যে জীবন অভিশাপের

যে জীবন অভিশাপের

স্বামীর কোলে ছোট্ট একটি বাচ্চা দেখে থমকে গেলেন পারভিন আক্তার। বিয়ের পাঁচ বছরে তিনি স্বামীকে কোনো সন্তান উপহার দিতে পারেননি। এই নিয়ে তার আফসোসের শেষ নেই। কিন্তু, আনোয়ার হোসেন তাকে এই নিয়ে কখনো কটু কথা বলেননি। তারপরও, মাঝে মাঝে পারভিনের মন খারাপ হতো। সে তখন আনোয়ার হোসেনকে বলতো, আপনি এইবার একটা বিয়ে করেন। আনোয়ার হোসেন তার কথা শুনে হাসতো। বলতো, আমার কাউকে লাগবে না। তুমি থাকলেই চলবে। তোমার সাথেই তো যৌবন কেটে গেলো। আর বার্ধক্যটা তোমার সাথে স্মৃতিচারণ করতে করতে কাটিয়ে দিবো। তারপর মরে যাবার আগে কোনো এক আশ্রমে আমাদের সব সম্পত্তি দান করে দিবো। কী বলো?

আনোয়ার হোসেনের কথা শুনে বাহিরে হতাশ হলেও, ভেতরে সে খুব খুশি হতো। এই একটা মানুষকে নিয়ে তার অহংকারের শেষ নেই। অল্পবয়সে হুজুকে সে বিয়ে করেছিলো এক ভদ্রলোককে। লোকটি তার উপর অমানুসিক অত্যাচার করতো। সেই অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে দু’বার আত্নহননের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে অবশেষে তিনবছরের সংসার ভেঙে ফেলেছিলো পারভিন। তারপর, তার পরিচয় হয় আনোয়ার চৌধুরীর সাথে। সেই থেকে প্রণয়, তারপর বিয়ে। বিয়ের পর আনোয়ার হোসেন তাকে তার পূর্ব জীবন নিয়ে কখনো কোনো কটু কথা বলেনি।

সাধারণত আমাদের দেশে বিবাহ-বিচ্ছেদ হওয়া মেয়েদের অন্যচোখে দেখা হয়। পরিবারও তাদের নিয়ে এই নির্মম সত্য মেনে নেয় যে, তারা জীবনে কখনো সুখী হবে না। তার স্বামীও হবে ডিভোর্সী। সেখানে অবিবাহিত প্রতিষ্ঠিত স্বামী পাওয়াটাই ছিলো পারভিনের জন্য অনেক বড় কিছু। তারউপর এতো সুখ, অনেক নববিবাহিত বউরাও বোধহয় তারমতো সুখী হয় না।

সেই আনোয়ার হোসেনের কোলে সদ্যজাত বাচ্চা। বিষয়টা মানতেই পারছিলো না পারভিন। অনেকক্ষণ থমকে থেকে সে অবশেষে জিজ্ঞেস করলো, এটা কে? কার বাচ্চা এটা? আনোয়ার হোসেন বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। সম্ভবত তিনি বেশকিছুক্ষণ সময় নিয়ে কী বলবেন তা গুছিয়ে নিলেন। তারপর বললেন, আমাকে পারলে ক্ষমা করো পারভিন। সেদিন আমার মতিভ্রম হয়েছিলো। আর তার ফলাফল এই সন্তান। ছেলেটির মার পক্ষে ছেলেটিকে রাখা সম্ভব হয়নি। আর, দূর্ঘটনাটি যখন মেয়েটি টের পায় তখন আর তার কোনো উপায় ছিলো না। আর, আমিও বিষয়টাকে খুব একটা পাত্তা দিইনি। ভেবেছিলাম, মেয়েটি নিজে নিজেই সব ব্যবস্থা করে নিবে। কিন্তু করতে পারলো না পারভিন কথাগুলো শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলো। অনেকক্ষণ ঘোর লাগা অবস্থায় থেকে সে আনোয়ারকে বললো, মেয়েটি কে? আনোয়ার প্রশ্নটি শুনে মাথা নিচু করে রইলো। তারপর নিম্নস্বরে তবে স্থির গলায় বললো, এ প্রশ্নের উত্তর আমি কখনো দিতে পারবো না। আমায় ক্ষমা করো।

পারভিন আর কোনো কথা না বলে সোজা চলে গেলো তার শয়নকক্ষে। শয়নকক্ষে ঢুকে সে দরজা সেটে দিলো। তারপর, বিছানার এককোণে বসে অঝোরে কান্না করতে লাগলো। এরকম তো তার সাথে হবার কথা ছিলো না। সে তো আনোয়ারকে অনুমতি দিয়েছিলো বিয়ে করার, তাহলে আনোয়ার কেনো এরকম কাজ করবে।
এসব ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু বেশিক্ষণ সে ঘুমোতে পারলো না। একটি বাচ্চার কান্নার শব্দে তার ঘুম ভেঙে গেলো। আধোঘুমে তার সবকিছুকে স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো, এটি একটি দূঃস্বপ্ন। ঘুম ভাঙলেই সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু, বাচ্চার কান্নার শব্দ আরো বাড়তেই তার ঘুম পুরোপুরি ভেঙে গেলো। এবং সে বুঝতে পারলো এসবকিছুই বাস্তব।

ঘুম থেকে উঠে অসহায় ভঙ্গিতে সে বসে রইলো বিছনার পাশে। কিন্তু সে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলো না। বাচ্চাটির কান্নার শব্দ সময়ের সাথে সাথে আরো বেড়েই চলছে। তাই সে বাধ্য হয়ে চলে গেলো বাচ্চার কাছে। ড্রয়িং রুমে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসে আছে আনোয়ার। হাজারো চেষ্টায় সে বাচ্চাকে থামাতে পারছে না। সে আসলে বুঝতেই পারছে না বাচ্চাটা কী চাইছে।

আনোয়ারের অবস্থা দেখে পারভিন বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিলো। পারভিনের কোলে তোলার দৃশ্যটি দেখে আনোয়ার কিছুটা স্বস্তি পেলো। ধীরে ধীরে সে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। কারণ সে বুঝতে পারলো পারভিন তার সামনে বাচ্চাটির সাথে স্বাভাবিক হতে পারবে না।

কোলে নেবার পর পারভিনের প্রথম প্রথম মনে হলো, কেনো আমি একে কোলে তুলে নিয়েছি? এই তো আমার সংসারের অশান্তির মূল। কিন্তু, বেশ কিছুক্ষণ বাচ্চাটির নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে পারভিনের রাগটা কমে গেলো। তার যুক্তিবাদী সত্ত্বা তাকে মনে করিয়ে দিলো, এখানে বাচ্চাটির তো কোনো দোষ নেই। তার জন্মের পেছনে তার নিজের কোনো হাত ছিলো না। দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তাকে পৃথিবীতে এনেছে। এখন, তাদের কৃতকর্মের জন্য তাকে কেনো শাস্তি পেতে হবে।

পাশাপাশি তার মাতৃত্ববোধ জেগে উঠলো। যেই মাতৃত্ববোধের অনুভূতি থেকে সে এতোদিন দূরে সরে ছিলো, এই বাচ্চাটির মাধ্যমে সে সেটিকে খুঁজে পেলো। সম্ভবত, পৃথিবীর প্রতিটি নারীর মাঝে এই সত্ত্বাটি খুব যত্নে লুকানো থাকে। সময়ে সময়ে তার প্রকাশ পায়।

বাচ্চাটি নিষ্পাপ ক্রন্দনরত মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পারভিন তাকে স্তন দিলো। স্তন পেয়ে বাচ্চাটি কান্না থামিয়ে দুগ্ধ শুষে নেবার চেষ্টা করলো। কিন্তু, গর্ভবতী না হলে তো স্তনে দুগ্ধ জমা হয় না। তাই বাচ্চাটি দুগ্ধ না পেয়েও শুষে নেবার ব্যর্থ চেষ্টা করতে থাকলো। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে কাটানোর পর বাচ্চাটি স্তন থেকে মুখ সরিয়ে আবার কান্না শুরু হলো। বাচ্চাটির কান্নার সাথে সাথে পারভিনের ঘোর ভেঙে গেলো। তবুও সে কিছু না বুঝে বাচ্চাটির মুখ আবার স্তনের সাথে চেপে ধরলো। কিন্তু, বাচ্চাটি অল্প কিছুক্ষণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আবার কান্না জুড়ে দিলো। তখন, পারভিনের মনে পড়লো তার স্তনে তো দুগ্ধ নেই। সে কী করবে এখন? এসব ভাবতে ভাবতে বাচ্চাটিকে কোলো নিয়ে নাচাতে নাচাতে সে চলে গেলো রান্নাঘরে। তারপর রান্নাঘর থেকে গরুর দুধ জাল দিয়ে এনে ঠান্ডা করে বাচ্চাটিকে খাওয়ালো। বাচ্চাটি দুধ পেয়ে শান্ত হয়ে গেলো। কিন্তু এভাবে কতদিন চলবে? মাতৃদুগ্ধ না পেলে বাচ্চাটির তো বোধ-বুদ্ধি বিকাশ হবে না। ঠিক তখন তার মনে পড়লো কিছুদিন আগে তার সবচেয়ে কাছের বান্ধবীর বাচ্চা হয়েছে। এবং সে তাদের খুব কাছাকাছিই থাকে।

পারভিন আনোয়ারকে ডেকে বান্ধবীর কথাটি বললো। আনোয়ার সবকিছু শুনে বললো, আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। আমাকে ক্ষমা করো কিংবা শাস্তি দাও, তবুও বাচ্চাটিকে বাঁচাও। আমার ভুলের শাস্তি তুমি ওকে দিও না। তোমার ওর জন্য যা করলে ভালো হবে মনে হয় তাই করো। এরজন্য আমার সম্মানহানীও যদি ঘটে তাতে আমার কিছু বলার থাকবে না। কারণ, আমি যা করেছি তার শাস্তি হিসেবে পৃথিবীর যেকোনো কিছুই খুবই কম।

আনোয়ারের কথা শুনে পারভিন থ মেরে গেলো। লোকটি চাইলেই বাচ্চাটিকে অস্বীকার করতে পারতো, পারতো কোথাও ফেলে দিতে; তবু সে এসব কিছু না করে নিজের অপরাধ স্বীকার করছে! এ কিরকম মানুষ? এই মানুষ কী অপরাধ করতে পারে? আসলেই কী করেছে? না কি এর ভেতরেও কোনো রহস্য আছে? কথাগুলো পারভিনের মনের ভেতর চক্কর দিতে লাগলো। তার কেনো জানি মনে হচ্ছে লোকটা কিছু একটা লুকোচ্ছে? এই বাচ্চাকে নিয়ে কোনো এক গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে। সে যাই হোক, তার পক্ষে এখন জানা সম্ভব না। সময় হলে লোকটা নিজেই এসে তাকে বলবে।

এসব ভাবতে ভাবতে তার মধ্যে আনোয়ারের প্রতি দূর্বলতা কাজ করলো। সে শাস্তি দেবার বদলে ক্ষমা করে দেবার কথা ভাবলো। এক্ষেত্রে, সে নিজেকে বোঝালো, আমিও তো ভুল করেছিলাম, কিন্তু সেই ভুল নিয়ে ও কখনো উচ্চবাক্য করেনি; তাহলে আজ আমি কেনো করবো?

মনে মনে আনোয়ারকে ক্ষমা করে দিয়ে সে তার বান্ধবী প্রিয়াঙ্কাকে ফোন দিলো। তারপর, তাকে সব খুলে বললো। প্রিয়াঙ্কা পারভিনের কথা শুনে অনেকটাই বিষ্মিত হলো। সবচেয়ে বেশি তাকে বিষ্মিত করলো, এতোকিছু হবার পর পারভিন কীভাবে বাচ্চাটিকে মনে নিলো। তবুও সে পারভিনকে এসব নিয়ে কিছু বললো না। পারভিনের প্রস্তাব শুনে প্রথমে তার একটু অস্বস্তি হলেও সবচেয়ে কাছের বান্ধবীর অনুরোধ হিসেবে সে রাজি হলো। তবে পারভিনকে শর্ত জুড়ে দিলো, তার(প্রিয়াঙ্কার) স্বামী না থাকা অবস্থায় সে যেনো এসে বাচ্চাকে দুধ খাইয়ে নিয়ে যায়। কেননা, তার স্বামী বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখতে নাও পারে।

প্রিয়াঙ্কার প্রস্তাবে পারভিন রাজি হয়ে গেলো। প্রিয়াঙ্কার স্বামী বাসায় না থাকা অবস্থায় সে বাচ্চাটিকে দুধ খাইয়ে আনতো। তবে, প্রিয়াঙ্কার বাচ্চা থাকার কারণে ও কখনোই পেটভরে খেতে পারতো না। একবেলা নামেমাত্র মাতৃদুগ্ধ আর বাকী সময় কেনা দুধ খেয়েই ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠলো সে।

ছোটবেলা থেকে তুখোড় মেধার পরিচয় দিয়ে আসছিলো অনিরুদ্ধ। মুসলিম পরিবারের সন্তান হয়েও ছেলেটির এরকম নাম রাখা নিয়ে আপত্তি জানালেও কথা শুনেনি আনোয়ার। সে বলেছিলো, এই ছেলেকে জন্মের শুরুর আগে থেকেই রুদ্ধ করে দেবার কথা ছিলো, কিন্তু সে রুদ্ধ থাকেনি তাই অনিরুদ্ধ নামটাই তার সাথে সবচেয়ে বেশি মানানসই।

ছেলেটির ব্যপারে এরকম একগুয়েমি করাটা পারভিনের পছন্দ না হলেও সে কিছু বললো না। কিন্তু তার মনে হলো, এই নাম রাখার পেছনেও একটি রহস্য আছে।

যাই হোক, অনিরুদ্ধ ছোটবেলা থেকেই শান্ত স্বভাবের। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কথা সে বলতো না এবং বুঝতোও অনেক বেশি। পাশাপাশি, তার ঠান্ডা-শান্ত-স্থির স্বভাবের পাশাপাশি ভয়ঙ্কর এক রূপ লুকিয়ে ছিলো, যার প্রমান স্কুলে থাকতেই পারভিন পেয়েছিলো। তখন সে ৪র্থ শ্রেণীতে পড়তো। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় তার এক সহপাঠী নকল করতে গিয়ে ধরা খায়। আর সেই ছেলেকে ধরিয়ে দিয়েছিলো অনিরুদ্ধ। যদিও ছেলেটি জানলো না সে কীভাবে ধরা খেলো! প্রধানশিক্ষকের কাছে গিয়ে সে বারবার বলতে লাগলো, আমি নকল করেনি। কিন্তু, প্রমানসহ ধরা খাবার জন্য, ধরা খেয়ে মিথ্যা বলার জন্য তাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হলো। এক্ষেত্রে প্রধানশিক্ষকের কথা ছিলো, এত অল্প বয়সে নকল করা শিখে গেছে। সামনে যে কী হবে তা আমরা বুঝতেই পারছি।

সেই ঘটনার আরো বেশ কিছুদিন পর অনিরুদ্ধর খাতা গোছাতে গিয়ে পারভিনের চোখে পড়লো একটি পৃষ্ঠা ছেড়া। সাধারণত অনিরুদ্ধর খাতার পৃষ্ঠা ছেড়া থাকে না। তখন সে অনিরুদ্ধকে কারণ জিজ্ঞেস করলো। অনিরুদ্ধ তখন খুব স্বাভাবিক গলায় বললো, সেদিনের সে নকলটা আমি রেখেছিলাম। যদিও আমি নকল করিনি। ও করেনি।
কথাটি শুনে পারভিন খুব অবাক হলো। অবিশ্বাসের সুরে পারভিন বললো, কিন্তু কেনো?
অনিরুদ্ধ তখন বললো, একদিন ক্লাসে ও আমাকে অযথা শিক্ষকের কাছে মাইর খাইয়েছিলো। পরে আমি ওর কাছে কারণ জিজ্ঞেস করলে ও আবার আমাকে মারে। তাই, ওকে একটা শিক্ষা দিলাম।
অনিরুদ্ধর কথা শুনে পারভিন কী বলবে! সে নিজেই নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এইটুকু একটা ছেলে অথচ এমন একটি কান্ড ঘটিয়ে ফেললো।

পারভিন কিছুক্ষণ ঘোরে থেকে তারপর বললো, তুমি কাল গিয়ে স্কুলে সব কথা খুলে বলবে। তুমি অপরাধ করেছো।
অনিরুদ্ধ তখন বললো, আমি কোনো অপরাধ করিনি। যে যেরকম করবে, সে সেরকম প্রতিদান পাবে।
ছেলের কথা শুনে পারভিন তার গালে চড় বসিয়ে দিলো। কিন্তু ছেলেটি মাথা নীচু করে কান্না করার বদলে মায়ের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। সেই দৃষ্টির মধ্যে এমন একটা কিছু ছিলো যা দেখে পারভিন খুব ভয় পেয়ে গেলো।
সেদিন রাতে সে ঘটনাটি আনোয়ারকে বললো। আনোয়ার কথা শুনে একদম চুপ হয়ে গেলো। তাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে সে খুব ভয় পেয়ে গেছে। সেটা বুঝে পারভিন আর কিছু না বলে চুপ করে গেলো। আর, সেদিনই তার মনে এই কথাটি গেঁথে গেলো এই ছেলেটাকে নিয়ে অনেক বড় এক রহস্য লুকিয়ে আছে।

এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো তাদের দিনকাল। দিনকে দিন অনিরুদ্ধ আরো বেশি গম্ভীর হয়ে উঠলো। আর, এসময় ঘটে গেলো অঘটন। পারভিনের সাথে প্রিয়াঙ্কার ছোট একটি বিষয় নিয়ে টুকটাক কথা কাটাকাটি হলে রাগে ক্ষোভে প্রিয়াঙ্কা অনিরুদ্ধের কথা সবাইকে বলে দেয়। ফলাফল, কথাটি অনিরুদ্ধর কালে যায়। অনিরুদ্ধ কথাটি শুনে মাকে জিজ্ঞেস করে, মা কথাটা কি সত্যি?

পারভিন চেপে যাবার জন্য বললো, না। অনিরুদ্ধ তখন তার সেই শান্ত কিন্তু সর্বগ্রাসী ভঙ্গিতে বললো, প্রিয়াঙ্কা আন্টির এরকম কথা বলা ঠিক হয়নি। আমাদের সবার মান-সম্মান ডুবিয়ে দিলেন তিনি। তাকে এর উপযুক্ত শাস্তি পেতেই হবে। অনিরুদ্ধর ভঙ্গি দেখে পারভিন বুঝলো সত্যি না বললে প্রিয়াঙ্কার ভয়ানক বিপদ ঘটে যাবে। কিন্তু, তার কী এখনই অনিরুদ্ধকে সব সত্য বলে দেওয়া উচিত। সে এখন কী করবে? অনিরুদ্ধকে সত্য বলে দিবে? না কি প্রিয়াঙ্কার সর্বনাশ হতে দিবে? কোনটা করবে সে? কীভাবে সে মুক্তি পাবে এই পরিস্থিতি থেকে?

জারজ সন্তান পরিচয় জানার পর একটি সন্তানের অনুভূতি কী হওয়া উচিত? চিৎকার করা কিংবা কান্নায় ভেঙে পড়া। কিন্তু, অনিরুদ্ধ তার কিছুই করলো না। মায়ের মুখ থেকে নিজের সত্য পরিচয় জেনে সে চুপ হয়ে গ্যালো। তারপর, স্বাভাবিক গলায় বললো, আমার আসল মা কে?

পারভিন প্রশ্নটি শুনে চুপ করে গ্যালো। কিছুক্ষণ এভাবে থেকে সে মাথা নীচু করে উত্তর দিলো, জানি না। তোর বাবা কোনোদিন আমায় তার পরিচয় বলেনি। কিন্তু, সেজন্য আমি তোকে কখনো অন্য চোখে দেখিনি। নিজের সন্তান মেনে নিয়েই বড় করেছি। আমাদের রক্তের কোনো সম্পর্ক না থাকতে পারে, কিন্তু আমার ছেলে তুই।
মায়ের কথা শুনে অনিরুদ্ধ কোনো শব্দ করলো না। মায়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, যাই হোক না কেনো তুমি আমার মা। কিন্তু, বাবা তোমার কাছে আমার আসল মায়ের পরিচয় লুকিয়ে রেখেছে কেনো বুঝতে পারছি না। এর মাঝে কিছু একটা রহস্য আছে।

অনিরুদ্ধর কথা শুনে পারভিন স্তব্ধ হয়ে গ্যালো। অবাক হয়ে সে বললো, তোর এরকম মনে হচ্ছে কেনো?
অনিরুদ্ধ বললো, ছোটবেলায় বাবা যখন কাছে আসতো তখন অদ্ভুত রকমের আচরণ করতো। আমায় সে অনেক কিছু বলতো, যা আমার মাথায় ঢুকতো না। কী বলতো, তা আমার মনে নাই। শুধু মনে আছে বাবা বলেছিলো, একদিন তোকে সবকিছুর হিসাব বুঝে নিতে হবে। কিন্তু কীসের হিসাব তা বুঝতে পারিনি।

ছেলের কথা শুনে মা কেমন যেনো চিন্তায় পড়ে গ্যালো। তবে সেই অভিব্যক্তি মুখে না ফুটিয়ে সে তার ছেলেকে বললো, কারোরই নিজের জন্মের উপর হাত থাকে না। তবুও এ সমাজের পচাগলা সিস্টেমের কারণে যে জন্ম নেয় তার উপর অভিশাপ নেমে আসে। তোর জীবনটাও তেমনই এক অভিশাপের। কিন্তু আমি জানি তুই কারো কথা তোয়াক্কা করিস না। ছোটবেলা থেকেই তুই অন্যদের থেকে অনেক বেশি বিচক্ষণ। আশা করছি, এখানেও তুই তেমনি এক বিচক্ষণতার পরিচয় দিবি। তোর প্রিয়াঙ্কা আন্টির কোনো ক্ষতি করিস না। সে সবাইকে তোর জন্ম পরিচয়ের কথা জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু যেটা জানায়নি সেটা হলো জন্মের পর তোকে নিজের বুকের দুধ খাইয়ে বড় করেছিলো ঐ প্রিয়াঙ্কা আন্টিই। সে হিসেবে উনি তোর দুধ মা। মায়ের কথা শুনে অনিরুদ্ধ বললো, এসব নিয়ে তুমি ভেবো না। আমি তোমার সন্তান, কোনো দানব না। মাকে কথাটি বলে অনিরুদ্ধ চলে গ্যালো তার রুমে। রুমে গিয়ে সে আপন মনে ভাবতে লাগলো, আজ রাতে বাবা বাড়ি ফিরলে মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতে হবে।

রাত পেরিয়ে পরদিন ভোর হয়ে গ্যালো, বাবা আর বাড়ি ফিরলো না। গতরাতে প্রথম প্রথম চিন্তা না করলেও রাত গভীর হবার সাথে সাথে চিন্তা বাড়তে থাকে। মা রাতে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়ে বাবার নাম্বার বন্ধ পেলো। এরপর থেকে মূলত অনিরুদ্ধর মাথায় বাবার চিন্তা ঢুকে যায়।

অধিকাংশ মানুষই খুব অল্পতে চিন্তিত হয়ে যায়। কল্পনা করতে থাকে আকাশ কুসুম ঘটনা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় তার কিছুই হয় না। সেরকম ধরেই প্রথমে মায়ের চিন্তা করাটাকে খুব একটা পাত্তা দেয়নি অনিরুদ্ধ। কিন্তু পরবর্তীতে তার মনে হলো তখনই কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে সে ভুল করেছে।

অনিরুদ্ধ বাবার অফিসে খোঁজ নিলো। অফিস থেকে জানানো হলো গতকাল বিকালেই আনোয়ার হোসেন অফিস থেকে বের হয়ে গিয়েছেন। বিষয়টা কেমন যেনো পছন্দ হলো না অনিরুদ্ধর। সে মায়ের চিন্তিত ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে চলে গ্যালো বাবার রুমে। কেননা, অনিরুদ্ধর মনে হলো বাবার ঘর থেকে তার(বাবার) এই হঠাৎ হারিয়ে যাবার কোনো কারণ জানা যেতে পারে।

অনিরুদ্ধ বাবার ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলো। খুঁজতে খুঁজতে সে পেয়ে গ্যালো পুরনো কিছু পেপার কাটিং। প্রথম প্রথম উচ্ছিষ্ট মনে হলেও সে পেপার কাটিংটি পড়ে দেখলো। পুরোটা পড়া শেষে সে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। এ কী পড়লো সে! এও কি সম্ভব! এই কথা ভাবতে ভাবতে সে চারপাশে মানুষের কথার শব্দ পেলো। প্রথম প্রথম বিভ্রম মনে করলেও সেই সময় নীচ থেকে তার মা তাকে ডাক দিলো। তড়িঘড়ি করে নীচে নামতেই সে দেখলো তাদের বাসার চারপাশ ঘিরে রেখেছে এলাকাবাসী। ঘটনা কী হয়েছে বুঝে উঠার আগেই তারা বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দিলো। তারপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তারা চলে গ্যালো। দোতালা থেকে প্রস্থানের দৃশ্য দেখে অনিরুদ্ধ দোতালা থেকে দু’টি কম্বল নিয়ে এসে একটা মাকে ও একটা নিজে নিলো। তারপর, সেই কোম্বল কোনোমতে গায়ে জড়িয়ে তারা আগুনের ভেতর দিয়ে বের হয়ে আসার চেষ্টা করলো। কিন্তু দূর্ভাগ্য অনিরুদ্ধ বের হয়ে আসতে পারলেও, মা বেরিয়ে আসতে পারলো না। বিষয়টি বুঝতে অনিরুদ্ধর একটু সময় লাগলো। তারপর, বুঝতেই সে ভেতরে যাবার চেষ্টা করলো। কিন্তু ততক্ষণে ভেতরে ঢোকার আর কোনো উপায় রইলো না।

এই অবস্থায় অনেকক্ষণ চুপ করে চারপাশ দেখে অনিরুদ্ধ আস্তে আস্তে এলাকা থেকে বেরিয়ে আসলো। বেরিয়ে আসার সময় সে এলাকাবাসীদের একে অপরকে বলাবলি করতে শুনলো, এরকম ঘোর অধর্ম করে বাস করবে এলাকায়, তা কী হতে পারে? আমাদের কী সমাজ বলে কিছু নেই? এর উপযুক্ত শাস্তি না দিলে বাকীরা এসব করার স্পর্ধা পেয়ে যেতো।

দশ বছর কেটে গ্যালো। হোটেলের হোটেলবয় থেকে শুরু করে মুদি দোকানের কর্মচারী, তারপর নিজেই একটি দোকান দিলো অনিরুদ্ধ। যেই ছেলের জীবনে হবার কথা ছিলো বিজ্ঞানী, সে হয়ে গ্যালো ব্যবসায়ী। দিনে দিনে তার ব্যবসার প্রসার বেড়েই চলছিলো। তারপর, একদিন সে সিদ্ধান্ত নিলো সবকিছুর একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। মায়ের হত্যার প্রতিশোধ, বাবার নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, নিজের আসল পরিচয়; সবকিছুরই একটা বিহীত করতে হবে।
সিদ্ধান্ত নেবার পর সে তার ব্যবসার কাজ কর্মচারীদের হাতে ন্যস্ত করে চলে আসলো তার আগের বাড়িতে। এলাকায় এসে নিজের বাবার দূঃসম্পর্কের আত্নীয় পরিচয়ে জানতে চাইলো ঘটনা। দশ বছরে চেহারার পরিবর্তন হওয়ায় ওরা কেউই অনিরুদ্ধকে চিনতে পারেনি। তারা তার মায়ের পরিনতির কথা বললো। তারপর বললো, এই ঘটনার কিছুদিন পর ওর বাবার লাশ পাওয়া যায়। পরে পুলিশের তদন্ত থেকে জানা যায় অনিরুদ্ধর আসল মায়ের ওখানে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ছেলের প্রসঙ্গ উঠতেই অনিরুদ্ধর বাবাকে তারা মেরে ফেলে!

অনিরুদ্ধ পুরো বিষয়টি বুঝতে পারে। কারণ সে জানে তার আসল পরিচয় কী। সেদিন রাতে সে এলাকায় থেকে যায়। তার জানা ছিলো এলাকার একটা বিল্ডিং নিজেই একটা বোমা। সেখানে বিভিন্ন ধরণের ক্যামিকেল মজুদ রাখা হয়। তার উপরে সুগন্ধির দোকান, পাশে পেট্রোল পাম্প। মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে সে পেট্রোল পাম্পে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। আগুন ছড়াতে যেটুকু সময় লেগেছিলো সেটুকু সময়ে সে তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে একটানে এলাকা থেকে বের হয়ে যায়। সে মোটামুটি নিরাপদ দূরত্বে আসতেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। সাথে সাথে আগুন ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র এলাকায়। সেই আগুনে মারা যায় ঐ এলাকার সব মানুষ। সেদিন যারা আগুন দিয়েছিলো তারাও মরেছে, সাথে মরেছে অনেক নিরীহ মানুষ। এমনকি সেই আগুনে মারা যায় অনিরুদ্ধর দুধ মা। যার উপর প্রতিশোধ নেবার জন্য অনিরুদ্ধ অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছিলো।

দেশজুড়ে যখন ভয়াবহ অগ্নিকান্ড নিয়ে তোলপাড়, পুলিশ, ফায়ার বিগ্রেড সবাই যখন এই কাজ নিয়ে ব্যস্ত; তখন অনিরুদ্ধ চলে গেলো তার আসল বাড়িতে। যে বাড়িতে তার বেড়ে উঠার কথা ছিলো। সেই বাড়িতে পা রেখে অনিরুদ্ধ প্রথমে বুক ভরে নিশ্বাস নিলো। তারপর, বিশাল বাড়িটির চারপাশে কেরোসিন ঢাললো। কাজটা খুব নীরবে করে সে আগুন ধরিয়ে দিয়ে একটি গাছের উপর অবস্থান নিলো। বাড়িটি থেকে বের হবার দরজা একটাই। আর সে যেখানে বসে আছে সেখান থেকে খুব সহজে বের হওয়া মানুষকে দেখা যায়। আগুনের কথা বুঝতেই সবাই বাড়ি থেকে বের হওয়া শুরু করলো। আর অনিরুদ্ধ তার হাতের বন্দুকটিতে সাইলেন্সাক লাগিয়ে গুলি চালাতে লাগলো। আর একে একে সবাই মারা যেতে লাগলো। সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে অনিরুদ্ধ কিছুক্ষণ চারপাশ দেখলো। তারপর নিজের মাথায় নিজে গুলি চালালো।

পরদিন সকালে এতোগুলো মানুষের হত্যাকান্ড ঘটে যাওয়া ঘটনাস্থলে আসলো পুলিশ। জাতীয় মিডিয়ায় খুব সাড়া ফেললো ঘটনাটি। পুলিশের উপর দায়িত্ব দেওয়া হলো খুনীকে গ্রেফতারের। কিন্তু, পুলিশকে খুব একটা কষ্ট করতে হলো না। কেননা, ঘটনাস্থল থেকে মোটামুটি দূরে গাছের পাশে একটি বন্দুক হাতে থাকা লাশ পাওয়া গ্যালো। লাশটির পকেট খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া গেলো একটি চিঠি। চিঠিতে লেখা, আমি অনিরুদ্ধ চৌধুরী। আপনারা চিনবেন আমায় দূর্দান্ত আসামী হিসেবে। এই ২৪ ঘন্টায় আমি আগুন ধরিয়ে একটি এলাকার সব মানুষকে মেরে ফেলেছি, সাথে এই পরিবারের সবাইকে খুন করলাম। কিন্তু, আমার কিচ্ছু করার ছিলো না। প্রতিশোধ পরায়নতা আমার রক্তে মিশে ছিলো। কারণ, আমি জমিদার বংশের সন্তান। আমার রক্ত কখনো পরাজয় মেনে নিতে পারে না।

জন্মের দিনই আমার পরিবারের সবাইকে স্বপরিবারে হত্যা করে এরা। কারণ, এতোদিন তারা ভেবেছিলো আমার বাবা মারা গেলে তারাই সব সম্পত্তি পাবে। কিন্তু মায়ের পেট থেকে যখন ছেলে সন্তান হলো তখন এরা সবাই বেপরোয়া হয়ে উঠলো। মেরে ফেললো সবাইকে। সেই রাতে মা আমায় নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এসময় আমার বাবা আনোয়ার হোসেন হেঁটে যাচ্ছিলেন রাস্তা দিয়ে। অফিস থেকে ফিরছিলেন তখন। আমার আসল মা তখন উনার হাতে আমাকে তুলে দিয়ে বলেছিলেন, বাঁচিয়ে রাখবেন ওকে। আমার সাথে থাকলে মেরে ফেলবে ওরা। আর ওর পরিচয় কাউকে দিবেন না প্লিজ। এজন্য ওর মৃত্যু হতে পারে।

বাবা আমার জন্মদাত্রী মায়ের কথা শুনে চুপ করে থাকলেন। নিতে না চাইলেও আমাকে দেখে তার মায়া হলো। তিনি তুলে নিলেন আমাকে। বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমাকে তার অবৈধ সন্তান হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলো। আমার মা(পারভিন আক্তার) খুব কষ্ট পেয়েছিলেন তাতে। কিন্তু তারপরও নিজের সন্তান হিসেবেই আমাকে বড়ো করে তোলেন। কিন্তু, সেই মায়ের কখনো জানা হলো না তার স্বামী তাকে ধোঁকা দেয়নি। তার আগেই বাবা মারা যায়। বাবার ডায়েরী আর পেপার কাটিং থেকে সব সত্য আমি জানতে পারলাম ঠিক তখনই জারজ সন্তান পালন করার অপরাধে আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিলো এলাকাবাসী। আর সেই আগুনে পুড়ে মরলো, আমার মা। বেঁচে গেলাম আমি।
তাই, সবার উপর আমি আমার প্রতিশোধ নিলাম। কিন্তু, যেই জীবনের জন্য এতোগুলো নিষ্পাপ মানুষের মৃত্যু হলো, সেই জীবন রাখা কী ঠিক? বলা যায় না, এরপর এই জীবনের জন্য আরো কত প্রাণ যেতে পারে। তাই, আমি আমার প্রতিশোধ শেষে চলে যাচ্ছি পৃথিবী থেকে।

যাবার আগে শুধু একটা কথা বলবো, প্রতিশোধ কিংবা ক্ষমতা কোনোটাই কখনো শান্তি আনতে পারে না। বরং তারা অশান্তি বাড়ায়। আর জারজ সন্তানের তো তার জন্মের বিষয়ে কোনো হাত নেই। তবু তার এতো কষ্ট কেনো? এই অভিশপ্ত জীবন কেনোই বা তার জন্য? জানি উত্তর দিতে পারবেন না। চুপ করে থাকবেন। এতোই যখন এই নিয়ে সমস্যা পারলে জন্মের পরপরই তাকে মেরে ফেলেন। সংবিধান করে দিয়ে দিয়েন জারজ সন্তানের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। কেননা, অভিশাপের জীবন যাপনের শাস্তির চেয়ে মৃত্যুদন্ড শ্রেয়।

সুইসাইড নোটটা হাতে পেয়ে পুলিশ অফিসারটি কেঁপে উঠলো। হয়তো দু’ফোটা চোখের জল বেরোলো। কিন্তু, আজ যদি সে মরে যাবার বদলে বেঁচে থাকতো তবে কী এসব শুনে চোখের পানি পড়তো? আচ্ছা, অনিরুদ্ধ যদি মায়ের সাথে জারাজ সন্তান পরিচয়ে মারা যেতো, তবে কী একটা মানুষের মৃত্যুতে এদের কষ্ট হতো না? না কি এদের কষ্টও নিয়ম মেনে হয়?

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত