মিঠুঃ আসসালামু আলাইকুম, আন্টি কেমন আছেন???
অনুর মাঃ এইতো বাবা ভালো আছি, তুমি কেমন আছো??
মিঠুঃএইতো আন্টি ভালো আছি,,,
অনুর মাঃ দাড়িয়েই কথা বলবে???ভিতরে আসো,,,
মিঠুঃ আন্টি অনু কে দেখছি না,পাগলি টা কোথায়???
অনুর মাঃতুমি কিছু জানো না???
মিঠুঃ কি জানবো আন্টি???অনুর কিছু হয়েছে???
অনুর মাঃনা কিছু হয় নি,,অনু ওর নানুর বাসায় চলে গেছে,,,,
ওখানেই পড়াশুনা করবে আর গতকাল ওখানের এক কলেজে ভর্তি হয়েছে,,,
মিঠুঃবলেন কি আন্টি???(মিঠু যেনো আকাশ থেকে পড়লো)
অনুর মাঃ তোমাকে অনু বলে যায় নি???
মিঠুঃ না আন্টি,আমার সাথে ওর ৭দিন যাবৎ কথা হয় না,,,ওর সাথে প্রতিদিনকার মতো একটু ঝগড়া করেছিলাম,,,
তাই হয়তো রাগ করেছিলো আমিও আর অভিমান করে কথা বলার চেষ্টা করি নি,,,,
অনুর মাঃতোমাদের মন আমি বুঝি না,,,এই দেখি দুজনকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারো না আবার ঝগড়াও করো,,,,
মিঠুঃ আন্টি আমি এখন চলে যাই,,ভালো লাগছে না,,,
অনুর মাঃনা খেয়েই চলে যাবে???
মিঠুঃনা আন্টি আজ আর কিছু খাবো না,,,
অনুর মাঃঠিক আছে আবার এসো,,,,
মিঠুঃঠিক আছে আন্টি,,,
এতক্ষণ কথা হলো মিঠু আর অনুর মার মাঝে,,,
অনু হচ্ছে মিঠুর ছোট কালের বন্ধু,,,,
মজার ব্যাপার হলো,তারা একই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলো,,,,,
মিঠুর বাবা এবং অনুর বাবা ঘনিষ্ঠ বন্ধু,,,সে সুত্রে তাদের পরিচয় এবং একই শহরে থাকা,,,
তারা সেই স্কুল লাইফ থেকে অনেক ভালো বন্ধু,,এখন তারা কলেজ লাইফে পদার্পণ করেছে,,দুজন দুজনকে ছাড়া থাকতে পারে না,,,,
দুজনের মাঝে ঝগড়া করার কারন হলো,,৫ দিন আগে কলেজের ছাতার নিচে মিঠু মন খারাপ করে বসেছিলো,,,কারণ স্যার তাকে আজ খুব অপমান করেছে পড়া পারে নি বলে,,,
মিঠুকে দেখে অনু এগিয়ে আসলো,,,
অনুঃকিরে প্যাচার মতো মুখ করে বসে আছিস কেনো???
মিঠুঃ,,,,,,
অনুঃকথা বলিস না কেনো,,,,কথা না বল্লেও চলবে আমাকে নিয়ে শহরের দিকে চল কিছু কেনা কাটা করতে হবে,,,এবং খুব ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে,,,ফুচকা খাবো চল,,,
মিঠুঃতুই আমাকে এতো ডিস্টার্ব করিস কেন???আর তোর সব কথা আমি শুনবো কেন???আর আমি শহরে যাবো না,,,শহরে আমার কোন দরকার নেই,,,আমাকে ডিস্টার্ব করিস না,,,
মিঠু অনুকে রেগে গিয়ে এসব বলে,,,কারন,তার মনটা ভালো ছিলো না,,,এমনিতেই রেগে ছিলো,,,
এদিকে অনু মিঠুর এই রকম ব্যবহারে অবাক হয়ে যায় এবং কাঁদতে কাঁদতে অনু মিঠুর সামনে থেকে চলে যায়,,,
অনু ভাবতে থাকে,,,ও আমার সাথে এ রকম ব্যবহার করতে পারলো???করবেই তো,,আমি ওর কে,,,,
এদিকে মিঠু বুঝতে পারে তার এই রকম ব্যবহার করা ঠিক হয় নি,,,,
অনু কষ্ট না সইতে পেরে কলেজ থেকেই চলে গেলো,,কলেজে থাকলে হয়তো মিঠুর ডিস্টার্ব হতে পারে,,,,
এদিকে মিঠু অনুর বাসা থেকে এসে ভাবতে থাকে কেমনে অনুর রাগ ভাঙ্গানো যায়,,আর অনু তো প্রতিজ্ঞা করে বসে আছে কখনো আর মিঠুর সামনেও যাবে না এবং কথাও বলবে না,,,,
মিঠু ফোন দিলে অনু ফোন রিসিভ করে না,,,,
অনু ফোন রিসিভ করে না দেখে মিঠু অনুর আম্মুর কাছ থেকে অনুর নানুর বাসার অনুর কাজিন ইসরাতের নাম্বার এনে অনুকে ফোন টা দিতে বলে,,,
কিন্তু অনু তো কিছুতেই কথা বলবে না,,,,
অনু ভাবছে দেখো,আমাকে কষ্ট দেয়ার মজা,,,এখন আমাকে খুজো কেনো???এখন কষ্ট পেতে থাকো,,,,
এদিকে মিঠু কোন উপায় না পেয়ে নুসরাতের কাছ থেকে তাদের বাসার ঠিকানা নিয়ে রওনা দিলো অনুর নানুর বাসার দিকে,,,যে করেই হোক অনুর রাগ ভাঙ্গাতে হবে,,,,
মিঠু রওনা দিলো ৩০এপ্রিল,,, কারন ১লা মে অনুর জন্মদিন,,,মিঠু ভাবে অনুকে সারপ্রাইজ দিয়েই অনুর রাগ ভাঙ্গাতে হবে,,,
তাই,অনুর জন্য তার অতি পছন্দের ৩ফিট উচ্চতার পুতুলটি কিনে নিয়ে যায়,,,,
অনুর নানুর বাসা ছিলো বরিশাল,,,আর মিঠুর বাসা ছিলো টাংগাইল,,,
তাই ঢাকা থেকে লঞ্চে যেতে হবে মিঠুকে,,,মিঠু পানি খুব ভয় পায়,,সাতারও পারে না,,,
তবু যেতে হচ্ছে,,,,
আর এদিকে কেমনে বরিশাল যাবে কোন গাড়িতে ওঠবে,কোন লঞ্চে ওঠবে সব বলে দিচ্ছে অনুর কাজিন নুসরাত,,,
এদিকে ৩০এপ্রিল চলে গেলো ১লা মে আসলো তার পরেও মিঠু অনুর নানুর বাসায় পৌছে না,,,
এনিয়ে টেনশনে পড়ে গেলো নুসরাত,,,,
মিঠুর ফোনটাও বন্ধ পায়,,,
টেনশনে বিষয় টা অনুর সাথে শেয়ার করলো নুসরাত,,
নুসরাতঃ অনু তোর কাছ থেকে একটা বিষয় লুকিয়ে রেখে ছিলাম কিন্তু এখন ভয় হচ্ছে,,,,
অনুঃকি কথা???
নুসরাতঃতোর রাগ ভাঙ্গানোর জন্য মিঠু বরিশাল আসার জন্য গতকাল রওনা দিয়েছে,,,কিন্তু আজও তো আসলো না,,,
তোকে বলতে মানা করেছিলো,,,তোর জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিবে বলে,,,
অনুঃকি বলিস???ও আসবে কেনো???হয়তো তোর সাথে মজা করেছে,,,
নুসরাতঃনারে,,,ও যখন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে লঞ্চে ওঠছিলো তখন আমাকে ফোন দিছিলো কিন্তু আর ওর ফেনে কল যাচ্ছে না,,,,,
নুসরাতের কথা শুনে অনুও টেনশনে পড়েছে আবার ভাবছে হয়তো মজাও করতে পারে,,,,
নুসরাত আর অনু দুজন বসে ১লা মে দুপুর ২টায় টেলিভিশন দেখছে হঠাত করে এক চ্যানেলে খবর দেখে,,,অজ্ঞান হয়ে যায় অনু,,
নিউজ হচ্ছে,সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসা ৮০জন যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ডুবি,,,নিহত ৮,,,
সেই ৮জনের মাঝে রয়েছে তার প্রিয় বন্ধু,তার অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য বরিশালে ছুটে আসা,,,,লাশ হয়ে যাওয়া মিঠু,,,
মিঠুর লাশ পানিতে ভেসে ওঠে আছে,,,,
এখন অনু যতই কান্না করুক,যতই অভিমান করুক কখনো ফিরে আসবে না মিঠু,,,
হয়তো অনুর সামান্য অভিমান টা আজকে ভয়ানক অভিমানে পরিনত হয়েছে,,,,
এখন তো কেউ অনুর অভিমান ভাঙ্গাতে ছুটে আসবে না,,,,,
(ঘটনা টা সম্পূর্ণ কাল্পনিক, আমরা কেউ চাই না আমাদের জীবনে এ রকম ঘটনা ঘটে যাক)