অপ্রত্যাশিত

অপ্রত্যাশিত

দীর্ঘ চার বছর,চার মাস,চার দিন,চার ঘন্টা পর কাকতালীয় ভাবে বুশরার সাথে দেখা। কখনো দেখা হবে এমন আশা আমার ভিতরে জন্ম নেই নি।তবে এটাই দেখা হতে পারে যে,এই শহর তো বেশি বড় না।দক্ষিণে ভাদুঘর,উত্তরে মেড্ডা,পশ্চিমে পৈরতলা,আর পূর্বে তিতাস নদী।প্রাণের শহরে দেখা হতে পারেই। সেই দিন পরীক্ষা দিয়ে বের হচ্ছি।গেইটের কাছে এক বন্ধুর জন্য দাঁড়ানো।চোখ দুটি যখন গেইটের পানে তাকানো,তখন আমার চোখের পলক পড়ছে না,চোখ দুটি থমকে গেছে,হৃদপিন্ড পাম্পিং হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক গতিতে,মুখের কথা গুলো হারিয়ে গেছে। শুধু বিরামহীন দুই নয়নে তার পানে আমি তাকানো।

মেয়েটি আগের চেয়ে অনেক শুকিয়ে গেছে। মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। সাদা কলেজ ড্রেসে কেমন যেন এক অসহায় লাগছে।মনে হয় যেন কিছু দিন বাদে মেয়েটির স্বামী মারা গেছে।অথচ এই মেয়েটির জন্য আমি কত শত কষ্ট করেছি। তার ভালোবাসায় পাগল ছিলাম।সারাক্ষণ শুধু তার কথাই ভাবতাম।যেখানে যেতাম সেখানেই শুধু তার চেহারাটা আমার দু চোখের সামনে ঝলঝল করত।কিন্তু আজ তাকে একটুও মনে পড়ে না।

এই মেয়েকে আমি কখনো ভালোবেসেছি।চারটি বছর হয়ে গেছে বুশরা আমাকে ছেড়ে চলে এসেছে।শুধু মাত্র একটি ভুলের জন্য আমাদের দুটি মন আজ দূর বহুদূর কোনো শহরের গলিতে বাস করে।ভুলটা আমারও ছিল সাথে বুশরারও ছিল।সেই ভুলের মাশুল দিতে গিয়েই আমরা আমাদের পবিত্র,সত্যিকারের ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছি।আমাদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে একটি দেয়াল।যেটা টপকিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। সেই সূত্রে আমরা আজ দুই জন দুই মেরুতে।এক জন উত্তর মেরুতে আর একজন দক্ষিণ মেরুতে। বুশরা যখন আমাকে চার বছর আগে ছেড়ে চলে এসেছে তখন মেয়েটি আমাকে কিছু না বলেই চলে আসে।আমিও বুঝতে পেরেছি কেন সে চলে আসে।

আজ আবার এতদিন পরে বুশরার সাথে আমার দেখা হবে,এটা শুধু কল্পনাই ছিল।বুশরাকে আমি অনেক খুঁজেছি কোথাও পাই নি। খুঁজতে খুঁজতে আমি যখন ক্লান্ত তখন ওর আশা আমি ছেড়ে দিয়েছি।যে হারিয়ে যাবার সে তো হারিয়েই যাবে।তাকে কখনো আটকে ধরে রাখা যাবে না।বুশরাও আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে,যাকে কখনো আর নিজের করে নিতে পারব না। বুশরা যখন কলেজ গেইট থেকে বের হচ্ছে, আমি তখনও মেয়েটির দিকে তাকানো।যখন মেয়েটির নজর আমার দিকে পড়ল।তখনই আমি মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম।এমন একটা ভাব নিলাম যেন আমি মেয়েটিকে দেখি নাই। পরক্ষনেই বন্ধুদের সাথে কথা বার্তায় মিশে গেলাম। কিছুক্ষন বাদেই আমার কানে ভেসে আসল…

– কেমন আছ জুবায়ের.? ঘুরে দেখি বুশরা।মেয়েটির কণ্ঠ টা কত দিন পরে শুনেছি।আগে কত মধুর ছিল।এখন কেমন যেন ঝাঁঝরা হয়ে গেছে।শুনতেই মন চাই না। নাকি এত বছর পর শুনার কারণেই আমার কাছে অন্য রকম লেগেছে,হয়তো।মেয়েটির চোখে আমার চোখ পড়ে গেছে।সেই চোখে আর মায়া নেই,সাথে ভালোবাসাও নেই। তাই আর বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম না। মাথাটা নিচের দিকে নিয়ে বললাম..

– হুম,ভালো,তুমি কেমন আছ.?
– দেখতেই তো পারছ কেমন আছি
– হয়তো অনেক সুখেই আছ,নতুন কাউকে নিয়ে এই কথা শুনার পর মেয়েটি আর কিছু বলল না।বলবেই বা কি করে।হয়তো কাউকে নিয়ে অনেক সুখে আছে।এই শহরে প্রেমিকদের অভাব নেই।কত না শত শত প্রেমিক অপেক্ষায় আছে কোনো এক ললনার জন্য। মেয়েটি বলল..

– একটু সময় হবে কি,কথা বলার জন্য” মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটা মৃদু হাসি হাসলাম।হাসিটা এই কারণে হাসলাম যে,এত দিন পরে এক সাথে বসতে চাই। ভালোবাসা কি এখনো আমার প্রতি বুশরার আছে।থাকলে বুশরা আমাকে ছেড়ে এতদিন কিভাবে থাকতে পারল।নাকি এখন আবার আবেগ দেখাবে।অনেক দিন বাদে মেয়েটির সাথে দেখা।তাই আর না বলতে পারলাম না। আমি বললাম.

– হুম,হবে কোনো এক কফি শপে বসা। বুশরাই বলল,
– এখনো কি আমাকে ভালোবাস.? আমি তার পানে তাকিয়ে, এক নজর মেয়েটিকে ভালো ভাবে দেখে নিলাম। বললাম,

– তোমাকে কতটুকু ভালোবাসতাম কিংবা ভালোবেসেছি সেটা তুমি ভালো করে জান।সামান্য একটা ভুলের জন্য তুমি আমাকে ছেড়ে চলে এসেছ।ভুলটা আমারও ছিল তোমারও ছিল,কিন্তু তুমি।  তুমি চলে যাওয়ার পর এই জীবনে আর কাউকে ঠাঁই দেই নি।কারণ হলো এই জীবনে তোমাকেই ভালোবেসে ছিলাম।যাকে আপন করে পাব বলে।তোমার শূণ্যতা আমি দিন দিন ভোগ করছি।পাগল হয়ে এই শহরে তোমাকে খুঁজেছি।যখন বুঝতে পারলাম, তুমি সত্যিই আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলে,তখন আর তোমাকে খুঁজি না।তোমার স্মৃতি গুলোকে আকড়ে ধরে এখনো বেঁচে আছি এই স্বার্থপর পৃথিবীতে।তোমার দেওয়া চিঠি গুলো এখনো মাঝ রাতে পড়ার টেবিলে বসে পড়ি।কারণ ভালোবাসাটা সত্যি ছিল।” এক টানা কথা গুলো বললাম।পানির তৃষ্ণা পেয়েছে।এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলাম। আমার চোখে পানি।মেয়েটি দেখে বলল..

– কাঁদতেছ যে,
– না, এমনি চোখের পানি গুলো মুছে নিলাম।মেয়েটি বলল..
– একটা কথা রাখবে জুবায়ের.?  আমি বললাম,
– যদি রাখার মতো আমার পক্ষে সম্ভব হয়,তাহলে অবশ্যই রাখব” মেয়েটি বলল..

– আমাকে কি আবার তোমার জীবনে আসতে দিবে.? এত বড় আবদার শুনে আমার চোখ গুলো যেন কপালে ওঠে গেছে।যেটা সম্ভব না সেটাই আবদার করে বসেছে।  আমি তখন বুশরাকে বললাম তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম,কখনো হারানোর জন্য না।বরং তুমিই আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেছ।তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাটা সত্যি ছিল বলে তোমার জন্য আমি অনেক দিন যাবত অপেক্ষায় ছিলাম।কিন্তু তুমি আস নি।তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা করে ছিলাম। তোমার ভালোবাসা গুলো কে নিয়ে সারা জীবন বেঁচে থাকব।আর এখন আমার পক্ষে এটা সম্ভব না। ভালো থাকবে।শরীরের যত্ন নিবে।ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করবে।

আল্লাহ হাফেজ মেয়েটি কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।আসার সময় দেখি মেয়েটির চোখে পানি। মেয়েটির চোখের পানি আমাকে আটকিয়ে রাখতে পারল না।আমার মনটা পাষাণ হয়ে গেছে।এখন আর ভালোবাসা নেই।আছে শুধু যন্ত্রনা আর কষ্ট।বুশরার স্মৃতি গুলো কে সাথে নিয়ে সারা জীবন কেটে দিব। ভালোবেসে ছিলাম,ভালোবাসি, ভালোবাসব।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত