সন্দেহ

সন্দেহ

তুমি কি আমাকে কখনো বুঝতে চেষ্টা করবে না অভ্র?আম সত্যি বলছি তনয় এর সাথে আমার কোনো রকম বাজে সম্পর্ক নেই।আমাদের সন্তানের মাথায় হাত রেখে বলছি। নীলা অরনীর মাথায় হাত রাখতে যাবে এমন সময় অরনীর হাত ধরে টান দিয়ে সরিয়ে নিলো অভ্র। “দুশ্চরিত্রা মেয়ে তোর সাহস কিভাবে হয় আমার মেয়ের মাথায় হাত রেখে মিথ্যা বলিস তুই!”- বলেই ঠাস করে থাপ্পড় মেরে দিলো নীলাকে। নীলার টুকটুকে ফর্সা গাল টা মূহুর্তে রক্তবর্ণ ধারণ করলো। বাবা মা কে মেরো না তুমি বলেই ৪ বছরের ছোট্ট অরনী ছুটে গিয়ে মা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। অভ্র জোর করে নীলার কাছে থেকে অরনীকে কোলে তুলে নিয়ে চলে গেলো বাইরে।যাবার আগে বলে গেলো বাড়ি ফিরে যেনো ওর মুখ না দেখতে হয় অভ্রকে।

৬ বছরের সংসারে কতবার ই না অভ্রের হাতে কারণে অকারণে মার খেতে হয়েছে নীলাকে। কিন্তু কখনো প্রতিবাদ করতে পারেনি।আর তার কারণ একটাই বাবা মায়ের অবাধ্য হয়ে ৬ বছর আগে পালিয়ে এসেছিলো সে অভ্রের হাত ধরে।আর সেই ঘটনার পর নীলার বাবা হার্ট এটাক করে মারা যায়।নীলার ভাই নীলাকে শেষ বারের মতো ওর বাবার মরা মুখ টাও দেখতে দেয়নি।তাই নীলা ভালো করেই জানে অভ্র ছাড়া তার আর কোনো পথ নেই। অভ্র ছেলে হিসেবে বেশ ভালো হলেও মাত্রাতিরিক্ত রাগী আর সন্দেহ প্রবণ।ছোট ছোট বিষয়ে নীলাকে সন্দেহ করে। সম্পর্কের শুরু থেকেই নীলাকে চোখে চোখে রাখতো। কোনো ছেলের সাথে সাথে বলতে দেখলেই নীলার সাথে ঝগড়া করতো।

প্রথম দিকে নীলার এগুলো ভালো লাগতো,ভাবতো অভ্র খুব বেশি ভালোবাসে তাই হয়তো এমন করে।কিন্তু বিয়ের পর অভ্রের সন্দেহ যেনো আরো দ্বিগুণ হয়ে উঠলো। নীলার কলেজ যাওয়া বন্ধ হলো কেননা কলেজ গেলে বন্ধু বান্ধবের সাথে মিশলে নীলা যদি বদলে যায়?এটা ছিলো অভ্রের ধারণা।অভ্রের মা যতদিন বেঁচে ছিলেন তিনি নীলাকে খুব ভালোবাসতেন।অভ্র রেগে গেলে উনি নীলাকে আগলে রাখতেন।কিন্তু উনি মারা যাবার পর থেকে নীলা সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়েছিলো।অভ্র যেমন ই হোক খুব বেশি ভালোবাসতো নীলাকে।ভালোবাসার কমতি ছিলো না কোনো।কিন্তু মাঝে মাঝে একটু রেগে গেলেই শুরু হতো অশান্তি।

তাই নীলা সবসময় সাবধানে থাকতো।সারাদিন ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে আর টিভি দেখেই সময় কাটতো নীলার।
কিন্তু গত পরশু বিকালে নীলা যখন ছাদে গিয়েছিলো কাপড় তুলতে তখন সেখানে বাড়ি ওয়ালার ছেলে তনয় বসে
গিটার বাজাচ্ছিলো। গিটারের শব্দ শুনে নীলার মনে পুরোনো দিনের স্মৃতি জাগ্রত হচ্ছিলো। একটা সময় অভ্র নীলাকে রোজ গিটার বাজিয়ে শোনাতো। নীলাকে আনমনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তনয় নীলার দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করে আপনি অভ্র ভাইয়ার স্ত্রী না?

-হ্যাঁ।আপনি আমায় চেনেন? আরে ভাবি আপনি করে বলছেন কেন?তুমি করেই বলবেন,আমি তো আপনার দেবর হই,তনয় আমার নাম।অভ্র ভাইয়া আমায় খুব স্নেহ করে। আচ্ছা ভাইয়া আমি আসি।নয়তো অরনী কান্না করবে।একা আছে মেয়েটা। আচ্ছা ভাবি আসুন,আর হ্যা কোনো সাহায্য লাগলে অবশ্যই এই ছোট ভাইকে স্মরণ করবেন। চলে যেতে যেতেই হঠাৎ নীলার মনে পড়ে ২ দিন পর অভ্রের জন্মদিন। কিন্তু ও তো বাইরে যেতে পারবে না। তাই আবার ছাদে ফিরে এসে তনয় কে বলে ভাই একটা সাহায্য করবে?

-জ্বী ভাবি বলুন।
-কাল বা পরশু বিকালে আমাদের বাসায় এসো একটু আমি কিছু টাকা দেবো একটা গিটার কিনে এনে দিতে পারবে? ২ দিন পর তোমার ভাইয়ার জন্মদিন তো তাই ওর জন্য সারপ্রাইজ। জ্বি ভাবি অবশ্যই। চলুন এখন নিচে যাওয়া যাক,সন্ধ্যা হয়ে আসছে। একথা বলে নীলা আর তনয় একসাথেই সিড়ি বেয়ে নিচে নামে। আর দূর্ভাগ্যবশতঃ সেইটা অভ্রের চোখে পড়ে। কিন্তু অভ্র কিছু না বলে রুমে চলে যায়।রাতে খাবার সময় অভ্র নীলার দিকে তাকিয়ে বলে আজ বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছে তোমায়! কি ব্যাপার নীল? কই না তো!এমনিতেই আজ মন টা ভালো আছে তাই। অভ্র মেকি হাসি হেসে বললো ওহ আচ্ছা। রাতে ঘুমানোর সময় নীলা অভ্রর বুকে মাথা রেখে বললো জানো অনেকদিন পর পুরনো সেই দিন গুলো খুব মনে পড়ছিলো তনয় এর গিটার এর সুর শুনে।তোমার সেই পুরনো দিন গুলো মনে পড়ে না অভ্র? হ্যাঁ পড়ে,তবে পার্থক্য একটাই তখন নীলা শুধু আমার গিটারের সুরে আনমনা হতো এখন অন্যের গিটারের সুরে হয়। কি বলছো এগুলো তুমি অভ্র?

কিছুনা সরো তো!ঘুমাতে দাও সকালে অফিস আছে আমার। অজান্তেই নীলার চোখ বেয়ে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আস্তে করে বললো, তুমি আমায় একটুও বোঝার চেষ্টা কেন করো না? কিন্তু অভ্র কোনো উত্তর দিলো না। পরদিন বিকেলে তনয় আসলে নীলা তনয়কে টাকাটা দিলো।অভ্র বাসায় ই ছিলো। তনয় এর গলার আওয়াজ পেয়ে নীলার পেছনে এসে দাড়ালো। তনয় অভ্রকে সালাম দিয়ে চলে গেলো। এবার অভ্র জিজ্ঞাসা করলো, কি চলছে তোদের ভেতর?কিসের টাকা দিলি ওকে তুই? কাল বলবো সব। কেন কাল কেন?আজ ই বলবি তুই।নোংরামি শুরু করেছিস তাইনা? আর তখনি নীলা বলে এত টুকু বিশ্বাস নেই তোমার আমার প্রতি?? ” তুমি কি আমায় কখনো বুঝতে চেষ্টা করবে না অভ্র?”

রাত প্রায় দুইটা বাজে।ঘুমন্ত অরনীকে নিয়ে বাড়ি ফেরে অভ্র।দরজা যেভাবে রেখে গেছিলো তেমন ই আছে।নীলা ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছে।অভ্র ডাকাডাকি না করে অরনীকে শুইয়ে দিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন সকালে কলিংবেল এর আওয়াজ শুনে ঘুম ভাঙে অভ্রের। নীলা যেভাবে ছিলো ঠিক সেভাবেই পড়ে আছে।
দরজা খুলতেই দেখে তনয় দাঁড়িয়ে আছে। অভ্রকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বলে শুভ জন্মদিন অভ্র ভাইয়া। ভাবি কোথায়? কেন ভাবিকে কি দরকার? রাগ নিয়ে বলে অভ্র। তনয় বলে আসলে ভাইয়া ভাবি কাল এটা কেনার জন্যই টাকা দিয়েছিলো আমায়।আজ তোমার জন্মদিন তাই সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।

এটা নাও ভাইয়া আমি আসি বলেই গিটার টা অভ্রের হাতে দিয়ে চলে যায় তনয়।অভ্র মনে মনে নিজের ভুল বুঝতে পারে।আর খুব খুশি হয়ে নীলার কাছে গিয়ে নীলার হাত ধরে। একি এত ঠান্ডা কেন তোমার হাত নীল? বলেই হাত ছেড়ে দেয় অভ্র সাথে সাথেই হাত টা পড়ে যায়। পাশে ঘুমের ঔষধ এর খালি পাতা দেখে অভ্রের আর বুঝতে বাকি থাকে না যে কি হয়েছে ওর নীলার। সাথে সাথে ডক্টর এর কাছে নিয়ে যায় নীলাকে।কিন্তু ডক্টর বলে অনেক আগেই মারা গেছে রোগী। অভ্র চিৎকার করে কেঁদে উঠে বলে ক্ষমা করে দাও নীল।আমি তোমাকে হারানোর ভয়ে এগুলো করতাম কিন্তু আমার সন্দেহ ই তোমাকে আমার কাছে থেকে কেড়ে নিলো।ফিরে এসো একটা বার।আর এরকম করবো না কখনো।

কিন্তু অভ্রের চোখের পানি আর নীলাকে ফেরাতে পারেনি।মেয়েটা যে বড্ড অভিমান নিয়ে ছেড়ে চলে গেছে মুখ দেখাবে না বলে। মোরাল অফ দ্য স্টোরিঃ সন্দেহ কখনোই ভালোবাসার অংশ নয়।বরং এটা সম্পর্ককে ধ্বংস করে দেয়।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত