(১ম পর্ব)
আম্মু, আম্মু ঐ লোকটা কে?
আর তুমি তার দিকে তাকিয়ে কাঁদছো কেন?
স্কুলের আন্টিরা বলছিলো লোকটার সাথে নাকি আমার চেহারার মিল আছে।।
বলোনা আম্মু লোকটা কে?
,
.ছেলেটার কৌতুহলে বিরক্ত হয়ে দিব্বি দুটো চড় মেরে বাসায় নিয়ে এলাম। বাসায় এসে দেখি হাতের পাঁচটা আঙুল যেন বাবুর গালে বসে আছে।
ছেলেটা আমার বেশ কেঁদেছে।। আমি মা হয়ে আর থাকতে পারলাম না, কেন জানি বুকে ধরে কাঁদতে লাগলাম।
ছেলের প্রশ্নের উত্তরটা, জানা থাকলেও দেবার সাহস হয়নি।
ঐ চীরচেনা লোকটাই আজ চীর অচেনা।।
.
**যখন আমি ভার্সিটিতে পড়ি তখন ওর সাথে রিলেশন হয়, আমরা একে অপরকে বিয়েও করি।
বিয়ের ৯ মাসের মাথায় যখন বাবু পেটে আসে তখন ওর বাড়িতে জানালে, ওর মা আমাকে নষ্টা অপবাদ দিয়ে বের করে দেয়। তখন বাবু ৫ মাসের পেটে।
সেদিন মায়ের উপর কথা না বলে, তার আচলের তলায় লুকিয়ে ছিলো।নিজের বাসায়ও উঠতে পারিনি, পরে এক বৃদ্ধা বাবার আশ্রয়ে বাবুর জন্ম হয়।
সেখানেও বেশি দিন থাকা হলো না। আমার জন্য প্রতিদিন লোকটাকে ছেলের বউয়ের কথা শুনতে হতো।
তাই সেখান থেকে চলে এসে আজ এখানে আছি।। ভাগ্যক্রমে একটা চাকরিও হয়।।**
.
যত দিন যাচ্ছে ততই বাবুকে এড়িয়ে চলা বেশ মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।
.
আমারও বেশ বলতে ইচ্ছে করে, হ্যাঁ ঐ লোকটি আর কেও না তোর জন্মদাতা, তোর বাবা।
কিন্তু ভয় হয় যদি বাবুকে হারিয়ে ফেলি। তবে কি নিয়ে বাঁচবো।সেই ভয়ে আজও কিছু বলতে পারলাম না।।
.
স্কুল থেকে ফিরে ঘুমিয়েছে। অনেক লক্ষি ছেলে আমার, আর সব বাচ্চার মত এটা সেটা বায়না করে না।
কাওকে চকলেট বা আইসক্রিম খেতে দেখলে আমাকে বলে না, “আম্মু আইসক্রিম খাবো” কিন্তু আমি মা হয়ে বুঝতে পারি।।
.
হয়তো কখনো দেই, নয়তো কখনো ধমক দিতে গেলে বলে” আম্মু আইসক্রিম পঁচা, আমি আইসক্রিম খাই না”।
এতটুকু ছেলে বেশ অনেক কিছুই বুঝতে শিখে গেছে, আসলে বুঝতে হয়েছে।।
ভাবতে ভাবতে যখন একফোটা জল ওর গালের উপর পড়লো তখন বুকটা কেমন যেন কেঁপে উঠলো, কি এমন জানতে চেয়েছে।
লোকেওতো মিথ্যে বলেনি, ও ওর বাবার মতই হয়েছে। ভাবতে ভাবতে ও নরে চড়ে কেমন যেন পেটের ভেতর আসতে চাইছে, মনেহচ্ছে ঠান্ডা লাগছে।
গায়ে হাত দিয়ে দেখি গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।। বেশ রাগ হলো নিজের প্রতি।” কি করলাম আমি” বলেই ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিলাম।
বড় আদর করে বড় করছি। আজ চড় দিয়ে জ্বর আনালাম?
.
কোনমতে রান্নাটা বসিয়ে বাবুকে নিয়ে শুয়ে আছি। বাবু ঘুম থেকে উঠেই খেতে চাইলো-
.
-মা পেটের ভেতর ইঁদুর ঢুকছে
.
-আচ্ছা বোস, আমি ভাত নিয়ে আসছি।
.
-আচ্ছা।
.
-এই নাও হা করো, আমি খাইয়ে দেই।।
.
-ডিম? ডিম আমার ভাল লাগে না, কেমন যেন বমি আসে। মাছ রান্না করতে পারোনা?
.
-আচ্ছা আজকের মত খাও কাল রান্না করে দিবো।।
.
-তুমি প্রতিদিনই বলো, কিন্তু মাছ রান্না করো না, আমার ভালই লাগে না।
.
ছেলেটার কি দোষ, প্রতিদিন ডিম দিয়ে খেতে খেতে আমিওযে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি।।
৮ হাজার টাকা পাই স্কুলে শিক্ষকতা করে। এ বেতনে ঘড় ভাড়া, ঘ্যাসের বিল,বিদ্যুৎ বিল আরো অন্যসব কিছু করতে করতে কিছুই থাকে না। বাজার করবো কি দিয়ে?
তাছারা মাছের যে দাম, আবার ফ্রিজও নেই তাই হয়তো আরো কেনা হয় না।
.
স্কুলের এক ম্যাডাম আছে দেখি কিছু ধার পাই কি না।। নাম্বারটা, কোথা, কোথায়, এইতো..
.
-ক্রিং ক্রিং,, ক্রিং ক্রিং…হেলো ম্যাডাম (আমি)
.
-হেলো, হ্যা
.
-কেমন আছেন?
.
-এইতো ভালই, তুমি?
.
-হুম ভাল,,
.
–বাবু কই?
.
-খেলছে,, আচ্ছা মেডাম একটা দরকারে ফোন দিছিলাম।
.
-কি দরকার বলো।
.
-আপনি আমার বড়, কিকরে যে বলি
.
-কি বলবে, টাকা লাগবে?
.
-জি মানে, ২ একদিন পরে দিয়ে দিতাম। বেতনটা পেলেই
.
-আরে বাবা কত লাগবে?
–
-জি মেম ৫০০ টাকা হলেই হবে।। আসলে বাবু মাছ খেতে চাইছিলো। ছেলেটা অনেক দিন মাছ খায় না।।
.
-আচ্ছা তুমি এক কাজ করো, আমার বাসায় একটু এসো এখন।
.
-হ্যাঁ এখন এসো।।
.
-আচ্ছা আসছি ম্যাম,, রাখি এসে কথা হবে।
.
-আচ্ছা, বাই
.
কোনমতে বোরকাটা পড়েই হাটা দিলাম, ৫ মিনিটের রাস্তা।। বাবুকে ঘড়ে রেখে গেছি। বলে এসেছি কোথাও যেন না বের হয়।
দিনকাল বেশ খারাপ।। মেডামের বাসায় এসেই কড়া নারলাম-
.
-ম্যাম বাসায় আছেন?
.
-কে শ্রাবনী?
.
-জি মেম,
.
-এসো। বসো আমি একটু আসছি,,
–
ম্যাম একটু জলদি করবেন বাবু বাসায় একা
.
-আচ্ছা।।
.
মহিলাটিকে যতই তারাতারি বল্লাম সে ততই দেরি করছে।। বসে থাকতে থাকতে অনেক ক্ষন পর বেরিয়ে টাকাটা দিলো, একটি টিফিনবক্সও দিলো।।
.
-কি এটা ম্যাম?
.
-এটার ভেতর রুই মাছ ভুনা করা আছে। বাবুকে দিও। আর এই পোটলাটায় ২ টুকরা ইলিশ মাছ আছে কাল রেধে দিও গতকাল ওনি বাজার থেকে আনছে।।
.
-কি বলেযে ধন্যবাদ দিবো।
.
-আরে ধুর কি যে বলো,, । যাও সন্ধা হয়ে আসছে।। বাবু একা।। এবার তেমাকে বের করে দিবো, যাও।
.
-আচ্ছা, আশি তবে
.
-আচ্ছা, আবার এসো
বলেই হাটা দিলাম, সন্ধা প্রায় নামবে বলে। বেশ খুশি খুশি লাগছে। ছেলেটা আজ মাছ দিয়ে ভাত খেতে পারবে। আজ হয়তো পেট ভরে ভাত খাবে।
বাসায় যেতেই দরজা খোলা দেখে কেমন যেন বুকের ভেতরটা কামড় দিয়ে উঠলো।। বাবুকে অতিপতি করে খুজতে লাগলাম-
.
-বাবু, বাবু। বাবু সোনা? দুষ্টমি করে না, দেখো মাছ এনেছি। কোথায় তুমি?
পুড়ো ঘড় তন্ন তন্ন করে খুজলাম, কিন্তু কোখাও খুজে পেলাম না।। বসে বসে কাঁদতে কাঁদতে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে.
তবেকি আমি বাবুকেও হারিয়ে ফেল্লাম, পারার লোকেরাও দেখেনি,, কি করবো কিছুই বুঝতেছি না,, চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।