চেনা অচেনা মেয়েটি

চেনা অচেনা মেয়েটি

>কেমন আছো?
:- বেচেঁ আছি এখনো মরি নি।তুমি কেমন আছো?
>ভালো।অনেক দিন পর দেখা হলো।
:-হুম। ৩ বছর ৬ মাস ৭ ঘন্টা পর।
>পুরোপুরি এতো সঠিক ভাবে মনে রেখেছো।
:-সব কিছু ভুলা যায় না।আর সব স্মৃতি ভুলা যায় না।
>তোমার স্ত্রী কেমন আছে?
:-বিয়ে করি নি।
>কেনো?
:-কাউকে ভালোবেসেছিলাম।
>অতীত নিয়ে পরে থাকলে কি জীবন চলে?
:-জীবন জীবনের গতিতে চলে,আমি আমার গতিতে।
>এখনো আগের মতোই আছো।
:-বদলাবার মানে খুজে পাই নি।
>কি করছো এখন?
:-বেকার নেই।
>বেকারত্ব অনেক নিষ্ঠুর হয়।
:-আমার চেয়ে ভালো কে আর জানে।
>হ্যা।সিগারেট খাও?
:-এটাই এখন সংগী।
>আমাকে একটু তারাতারি বাসায় ফিরতে
হবে।তোমার ফোন নাম্বার টা দেও।
:-মিথ্যে মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই।
>তুমি সেই আগের মতোই আছো।ভালো থেকো।
:-ভালো থাকবো কি না জানি না তুমি ভালো থেকো।
কথা হচ্ছিলো অহনার সাথে।৩ বছর পরে তার
সাথে দেখা হলো।আগের অহনার আর এখনকার
অহনার অনেক পার্থক্য।পার্থক্য থাকাটাই
স্বাভাবিক এখন সে অন্য কারো স্ত্রী।
.
আজ অহনার সাথে দেখা না হলেই ভালো
হতো।৩ বছরের স্মৃতি গুলো আজ আবার মাথা
চাড়া দিয়ে উঠছে। সব স্মৃতি সুখকর হয় না কিছু
কিছু বেদনার ও হয়। সেই দিন গুলোর কথা
এখনো আমার মাথায় জীবন্ত হয়ে আছে।
সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে ছাদে চলে
গেলাম।।সিগারেট খুব ভালো সংগ দেয়
আমাকে।।আজ কেনো যেনো সেই পুরনো দিন
গুলোর কথা মনে পরছে।খুব করে মনে পরছে।
.
আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগে অহনার সাথে
আমার পরিচিয়।পরিচিয় টা হয়েছিলো খুব
অদ্ধুত ভাবে।তখন অনার্সে পড়তাম।অহনা
ছিলো আমার ১ বছর জুনিয়র।একদিন
ক্যাম্পাসে আসার জন্য মেস থেকে বের
হয়েছি।সকালে রিক্সা খুব বেশি পাওয়া যায়
না।যেই না একটা রিক্সা তে উঠতে গিয়েছি
ঠিক তখনি টের পেলাম কেউ আমার মানিব্যাগ
নিয়ে বগার পার।কি আর করার অগ্যতা সেই
মানিব্যাগের পিছনেই দৌড় দিলাম।কিন্তু যে
মানিব্যাগ নিছে সেকি আর আমার মতো বলদ
বালক!সেই ব্যাক্তি ততক্ষনে মানিব্যাগ নিয়ে হাওয়া।
কি আর করার হেটেই ক্যাম্পাসের দিকে
গেলাম।এমনিতেই মানিব্যাগ হাওয়া হইছে
তার উপর হেটে ক্যাম্পাসে আসতে হইছে।
স্বভাবতই মাথা গরম। ঠিক অই সময়েই একটি
মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করছে,
>ভাই আপনি কি এখানে পড়েন?
:-না আমি তো ঝালমুড়ি বিক্রি করতে এসেছি এখানে।
>কি!!!????
:-ক্যাম্পাসের পাশেই হসপিটাল আছে
সেখানে গিয়ে কানের ডাক্তার দেখিয়ে নিয়েন।
>বড় আজব লোক তো আপনি।
:-আজব না খজব সেটা দিয়ে আপনার কি?
>ধুর।
মাথা গরম ছিলো তাই উল্টাপাল্টা উত্তর
দিছি।মানিব্যাগে আমার আইডি কার্ড, টাকা
ছিলো।এখন এগুলোর শোকে আমার অবস্থা
বেগতিক।
.
মানিব্যাগের শোকে বেশ কয়দিন মেসে
ঘাপটি মেরে ছিলাম।টাকা না থাকলে যা হয়
আর কি।।।
অনেকদিন পরে ক্যাম্পাসে গেলাম।ক্যাম্পাসে
গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি এই
মুহুর্তে সেই মেয়েটির দিকে চোখ পরলো।
মেয়েটি আমাকে দেখে খুব বিরক্ত হইছে
সেটা বুঝতেই পারছি।মেয়েটির সম্পর্কে খোজ
নিয়ে জানতে পারলাম নাম অহনা।প্রথম বর্ষে
পড়ে আমাদের ডিপার্টমেন্টেই।
ভাবলাম অই দিনের জন্য মেয়েটাকে সরি বলার দরকার।
.
ক্লাস শেষ করে বাইরে বের হতেই মেয়েটির
সাথে দেখা হলো।আমাকে দেখে হন হন করে
চলে যাচ্ছিলো।আমি ই ডাক দিলাম,
>এই যে শুনছেন?
:-আমাকে বলছেন?
>হ্যা আপনাকেই।
:-আজ আবার মাথার তার ছিরছে?
>না আসলে অই দিনের জন্য সরি।আসলে অই
দিন মাথা গরম ছিলো তাই অইভাবে বলছি।
:-তাই বলে একটা মেয়ের সাথে এই ভাবে কথা
বলবেন?
>সরি।
:-ওকে।
>আপনি কি নতুন?
:-হ্যা প্রথম বর্ষ।আপনি?
>দ্বিতীয়।।।আপনার নামটাই তো জানা হলো
না।
:-আমার নাম অহনা।আপনার?
>কে,এইচ,তুষার।
:-কে,এইচ মানে?
>কামরুল হাসান।
:-ওহ।আচ্ছা আমার একটু তারা আছে এখন বাই।
>আচ্ছা।
যাক মেয়েটার পরিচয় জানা হলো।
.
এর পরে মেয়েটার সাথে টুকটাক কথা হতো।
আস্তে আস্তে সম্পর্ক টা বন্ধুত্বে রুপ নেয়।
যদিও আমার কাছে বন্ধুত্ব থেকে কিছু বেশি
ছিলো।তবে সেটা প্রকাশ করার সাহস ছিলো
না।ভেবেছিলাম মেয়েটা বুঝে যাবে।কিন্তু
না মনে হলো আমাকেই বলতে হবে।
কিছু দিন পরে অহনার জন্মদিন।ভাবছি সেই
দিন ই অহনাকে বলে দিবো।দেখি কি হয়।
অত:পর প্লান মাফিক সবকিছুই হলো।
তবে অহনা যে রাজি হয়ে যাবে এটা ভাবি নি।
.
বেশ ভালোভাবেই চলছিলো আমাদের সম্পর্ক।
কেয়ারিং, শেয়ারিং সব কিছুই চলছিলো
ভালোভাবে।এভাবেই কেটে যায় ১ বছরের
বেশি সময়।
তবে সুখ জিনিস টা বেশিদিন টিকে নি।
হঠাৎ একদিন অহনা জরুরী তলব করে।
ভেবেছিলো অন্য ব্যাপারে কিছু বলবে।কিন্তু
দেখা হওয়ার সাথে সাথেই বললো,
>আমি রিলেশন রাখতে পারবো না।
:-মজা করার আর সময় পেলে না।
>মজা করছি না তুষার।
:-তাহলে?
>আমি রিলেশন রাখতে পারবো না এটাই শেষ
কথা।যদি একদিনও আমাকে ভালোবেসো
থাকো তাহলে আমার সাথে যোগাযোগ করবে না।
সেই দিন বলতে পারি নি কিছু।বাকরুদ্ধ হয়ে
গেছিলাম অহনার কথা শুনে।অহনা হঠাৎ এতটা
পাল্টে গেলো!
.
না অহনা পাল্টায় নি।পুরো ঘটনা জেনে
ছিলাম অহনার বান্ধবী তাসনোভার কাছ
থেকে।অহনার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলো
অহনার ফ্যামিলি।অহনার কিছুই করার ছিলো
না।আমি বেকার একটা ছেলে তার উপর মাত্র
অনার্স করছিলাম।বাস্তবতার স্বীকার
হয়েছিলাম আমরা কিছুই করার ছিলো না।
.
এর পরে অহনার সাথে দেখা হয় নি
যোগাযোগের চেষ্টাও করি নি।সুখী হোক
অহনা নতুন সংসার নিয়ে এই দোয়ায় করেছি।।।
খুব ভালোবেসেছিলাম অহনাকে।এর পর আর
অন্য কাউকে ভালোবাসার সাহস হয় নি।নীরবে
অনেক চোখের পানি ঝরেছে অহনার জন্য।
জানি না অহনার কি অবস্থা হয়েছিলো তবে
বাস্তবতা তো মেনে নিয়েই জীবন।হয়তো
অহনার আমার কথা মনেও নেই। নতুন জীবন,নতুন
সংসার এতেই ব্যাস্ত মনে হয়।
.
জীবন কতো সিনেমাটিক!জীবনের ধাপে
ধাপে ছিনেমা।
পুরনো দিনের কথা গুলো মনে করতে করতে
সিগারেটের প্যাকেট টাই শেষ করে
ফেলেছি। অহনার সাথে দেখা না হওয়াটাই
ভালো ছিলো।পুরনো স্মৃতি গুলো আবার জেগে
উঠেছে এটা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।
.
আমি কখনো মানুষ হিসেবে দাঁড়াতে পারি
নি।।অমানুষ হিসেবেই আছি।
ভালো তো দুরে থাক খারাপের খাতায় সবার
শেষে আমার নাম।।
হয়তো একদিন আমি ও মানুষের কাতারে
দাঁড়াবো।।তবে তার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।
.
ভাবছি এই শহর ছেড়ে অন্য কোথায় চলে
যাবো।এখানে থাকলে অহনার সাথে দেখা
হবার সম্ভাবনা আছে।চাই না অর সাথে আবার
দেখা হোক।স্মৃতিগুলো নিয়েই ভালো আছি।
ভালো থাকুক ওর সংসার নিয়ে।বাস্তবতা
মেনে নিতেই হবে।বাস্তবতা নিয়েই জীবন।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত