে যখন যা চেয়েছি তাই দিয়েছে। মরার সময় তাদের কথা তো একবারও মনে পড়েনি আমার। রিধি তো এখন খুব সুখে আছে। আমার মৃত্যু তো তার সুখ কে এতটুকু আঘাত ও করবেনা। অথচ বিনাদোষে আমার পরিবারকে এতো বড় কষ্টটা দিলাম আমি। কিছুক্ষনের ভিতরই প্রচন্ড আফসোস হতে লাগলো আমার। কি করলাম আমি এটা। সব আত্মিয় স্বজনরা এসে আমার পরিবারকে সান্তনা দিচ্ছে। আমি কিছুই করতে পারছিনা। আমাকে যখন জানাজার জন্য নিয়ে যেতে এলো আমার মা আর বোন আমাকে জাপটে ধরে বসে ছিল কিছুতেই নিতে দেবেনা। তবুও সবাই জোর করে আমায় নিয়ে গেল। জানাজার পর কবর স্থানের উদ্দেশ্যে রওনা হলো সবাই।

আমার বাবার কাধে খাটিয়ার এক অংশ। একদিন বাবা কথায় কথায় আমাকে বলেছিলেন আমার দাদার লাশ নেওয়ার সময় কি পরিমান কষ্ট পেয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন একজন বাবার সবথেকে বড় প্রাপ্তি মৃত্যুর পর তার ছেলের হাতের মাটি পাওয়া। আর সবথেকে কষ্টের সেই ছেলের লাশ নিজের কাধে নেওয়া। আজ সেই কষ্টের কাজটাই তিনি করছেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই আমাকে অন্ধকার কবরের মধ্যে শোয়ানো হলো। সাথে সাথে মাটি চাপা ও দেওয়া হলো। আমার চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে গেল। উফ্ কি অন্ধকার। আমি চিৎকার করে বলতে থাকলাম, বের করো আমাকে আমি এখানে থাকতে পারছিনা প্লিজ বের করো আমাকে।

কিন্তু কেউ শুনল না। আমি চিৎকারকরতেই আছি। ঠিক তখনই মায়ের ঢাক কানে এল। মা আমাকে ধাক্কাচ্ছে আর ডাকছে। আমি চোখ খুলে নিজেকে আমার রুমে আবিস্কার করলাম।মা ভীত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ঘেমে নেয়ে একাকার। কিছু না বলে মাকে জরিয়ে ধরলাম। যাক এটা একটা সপ্ন ছিল। অনেক বড় একটা ভুল থেকে আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছে এজন্য আল্লাহর দরবারে হাজার শুকরিয়া।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত