অপূর্নতা

অপূর্নতা

লাইফে প্রথমবার যখন আমি রুপাকে দেখেছিলাম তখন আমি ওকে কোন ভালবাসার বা ভালোলাগার নজরে দেখিনি বরং অশ্লীলতা একটি সূক্ষ নজরে ওকে আমি চাক্ষুস ভাবে প্রত্যক্ষ করছিলাম। কলেজ ক্যাম্পাসে ওকে আমি প্রথম দেখেছি। বন্ধুদের সাথে ওকে হেলেদুলে হাটতে দেখেছিলাম আর ঝালমুড়ি খাচ্ছিলো।আমিও চুপচাপ ওর কার্যকলাপ লক্ষ করছিলাম।ও ওর মেয়ে বন্ধুদের সাথে অনেক হাসাহাসি করছিল, বন্ধুদের সাথে হাটার সময় কখন যে ওর বাম কাধের সালোয়ারের কাধেরর কাছে ব্রা ‘র একটা ফিতা বের হয়ে গিয়েছিল সেটা ও লক্ষ ই করে না। তখন ই বুঝতে পেরেছিলাম বয়সের অপূর্নতায় ওর মাঝে এখন ও পুরোপরি ম্যাচুয়রিটি ছোয়া আসেনি। সেটাই ছিল আমার ও কে প্রথম দেখা।!

এর পরের ওকে দেখেছিলাম কলেজে পহেলা ফাল্গুন অনুষ্ঠানে। প্রত্যেকবারই আমাদের কলেজে এই অনুষ্ঠানটটি বেশ বড়সর করে হয়।কলেজের শিমুলতলায় মোটামুটি বড়সরই একটা স্টেজ সাজানো হল।অনুষ্ঠানটাটির আমি একটি ইভেন্টে ছিলাম। রবীন্দ্রনাথের একটি বসন্তজয়ন্তী গান আর একটি নাটকে। স্টেজের পিছনেই ড্রেসিং রুম।

সকাল নয়টার দিকেই অনুষ্ঠান শুরু হবার কথা থাকলেও অনুষ্ঠান শুরু হতে হতে দশটার মত বেজে গেল। প্রথমে কিছুক্ষন গান- নাচ ও কবিতা চলল তারপর নাটকের পালা আসলো। আমি তখন স্টেজের পিছনে ফিটিং রুমে রেডি হচ্ছিলাম আমি ও আমাদের নাটকের গ্রুপের সদস্যরা।এরমধ্যেই মাইকে আমাদের নাম ডেকে উঠল।তাই দ্রুত রেডি হচ্ছিলাম। রেডি হয়ে রুমে থেকে বের হতে যাবো তখন হঠাত করে পর্দার ফোকর দিয়ে একটা কিছু লক্ষ করি। ভালোমত পর্দা সরিয়ে গিয়ে দেখি স্টেজের পিছনে গাছের আড়ালে একটা মেয়ে দাড়ানো। মেয়েটা একটা গাছের আড়ালে দাড়ানো, বারবার এদিক- ওদিক উকিঝুকি মারছে।আমি ভালোমত দেখার জন্য ড্রেসিং রুম থেকে বের হয়ে তাকালাম।প্রথমে অবাক হই নি কিন্ত অবাক হলাম এটা দেখে যে এই মেয়েটাই সেই মেয়েটা যাকে আমি সেদিন ক্যাম্পাসে দেখেছিলাম।

মেয়েটা গাছের আড়ালে দাড়িয়ে আছে আর বারবার এদিক- সেদিক তাকাচ্ছে।ভালো মত লক্ষ করে দেখলাম মেয়েটি তার বাম হাত দিয়ে শাড়ির কুচি মুঠো করে ধরে রেখেছে আর ডান হাত দিয়ে বারবার শাড়ীর আচলটা ঠিক করছে।শাড়ী পরা অবস্থায় এখন ওকে খুব মোটা লাগছে।আর এই অবস্থায় ও যদি সর্বোচ্চ পাচ মিনিট হাটে তাহলে গা থেকে শাড়ী খুলে পরতে মিনিট পাচ ও বেশি হয়ে যাচ্ছে। এতক্ষনের পর্যবেক্ষনের ফল বুঝলাম সবে”!

এরমধ্যেই মাইকে আমার নাম আবার স্মরন করলো। দেরী যা করেছি আর করা যাবে না তাই দ্রুত মেয়েটির কাছে হেটে চলে গেলাম। গিয়েই বললাম,হাই মেয়েটা আমাকে হঠাত এরকম অবস্থায় হাই বলতে শুনে দ ভূত দেখার মত চমকে উঠল। আমি ওকে আরও একবার আগাগোড়া দেখে নিলাম।তারপর তাড়াতাড়ি বললাম, স্টেজের অন্যপাশে ড্রেসিং রুমটা মেয়েদের।ওখানে অনেক মেয়েরা আছে।ওখানে গিয়েই শাড়ী ঠিক করতো পারবা।মেয়েটা আমার কথা গুলো বোধহয় ভালোমত হজম করতে পারে নি এখন ও তাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

ও এখন হয়তো ভাবতেছে যে এই ছেলেটা কিভাবে জানল যে আমার সমস্যা আর ও বা আমাকে কেন সাহায্য করছে?
আমি ও কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বললাম, আমার সাথে তাড়াতাড়ি আসো।সময় নেই আমার। মেয়েটাও চুপচাপ আর কোন কথা বল্লো না।  মন্ঞ্চে বাম পাশে মেয়েদের আর ডান পাশে ছেলেদের তাই ওকে তাড়াতাড়ি মেয়েদের ড্রেসিং রুমটার সামনে গিয়ে বললাম, এটা মেয়েদের ড্রেসিং রুম। ভেতরে মেয়েরা আছে। তাদের কাছ থেকে শাড়ী ঠিক করে নিও এই বলেই সোজা স্টেজের দিকে দৌড় দিলাম।

এতক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে।দেখি অনেকই চোখ গরম করে আছে তাকিয়ে আছে আমার উপর। সবচেয়ে বেশী রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার ডিপার্টমেন্টের হেড স্যার এ.।সবারদিকে তাকিয়ে একটা মদনমার্কা হাসি দিয়ে  আমাদেরর নাটক শুরু করলাম। আমার সাথে আরও কয়েকজন ছিল।  নাটকটা ভালই হলো। নাটকটা শেষ করে স্টেজ থেকে নামতেই বন্ধুরা চেপে ধরলো, কি রে দেরী করলি ক্যান ব্যাটা?  আমি ওদের কোন রকমে একটা বুজ দিয়ে সোজা ড্রেসিং রুমে গিয়ে ড্রেস পাল্টে বের হয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি।

হঠাত মনে হলো,আরে ঐ মেয়েটার এতবড় একটা হেল্প করলাম। একটা ধন্যবাদ তো পাওয়া উচিত।তাই আমি তাড়তাড়ি মেয়েদের ড্রেসিং রুমের সামনে গেলাম। পিছনে থেকে আমার বন্ধুরা বলে উঠল,
কি রে ভাবী এইখানে আছে নাকি?নয়তো মেয়েদের এই ড্রেসিং রুমের সামনে করস কি?
আমি ওদের দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম, ভাবি থাকলে তো ডাকবি”!!!

ওদের এখন ঐ মেয়েটার কথা বলা মানে নিজের পিছনে নিজে আপন মনে বাশ দেয়া। তাহলে সারাটা ক্ষন কানের কাছে ওরা ঘ্যান ঘ্যান করবে।  মেয়েটা কে, কি করে,দেখতে কেমন, বাসা কই আর ট্রিটের কথা তো বাদই দিলাম। তাই আমিও চুপচাপ কোন কথা না বলে ওদের সাথে তাল দিয়ে গেলাম। ওদের সাথে আড্ডা দিছি ঠিকই কিন্তু আমার চোখ খুজছে ঐ মেয়েটাকে। বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। কিন্তু মেয়েটাকে কোথায় দেখতে পাচ্ছি না আর এই শালাগো জ্বালায় তো ড্রেসিং রুমের ঐখানে গিয়েও খোজ নিতে পারছিও না। পরছি এখন একটা উভমুখী সমস্যায়। কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে ওদের বিদায় দিয়ে সোজা বাসার দিকে হাটা শুরু করলাম।

পরেরদিন ১৪ই ফেব্রুয়ারী, বিশ্ব ভালবাসা দিবস আর আমি তো বিশ্ব সিঙ্গেল মানুষ তো তাই সারাদিনে আর ঘর থেকে বের হলাম না।বন্ধুদের লাভলী সব পোস্টগুলো তে সারাদিন হাহা রিয়াক্ট দিয়ে গেলাম। পরেরদিন ঠিকই কলেজে গেলাম।একটা ক্লাশ শেষে করেছি।পরের ক্লাশ হতে দেড় ঘন্টা লেইট।ব্রেক টাইম তাই ক্লাশ নাই, দেড়ঘন্টার মত ব্রেক আছে তাই ডিপার্টমেন্টের সামনের ছিটে গিয়ে বসলাম।গতকাল ওদের পোস্টে হাহা দেবার কারনে সবগুলায় আমার উপর ক্ষ্যাপা।সিটে বসতে না বসতেই সবগুলায় আমাকে ঘিরে ধরলো। একটাই কথাা, হাহা দিছোস ক্যা শালা””! হাহা দেবার ধরুন ওদের কথা শুনছিলাম চুপ করে এমন সময় একটা মেয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো। এ্যারাবিক কাতোয়ান পড়া।মনে হচ্ছে যেন বড় কোন মারমেইড আমার সামনে এসে দাড়াল। দুই হাত দুদিকে ছড়িয়ে বলল,,

-হাই ভাইয়া। কেমন আছেন।

আমি অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটার সারা গা বোরকা দারা আবৃত শুধু চোখটা বাদে। আর আমি ঐ চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে চিনবার চেষ্টা করছি। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আবার বলল, কি হল চিনতে পারেন নি। আমি মাথা নাড়ালাম। তখন ই মেয়েটা মুখের উপরের হিজাবের অংশ থেকে দুটো পিন খুলে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে গত দুদিন আগের সেই চেনা মুখটা আমার সামনে ভেসে উঠল। এদিকে আমার বন্ধুরা হা করে তাকিয়ে রয়েছে মেয়েটার দিকে। একবার মেয়েটা আর একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমাকে বকবে নাকি না। ওদের চোখ দেখেই বুঝতে পারলাম যে আমার উপর ওরা রীতিমত অবাক হয়েছে এটা ভেবে,যে কিনা কোন মেয়ের সাথে কথাই বলে না, স্টিল সিংগেল অথচ আজকে একটা সুন্দর দেখতে মেয়ে তার সাথে সেধে এসেছে কথা বলতে। ওরা একবার মেয়েটার দিকে তাকায় আবার আমার দিকে তাকায়।

আমিও ওদের ভাবনা বুঝতে পেরে বললাম,তোরা এখানে বস একটু, আমি আসছি এই বলে মেয়েটাকে চোখের ইশারা করলাম আমার সাথে আসবার জন্য। কিন্তু মেয়েটা আমার ইশারাটা সরাসরি ধরতে পারলো না তাই সরাসরি বললাম আমার সাথে আসতে। মেয়েটার সাথে কথা বলা শুরু করতেই সে আমাকে এক বস্তা ধন্যবাদ উপহার দিলো যেটা আমি গতকাল আশা করছিলাম।আমি যে ওর কত বড় উপকার করেছি তা বলে বোঝানো যাবে না এরকম যতসব কথা। ওর ধন্যবাদের মাঝেই আমি থামিয়েই আমি ওকে জিগ্গাসা করলাম, তোমার নাম কি?

-ও বলল যে ওর নাম রুপা এবং ও অনার্স ১ম বর্ষে পরে।কোন ক্লাসে পরে জিগ্গাসা করি নাই তারপর ও বলল।

হঠাত করে আমি আবার বলে উঠলাম, এখন শাড়ী পরা কি শিখেছো? ও মিটমিটি হাসছে।এরকম টুকটাক কিছু কথা বলে ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বন্ধুদের কাছে আসলাম। বন্ধুদের কাছে আসতে না আসতেই সবগুলো চেপে ধরলো। নাম কি, তোকে চিনল কি করে। কয়েকটা তো আবার টিটকারী মারতেও ছারলো না তাই ওদের কাছ থেকে কোনমতে বিদায় নিয়ে সোজা বাসার পথে হাটা দিলাম কয়েকদিন পর হঠাত দেখি রুপা আমাদের ডির্পাটমেন্টে। সেমিনারে বসে পেপার পরছি। ভাইয়া আপনি এখানে?

