আমি,,,আব্বু আমাকে কেন ডেকেছো
আব্বু,,,বাবা আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে রে
আমি,,,কি হয়ছে খুলে বলো
আব্বু,,,আমাদের ব্যবসায় অনেক লোকসান হয়ছে এইবার। ব্যাংক ও অনেকের কাছে প্রচুর টাকা পরিষদ করতে হবে কিন্তু এখন তো আমার কাছে এই বাড়ি ছাড়া আর কিছুই কিন্তু বাড়ি বিক্রি করলে থাকবো কোথায়। এই কয় টাকা দিয়ে হবেও না। তোর ছোট বোন আছে মা আছে তারা কোথায় থাকবে। আমি এখন কি করব
আমি,,,,টেনশন করো না। কত টাকা???
আব্বু,,,,২৫ লক্ষ টাকা তিন দিনের মধ্যে লাগবে
আমি,,,,নিশ্চুপ। কিছু বলার নেই।( আম্মু আর রুপন্তি কাদছে)
আব্বু,,,,বাবা
আমি,,,,হুম বলো
আব্বু,,,,না মানে কিভাবে যে বলি
আমি,,,সমস্যা নেই বলে ফেলো
আব্বু,,,,রকিব সাহেব আছে না। উনার তোকে খুব পছন্দ উনি বলেছে তুই যদি উনার মেয়েকে বিয়ে করিস তাহলে সব টাকা রকিব সাহেব দিবে। আমি শুধু তোকে বললাম এখন তোর জিবন তুই যা পারিস কর।
আমি,,,,মা,বাবা,রপন্তি আমাদের পরিবার এর কথা ভেবে আমি রাজি হয়ে গেলাম।( যদিও জানি রকিব সাহেবের মেয়েটা কালো)
।
আজ কে আমার বিয়ে হয়ে গেল বিনিময়ে পেলাম টাকা আর আমার চাকরি। আজ বাসর রাত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাত বানোটার সময় রুমে ঢুকলাম
সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ব এমন সময়।
প্রেরনা,,,,দাড়ান(আমার বউ এর নাম প্রেরনা)
আমি,,,,কি হয়ছে(বিরক্তি সহকারে)
প্রেরনা,,,না মানে( ভয় পেয়েছে সালাম করল)
আমি,,,,দেখুন আপনাকে আমি কিছু কথা বলতে চায়
প্রেরনা,,,,ঘাড় নাড়িয়ে হ্যা সুচক জবাব দিলো
আমি,,,,আমি আপনাকে বিয়ে মন থেকে করি নি।
প্রেরনা,,,,চুপ করে আছে( ও হয়তো আগেই আন্দাজ করতে পেরেছে)
আমি,,,,আপনি বলুন কোন দিক দিয়ে আপনি আমার সাথে ম্যাচ করেন
প্রেরনা,,,,না সুচক ইঙ্গিত করলো
আমি,,,,আপনি খাটে সুয়ে পড়ুন আমি সোফায় শুয়ে পড়লাম। সকালে বেলা
প্রেরনা,,,,এই যে উঠেন
আমি,,,,এত ডাকাডাকি করছেন কেন
প্রেরনা,,,,অফিস যাবেন না
আমি,,,,কিছু না বলে উঠে ফ্রেস হয়ে আসলাম তারপর খাওয়া দাওয়া করে অফিস চলে গেলাম। আমি আমার মতো খায় আর ঘুরি প্রেরনা খেলো কি খেলো না এইটা কখোন আমি জিঙ্গাস করি নি। অফিস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গেলাম
সোহান,,,,কি রে তুই বিয়ে করেছিস আমরা জানি না। দাওয়াত দিলি না
আমি,,,,তোরা জানলেও তোদের দাওয়াত দিতাম না
সোহান,,,,চুপ মুখ শুকিয়ে গেছে।
আমি,,,,এটাকে বিয়ে বলে
সোহান,,,,কেন? বিয়ে তো ঠিকই করেছিস
আমি,,,বিয়ে আমি করি নি বিয়েই আমাকে করছে(তারপর সব ওদের বললাম)
সোহান,,,দেখ যা হওয়ার হয়ে গেছে এখন ঝালেমা বাড়িয়ে লাভ নাই তুই মেনে নে আর ভাবি কেই ভালোবাস
আমি,,,,চুপ কর সালা। চার্জার জ্বালিয়ে সকালে বউএর মুখ দেখা লাগে।
সোহান,,,,আরে কালোই তো কিন্তু মনটা খুব ভালো
আমি,,,,তোর তো সুন্দরি বউ। শ্রীজনি তো আছেই যা ওকে ভালবাস এখান থেকে ফোট।
সোহান,,,,না রে তুই কিন্তু ঠিক করছিস না
আমি,,,,আমার জায়গায় তুই থাকলে কি করতি
সোহান,,,,মাথা নিচু করে আছে।
আমি,,,,আচ্ছা চল আজকের মত বাসায় যায়
সোহান,,,,হুমম চল। রাত বারোটা বাসায় চলে আসলাম
প্রেরনা,,,আপনি খাবার রেডি করা আছে
আমি,,,,খেয়ে আসছি
প্রেরনা,,,মুখটা গম্ভির
আমি,,,,শুতে আসেন আমি ঘুমিয়ে গেলাম।(সোফায় ঘুমিয়ে রাত কভার হয়ে যায়। এভাবেই চলে আমাদের সংসার ও আমার পছন্দের জিনিস রান্না করে রাখে আমার জন্য কিন্তু আমি খাই না। রাত জেগে থাকে আমার জন্য আমার কিছু যায় আসে না। একদিন রুপন্তি
রুপন্তি,,,ভাইয়া
আমি,,,হুমম কিউটুস বল( রুপন্তিকে আমি কিউটুস বলে ডাকি)
রপন্তি,,,ভাবির তো জোর আসছে আর তুই এখন বাসায় আসছিস
আমি,,,কই আমাকে তো বলে নি।
রপন্তি,,,তোর বউ আর তোকে বলে নি।
আমি,,,প্রেরনা প্রেরনা(ডাক দিলাম)
প্রেরনা,,,জ্বী
আমি,,,,জ্বর আসছে
প্রেরনা,,,,না মানে একটু
রুপন্তি,,,,না ভাইয়া অনেক জ্বর
আমি,,,আমি ডাক্তার কে ডেকে দিচ্ছি। রুপন্তি তুই প্রেরনার কাছে থাক। তারপর ডাক্তার ঔষধ দিলো কযেকদিনের মধ্যে ভালো হয়ে গেল। একদিন বাবা ডেকে বললেন যে আমাদের নাকি হানিমুন এ যেতে হবে। আমি না করা সত্তেও আমাকে জোর করে পাঠালো। নিরুপায় হয়ে আসলাম। হানিমুন এ আমি সারাদিন ঘুরি আর ও ঘরে বসে টিভি দেখে। আমি বললাম
আমি,,,,প্রেরনা আপনি সারাদিন ঘরের মধ্যে থাকেন
প্রেরনা,,,,এমনি
আমি,,,,চলেন আজ আমার সাথে ঘুরবেন
প্রেরনা,,,,আপনার সাথে আমার যায় না
আমি,,,,এই এত বেশি বোঝেন কেন। I don’t like this.
প্রেরনা,,,আচ্ছা( খুশিই হয়ছে মনে হয়) আজকে রাতে ড্রিংক করে বাড়ি এসেছি একদম বেহুশ। সকাল বেলা উঠলাম বিছানা থেকে
আমি,,,,ভাবছি আমি তো বিছানায় ঘুমায় না
প্রেরনা,,,এই নিন আপনার কফি
আমি,,,লাগবে না।( প্রেরনা কেন লজ্জা পাচ্ছে আর মুচকি হাসছে কেন) রাতের কোন কিছুই মনে নেই। যাক গে আমি ফ্রেস হয়ে বাইরে চলে আসলাম।
প্রেরনা,,,,কিছু খেয়ে যান
আমি,,,,আমি বাইরে খাব আপনি খেয়ে নিয়েন। সারাদিন পর রাতে তাড়াহুড়া করে বাসায় ফিরলাম কারন রাতের ঘটনাটা হঠাৎ মনে পরে গেছে। আমি বাসায় এসে
আমি,,,,প্রেরনা
প্রেরনা,,,,আপনি আসেন খাবার রেডি
আমি,,,,গতকালকের রাতের জন্য আমি সরি
প্রেরনা,,,,মানে
আমি,,,,দেখেন কালকের রাতে আমি ড্রিংক করে এসেছিলাম আমার হুশ ছিলো না যা হয়েছে ভুল করে আমাকে প্লিজ ক্ষমা করবেন।
প্রেরনা,,,,নিশ্চুপ।
রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে উঠে দেখি টেবিলে ঘড়ির নিচে চিঠি। ” আপনি আমার সাথে যা করেছেন ভুল করে তাহলে তো এখন আমি অসতি মেয়ে। আপনার বউ হওয়ার মুলধন আমার কাছে আর নেই। তাই আমি চলে যাচ্ছি। ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিবেন” ইতি প্রেরনা। চিঠিটা পড়ে খুব খুব খারাপ লাগল দোষটা তো আমার ই। সারা বাড়ি খুজলাম প্রেরনাকে কোথাও পেলাম না। একমাস হয়ে গেছে প্রেরনা ওর বাবার বাসায়। এখন প্রেরনাকে খুব মিস করি। রুপন্তিও জিঙ্গাস করে ভাবি কেন বাপের বাড়ি গেছে আসে না কেন। উত্তর নেই আমার কাছে। থাকলেও উত্তর টা দিতে পারি না। একদিন আমি বসে আছি লেকের ধারে। হটাত একদিন প্রেরনার বাবা ফোনে বললেন যে প্রেরনা নাকি মা হতে চলেছে। আমার ও খুব খুশি লাগছিল কিন্তু উপায় নেই তো। একদিন লেকের ধারে বসে আছি লক্ষ করছি একজোড়া কাপল কে তারা হয়ত স্বামি স্ত্রী তাদের একটা ছোট মেয়েও আছে তাদের দুষ্টুমি গুলো দেখে আমার খুব বাবা হতে ইচ্ছা করছে। কেউ একজন আমাকে পাপা বলে ডাকবে। আমি মামনি বলে ডাকব। আর এইটা একজনই পারে সে হচ্ছে প্রেরনা। রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি প্রেরনার প্রতি অনেক অন্যায় করেছি কিন্তু ও তো মানুষ ই কালো হওয়াতে ওর তো কোন হাত নেই সবই তো ওপরয়ালার ইচ্ছা। হয়ত তার ইচ্ছাতেই আমাদের বিয়ে হয়েছে। নাহহহ ওকে আর কষ্ট দিব না। ওকে এখন থেকে অনেক ভালোবাসব। সকালে ঘুম থেকে উঠে চলে গেলাম প্রেরনাদের বাড়িতে। কলিংবেল চাপলাম রকিব সাহেব খুলে দিলেন।
রকিব সাহেব(শশুর),,,,,কেমন আছো বাবা কতদিন পরে আসলে
আমি,,,,ভালো আছি। প্রেরনা আর বাড়ির সবাই ভালো আছে।
শশুরআব্বা,,,হুমমম। কিন্তু প্রেরনার সাথে কি তোমার কিছু হয়ছে সারাদিন চুপচাপ থাকে
আমি,,,,না। আচ্ছা প্রেরনা কোথায়
শশুরমশাই,,,যাও ছাদে ঘরেই আছে। আমি গিয়ে দেখলাম টিভ দেখছে। আগের চেয়ে অনেক শুকিয়ে গেছে।
আমি,,,প্রেরনা
প্রেরনন,,,অবাক হয়ে তাকিয়ে
আমি,,,,কি হলো
প্রেরনা,,,আপনি কেন এসেছেন এখানে
আমি,,,তোমার কাছে
প্রেরনা,,,, হাসছে
আমি,,,হাসছো কেন
প্রেরনা,,,না মানে আপনি এই প্রথম তুমি করে বললেন তাই
আমি,,,কেন বলতে পারি না
প্রেরনা,,,নাহহহ। এখানে কেন এসেছেন তুমি আমার বউ এখানে আমি আসতেই পারি। আর তুমি করে বলতেই পারি।
প্রেরনা,,,,আপনাকে তো আমি বলেছি আপনার বউ হওয়ার মুলধন আমি হারিয়ে ফেলেছি। কেউ একজন ভুলে করে আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। আপনি চলে যান আপনাকে দেওয়ার মতো আমার কিছুই নেই।
আমি,,,,প্রেরনা প্লিজ এভাবে বলবে না। আমাকে মাফ করে দাও
প্রেরনা,,,,মাফ অনেক আগেই করে দিয়েছি। আপনি চলে যান।
আমি,,,,প্লিজ প্রেরনা ফিরে চলো আমি তোমাকে আমার বউয়ের অধিকার দিতে চায়।
প্রেরনা,,,,করুনা করছেন সেটা আমার লাগবে না।
আমি,,,,আমি সত্যি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি প্লিজ ফিরে চলো। আমাকে একটা সুযোগ দেও
প্রেরনা,,,,আমার কাছে কিছুই নেই যা আপনাকে দিব। হারিয়ে ফেলেছি।
আমি,,,আমরা আমাদের সন্তান কে নিয়ে অনেক ভালো থাকব চলো প্লিজ।
প্রেরনা,,,,ওহ বুঝেছি আপনার সমস্যা হচ্ছে আপনার ডিভোর্স লাগবে আপনি ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েন আমি সই করে দিব।
আমি,,,(রাগ হয়ে গেল) ঠাসসসসস
প্রেরনা,,,চলে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি,,,সরি খুব লেগেছে না। প্লিজ চলো।
প্রেরনা,,,,না লাগে নি। আর আপনি আমাকে মেরে ফেললেও যাবো না।
আমি,,,নিরুপায় হয়ে সেদিন ওদের বাসা থেকে কাউকে না বলে চলে আসলাম। এখন আর কিছুই ভালো লাগে না প্রেরনাকে ছাড়া।
রুপন্তি,,,,কি রে ভাইয়া আজ সারাদিন কিছু খাস নি কেন
আমি,,,,না রে খাবো না। তোর ভাবির কথা খুব মনে পড়ছে
রুপন্তি,,,ভাবি আসলো না কেন।
আমি,,,জানি না রে। কিছুতেই আসলো না। তুই খা আমি খাবো না। রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে অনুভব করলাম কেউ একজন বুকের ওপর ঘুমিয়ে আছে। খেয়াল করলাম এটা প্রেরনা। ও কখন আসলো। আমি ওকে জাগালাম না আবার সুয়ে পড়লাম। সকালে উঠে দেখি প্রেরনা ডাকছে
প্রেরনা,,,,এই যে উঠুন
আমি,,,হুমম কিন্তু তুমি কখন আসলে
প্রেরনা,,,,এইতো রাতে
আমি,,,,এত রাতে আসলে কেন
প্রেরনা,,,,আপনি নাকি না খেয়ে আছেন
আমি,,,,কে বলল
প্রেরনা,,,,রুপন্তি
আমি,,,ওহহহ
প্রেরনা,,,আপনি ফ্রেস হন আমি খাবার দিচ্ছি।
আমি,,,,প্রেরনা চলে যেতে লাগল আমি একটা টান দিয় জরিয়ে ধরলাম
প্রেরনা,,,,এই কি করছেন ছাড়ুন
আমি,,,কেন আমার বউকে আমি জরিয়ে ধরেছি
প্রেরনা,,,রুপন্তি এসে পড়বে
আমি,,,,কি হয়ছে তাতে
প্রেরনা,,,,লজ্জা নেই আপনার
আমি,,,না নেই
প্রেরনা,,,এখন এতো আপনার ভালোবাসা কোথায় থেকে আসছে মি.
আমি,,,(বুকে হাত দিয়ে) এখান থেকে। আর তুমি আমাকে তুমি করে বলবে।
প্রেরনা,,,কাদছে
আমি,,,এই কাদছো কেন
প্রেরনা,,,,এভাবে সারাজিবন ভালোবাসবে তো। দুরে সরিয়ে দিবে না তো।
আমি,,,,না পাগলি না।(জরিয়ে ধরে)। এমন সময় দরজায় নক তাকিয়ে দেখি রুপন্তি। প্রেরনা লজ্জা পেয়ে চলে গেল।
রুপন্তি,,,,অসময়ে আসলাম বুঝি যায়
আমি,,,রুপন্তি
রুপন্তি,,,,কি
আমি,,,তোর ভাবির খেয়াল রাখিস তোর ভাতিজা আসবে তো।
রুপন্তি,,,ওয়াও ভাইয়া তুমি টেনশন করো না ভাবি কে কোন কাজ করতে দিব না। তারপর অফিস চলে আসলাম। কিছুদিন পর আমাদের ঘর আলো করে আসলো এক মিষ্টি রাজ কন্যা।
সমাপ্ত