অসমাপ্ত ডায়েরি

অসমাপ্ত ডায়েরি

চোঁখের সামনে দিয়ে গাড়িটা চলে যাওয়ার সাথে সাথেই জিসানের হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো সে শুধু হতভাগ হয়ে দাড়িয়ে আছে।বুকের বা পাশটা প্রচন্ড ব্যাথা করতেছে।কিছুই বলতে পারতেছে না। আর রাস্তার মাঝে সাদিয়ার নিস্তব্ধ শরীলটা পড়ে আছে। জিসান এক দৌড়ে সাদিয়ার রক্তমাখা শরীলটা কাছে গিয়ে সাদিয়ার মাথাটা ওর কোলে নিয়ে চিৎকার করতে থাকে ও কি করবে কিছুইবুঝতেছে না। আশেপাশের লোকজনতারাতারি এসে সাদিয়াকে ধরে একটা গাড়িতে তুলে দিলো।সাদিয়া এখনো জিসানের হাতটা ধরে আছে জিসানের হাতটা রক্তাক্ত হয়ে গেছে। জিসানের চোঁখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তেছে ও বার বার বলতেছে সাদিয়া প্লিজ চোঁখটা খোল এই দেখ আমি। আর কখনো তোর উপর রাগ করবো না তোর সব কথা শুনবো। তুই যা যা বলবি আমি সব শুনবো। প্লিজ একবার কথা বল। তোকে ছেরে আর কখনো কোথায় যাব না প্লিজ একবার চোঁখ খোল। একটু আগে যা ঘটেছিলো।

–(সাদিয়া)ওই রিসা কে……?
–কোন রিসা আর তুই এইভাবে কথা বলতেছিস কেন……?
–ওই কুত্তা তোর ফোনে ওর মেসেজ কেমন করে আসলো।
–ওওওওওহ্ আরে ওটা আমার কাজিন।
–আমাকে একদম মিথ্যা কথা বলবি না আমি তোকে ভালোভাবেই চিনি তুই এরকম আমিভাবতেও পারি নি ছি।
–কি আবুল তাবুল বকতেছিস আমি কিছুই বুঝতেছিস না।
–হ্যাঁ তুই তো বুঝবিনা কঁচি খোকা।
–সাদিয়া তুই কিন্তুু আমাকে ভুল বুঝতেছিস।
–আমাকে কি তোর পাগল মনে হয়। কতদিন থেকে এইসব বল।
–আরে কিসের কিসব।
–ছি জিসান তুই আমার কথা একবার ও ভাবলি না আমাকে কি তুই একটুও বুঝিস না।
–বললাম তো ওটা আমার কাজিন।
–কাজিনের সাথে কেউ এইভাবে কথা বলে……?
–আমি বলি তোর পছন্দ না হলে যা ভাগ।
–আমি ভাবতেও পারিনি তুই এমন।
–তোকে আমি ভাবতে বলেছি তুই যে কত ছেলের সাথে কথা বলিস আমি তোকে কিছুবলি।
–ওরা তো আমার ফ্রেন্ড তুই তো সেটা ভালোভাবেই জানিস।
–ফ্রেন্ড না কি সেটা তুই ভালো জানিস আমার জানার দরকার নেই।
–তুই আমাকে এমন মনে করিস।
–হ্যাঁ করি তো কি…..?
–আচ্ছা ভালো থাক আমার সাথে আর জীবনেও কথা বলবি না। আমি তো আর তোর কেউ না। (কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বললো সাদিয়া)
–তুই আমাকে ভুল বুঝতেছিস ওটা সত্যি আমার কাজিন।
–তোর কাজিনকে নিয়েই থাক আমি গেলাম আমাকে আর ফোনও দিবি না।(কাঁদতে কাঁদতে চলে যাচ্ছে সাদিয়া)
–এই দাড়া।(কে শুনে কার কথা)

তারপর কি হলো সেটা তো জানতেইছেন। জিসান আর সাদিয়া একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে। জিসান মধ্যবিত্ত পরিবারে একটা সাধারণ ছেলে। টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ চালায়। কিন্তুু সাদিয়া বড়লোক বাবার একমাএ মেয়ে। তবুও সাদিয়ার মনে বিন্দুমাএ অহংকার নেই।সবার সাথে মিলেমিসে থাকে। সেইজন্যই বোধওয় জিসান ওকে এতটা ভালোবাসে। ওদের ফ্রেন্ডশিপ প্রায় দুই বছরের হঠাৎ একদিন সাদিয়া জিসান কে প্রপোজ করে জিসান ও না করতে পারেনি। ওদের মাঝে সবসময় ছোট ছোট খুনশুটি ঝগরা লেগেই থাকতো। ছোটছোট অভিমান। জিসান কোন মেয়ের সাথে কথা বললেই সাদিয়া অনেক খেপে যেত ও কিছুতেই মেতে নিতে পারতো না। সাদিয়া জিসান কে প্রচন্ড ভালোবাসে। জিসান ও ওকে অনেক ভালোবাসে।।।।

–হঠাৎ সাদিয়ার ব্যাগ থেকে ওর ফোনটা বেজে উঠলো জিসান তাড়াহুড়া করে ফোনটা বের করে দেখে সাদিয়ার আব্বুর ফোন। ফোনটা রিসিভ করতেই।

–মা তুই কোথায় তারাতারি বাসায় আয় নীলা কাঁদতেছে তোকে ছারা নাকি কিছুই খাবে না।(নীলা সাদিয়ার ছোট বোন)
–জিসান চুপ করে আছে ওর মুখ দিয়ে কিছুই বের হচ্ছে না। ও শুধু অঝোরে কেঁদেই চলেছে।
–কি হলোরে মা কথা বলতেছিস না কেনো…?
–(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিসান বললো) আংকেল আমি জিসান।
–সাদিয়া কোথায় বাবা আর তুমি এভাবে কথা বলতেছো কেনো সাদিয়ার কিছু হয়নি তো..?

–(জিসান আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বললো) আংকেল ওর এক্সিডেন্ট হয়েছে আপনারা তারাতারি হাসপাতালে আসুন।

–ডাক্তার প্লিজ ওকে বাঁচান ওকে ছারা আমি বাঁচবো না।
–আমরা চেষ্টা করবো রুগির অবস্থা খুব খারাপ।
–প্লিজ ডাক্তার ওকে ছারা আমি বাঁচবো না।
–ছাড়ুন রুগির শরীল থেকে প্রুচুর রক্ত পড়তেছে নিয়ে যেতে দিন।

ভিতরে সাদিয়ার চিকিৎসা চলতেছে আর জিসান দরজার এক কোণে বসে আঝোরে কাঁদতেছে আর বলতেছে আল্লাহ্ আমি তোমার কাছে কোনদিন কিছু চাইনি আজ আমার জীবনের বিনিময়েও সাদিয়ার জীবন ফিরিয়ে দাও। ওকে ছারা আমি কখনো থাকতে পারবো না। এতকক্ষনে সাদিয়ার আব্বুরাও চলে এসেছে। বাহিরে সবাই আল্লাহ্ আল্লাহ্ করতেছে। অনেকক্ষণ পর ডাক্টার বের হয়ে বললো ছরি অনেক চেষ্টার পরও আমরা কিছুই করতে পারলাম না। সি ইজ ডেট। এই কথা শুনে যেন জিসানের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। জিসান যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ওর পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছে। ওর যেন নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ও সাদিয়ার নিস্তব্ধ শরীলটা কাছে গিয়ে বলে।

–এই সাদিয়া উঠ নারে এই দেখ আমি আর কখনো তোকে কষ্ট দিবো না।
–আর কখনো তোকে ছেড়ে যাবো না।তুই একাই কোথায় চলে গেলি। আমাকেও নিয়ে যা। আমি কি তোকে ছারা থাকতে পারি বল।
–তুই না আমাকে কথা দিয়েছিলি। আমাকে ছেরে কখনো কথাও যাবি না।এই উঠ নারে উঠ।

শতবার ডাকলেও আর সাদিয়া উঠবে না কারণ ও চলে গেছে না ফেরার দেশে। যেখান থেকে আর কেউ কখনো ফিরে আসে না। এমনি ভাবে আমাদের একটু অসতর্কতার কারণে হারিয়ে যায় এমন হাঁজারও সাদিয়ার জীবন। এইভাবে আর কতদিন। আর কত লাশ তোমরা দেখতে চাও। প্রতিনিয়ত এমন দুর্ঘটনায় হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের কত আপনজন। আজও কি আমরা থেমে থাকবো ওরা তো আমাদের কেউ না এই বলে। যেদিন আমাদের এমন আপনজন হারিয়ে যাবে সেদিনওই কি আমাদের চোঁখ খুলবে।না আর না অনেক হয়েছে আমরা আর দেখতে চাইনা এমন করুণ কাহীনি।আমাদের সবার একটাই প্রত্যাশা আমরা নিরাপদ সড়ক চাই।লাশ আর রক্ত দেখতে দেখতে আজ আমরা কেলান্ত। না আর না দেখতে চাইনা আর এমন করুন কাহীনি।।।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত