আজ ও কেনো অহনার কথা মনে পরে

আজ ও কেনো অহনার কথা মনে পরে

নতুন বাসায় উঠেছি প্রায় এক মাস হলো।ব্যাচেলর দের বাসা পাওয়া আর চাঁদ হাতে পাওয়া সমান কথা।

নতুন বাসার পরিবেশ টা খুব মনোরম।বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সামনের পুকুর
থেকে শুরু করে বিস্তীর্ণ মাঠ পুরো টাই দেখা যায়।সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় হচ্ছে বাসার পাশেই একটা ঝিল আছ।

বিকেলে ঝিল পারে দাঁড়িয়ে সূর্য ডোবা দেখতে কার না ভালো লাগে।
এই বাসাটা প্রথম দিন দেখেই অনেক ভালো লেগেছিলো। ইচ্ছে হচ্ছিলো কতো শীঘ্রই এই বাসায় উঠতে পারি।কিন্তু অই যে ব্যাচেলর!

এই ব্যাচেলর এর তকমা পাওয়ার কারনে
বাড়িওয়ালা কোনো ভাবেই বাসা ভাড়া দিতে চাইছিলো না।অনেক কস্টে তাকে রাজি করিয়ে বাসা ভাড়া নিয়েছি।

তবে বাড়িওয়ালা চাচা লোক ভালো।ব্যাবহার অমায়িক।
.
এক মাস হয়ে গেলো বাসায় উঠেছি কিন্তু এখনো বাসার বাইরে ঘুরতে যাওয়া হয় নি। শুধু শেষ বিকেলে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাইরের
ঝিল, সূর্য ডোবা দেখা পর্যন্তই সীমাব্ধ।ঝিল পাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্য দেখা অনেক মনোরম একটা দৃশ্য।

তবে এক মাস হয়ে গেলো এখানে আসছি এখনো সেটা দেখা হয় নি।ক্লাস আর এসাইনমেন্ট নিয়েই অনেক ব্যাস্ত মাঝে মাঝে রাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখা হয়।।।।রাতের জোৎসনা মাখানো আলোতে
ঝিলের পানিতে মনোরম দৃশ্য দেখা যায়।
.
এসাইনমেন্ট – ক্লাস,ক্লাস – এসাইনমেন্ট করে অবস্থা বেগতিক।অবশেষে কিছুটা শান্তি। ক্লাস এসাইনমেন্ট দুটোর চাপ ই এখন কম।

এইতো সুযোগ বাইরের মনোরম পরিবেশ উপভোগ করার।
বিকেলে বেরিয়ে পরলাম দৃশ্য উপভোগ করতে। এতোদিন শুধু বেলকনি থেকে দেখছি আজ বাস্তবে দেখবো।
অনেক বড় ঝিল।বিশাল এড়িয়া।এতো বড় জায়গা ঘুরতে অনেক সময়ের প্রয়োজন।হাতে এখন অফুরন্ত সময় তাই ঘুরাই যায়।ঝিল পারে মানুষের
অভাব নেই।যে যার মতো দৃশ্য উপভোগ করছে। চোখে পরার মতো কপোত-কপোতীর ভিড়।।।বিকেলের মনোরম পরিবেশে প্রেয়সীর সাথে
ঘুরছে অনেকে।এই দৃশ্য দেখে নিজের ইচ্ছা হওয়াটা অপরাধ না।।।এই দৃশ্য দেখে মনে পরলো অহনার কথা।।।অহনা!নামটায় অনেক কিছুই মিশে
আছে।।।আজ কোথায় আছে জানি না।হয়তো কারো প্রেয়সী হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব ভাবলে চলবে না।সে যদি ধোকা দিয়ে সুখী হতে পারে তাহলে আমার ও পারা কথা।
তবে সবাই সব কিছু পারে না।
.
ঝিলের এক পাড় ধরে হাটতেছি।মনের মধ্যে পুরনো কিছু স্মৃতি ঘুরতেছে।পুরনো স্মৃতি সবসময়
সুখের হয় না কখনো কখনো বেদনার ও হয়।খুব জানতে ইচ্ছে করতেছে অহনার কথা। মিথ্যে অভিনয় কতো সহজেই করতে পারে কেউ
কেউ।তবে সেই অভিনয়ের কারনে কারো কারো পুরো জীবন ও থমকে যায়।সেই থমকে যাওয়া
জীবন গুলোর সাথী হয় নিকোটিন।রাতের আধারে নিকোটিনের ধোয়ায় সুখ খুজে তারা।
সুখ শব্দটা সবার জীবনে থাকে না।বাইরে থেকে দেখলে সবাইকে পৃথীবির সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয় কিন্তু প্রত্যেকের একটা জীবনিক
গল্প থাকে যা যেকোনো সিনেমাকেও হার মানায়।।।।কেউ কেউ সবাইকে হাসায় কিন্তু নিজেই দু:খের সাগরে সাতার কাটে।।।।এখনো
কানে বাঝছে অহনার বলা শেষ
কথা””তুষার,আমি তোমাকে ভালোবাসি না।
এতোদিন সব ছিলো আবেগ।।।বাকিটা কিছু অভিনয়।আমি সোহেল কে ভালোবাসি।””
সেই দিন কিছু বলতে পারি নি।কথাটা শুনে থ হয়ে দাড়িয়ে ছিলাম।
কারো কারো নিখুত মিথ্যে অভিনয় গুলো ধরা যায় না।।।।
.
আজ আর বেশি দুর ঘুরতে পারলাম না।চলে আসলাম।মন টা যেনো থেমে গেছে।না আর মনে করা যাবে না এসব।
রাতের বেলায় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে জোৎসনা দেখছি আর সিগারেট ফুকছি।সিগারেটের ধোয়া গুলো চোখের পলকে হারিয়ে যাচ্ছে।।।
এভাবে হারিয়ে যেতে পারলে মন্দ হতো না।সত্যি বলছি এলব্যামের গানটা খুব মনে পরছে,
এখন আমার সঙ্গী আকাশ, রাতের ধ্রুবতারা,
বৃষ্টি সঙ্গী করে ভালো, আছি
তোমায় ছাড়া।
ভালো আছি কিনা সেটা না জানলেও ভালো থাকার অভিনয় টা ভালোই জানি।
.
পরের দিন আবার বের হলাম ঝিলে।ঝিল পারে দাঁড়িয়ে সূর্য ডোবার দৃশ্য দেখার স্বপ্ন পূরন করতে।

ঝিল পারের পাড় দিয়ে নিশিন্ত মনে হাটতেছি।হাটতেছি সাথে সিগারেট।। নিজেকে বড় কোনো মানুষ বলে মনে হচ্ছে।
সিগারেটের ধোয়া গুলো নিমিষেই কোথাও যেনো চলে যাচ্ছে।ঝিল পারে অনেক মানুষ। এদের কাউকে চিনা তো দুরে থাক কখনো দেখছি কি না মনে নাই।

তবে এদের কেও কেনো যেনো আপন মনে হচ্ছে।।।।।।।।।জীবনে চলার বাকে বাকে অনেকের সাথেই পরিচয় হয়।কেউ
থাকে কেউ আবার সময়ের পরিক্রমায় হারিয়ে যায়।হারিয়ে যাওয়া মানুষ গুলো অনেক কিছুই শিক্ষা দিয়ে যায়।

সময়ের ব্যাবধানে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া নাম গুলোর সাথেও দেখা যায়।দেখাটা ইচ্ছে করে হয় না।
অনিচ্ছাতেই হয়ে যায়।পুরনো কিছু স্মৃতি মাথা চারা দিয়ে উঠে তখন।তবুও মুচকি হাসি দিয়ে বলতে হয় ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?
মানুষ মানেই পাক্কা অভিনেতা।কেউ করে নিজের সাথে কেউ করে অন্যের সাথে।
.
হাটতে হাটতে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেছে।এই সময় টায় ঝিল পাড়ে সবচেয়ে ভালো লাগে।সূর্যি মামা ডুবিডুবি করছে।

আস্তে আস্তে সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত!এখন ঝিল পাড়ে মানুষ একটু কম।তবে
একেবারেই কম বলা চলে না।।কপোত-কপোতীদের ভিড় এখন কম।যারা আছে সবাই একা একাঘুরছে।
ঘুরতে ঘুরতে একেবারে শেষ মাথায় চলে এসেছি।এদিক টাই লোকজন নেই।হঠাৎ একজন কে
দেখলাম।তাকে দেখে মনে হলো আমাকে দেখে চমকে গেছে।চমকানো অবস্থায় ই
জিজ্ঞেস করলো,
-আপনি কে?
:-আমি তুষার।
-আপনি এইদিকে এসেছেন কেনো?
:-এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছি।
-আপনি কি এই এলকায় নতুন?
:-১ মাস হলো এসেছি তবে ঝিলে ঘুরতে আসলাম আজ।
-ওহ।তাই জানেন না।এদিকে সচরাচর কেউ আসে না।
:-কেনো?
-মাস দুয়েক আগে এদিকে একটা ছেলে
আত্নহত্যা করেছে।
:-কি?
-হ্যা ছেলেটা একটা মেয়েকে ভালোবাসতো।
মেয়েটা চলে যাওয়ার পর ছেলেটার এই
অবস্থা।
:-আপনি কে?
-আমি এই ঝিল দেখাশুনা করি।
:-আচ্ছা।
আর কিছু না বলে চলে আসলাম।রাতের জোৎসনা
মাখানো আলো আর দেখা হলো না।আপাততো একটা জিনিস মাথায় ঘুরছে ছেলেটার কথা। আত্নহত্যা কিন্তু কেনো?

মেয়েটার অভিনয় হয়তো ছেলেটা নিতে পারে নি।
.
রাতের জোৎসনা মাখানো আলো আর দেখা হলো না।ছেলেটার কথা ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসলাম।।।কি অপরাধ ছিলো ছেলেটার শুধু
একজনকে ভালোবেসেছিলো ভালোবাসাটাই মনে হয় অপরাধ।ভালোবাসাটাই আজ কাল বড়
অপরাধ কিন্তু টাইম পাস করা নেহাৎ ভালো কাজ!ভালো কাজ করা মেয়েটিকে দেখতে ইচ্ছে করছে।।।সামনে পেলে কিছু কথা জিজ্ঞেস করতাম। রাতের আধার আরো ঘন হচ্ছে।।ভাবছি ছাদে
যাবো।।ছাদে সচরাচর যাওয়া হয় না।।।।হাতে গীটার টা নিয়ে ছাদে গেলাম।ছাদের এক কোনে বসে বসে ছেলেটির আত্নহত্যার কথা
ভাবতেছি।হঠাৎ অপর পাশে চোখ গেলো।একটি মেয়ে ছাদে বসে আছে!এতো রাতে একটি মেয়ে ছাদে কেমন যেনো কৌতুহল লাগলো।
মেয়েটির সামনে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা
করলাম,
-এতো রাতে ছাদে কি করছেন?
:-……….
-কিছু বলছেন না যে?
:-………..
মেয়েটি কিছু বললো না।শুধু আমার দিকে
একবার তাকিয়ে নিচে চলে গেলো।আমার
দিকে তাকানোর সময় মেয়েটির চোখে স্পষ্ট পানি দেখতে পেলাম।তার মানে মেয়েটি
কাঁদতে ছিলো।কিন্তু কেনো?এর উত্তর তো পাওয়া হলো না।।।সিগারেট ফুকে নিচে চলে আসলাম।
.
পর দিন আবার ছাদে গেলাম।তবে আজ একটু তারাতারি।যেয়ে দেখি মেয়েটি ছাদে বসে আছে।যেভাবেই হোক মেয়েটির কি হয়েছে
আজ জানতেই হবে।মেয়েটির সামনে গিয়ে অনেক্ষন কথা বলার চেষ্টা করলাম।বেশ কিছু
সময় পরে মেয়েটি আমার দিকে তাকালো,
-আপনার সাথে কিছু কথা আছে।
:-কি কথা?
-আপনি এতো রাতে ছাদে একা বসে কাঁদতেছেন
কেনো?
:-আমি একটি ছেলেকে ঠকিয়েছি ছেলেটি
আত্নহত্যা করেছে।
-কি???(অনেকটা অবাক হয়েছে)
:-সামনের ঝিল পাড়ে ছেলেটির লাশ পাওয়া গেছে।
আর কিছু না বলে মেয়েটি চলে গেলো।আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।তার মানে অই দিন ঝিলে যেই ছেলেটার কথা শুনেছি মেয়েটি
তার কথাই বললো!একজনের সাথে ছলনা করে আবার তার জন্য ই রাতের আধারে চোখের জল ফেলে আজব এই দুনিয়া।
.
পরের দিন বিকেলে বাইরে থেকে বাসায় ফিরছি।বাসার সামনে মানুষের জটলা দেখতে পেলাম।এর মধ্যে রাতে ছাদে দেখা মেয়েটিকে দেখতে পেলাম!
মেয়েটিকে মানসিক হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে।
ছেলেটা আত্নহত্যা করার পর মেয়েটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পরেছে।
.
যেই ছেলেটি আত্নহত্যা করেছে তার নাম ফয়সাল।তার এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে ঝিল
পাড়ে।ফয়সালের বন্ধুর কাছে জানতে পারি মেয়েটার নাম সরনিকা।দুই বছরের সম্পর্ক ছিলো ওদের। হঠাৎ সরনিকা ফয়সাল কে
ধোকা দিয়ে হিমু নামের একটি ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ায়।এর পর ফয়সাল আত্নহত্যা করে আর মেয়েটি মানসিক ভারসাম্যহীন।
.
রাতের আধারে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে জোৎসনা দেখছি।।।মানুষ কত সহজেই অন্য জন কে ধোকা
দিতে পারে।তবে সবাই সেই ধোকা সামলাতে পারে না।কেউ আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়।কেউ
মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পাগল হয়ে ঘুরে বেড়ায়।এটাই নিয়তি।
.
আমি কখনো মানুষ হিসেবে দাঁড়াতে পারি নি। অমানুষ হিসেবেই আছি।
ভালো তো দুরে থাক খারাপের খাতায় সবার শেষে আমার নাম।হয়তো একদিন আমি ও মানুষের কাতারে দাঁড়াবো।

তবে তার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।
.
আত্নহত্যা মহাপাপ।এটা জেনেও ফয়সালের মতো অনেক তরুন-তরুনী আত্নহত্যার মতো জঘন্য
কাজ করে বসে।এর কারন কি?যারা আত্নহত্যা করে এদের অধিকাংশ ই প্রিয়জনের দেয়া
মিথ্যে অভিনয় গুলো সামলাতে পারে না।
ধোকার কারনে তাদের জীবন থমকে যায়।।কেউ কেউ ফয়সালের মতো আত্নহত্যার পথ বেছে
নেয়।আর যারা ধোকা দেয় তারা ও ঠিক থাকতে পারে না।।নিয়তি তাদের ক্ষমা করে না।।।
সরনিকার মতো ভারসাম্য হারিয়ে কেউ কেউ বেচে থেকেও মরে যায়।সরনিকা ফয়সালের কথা মনে করে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে কিনা সেটা নিয়তি ই বলে দিবে।কাউকে ধোকা দিয়ে নিজে ঠিক থাকা অসম্ভব। আজ কেনো যেনো আবার অহনার কথা মনে পরছে।নিয়তি তাকে ভালো রাখুক।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত