প্রতারণীর প্রতারণা

প্রতারণীর প্রতারণা

মেয়েটি ছিল আমার রিলেটেড,তবুও আমাদের তেমন একটা কথা হতো নাহ। ও ছিল বড় লোক বাপের রাজরাণী আর দেখতে অনেক সুন্দর ও স্মার্ট ছিল।ওদের বাসা ছিল রাজধানীতে আর আমার গ্রামে।যার পরিপ্রেক্ষিতে ওকে ভালো লাগলে ও ভালোবাসার কথা জানাতে সাহস হয় নি। যাই হোক কোন এক বিশেষ কারণ বলেন আর বিপদ বলেন, ওকে হেল্প করি।তখন থেকে ই ও আমার প্রতি ইমপ্রেস ছিল।আমিও আমার ভালোলাগার কথা শেয়ার করি। তখন থেকে ই মূলত আমাদের কথাবার্তা শুরু হয়,মেয়েটি একদিন হঠাত করে কল করে আমাকে,

আমিঃ- হ্যালো আসসালামু আলাইকমুৃ(নাম্বার টা অপরিচিত ছিল তাই চিনতে পারি নি)

মেয়েটিঃ- ওয়ালাইকুম আসসালাম,কেমন আছো?

আমিঃ- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু কে আপনি?

মেয়েটিঃ- চিনতে পারো নি আমায়,আমি সে তার পরিচয় দিল,তারপর চিনতে পারলাম।

আমিঃ- তো কি মনে করে হঠাত কল দিলে(যদিও বা আমাদের ম্যাসেন্জারে কথা হতো)

মেয়েটিঃ- আচ্ছা আজ অব্দি তে আমাদের সম্পর্কের কোন নাম ছিল নাহ,চলো আজ আমাদের সম্পর্কের একটা নাম দি!

আমিঃ- হুম দেয়া যায়,তো কি দিবা?

মেয়েটিঃ- তুমি ঐ সময় তোমার ভালোলাগার কথা আমাকে জানিয়ে ছিলা নাহ?আজ আমিও আমার ভালোলাগার কথা তোমাকে জানালাম

আমিঃ- তো বলো?

মেয়েটি ঃ- কি বলতাম?

আমিঃ- আই…

মেয়েটিঃ- ও আচ্ছা বুঝেছি, আমি…..

আমিঃ- কি আমি?

মেয়েটিঃ- তোমাকে?

আমিঃ- আমাকে কি?

মেয়েটিঃ- আমি তোমাকে ভালোবাসি।

কথাটি বলে ই কলটা কেটে দিলো,আমাকে কিছু বলার জন্য আর দিলো নাহ। তখন থেকে ই আমাদের ভালোবাসার সম্পর্ক শুরু,ওর কেয়ার নেয়া,রোজ নিয়ম করে কলে কথা বলা,কল করে আমাকে গান শুনানো,বিডিও কল দিয়ে আমাকে দেখা,ভালোবাসার খুনসুঁটি গড়ে তোলা চলতে ই থাকলো। সম্পর্কের বয়স যখন একবছর ছুঁই ছুই, তখন থেকে ই ও কেমন জানি হয়ে গেছে,আগের মত আর সময় দেয় নাহ আমাকে,আমি কল দিলে ও ধরতে চায় নাহ।ও নাকি কলেজ প্রাইভেট টিউশনি স্টাডি নিয়ে অনেক ব্যস্ত তাই আমাকে সময় দিতে পারে নাহ।

যাই হোক ও অনেক কষ্টে ওর থেকে ৫ মিনিট সময় বের করি,ও প্রতিদিন এই সময়টাতে ই আমাকে কল করে,আর আমি কথা বলি।আমার কষ্ট গুলো শেয়ার করি,ও শুধু হ্যা নাহ ও ঐ বলে কাটিয়ে দেয়। আমার তখন বুঝতে আর বাকী রইলো নাহ যে আমার প্রতি টান টা ওর কমে গেছে,,তবুও আমি একতরফা ভালোবেসে যাই। কিছুদিন পর ওরা গ্রামের বাড়িতে আসে,আমাদের ভালোবাসার সম্পর্কের পর এই প্রথম ওর সাথে দেখা হবে,যতটা নাহ খুশি এতে ঠিক ততটাই নার্ভাস ছিলাম।ওকে দেখলে কি বলবো,কি করবো এইসব নিয়ে। ওরা গ্রামের বাড়িতে আসলে ও আর ওর কাজিন আমাদের বাড়িতে আসে, আমার সাথে তখনও সরাসরি কথা হচ্ছে নাহ।ও কল দিয়ে বলছে বিকালে ওকে নিয়ে গুরতে নিয়ে যেতে। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি নাহ,রাজি হয়ে বন্ধুকে কল করলাম কিছু টাকা দিতে,ওর জন্যে গিপ্ট কিনতে। তো বিকালে….

আমিঃ-কোথায় যাবা?

মেয়েটিঃ- যেখানো তোমার ভালো লাগে।

আমিঃ- আচ্ছা চলো,

পথে আর কোন কথা হয় নি,আগেরকার দিনের রাজাদের বাড়িতে আসলাম। ও আমার কোলে এসে বসে হাতটা শক্ত করে ধরে আছে,ওর কাজিন ছবি তোলা নিয়ে ব্যাস্ত ছিল।

আমিঃ- তো কি অবস্থা তোমার?

মেয়েটিঃ- আমাকে শক্ত করে হাগ করে ধরো তো।

আমিঃ- অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।

মেয়েটিঃ- আমি কিন্তু কিছু একটা বলছি।

আমিঃ- বেশ লজ্জা লাগছে তবুও ওর জোরাজুরিতে ধরলাম।

মেয়েটিঃ- ২ মিনিট এভাবে রাখবা।

আমিঃ- আচ্ছা। (বলে রাখা ভালো এইসব আমার ইনিচ্ছা স্বর্তে হচ্ছে, আমার ভিতর শুধু ওর বদলে যাওয়ার কারণটাই ঘুরছে)

মেয়েটিঃ- দেখি এই দিকে তাকাও তো।

আমিঃ- কি করলা এইটা?

মেয়েটিঃ- আমিতো আমার জামাইর গালে কিস খেয়েছি এর বেশী কিছু নাহ।

আমিঃ- হুম।দেখি হাতটা?

মেয়েটিঃ- ওর সামনে হাটু গেড়ে বসে, প্রপোজ করি ওকে,আংগুলে রিং পরিয়ে দি। তারপর আর বেশীক্ষণ ছিলাম নাহ,বাসায় চলে আসি ওরা ওদের বাড়িতে চলে যায়,পরেরদিন হঠাৎ সকালে রাজধানীর বাসায় চলে যায় আমাকে না জানিয়ে ই তারপর থেকে আগের মত ই ইগনোর করতে থাকে আমাকে, ওর আপলোড দেয়া পিক গুলোতে একটা ছেলের লাভ রিয়েক্ট দেখি,ওকে জিঙ্গেস করলে ও বলে যে এটা নাকি ওর এফবি ফ্রেন্ড এর বেশী কিছু নাহ,,তবুও আমার সন্দেহ হয়।

ওর পাসওয়ার্ড চাইলে ও দেয় নাহ।তাই ওর আইডিটা হেক করে দেখি যে ঐ ছেলের সাথে ওর লুতুপুতু চলে,খুব কস্ট পাই কিচ্ছু বলি নি তখনও। এর কিছুদিন পর জানতে পারি,লন্ডন প্রবাশী একটা ছেলের সাথে ওর রিলেশন। এরপর একদিন ওর কাজিন থেকে জানতে পারি ওদের বাড়ির পাশে একজনের সাথে ও নাকি ওর রিলেশন ছিল। কুব কষ্ট পেয়েছিলাম এইসব শুনে,অনেক কষ্টে ওর থেকে একটা রাত সময় চেয়েছিলাম। পুরোটা রাত যেনো আমার সাথে কথা বলে বিডিও কলে। ও রাজি হতে চায়নি আমি জোর করে ই রাজি করিয়েছি। রাত ঠিক ১২ টা,সবাই ঘুমিয়ে ছিল। ২ টা ব্লেড আর চুরি হাতে নিয়ে ওকে নিডিও কল দিলাম…

মেয়েটিঃ- তোমার হাতে এইগুলো কি?

আমিঃ- দেখতে ই পাচ্ছো।

মেয়েটিঃ- এই গুলো পালাও!

আমিঃ- পালানোর জন্য নেই নি।আজ তোমাকে আমার ভালোবাসার প্রমাণ দেখাবো।(যদিও বা জানি আমি এইসব হাত পা বুক কাটাকে ভালোবাসা নলে নাহ,তবুও আমি কাটবো।কারণ টা হচ্ছে ওকে আমি কাঁদাবো আজকে)

মেয়েটিঃ- কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আমি নাহ করতেছি।

আমিঃ- শুনিনি তার কথা,হাত বুক ব্লেড আর চুরি দিয়ে কাটতে ই থাকলাম।অঝোর ধারায় রক্ত পড়ছে আর ও কাঁদতেছে। ওর কান্না দেখে আমিও কেঁদে ছিলাম, তারপর ও কল দিয়ে বললো ও নাকি আমাকে সত্যি ই ভালোবাসে এই সেই। আমিও মেনে নি।

কিছুদিন পর ও আবার বদলে যায়,, আগে যেমন ছিল তেমন হয়ে যায়।ইগনোর করতে থাকে আমাকে। দিনে তো দূরের কথা সপ্তাহ কিংবা মাসে ও আমার খোঁজ নিতো নাহ। কিছুদিন পর দেখি আমাকে সব কিছু থেকে ব্লক করে দেয়া,ফেসবুক থেকে আন ফ্রেন্ড করা। যোগাযোগ করার মত কিছুই রাখলো নাহ আর। খুব কষ্ট পেয়ে ছিলাম তখন,তবুও বাবা মায়ের কথা ভেবে সব কষ্ট সহ্য করতে শুরু করলাম।আর ঐ প্রতারণীকে ভুলে গেলাম। আর ভাবলাম পৃথীবিতে কি সব ভালোবাসার মানুষগুলো ই প্রতারণী?

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত