আমাকে কি তোমার গরু ছাগল বলে মনে হয়??? গরু ছাগল বলে মনে হবে কেনো?? তবে এই ভাবে গলায় টাই বেধে দিচ্ছো কেনো?? আরে তোমাকে বেশ ভালো লাগছে টাই পড়ে। রাখো তোমার ভালো লাগা।আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঠিক আছে তবে খুলে ফেলো।আমিও ড্রেস চেঞ্জ করে নিচ্ছি। ঠিক আছে।
আরে আজব তো।আমি বললাম আর তুমি রাজি হয়ে গেলে বাহিরে যাবে না বলে। এই শোন মহিমা আমি অন্যদের লুতুপুতু করার মতো স্বামী না।আমি তোমাকে বিয়ে করার আগেই বলেছিলাম আমি যেমন তেমন ভাবে বিয়ে করতে পারলে এসো।তাও তুমি চেয়েছো বলে ওয়েস্টার্ন সাজার চেষ্টা করছি। (কথা গুলো আমার অনেক গায়ে লাগল।আমি কিছু না বলে আবিদ এর গলা থেকে টাই টা খুলে নিলাম।আর বললাম।)
আমিও আর কোন দিন ও কোন বিষয়ে তোমাকে জোর করব না।তুমি তোমার মতো থেকো।এখন বললে অনেক কিছুই বলতে হয়। বাট আমি কিছু বলতে চাইছি না।এতে আমাদের মাঝে তিক্ততা বাড়বে বই কমবে না। (ভালোবেসেই বিয়ে করি আমরা।আমার বাড়ির কারো সম্মতি ছিলো না এই বিয়েতে।আবিদ একে তো ভবঘুরে আর উপর এই পৃথিবী তে একা।কিন্তু তখন বুঝতে পারি নি এটা আমি হাজার চেষ্টা করলেও আমি ওর সাথে মানিয়ে নিতে পারব না।) খাবার টেবিলে খাবার বেড়ে আমি আবিদ কে ডাকলাম।আবিদ আসল না।আমি আর ডাকলাম না।রাগ তো শুধু ওর নেই আমার ও কিছুটা হলেও আছে।
আমিও না খেয়েই শুয়ে পড়ি। মাঝ রাতে ঘুম ভাংলে দেখতে পাই যে পাশে আবিদ নেই। ভাবলাম হয়ত ওয়াস রুমে গেছে।কিছুক্ষণ পরে এসে পড়বে।কিন্তু অনেক ক্ষণ হয়ে যাবার পর ও দেখি আবিদ আসছে না।আমি বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াসরুমে গিয়ে দেখি ওয়াস রুমে কেউ নেই।বেলকোনীতে গিয়ে দেখি বেলকোনীতেও কেউ নেই। আমার মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে।এতো রাতে কই যাবে আবিদ।বেলকোনী থেকে রুমে আসতে দেখি যে অঘোরে ঘুমোচ্ছে আবিদ। এই তো কিছুক্ষণ আগেই দেখে গেলাম আবিদ বিছানায় নেই।এখন আবার কই থেকে আসল। আমার মাথা কাজ করছিলো না।
আমি আবিদ কে ডাকলাম,,,, আবিদ আবিদ,,, কি হলো এতো ডাকছো কেনো??? এতোক্ষণ কই ছিলে?? কই ছিলাম মানে? তুমি তো রুমে ছিলে না। এই রাত বিরাতে তোমার কি হইছে পাগলের মতো কি বলছো?? আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম। ওহ আচ্ছা।হয়ত আমার ভুল হয়েছে।ঘুমোও। সকালে উঠে নাস্তা বানিয়ে আবিদ কে ডাকলাম।আবিদ এর সাথে এমন বিহেভ করছি যে কাল রাতে কিছুই হয় নাই।আবিদ বেরিয়ে পড়ল দোকানে।আসলে আবিদ এর জব করতে ভালো লাগে না।ওর পছন্দের কাজ ছবি আকাঁ আর ছবি তোলা। ।
ভালোই কাটছিলো আমাদের সংসার।অন্যদের ভালোবাসার সংসারের থেকে আমাদের সংসার টা একটু অন্যরকম কাটছিলো।কথা কথা আবিদ রেগে যেতো।আর রাগ ভাঙানোর দায়িত্ব ছিলো আমার। ইদানীং আবিদ যেনো কেমন হয়ে গেছে।প্রতিটি ব্যাপারে কেমন যেনো ক্ষুদ ধরে।আগে তো এমন ছিলো না।কিন্তু এখন কি হইছে যে এতো টা চেঞ্জ হয়ে গেছে। কথায় কথায় রাগ করে।আর রাগ ভাঙাতে গেলে উল্টো আরো বেশি মেজাজ দেখায়।কিন্তু আমি তাও হাল ছাড়ি না।যতোক্ষণ নাহ ওর রাগ গলে জল হয় ততক্ষণ ওর পেছনে আঠার মতো লেগে থাকি।
আবিদ এর মুখে এখন শুধু একটা নাম বেশি শুনছি।আবিদ এর নতুন এসিস্টেন। মেয়েটা নাম তানিয়া।আমাদের মাঝে কম কথা হয় কিন্তু এই কথার মধ্যেও আবিদ এর মুখে শুধু তানিয়ার কথা বেশি শুনি।সেদিন রাতের বেলা খাবার টেবিলে বসে আবিদ বলছে,, জানো মহিমা, তানিয়া না আজ দুপুরে আমার জন্য রান্না করেছে।কি এনেছিলো জানো?? ওহ আমিও কেমন বোকা,, তোমাকে না বললে তুমি কিভাবে জানবে কি এনেছ. ডিম ভাজি করে এনেছিলো।জানো সামান্য ডিম ভাজতে গিয়ে হাত গরম তেল ফেলে দিয়েছে।
তুমি ওর হাতে মলম লাগিয়ে দিলেই পারতে। হ্যা দিয়েছি তো।মেয়েটা হাতে গরম তেল ফেলে দিয়েছে অথচ হাতে কোন ওষুধ লাগায় নি।আমি জোর করে হাতে মলম লাগিয়ে দিয়েছি। এই সব কথা শুনলে কোন মেয়ের মাথা ঠিক থাকবে?আমি নিজেকে কন্ট্রোল করলাম।হাত ধুয়ে উঠে গেলাম। মহিমা তুমি তো কিছুই খাও নি।উঠে যাচ্ছো কেনো? পেট ভরে গেছে। কিছুই তো খেলে না।তাহলে কিভাবে পেট ভরে গেলো??? বললাম তো ক্ষিদে নেই তাহলে এতো কথা উঠছে কেনো?? এই ভাবে আমাদের দিন গুলো কাটতে লাগল।একদিন বুঝতে পারলাম আমাদের মধ্যে নতুন অতিথি আসতে চলেছ।
আমি আবিদ কে ফোন দিয়ে আজ একটু তাড়াতাড়ি আসতে বললাম। আমি আবিদ এর পছন্দের আইটেম গুলো রান্না করলাম।ঘরটাকে সুন্দর করে গুছিয়ে নিলাম।নিজেও একটু সাজগোজ করে নিলাম। সন্ধ্যার পর থেকে আবিদ এর জন্য ওয়েট করছি।কিন্তু আবিদ এর আসার কোন নাম নেই।আট টার কিছু পরে কলিং বেল বেজে উঠল।আমি গিয়ে দরজা খুলে দেখি আবিদ এসেছে। আবিদে এর হাতে কিছু গোলাপ ছিলো।আমার হাতে দিলো।কিছু বলল না।গোলাপ গুলো পেয়ে খুব খুশি লাগছিলো।সাথে করে আবিদ রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে এসেছিলো। আমি আবিদ কে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললাম।আর ওর জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। মহিমা এই খাবার গুলো তুমি টেবিলে বেড়ে রাখো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।দুইজন আজ একসাথে খেতে বসব।
আমি আর বলি নি আমি ওর জন্য ওর পছন্দের খাবার রান্না করেছি। দুই জন বসে আছি।আবিদ বলল মহিমা তোমাকে কিছু বলার ছিলো। হ্যা বলো আবিদ। আজ তোমাকে আমি নিজের হাতে খায়িয়ে দিতে চাই। (আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম।আবিদ কখনো এমন ধরনের কথা আমাকে বলে নি।আমার খুশি দেখে কে।) আমি ভাবছি খাওয়ার পড়েই আবিদ কে খুশির খবর টা দেবো। আবিদ আমাকে প্রথম লোকমা খায়িয়ে দিয়ে দ্বিতীয় লোকমা খাওয়াবে তখন বলি আবিদ তুমি খাবে না? হ্যা খাবো তো। কয়েক লোকম খাওয়ার পর আমার গলা থেকে বুকের ভেতর টা জ্বলে যাচ্ছে। আবিদ আমার কেমন জানি লাগছে। কেমন লাগছে? বুকের ভেতর টা জ্বলে যাচ্ছে।
কি বলছো মহিমা?? খুব খারাপ লাগছে কি?? হ্যা আবিদ। আমাকে একটু পানি দাও। আমি এম্বুলেন্স ডাকছি।তুমি একটু ধর্য্য ধরো। আবিদ পানি,,, তখন কলিং বেল বেজে উঠল।আবিদ বলল এম্বুলেন্স এসে গেছে।আমি চোখে সব আবছা দেখতে লাগলাম। মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে লাগল। দরজা খোলার পর দেখি আবিদ তানিয়া কে হাত ধরে নিয়ে আসছে। কি আবিদ তোমার বউ এখনো মরে নি??এতো টা বিষ খাওয়ানোর পরেও এখনো বেচেঁ আছে,,,বাহ। দেখছো না কই মাছের প্রাণ।এতো সহজে কি মরবে নাকি।
আমি অনেক কষ্টে বলছি,, কি এমন করেছিলাম যে এই ভাবে ধোকাঁ দিলে? তানিয়া বলল,, তুমি থাকলে আবিদ আমাকে বিয়ে করতে পারবে নাহ।তাই এই পথে আসতে হলো। মুখে ফেনা জমে গেছে।সারা শরীর যেনো অবশ হয়ে গেছে।কিছু দেখতে পারছি না। আবিদ তুমি বাবা হতে চলেছিলে।তুমি তোমার সন্তান কে নিজের হাতে খুন করলে। কি বললে মহিমা।এই কথা তুমি আগে বলো নি কেনো?? আমি আর কিছু বলতে পারলাম না।আবিদ আর তানিয়ার মাঝ থেকে আমি আর আমার সন্তান চলে গেলাম।