– তো কোথায় থাকবো?
– মানে বলছি আপনি কি এই ডিপার্টমেন্টে পরেন”! হ্যা? কেন।

আমিও তো ভাইয়া এই ডিপার্টমেন্টে পড়ি। এবার আমি কিছুটা অবাক হলাম।দেখি ও আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।উপরে উপরে অবাক হলেও মনে মনে ঠিকই খুশি হয়েছি। মূহুর্তের জন্য ও কিছু একটা ভাবল।তারপর বলে উঠল,ভাইয়া আপনাকে আমি সারপ্রাইজ দিতে চাই”! আমি অবাক হয়ে বললাম, কেন? আবার বলছেন কেন? আপনি যানেন না কেন? ধন্যবাদ তো দিছোই আর কি লাগবে আর বাদ দিও ঐসব। এটা স্রেফ একটা দূর্ঘটনা ছিল আর আমি শুধু তোমাকে সাহায্য করেছি। ব্যাস এই। আমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলেও এই কাজটা করতো?

– না। কখন ই করতো না। আপনি তো আর সবার মত না। রুপা কোন মতেই বুজতে নারাজ।  আমি আবার বললাম,বাদ দেও

– কিন্ত আপনি বললে তো হবে না। আমি জানি আপনি আমাট কত বড় হেল্প করেছেন।তাই অন্তত এটুকু করা উচিত আপনার প্রতি আমার। আচ্ছা ভাইয়া আপনার আসল নামটাই তো জানা হলো না।

– আমি স্মিত হেসে বললাম যে,আমার নাম সাজিদ হাসান।

ওওওও,, ওকে সাজিদ ভাইয়া তাহলে চলেন যাই।  তারপর ওর সাথে কলেজের বাইরের এক ফাস্টফুড শপে গেলাম আমি। ও ই আমাকে নিয়ে গেল উপরে উপরে আমি না যাবার ভান করলেও নিচে নিচে ঠিকই আমি ওর সাথে যেতে চাচ্ছিলান দুটো কারনে,,,এক হচ্ছে যে সকালের নাস্তা করে আসি নি তাই আর দুই হচ্ছে গিয়ে মেয়েটার প্রতি আমার জানি কেমন একটা আর্কষন বোধ কাজ করছে।আর একসাথে নাস্তা করার লোভটা সামলাতে পারি নাই। এই দুইটি কারনে একটা মেয়ে যে এত কথা বলতে পারে তা আমি ওকে না চিনলো বুঝতেই পারতাম না।ও্ যে কি পরিমানে কথা বলতে পারে তা এই বার ঠিক মত বুঝলাম। অর্নগল কথা বলা। যেন কোন টেপ রেকর্ডার।

পিতজ্জা ওর্ডার করলাম। রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার খাচ্ছে আর কথা বলছে তো বলছে। রেস্টুরেন্টের প্রায়ই লোকই ওর দিকো তাকাইয়া ছিল। তাই আমি তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে ওকে নিয়ে তাড়তাড়ি বের হয়ে আসলাম। আমার ডিপার্টমেন্টের তাই ওর সাথে প্রায়ই কলেজে দেখা হতো।ও হ্যা আমি তখন একাউন্টিং বিভাগের ৩য় বর্ষে পরতাম।তো একদিন সেমিনারে বসে আছি।এই সময়ে ও আসলো। এসেই আমাকে বলল, ভাইয়া আমাকে একটা হেল্প করতে পারবেন। আমি বল্লাম, বলো ও বলল, আমি না জাবেদা টাইপের কোন অংকই বুজতে পারছি না।আপনার কি কেউ আছে পরিচিত স্যার যার কাছে অংক প্রাইভেট পরতে পারবো।

আমি একটু স্মিত হেসে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,না নেই তবে আমি তোমাকে হেল্প করতে পারি।তোমার বইটা বের করো। সেদিন ওকে সেমিনারে পাক্কা পৌনে দুঘন্টা অংক করালাম।আর এটাই ছিল ওর সাথে প্রথম কোন লম্বা মূহুর্ত।এর পর প্রায়ই কলেজ টাইমে ওকে আমি পড়াতাম। টাকার বিনিময়ে নয় বরং ওর প্রতি আমার জানি কেমন একটা দুর্বলতা বা ভাল লাগা কাজ করতো। এতে আমার সমস্যা হলেও ওকে আমি পূর্ন সার্পোট করতাম।সব ব্যাপারেই ওকে আমি হেল্প করতাম। ব্যাপারটা আস্তে আস্তে বেশ ইজি হয়ে যাচ্ছিলা।ও আমাকে এখন আপনি থেকে তুমি বলে ডাকে।আমি ও বুঝতে পারছি,ওর প্রতি আমার ফিলিং কাজ করে।

কলেজ টাইমে আগে হতো ওকে পড়ানো আর এখন ওর ক্লাশ নেবার চেয়ে ওর সাথেই ঘোরাফিরা হচ্ছে বেশি।বন্ধুরা ও আমার এই কান্ড দেখে পুরাই অবাক। আমিও ব্যাপারটা বেশ ইনজয় করছি। আগে তো আমি জেলাস হতাম আর এখন তোরা জেলাস হ। আমি হঠাত এমন চেন্জ হতে পারি তা ওরা কল্পনাই করতে পারে নাই। দৈনিক ক্যাম্পাসে এসে ক্যান্টিনে রুপার সাথে বসে শিঙ্গারা খাওয়া বা রোল খাওয়া এটা হচ্ছে আমার দৈনিক রুটিনের একটা। আমি ভাল মতই বুঝতে পারছি যে আমি ওর প্রতি ক্রমে ক্রমেই আরো দুর্বল হচ্ছি।ওকে দেখলেও আমার মনে হচ্ছে ও আমাকে ভালোবাসা। অব্যশ ধারনাটা আমার ঠিকই ছিল…..

ইদানিং ও অনেক ফাকিবাজ হয়ে গেছিলো। পড়ার কথা বললেই অন্য কথায় চলে যায়,তাই প্রায়ই জোর করে আমি ওকে নিয়ে লাইব্রেরিতে গ্রুপ স্টাডিও করতাম।ওকে পড়ানোটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজের একটা। পড়াবার সময় এমন একটা দিনও যায় নি যে আমি চিমড়ি খাইনি। ওকে যদি চোখ গরম দিতাম রুপা আরও বেশী বেশী করে দিতো। আমার হাতটা ছিলো ওর আর্ট আকার কাগজ। দৈনিক ইচ্ছামত কলম দিয়ে লিখতো আর আমার দৈনিক ঘসে ঘসে কালির দাগ উঠাতাম। আমিও চুপচাপ ওর নিরব অত্যাচার সহ্য করে যেতাম। লাইব্রেরীতে তো আর ডাকডাকি সম্ভব না আর আমি ছিলাম নিরুপায়। বিকেল রুপাকে নিয়ো ঘুরতে যেতাম। ও প্রায়ই জেদ ধরতো নদীর পারে ঘুরতে যাবার জন্য আর আমি ওর জেদের কাছে হার মেনে ওকে নিয়ে যেতাম। বিকেলে হেলে যাওয়া রোদের আলোয় ওকে মনে হতো আমার কাছে পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরী তরুনী আর আমি হলাম সবথেকে সুখী মানুষ।

সবকিছুতেই রুপা বরাবরের মতই প্রথম ছিল। আমাদের রিলেশনের প্রথমে ওই আমাকে প্রপোজ করেছিল।সামনা-সামনি না অব্যশ।ওর সাথে কলেজে বসে থাকার সময় কোন ফাকে আমার বইয়ের ভিতর কাগজটা ঢুকিয়ে দিলো টেরই পেলাম না। বাসায় এসে যখন দেখতে পেলাম ওর তিন বাক্যের চিঠিটা সেদিন আমাকে নিজের কাছে ধন্য মনে হল। পরেরদিন রুপাকে চেনা যাচ্ছিল না। ও মাথাট নিচু করে রেখেছিলা আর ওর চেহারায় কিছুটা লজ্জা ও ভয় মিশানো ছোয়া ফুটে উঠেছিল।আমি বেশ কিছু বলিনি।শুধু বলেছি,,,your requests has been granted.. ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো আর আমি শুধু হেসেই চলেছি। ওর হাতটা চেপে ধরে বল্লাম,কখন ও ছেরে চলে যাবে না তো?

– যাব না যদি চিরজীবনের জন্য আমাকে টলারেট করতে পারো।

আমি হাসি থামিয়ে অবাক হয়ে বললাম, মানে”! ও আমার দিকে শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে বলল, পিকচার আবি বাকি হে মেরি জান। রুপা আমার হাত ধরে হাটছে সেই নদীর পাড়ে যেখানে ও প্রত্যেক দিন যাবার জন্য জেদ করতো আর আমি একজ মানে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। স্বচ্ছ বাতাসের মিষ্টি দোলায় ওর মাথার চুল গুলো বারবার লেপ্টে যাচ্ছে ওর নাকমুখে।  এবার আর আমি কোন অশ্লীলতা খুজে পেলাম না বরং পেলাম ওরি দু চোখে নিষ্পাপ দুটো চাহনি।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত