প্রায় ১ মাস হলো এই বাসাটাতে উঠেছে সিমরানরা । আসলে সিমরানের বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা।
“তাই কিছুদিন পর পর বদলি হন। সিমরান হোস্টেলে থেকে পোড়াশোনা করে। ১৫ দিন আগে ছুটিতে এই বাসায় এসেছে।
“প্রথম যেদিন এই বাসায় এসেছিলো সেদিন বিকালে সে সিয়ামকে দেখেছিলো। সিমরান তার বাবাকে জিজ্ঞেস করায় তার বাবা তাকে বলেছিলো… ছেলেটার নাম সিয়াম।খুবই অহংকারী অভদ্র একটা ছেলে। সালাম দেয়া তো দূরের কথা, একদিন কথা বলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কথাই বলেনি। তুই কিন্তু সাবধানে থাকবি। এসব ছেলেদের কথা বলা যায় না।
“সব শুনে সিমরানের মনে ছেলেটার প্রতি রাগ জন্মালো।
“যে সিমরানের জন্য পুরো কলেজ পাগল সেই সিমরানের দিকে সে ফিরেও তাকায় না। ছেলেটাকে একটা শিক্ষা দেয়ার দরকার।
“রনি…ধনী পরিবারের ছেলে হয়েও খুব গরীব। কারন তার মা নেই। তবে সৎ মা আছে, যে কিনা তাকে দুচোখে দেখতে পারেনা।
“আর সৎ মা কে বিয়ে করার পর বাবাও হয়েছে সেরকম।
“তবে তার সৎ মার একটা মেয়ে আছে। যে কিনা সিয়াম বলতে পাগল । ভীষন ভালোবাসে এই মেয়েটা সিয়ামকে। সিয়াম ও অনেক ভালো বাসে ছোট বোন কে তাই অনিচ্ছা সত্যেও ছুটি পেলেই ছোট বোনের টানে হোস্টেল থেকে ছুঠে আসে সিয়াম।
“অনেক চিন্তা করে সিমরান একটা বুদ্ধি বের করলো । তবে তার আগে পাখি কে বস করতে হবে । পাখি সিয়ামের ছোট বোন।মেয়েটার বয়স ১০ বছরের মতো হবে।
“খুব বেশি সময় লাগেনি সিমরানের পাখি কে হাত করতে।
—>সিমরান~পাখি আপু, আমাকে একটা হেল্প করবে?
—>পাখি~হ্যাঁ! আপু বলো?
—>সিমরান~তোমার ভাইয়ার কাছ থেকে আমাকে একটা প্রেম পত্র লিখে এনে দেবে? আমি না লিখতে পারিনা।
—>পাখি~ওকে আপু!
—>সিমরান~আর শোন! কারো নাম লিখতে নিষেধ কর।
—>পাখি~আচ্ছা ।
“বলেই চলে গেলো পাখি। সিমরান মনে মনে খুব খুশি হলো। যাক! প্লান টা কাজ করছে।
—>পাখি~ভাইয়া তোমার সাথে কিছু কথা আছে।
—>সিয়াম~হ্যাঁ আপু। বলো?
—>পাখি~একটা প্রেম পত্র লিখে দাও তো। “এই কথা শুনে সিয়াম রিতিমত আকাশ থেকে পড়লো…
—>সিয়াম~তুমি প্রেম পত্র কাকে দিবা।
—>পাখি~আরে না না । আমার জন্য নয় । আমার এক বন্ধুর জন্য।
—>সিয়াম~তা তোমার সেই বন্ধুটা কে শুনি?
—>পাখি~তোমার এতকিছু জানা লাগবে না।
“অত:পর পাখির অনেক জরাজুরিতে হার মেনে চিঠিটা লিখে দিলো সিয়াম।
“পাখি চিঠিটা নিয়েই দৌড় দিলো সিমরানদের ফ্লাটে। তারপর চিঠিটা সিমরানকে দিলো ।
—>সিমরান~আচ্ছা পাখি ! আমাকে তোমার কেমন লাগে?
—>পাখি~খুব ভালো লাগে।
—>সিমরান~আচ্ছা আমি যদি তোমার ভাবি হই?
—>পাখি~তাহলে তো খুব মজা হবে।
—>সিমরান~তাহলে শোন। সন্ধায় যখন তোমাকে বলা হবে যে চিঠিটা কে দিয়েছে, তখন তুমি বলো…যে ভাইয়া দিয়েছে। তাহলে আমি তোমার ভাবি হয়ে যাবো
“বিকেলে সিয়াম একটু হাটতে বের হয়েছিলো । সন্ধায় বাসায় ফিরেই দেখলো সিমরান ও তার বাবা তাদের ফ্লাটে।
“সে আরো দেখলো তার বাবা অনেক রেগে আছে। ভয় পেয়ে গেলো সিয়াম। কারন এত বড় হওয়ার পরও তার বাবা তাকে মারধর করে । ধীরে ধীরে ভীতরে ঢুকলো সিয়াম। তার বাবা জিজ্ঞেস করল…
—>বাবা~কিরে ? কি শুনছি এসব?
—>সিয়াম~কি শুনছো?
—>বাবা~তুই নাকি সিমরান কে চিঠি দিয়েছিস?
—>সিয়াম~আমি ?কই নাতো।
—>বাবা~কি মা সিমরান ! ও নাকি দেয় নি।
“””হঠাৎ করে পাখি বলে উঠলো…
—>পাখি~ভাইয়াই দিয়েছে। ভাইয়া আমাকে চিঠি টা দিয়ে বলল আপুকে দিয়ে আসতে।
“”এই কথা শুনে সিয়াম চুপ হয়ে গেলো । আর কিছু বলতে পারলো না।
“সিয়ামের বাবাকে আরো অনেক কিছু বলে চলে গেলো সিমরান আর সিমরানের বাবা।
“এর পর সিয়ামের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেলো। দরজা বন্ধ করে বেত দিয়ে মারতে লাগলো।
“এরপর সিগারেটের আগুন পিঠে দিতে লাগলো সিয়ামের বাবা। খুব কষ্ট হচ্ছিলো সিয়ামের।
“চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছিলো। কিন্তু সিয়ামের এইসময় মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিলো।
“মা থাকলে হয়তো এতো মার খেতো না। “সারারাত আর ঘুমাতে পারলো না সিয়াম। সকালের দিকে ঘুম পেলো সিয়ামের। “উঠলো সেই বিকেলের দিকে। একেবারে শক্তিহীন লাগছে। কাল রাত থেকে কিছু খাওয়া হয়নি ।
“তারওপর শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা। সে আস্তে আস্তে ছাদে গেলো । ছাদের এক কোনে দাড়াতেই দেখলো সিমরান দাড়িয়ে আছে।
—>সিমরান~কি মিস্টার সিয়াম ? দেখলেন তো অহংকারীর পতন। এর পর যেন আর আমার সামনে না দেখি।
“”সিয়াম কিছু না বলেই নেমে আসতে যাচ্ছিলো। এমন সময় সিমরানের বাবা ছাদে ঢুকলো। সিয়াম কে দেখেই তিনি রেগে গেলেন।
—>সিমরানের বাবা~এই ছেলে তোমার লজ্জা করে না। কালকে এতোকিছু হওয়ার পরও তুমি আবার আসছো ছাদে।
তোমার মতো ছেলেরা পৃথিবীর বোঝা । তোমাদের পৃথিবীতে না থাকাই ভালো। আসলে দোষটা তোমার না। তোমার বাবা মার ।কারন তারা তোমাকে সাঠিক শিক্ষা দেয় নি।
—>সিয়াম~দিয়েছে স্যার। এই দেখুন। বলেই তার সার্ট খুলে ফেললো।
—>সিয়াম~আমার পিঠের প্রত্যেকটা দাগ বলে দেবে আমি কি পরিমান গ্রজুয়েট।
“”পিঠের দিকে তাকাতেই আৎকে উঠলেন সিমরান এবং তার বাবা। পিঠে অনেক দাগ। রক্ত জমাট বেধে কালো বর্ণ ধারণ করেছে।
“”এরপর সিয়াম শার্ট উঠিয়ে চলে গেলো। সন্ধায় বাসায় ফিরেই দরজা বন্ধ করে শুয়ে রইলো সিয়াম~
“”এর মধ্যে অনেক সময় পাখি দরজা ধাক্কিয়ে সরি বলে কান্না কাটি করেছে। কিন্তু সিয়াম দরজা খোলেনি । এটা তার রাগ নয়, অভিমান।
“””রাত প্রায় ১২.০০ টা । সিয়াম আস্তে করে বিছানা থেকে উঠে ড্রয়ার খুললো । ব্লেড টা বের করে মেঝেতে বসে ভাবতে লাগলো ।
“”সত্যিই তো , আমার মতো অনাথ রা পৃখিবীর বোঝা।
“”তাই আমাদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। কোনো অধিকার নেই। সজোরে ব্লেডটা চালিয়ে দিলো নিজের হাতে। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটতে লাগলো।
“”আজ কেন জানি তার কষ্ট হচ্ছেনা। তবে কার কথা যেন বার বার মনে পড়ছে। হ্যা! পাখির কথা।পাখিকে যে অনেক ভালোবাসে সিয়াম…
“”ও তো অনেক কান্না করছিলো। ওকে কেন জানি খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। সিয়াম উঠতে চাইতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।
“”শরীর টা অবশ হয়ে আসছে। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। মাথাটা শুধু তলিয়ে যাচ্ছে পাতাল পুরির দিকে। (((-আজ প্রায় এক বছর হয়ে গেছে সিয়াম মারা যাওয়ার-))) সিমরান এখন পাগলা গারদে। (-ও যে অনেক অন্যায় করেছে সিয়ামের সাথে…অনেক বড় ভুল করে ফেলছে সিয়ামের সাথে-) সিয়াম মারা যাওয়ায় পাগল হয়ে গেছে সিমরান এখনও মাঝে মাঝে অনেক রাতে একটা কবরের পাশে কারো আর্তনাথ পাওয়া যায়। হ্যা! পাখির আর্তনাথপাখি চিৎকার করে বলে
—> ভাইয়া ! কেন এইভাবে চলে গেলে? কেন সরি বলার সুযোগও দিলেনা? কেন একবার ভাবলেনা।তোমার এই ছোট্ট বোন টা তোমায় ছাড়া কিভাবে থাকবে? পাশে দাড়িয়ে নিরবে কাদে এক অসহায় বাবা। (সিয়ামের বাবা) আজ তিনি নিজে শিক্ষা পাচ্ছেন…জিবন শিক্ষা