আজ কলেজ এ প্রথম ক্লাস,,সভাবতই আমি সময়ের বেপারে একটু বেখেয়ালি,,,,,তাই কলেজ এর প্রথম দিনে ই লেট,,,প্রথম দিনে ই লেট করার কারনে টিচার এর বকা খেলাম,,,ক্লাস রুমে ঢুক্লাম।।ক্লাসে সব অপরিচিত মুখ,,তার মধ্য একজন এর পাশে গিয়ে বস্লাম,,,ভালমতই তাকে বন্ধু বানিয়ে নিলাম,,, ওহ আমার সম্প্রকে তো বলাই হয়নি,,আমি নিলয়,এবার অনার্স ফার্স্ট ইয়ার,,মোটামুটি ভালো ছাত্র হওয়ায় পাব্লিক ভার্সিটি তে চান্স পেলাম,,
তো যা বলছিলাম,,
কলেজ এর প্রথম দিনে একটা বন্ধু বানিয়ে নিলাম,,নাম সাকিব,,পুরো ক্লাস টা একবার দেখে নিলাম,পাব্লিক ভার্সিটি সবাই স্মার্টলি কলেজে এসেছে,,কিন্তু বাম দিকে প্রথম সারির কোনে দেখলাম একটা মেয়ে বসে আছে,,কেমন জানি তাকে সবার থেকে আলাদা মনে হলো,,,সাধারনভাবে থ্রি-পিচ পরে এসেছে,চোখে চশমা, পুরো মনযোগ ক্লাসে স্যারের দিকে,,,অন্য কোনোদিক মনযোগ নাই,,,চুলগুলো একটু পরপর চোখের সামনে আসছে আর হাত দিয়ে সরাচ্ছে,,তারপর আবার বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে,,,,সবমিলিয়ে মেয়েটিকে অনেক আলাদা মনে হল,,,,,,,
আমি দুস্টু সভাবের হলে ও শান্ত মেয়েদের ভাল লাগে,,,বিশেষ করে চশমা ওয়ালি দের প্রতি আকরষন টা একটু বেশি,,,যাই হোক মেয়েটিকে খুব ভালো লাগল।। পরের দিন কলেজে গিয়ে আরও কয়েকটা বন্ধু বানিয়ে ফেললাম যেমন, আকাশ,নিরব,একান্ত আর ২টা বান্ধবী ও হলো, নিরা আর শুভ্রা,,দুস্টু প্রকিতির ছেলে তো দুস্টামির কারনে তারাতারি ই বন্ধু হয়ে গেলো,,,এবার আসি চশ্মিস মেয়েটার দিকে,,শুভ্রার থেকে জানলাম ওর নাম তমা,,হুম ভালো নাম,,নাম যেমন ভালো চেহারাতে ও অসম্ভম মায়া আছে,,,,, কিন্তু শুভ্রা আরেকটা কথা বলল তমা ক্লাসে কারর সাথে কথা বলে না,,বই এ তমার নাম দেখে ই শুভ্রা নাম বলল,,,,,,,সেদিন ই দেখি তমা একটা গাছের নিচে বসে বই পরছে, আমিও গেলাম গিয়ে বললাম “”হাই,আমি নিলয়”” বলে হাত বাড়িয়ে দিলাম কিন্তু তমা একবার আমার দিকে তাকিয়েও চোখটা নামিয়ে বইয়ের দিকে মনযোগ দিলো।।
আরেকবার আমি ওকে ডাকলাম,,,এবার একটু রাগি লুক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বইনিয়ে চলে গেলো,,আমি দেখে থ হয়ে দারিয়ে আছি,,রাগলে যে একটা মেয়েকে এতো সুন্দর লাগে তা কখন ও দেখিনি,,অসম্ভব সুন্দর লাগছিল তমাকে,সেদিনের মতো মেসে চলে।যাই,,,দুপুরে একটু ঘুমানর জন্য বিছানায় শুয়ে পরলাম,,,কিন্তু একি চোখ টা বন্ধ করতে ই তমার সেই রাগি চেহারাটা ভেসে উঠল,,সাথে সাথে চোখ খুলে ফেললাম,,,,যা কোনদিন হয়নি,তা আজ কিভাবে হল,,এর আগে কোনমেয়ের কারনে আমার ঘুম নষ্ট হয় নি,,আর আজ কিনা চোখ বন্ধ করতে ই তমার চেহারা ভেসে উঠলো,,,বার বার চোখ বন্ধ করছি বার বার একি অবস্থা,,দুপুরে আর ঘুম হলনা রাতে ও একি অবস্তা,, কোনমতে রাতে একটু ঘুমাতে পারলাম
পরদিন ভার্সিটি তে গেলাম,,,দেখি বন্ধুরা চলে এসেছে,,,
আমার অবস্থা সবাইকে বললাম,সবাই তো হাস্তে শুরু করল,,,একান্ত বলল যা প্রপজ করে দে,,আমি ভাবলাম”নাহ এত।তারাতারি এসব করা যাবে না,,একটু পর তমা আসল,,আবার আমি তমার কাছে গেলাম ওকে জালাবো বলে।কিন্তু আজকে ও তমা কোন কথা বলল না,,আমি মন খারাপ করে আবার চলে গেলাম,,বিকেলে নিরা কল দিয়ে যা বলল আমি তা শুনে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না,,নিরা বলল তমা নাকি কথা বলতে পারে না,,,ছোটবেলায় একটা দুরঘটায় তমা কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে,,সেদিন রাতে আর ঘুম হলো না,,,ভার্সিটি ও গেলাম না,,,সারাদিন তমা র কথা ভাবলাম,,,আমি ত ওকে ভালবেসে।ফেলেছি অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।নাহ আর বসে থাকলে চলবে না,,,পরদিন ভার্সিটি গিয়ে ই তমা কে ডাকলাম,,প্রতিদিনের মত আজ ও আমাকে ইগ্নোর করতে লাগল,,আমি অনেক রিকুয়েস্ট করলাম,,তারপর ও একটু সময় দিল,,,আমি তমা কে বললাম,,
“তমা,যেদিন তোমাকে প্রথম এ তোমাকে দেখি সেদিন ই তোমার অই মায়াবি চোখের প্রেমে পড়ে গেছিলাম,,,,জানি না কেনো শুধু তোমাকে ই ভালো লাগল,,জানো আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনা তোমার কথা মনে পড়ে শুধু,,আমি জানি তুমি কথা বলতে পারনা,,তবুও শুধু তোমাকেই ভালোবাসি,,,তোমার চোখের ভাষা দেখে ই আমি সব বুঝে যাব,,,,আমি তোমার সাথে প্রত্যক্টি সুর্যদয় দেখতে চাই,,আমার জিবনের শেষ সুর্যাস্ত পর্যন্ত ,, তুমি কি হবে আমার সংগী??””””
কথা গুলো এক নাগারে বলে ফেললাম,, তমা এগুলো শুনে কোনো রিয়েক্ট না করে ই চলে গেল,, আমি ভাব্লাম ও মনে হ্য় আমাকে ভালোবাসেনা,,,তারপর থেকে কয়েকদিন ভার্সিটি গেলাম না,,,,,একদিন বিকেলে ঘরে শুয়ে আছি,,,হঠাত ফোন টা কেপে উঠল,মেসেজ এসেছে।দেখলাম অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ
কাল সকাল ১০টায় পারকে চলে আসবা”” অপরিচিত নাম্বার থেকে এমন মেসেয দেখে অবাক হলাম,,,কল দিলাম রিসিভ হলো কিন্তু কেউ কথা বলল না,,তারপর দেখি অই নাম্বার থেকে আবার মেসেজ
“”তুমি তো জানো আমি কথা বলতে পারিনা,তাও কল দিচ্ছ কেন””এবার বুঝলাম কে এটা,,,,মেসেজ এর রিপ্লে দিয়ে মন টা যে এত ভালো হয়ে গেছিল কি বলব,,,সকালে যত তারাতারি পারি পারকে চলে গেলাম,,,আগেই বলেছি সময়ের ব্যপারে আমি একটু উদাসিন তারাতারি যেতে চেস্টা করলাম তাও ২মিনিট লেট,,,পারকে গিয়ে দেখি তমা এখন ও আসে নি,,আমি একটা বেঞ্চে বস্তেই দেখি তমা আসছে,,,সবুজ শাড়ি পরেছে,,সভাবতই চোখে চশ্মা,,সবুজ শাড়িতে ওকে আর ও সুন্দর লাগছিল,, কিন্তু ও কিভবে জানল যে সবুজ রঙ আমার প্রিয়,,,যাই হোক তমা এসে আমার পাশে বসল,,,আমি ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছি,,,ও ইশারা করে হা বন্ধ করতে বলল, আমি একটু লজ্জা পেলাম,,একটু পর দেখি ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করল।।কাগজ টা আমার হাতে দিয়ে ইশারা করে পড়তে বলল,,কাগজে লিখা
“”নিলয়,আমি অন্য মেয়েদের।মতো সাভাবিক না,কিন্তু তুমি তা জেনে ও আমাকে।কেন ভালবাসো,,,,তোমা
কে পছন্দ করতাম আগে থেকেই,,কিন্তু বলব কিভাবে আমার তো সেই ক্ষমতা নেই,,,তুমি যেদিন বললে আমাকে ভালবাস,,সেদিন বাসায় গিয়ে অনেক কেদেছিলাম,, আমার মতো মেয়েকে ও কেউ ভালবাসে সেটা ভেবে,, ভাবছিলাম ভার্সিটি তে গিয়ে তোমাকে জেভাবেই হোক কিছু বলব,,কিন্তু তুমি তো আসছিলে না,,,তাই নিরার থেকে তোমার নাম্বার টা নিয়ে তোমাকে দেখা করতে বললাম,,,জানো খুব ভালবাসি তোমাকে,,,আচ্ছা আমি কথা বলতে পারিনা বলে কি তুমি কি আমাকে কখন ও ভুলে যাবে?? আমি আমার প্রতিটা কথা তোমাকে লিখে লিখে বলব তুমি আমায় সারাজিবন ভালোবেসে যাবে??””
লিখাগুলো পড়ে কেমন জানি কান্না চলে আসল,,,তারপর দেখি ফোন এ মেসেজ আসলো “”কি ভালবাসবে আমাকে??””
আমি তমার কাছে গেলাম,গিয়ে ওর কপালে ভালবাসার পরশ দিয়ে বললাম হু সারাজিবন আমার পাগলিটাকে ভালবেসে যাব।।
তমা লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ লুকালো,,চলতে থাকল আমাদের ভালবাসা,,,কাছে না থাকলে ফোন এ মেসেজ এ আমদের কথা হতো আর জখন আমরা এক সাথে থাকতাম ছোট ছোট কাগজে লিখে আমরা আমাদের মনের কথা গুলো বলতাম।।।
ভালোই কাটছিলো দিনগুলো,,,,কিন্তু একটা ঘটনায় জীবন টা অন্ধকার হয়ে গেলো,,, আমি আর তমা একদিন্ দেখা করতে আসলাম,,,,,আমরা হাটছিলাম,,,আমার মোবাইল এ একটা জরুরি কল আসে,,আমি ফোন এ কথা বলছিলাম তমা আমার পিছনে পিছনে হাটছে,,আমরা একটা রাস্তা পার হচ্ছিলাম,,একটু জরুরি ফোন কল ছিল তাই তমার প্রতি একটু খেয়াল কম ছিল,,,রাস্তা পার হতে হতে ই পিছনে শব্দ হলো,,,, মনে হলো কোনো ট্রাক মানুষ কে ধাক্কা দিছে,,, আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি তমার নিথর দেহটা রাস্তায় পড়ে আছে,,,পুরো শরীর রক্তে মাখা,, তমা হোচট খেয়ে রাস্তায় পড়ে গেছিলো,,,আমাকে ডাকার চেস্টা করেছে কিন্তু ওর তো কথা বলার শক্তি নেই,,,,,আমি দোড়ে গেলাম তমার কাছে,,,,,,ততক্ষনে তমার মুমূর্ষু অবস্থা,,,,,,
আম্বুলেন্স আনতে ফোন করব তমা নিষেধ করল,,,কেন যানিনা আমি কথা বলতে পারছিলাম না,,তমা ইশারা করে বুঝাল ওকে যেন আমি একবার জরিয়ে ধরি,,হুম জরিয়ে ধরলাম,,এটাই শেষ জরিয়ে ধরা ছিলো,,,,,,,,একি তমা আর নড়ছে না কেনো,,,,বুঝলাম তমা আর নেই,,,,,,জোরে একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম,,,যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি আমি বাসায়,,,,,বার বার তমার নাম নিচ্ছিলাম,,,,আব্বু তখন তমার কবরের কাছে নিয়ে গেল,,,,,,, তমা একা একা কবরে কিভাবে আছে??তমা ওও তমা তুমি তো বলেছিলে তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো,,,,তুমি আমাকে একা রেখে কেনো চলে গেলে,,,,,,,, আমি এখন তোমাকে ছাড়া কিভাবে বাচবো??,,,ফিরে এসো তমা,ফিরে এসো,,,,,,কিন্তু তমা তো আর ফিরে আসবেনা,,তমা না ফেরার দেশে চলে গেছে,,,ইচ্ছে থাকলে ও সে আর আমার কাছে আসতে পারবে না,,
(সমাপ্ত)