এ পথের শেষ কোথায়

এ পথের শেষ কোথায়

রাতটার মাঝে আজ বিষাদ নিস্তব্ধতা লুকিয়ে আছে।
যে বদনা আজ আমাকে পাঠিয়ে দিবে হয়তো ওপারের অচেনা কোন জগৎ এ। তবুও কতো আশাই না ছিলো এই পৃথিবীকে নিয়ে।
সবটাই যেন আবছা কুয়াশায় ঢেকে ফেলছে হয়তো এই অন্ধকারই নিয়ে যাবে শেষ গন্তব্যের পথে।
তাতে কোন আপসোস নেই জীবনের শেষ কাজটা শেষ করতে পেরেছি এটাই কম কিসে।
আজ থেকে ৩ বছর আগেই জীবনটা অন্যরকম ছিলো।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ঘুড়া ফেরা ছাড়া কিছুই বুঝতাম না।
প্রতিবারের মতো এবারো নবীন বরন অনুষ্ঠানের আয়োজনের দ্বায়িত্ব পরে আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের উপর ।
অনুষ্ঠানের শেষ একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত গান গাইলাম আমি।
তারপর নবীনদের ফুলদিয়ে বরন করে বাসার দিকে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম।
এর মাঝেই মেয়ে কন্ঠে পিছন থেকে কে যেন ডাক দিলো।এতোটা গুরত্ব না দিয়ে আবার হাটা শুরু করলাম এবার সামনে এসে দাড়ালো ।
মেয়েটি: সেই কখন থেকে ডাকছি আপনাকে শুনতে পাচ্ছেন না?
ইমরান: এই যে, এই যে শুনছেন বললেন, কিভাবে বুঝবো আমাকেই ডাকছেন।
মেয়েটি: বাদ দিন, আপনি তো অনেক সুন্দর করে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতে পারেন।
ইমরান: ধন্যবাদ।
মেয়েটি: কিছু মনে না করলে আপনার সাথে কি ফ্রেন্ডশীপ করা যাবে?
ইমরান: আচ্ছা ফ্রেন্ডস না হয় হলাম কিন্তু আপনাকে তো আগে কখনো কলেজে দেখিনি?
মেয়েটি: কিছুক্ষন আগে যে নতুনদের বরন করলেন আমি তাদেরই একজন।
ইমরান: ওহ আজ তাহলে আসি কাল দেখা হবে।
এই বলেই চলে আসলাম সেখান থেকে পরে জানতে পারলাম মেয়েটার নাম নন্দিতা।

অনেকটা মিশুক প্রকৃতির নন্দিতা অল্প কিছুদিনের মধ্যে এমন ভাবে জড়িয়ে গেলে মনে হয় কতো বছরের চেনা।
সারাদিন যেন কথার ঝুড়ি নিয়ে বসতো আর আমিও নিবরে শ্রোতার মতো শুনে যেতাম, কথা যেন থামতেই চাইতো না ।

ভালাই যাচ্ছিলো দিনগুলো আড্ডা ক্লাস আর নন্দিতার কথার ঝুড়ি শুনে। একদিন হটাৎ নন্দিতা বলে বসলো
নন্দিতা: তুমি কি কাউকে ভালবাসো?
ইমরান: বাসি তো একজনকে কেন বলো তো।
নন্দিতা: কোই আমার সাথে তো পরিচয় করে দিলে না।
ইমরান: ঠিক আছে কবে দেখা করবে বলো।
নন্দিতা: কাল, আচ্ছা তোমার পছন্দের মানুষটা দেখতে কেমন?
ইমরান: কিছু উপমার তুলনা মুখে দেয়া যায় না, কাল না হয় নিজেই দেখে নিও।

নন্দিতা চলে গেলো আর মনে, মনে ভাবলাম যখন ভালবাসার মানুষটার কথা বললাম, নন্দিতার মুখটা দেখার মতো হয়ে ছিলো।
এই বুঝি বৃষ্টি নামবে চোখ বেয়ে । কাল ম্যাসেজ করে পদ্মার পারে আসতে বললাম নন্দিতাকে।
যেয়ে দেখি আগেই এসে বসে আছে কিন্তু অন্যদিনের চেয়ে আজ নন্দিতাকে অন্যরকম লাগছে।
চোখদুটো লাল ও ফোলা দেখাচ্ছে হয়তো সারারাত ঘুম আসেনি।
যেয়েই নৌকাতে উঠলাম দুজন।
নন্দিতা: আরে তোমর সে কোথাই ? তাকে রেখেই নৌকায় উঠছো কেন?
ইমরান: অপেক্ষা করো সময় হলেই দেখতে পাবে।
নন্দিতা: যদি সে এসে তোমাকে খুজে না পেলে রাগ করবে না?
ইমরান: রাগতো আজ সে করবেই কিন্তু।
নন্দিতা: কিন্তু কি?
ইমরান: সেটা না হয় পরেই জানলা, তুমি তো কখনো বলো নি তুমি আমাকে ভালবাসো?
নন্দিতা: আমি, কে বললো তোমাকে?
ইমরান: এই যে ম্যাডাম আপনার ডায়রীতেই তো লিখে রেখেছেন।
নন্দিতা: তুমি এটা পেলে কোথাই অনেক তো খুজেছি আমি তো পাইনি ডায়রীটা।
ইমরান: কারন তোমার ব্যাগ থেকে আমি এটা নিয়ে ছিলাম, না হলে জানাই হতো না আমি যাকে ভালবাসি সেও আমাকে ভালবাসে কিনা।
নন্দিতা বাচ্চাদের মতো কেদেই চলেছে সূর্ষটার অস্তের দিকে ছুটছে হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে নন্দিতা। যেন এই বাধন হারাবার নয়।
ভালবাস, অভিমান, ঝগড়া ভালই চলছিলো আমাদের মাঝে। অগোছালো জীবনটাকে নতুন করে গুছিয়ে নিয়েছিলো নন্দিতা।
সব কিছুতেই খেয়াল রাখতো আর নন্দিতার কথা না শুনলেই অভিমান করে বসে থাকতো তখন আমিও নন্দিতার অভিমান ভাঙ্গাতে লেগে পরতাম।
অন্য রকম মায়ায় জড়িয়ে যাই নন্দিতার এই অভিমানে। ছোট, ছোট উপহারে অনেকটা খুশি হতো।

নন্দিতার বেলী ফুল খুব পছন্দ করতো তাই যেখান থেকেই পারি বেলী ফুলের মালা নিয়ে যেতাম এতেই এতো খুশি হতো তা বলার ভাষা রাখে না।
কিন্তু সময়টা সব সময় এক যায় না এর মাঝেই নন্দিতার বাবা কিভাবে যেন জেনে যায় আমাদের রিলেশনের কথা।
তাই পাত্র দেখা শুরু করে নন্দিতার জন্য। এর মাঝেই ইমরানের বাড়ি থেকে ফোন আসলো মা অসুস্থো গ্রামের বাড়ি যেতে হবে।
যাওয়ার দিনে নন্দিতাও আসলো ট্রেনে তুলে দিতে কেন জানি নন্দিতাকে ছেড়ে যেতে মন চাইছিলো না।
এদিকে বাড়ি না গেলেও নয় দোটানার মধ্য পরে গেছিলাম।
একটা ভয় কাজ করছিলো হয়তো নন্দিতাকে হারানোর ভয়।
বাড়ী পৌছাতে সন্ধা হয়ে গেলো, বাড়ি যেয়ে শুনি মাকে হাসপাতালে ভর্তি করছে।
হটাৎ করেই মাথাঘুরে পরে গিয়েছিলো নাকি।
তাই হাসপাতালের দিকে ছুটলাম অবশেষে ৩ দিন পর মাকে বাড়ি নিয়ে আসলাম হাসপাতাল থেকে।
ব্যস্ততার কারনে এই ৩ দিন নন্দিতার সাথে কথা হয়নি আর ফোনটাও বন্ধ ছিলো চার্জ না থাকাই তাই নন্দিতাকে ফোন দিলাম কিন্তু বন্ধ দেখাচ্ছে।
চিন্তা যেন বারতে লাগলো কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
তাই পরদিন সকালের ট্রেনে চলে আসলাম কিন্তু এসেও নন্দিতার কোন খোজ পাচ্ছি না।
তাই কলেজে এসে নন্দিতার কাজিন রিধিকে ধরলাম জানার জন্য।
কিন্তু যা শুনলাম তা শুনে যেন আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো।
নন্দিতার বাবার বিজনেস পার্টনার সাথে শত্রুতার কারনে নন্দিতাকে তারা অপহরন করে এবং মোটা অংকের টাকা চেয়ে বসে।
নন্দিতার বাবা টাকা দিতে রাজি হয় কিন্তু তার পরদিন সকালে বস্তাবন্দি নন্দিতার লাস পাওয়া যায় নদীর ধারে।
সব কিছু যেন মুহূর্তের মাঝে থেমে যায় ইমরানের।
সব কিছু কেমন যেন আপছা হয়ে আসছে।
প্রিয় মানুষটাকে এতো কাছে পেয়ে, এভাবে হারিয়ে যাবে মানতেই পারছি না ।
রিধির মাধ্যমেই জানতে পারি নন্দিতার খুনির নাম।
প্রমানের অভাবে পুলিশও নাকি খুনি আদনান আহমেদ আর তার বন্ধু রিসবকে ছেড়ে দেয় পরের দিন।

নন্দিতাকে ছাড়া যেন জীবনটাকে মূল্যহীন মনে হচ্ছিলো কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না…….

নন্দিতা আর নেই রাতে ঘুমাতেও পারতাম না সব যায়গায় নন্দিতার ছায়াই ভেসে উঠতো।
শপথ করি নন্দিতাকে যারা খুন করছে তাদেরো এই পৃথিবীতে থাকতে দিবো না।

আদনান আর রিসব এর সকাল থেকে রাত পযন্ত সব কাজের উপর দূর থেকে নজর রাখা শুরু করলাম।
যতো দূর জানলাম আদনান আর রিসব নাইট ক্লাবে থেকে রাত ২ টার দিকে ড্রিং করে নিজ গাড়িতে করে বাড়ি ফেরে।
তাই ওর ড্রাইভারকে কিডনাপ করি আগে তারপর কল দিয়ে বলতে বলি ড্রাইভারের বউ অসুস্থ তাকে হাসপাতালে যেতে হবে।

তাই ড্রাইভারের পরিচিতো একজনকে পাঠাচ্ছে আর সেই তাদের বাসাই পৌছে দিবে, আদনান ও টোপটা গিলে ফেলে সন্দেহো না করে।
মাতাল অবস্থায় আদনান আর রিসাব গাড়িতেই ঘুমিয়ে পরে।
ওদের নিয়ে শহর থেকে দূরে একটা পুরাতন গ্যারেজে নিয়ে যাই। যেখানে থেকে দূর দুরান্তে মানুষের বসতি নেই।

যেয়েই ছিকোল দিয়ে বেধে ফেলি দুই মানুষ রুপি কুত্তাকে।
এরপর কেরোসিন ছিটিয়ে দেই দুটো উপর। অল্প হুসে ফেরে আদনান আর রিসব।
আদনান:আমাদের এখানে নিয়ে এসছিস কেন, কে তুই?
ইমরান: আমি কে সেটা না জানলেও চলবে, নন্দিতাকে তো চিনিস?? কি ভাবছিস প্রমান নেই বলে এতো সহজেই বেচে যাবি।
রিসব: আমরা নন্দিতাকে মারতে চাইনি, আমরা নন্দিতার বাবাকে উচিৎ শিক্ষা দিতে চাইছিলাম কিন্তু,….

নন্দিতা আমাদের কন্ঠ কিভাবে যেন চিনে ফেলে……………,

তাই বালিশ চাপা দিয়ে নিশ্বাস আটকে আদনান ওকে মরে ফেলে, আমাকে ছেড়ে দাও আমি কিছু করিনি।
ইমরান: এতো সহজেই মেরে দিলি। দেখ তাহলে মৃত্যুকে কাছে থেকে দেখতে কেমন লাগে এই বলেই লাইটারটা জ্বালিয়ে ওদের দিকে ছুড়ে মারলাম।

যতোটা কষ্ট আমার নন্দিতা পেয়েছিলো তোরা কেন তা পাবি না। সেদিন রাতেই পুলিশের কাছে যেয়ে আত্তসমার্পন করি।

আজ আমার ফাসি, এই সাদাকালো জীবনকে বিদায় দেয়ার সময়টা চলে এসেছে। হয়তো মুছে যাবে এমনি করে নন্দিতা আর ইমরানের অধ্যায়।
হরিয়ে যাবে কালের ঘূর্নিপাকে। ফেলে যাওয়া সৃতি গুলো আবার পিছ ফিরে বলবে এর শেষ কোথায়।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত