ইরা একটু শুনবা। আচ্ছা তোমার কী আর কোন কাজ নেই আমার পিছনে পড়ে থাকা ছাড়া। না মানে আছে। তো নিজের কাজে যাও, আমার তো মনে হয় না আমার সাথে তোমার কোন কাজ থাকতে পারে আজব। আচ্ছা ঠিক আছে। দূর আজকে ও বলতে পারলাম না আর বলবোই বা কেমন করে, ইরা তো আমাকে দেখলেই রেগে যায়, আমি ও কেমন বেহায়ার মতোই তার পিছনে ঘুরি। আমি সাহরিয়া কলেজে পড়ি, নম্র ভদ্র চোখে চশমা পড়া একটা ছেলে সবাই সবার সাথে মিশলে ও আমার সাথে তেমন কেউ মিশে না এখানে সবার বাবার অনেক টাকা শুধু আমার বাবা ছাড়া তাই হয়তো কেউ আমার সাথে মিশে না। ইরা আর আমি একই সাথে পড়ি, প্রথম যেদিন ওকে দেখেছিলাম সেদিন থেকেই ভালো লাগতো ওকে।
আর এক বছর ধরে ওকে একটা কথা বলতে চাচ্ছি। কিন্তুু আমার জন্য ওর একটা মিনিট ও সময় হয় না, হবেই বা কেমন করে ও কত স্মার্ট অনেক বন্ধু আছে। আর কত ছেলে ওর পিছনে লাইন দিয়ে আছে। আমি তো ওই সব ছেলেদের কাছে কিছুই না। সেদিনের মতো বাসাই গেলাম আর রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি, আচ্ছা আমি কী দেখতে এতটাই খারাপ যে আমাকে দেখলেই ইরা এমনটা রেগে যায় কেন, আর এই এক বছরে একটা বার ও আমার সাথে ভালো করে কথা বলে নাই। দূর যাই হোক মনের কথাটা বলে দিতে পাড়লেই চলবে। পরের দিন সকালে একটা গোলাপ কিনে পকেটে রাখলাম, মনে মনে ভাবলাম আজকে বলবোই। কলেজে যেতেই দেখলাম ইরা আর কয়টা ছেলে এক সাথে হাঁসাহাঁসি করছে ওদিকে একবার তাঁকিয়ে চলে আসলাম, না এখন ওর সু্ন্দর মুহূর্তটা আমি নষ্ট করতে চাই না, পড়ে না হয় বলবো। ক্লাস শেষ করে বাহিরে এসে দেখলাম, ইরা ফোন টিপছে। ইরা তোমার সাথে কী একটা মিনিট কথা বলা যাবে।
ঐ দেখছিস না একটা কাজ করছি সব সময় বিরক্ত করতে চলে আসবে। আচ্ছা ঠিক আছে, এখন মনে হয় তোমার মন ভালো নেই আমি পরে বলবোনি কেমন। দূরররর। বলে চলে গেলো একটু দূরে রাফি ছিলো দেখলাম ওর সাথে বেশ ভালো করেই কথা বলতেছে। ওই সময়টাতে খুব খারাপ লাগছিলো, মনে হয় চিৎকার করে কেঁদে বলি ইরা তোমাকে আমি ভালোবাসি তবে আমি পারিনি চোখের পানিটা আড়াল করে চলে এসে ছিলাম। পরের দিন সকাল হতেই সব ভুলে যাই এতটাই বেহায়া ছিলাম আমি কলেজে যেতেই দেখলাম ইরা সবাইকে বলছে। আজকে আমি খুব হ্যাপি। তাই ভাবলাম আজকে হয়তো মনের কথাটা বলতে পারবো। ওর পছন্দের কদম ফুল নিয়ে… ইরা কে বললাম, ইরা তোমার একটা মিনিট সময় হবে, একটা কথা বলতাম। এই তোরা একটা থাক আমি আসছি হুমমমমম কী কথা। কদম গুলো এগিয়ে দিয়ে বললাম ইরা আমি তোমাকে ভালোবাসি সেই প্রথম দিন থেকে।
হঠাৎ সজোরে একটা চর দিলে ফকিন্নির বাচ্চা হয়ে এই দুইটাকার ফুল নিয়ে আমাকে ভালোবাসতে আসছিস, আমি আগে থেকেই জানতাম এমনটাই বলবি, আর জীবনে যদি আমার সাথে কথা বলতে আসছি তখন দেখবি। কী হয়েছেরে ইরা। আর বলিস না.. ফকিন্নির বাচ্চাটা দুই টাকার কদম ফুল দিয়ে বলে কী না আমাকে ভালো বাসে। হা হা হা কদম ফুল। সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম, ইরার বন্ধুদের হাঁসাহাঁসি আর ইরার ওমন কথাই আমাকে পাল্টে দিয়ে ছিলো সেদিন দুইটা কথাই ভালছিলাম, গবির ঘরে কেনো জন্ম নিছিলাম, আর জীবনে অনেক টাকা চাই আমার বাপের নাই তো কী হয়েছে আমার হবে অনেক টাকা। সেদিন বাসাই এসে শেষ কান্নাটা কেঁদেছিলাম আর ভাবছিলাম আমার নিজেকে বদলাতে হবে পুরোটাই বদলাতে হবে। সেদিনের পরে থেকে আর ইরার সামনে যাইনি মনে হয় ভালোই আছ। হঠাৎ একদিন কলেজে হিপ হপ ড্যান্স প্রোগ্রাম হয় সেখানে অনেক বড় বড় মানুষ এসে ছিলো। আমি আগে থেকেই অনেক ভালো হিপ হপ ড্যান্স পারি।
সেদিন মনে বিরুদ্ধেই সেখানে অংশ নেই আর সেদিন সবার সেরা ছিলাম আমি সবাই অনেক অবাক ও হয়েছিলো এর মধ্যেই বড় এক জন মানুষ ছিলো ইবরাহিম স্যার তিনি আমাকে দেশের সব থেকে বড় হিপ হপ ড্যান্স কম্পিটিশন এ সুযোগ করে দেই আর ওখান থেকেই লাইফটা পুরো চেঞ্জ এখন আমি নামকরা বড় একজন ড্যান্সার এখন একটা দুইটা না অনেক মেয়ে আমার পিছনে ঘুরে পড়াশুনা করতে হবে তাই এক বছর পরে আবার কলেজে গেলাম, এখন অনেক নাম করা কলেজ এ আমি চাইলেই ভর্তি হতে পারি। কিন্তুু না ওই কলেজেই আমি পড়বো যেখানে সবাই আমাকে ধিক্কার দিছিলো। কলেজে যেতেই তুলকালাম কান্ড, সকল ছেলে মেয়ে হুরমুরিয়ে আসছে আমার দিকে, ভাইয়া একটা সেলফি একটা সেলফি। পিনসিপাল স্যার হাত ধরে তাঁর রুমে নিয়ে গিয়ে বসতে দিলো। সাহরিয়া বাবা তুমি হঠাৎ কলেজে কেনো। স্যার আমি আবার ভর্তি হতে চাই আমার আগের ব্যাচের সাথে।
তুমি তো চাইলে আরো বড় কলেজে ভর্তি হতে পারো। না না এটাই আমার কলেজ এখানেই আমি পড়বো, আপনি হেল্প করবেন কী না বলেন। তুমি আমার কলেজের গর্ব, কালকে থেকেই আসতে পারো। ওকে স্যার.. এখন যাই। আরে যাবি তো,,, যেতে যেতে একটা সেলফি দিয়ে যা। কী যে বলেন না স্যার। পায়ে নারে আমার বুকে আয় তোর মতো একটা ছাত্র পেয়েছিলাম সেটা আমার গর্ব আমি সবাইকে বুক ফুলিয়ে বলি সাহরিয়া আমার ছাত্র। সেদিন আমার ও বুকটা ভরে গেছিলো কান্না চলে আসছিলো। তারপরে বাসাই গেলাম, বাড়িটা আর আগের মতো নেই অনেক বড় বাড়ি আমার, তবে আমি সেই আগে বাসাই যাচ্ছি কারণ কালকে থেকে আবার সেই আগের সাহরিয়া হয়ে যাবো। পরেরদির সকালে ব্যাগটা নিয়ে হেঁটে হেঁটে কলেজে যাচ্ছি সব কিছু আগের মতোই লাগছে কিন্তুু এখন আমার সাথে অনেক ছাত্র,সবার মুখে একটাই নাম সাহরিয়া কিন্তুু আমাকে আবহেলা করতো সেই ইরাটা কই। হঠাৎ কে যেনো বললো ভাইয়া কোন ইরার কথা বলছেন। কেনো কয়টা ইরা আছে। একটাই তো,, তবে ও তো পাগলি। হোয়াট পাগলি মানে।
আমরা এতো কিছু যানি না তবে, ইরা নামের একটা পাগলি মেয়ে ঐ কদম গাছের নিচে বসে থাকে, আর মাঝে মাঝে সাহরিয়া আমাকে মাফ করে দাও বলে বলে চিৎকার করে। দৌড়ে রাফির কাছে গেলাম। রাফি ইরার কী হয়েছে। সাহরিয়া তুই হয়তো আসল কথাটা জানিস না ইরা তোকে আগে থেকেই ভালোবাসতো তবে তোর সাথে এমন করতো যাতে তুই একটু স্মার্ট হইতে পারিস,,,, সেদিন তোকে ঐ কথা গুলো বলার পরে ও অনেক কেঁদেছিলো তাঁর পরে ও তোর কাছে অনেক যেতে চেষ্টা করেছে তবে সেটা আর হয়ে উঠেনি, একটা একসিডেন্ট এ ও মানসিক ভাবে আঘাত পায়, আর এখন ও সব সময় কদম গাছটার নিচে বসে থাকে।
সেই কদম গাছটার কাছে গেলাম, একটু খুঁজতেই পেয়ে গেলাম, আগে যেমন কিউট ছিলো ওমনটাই আছে তবে একটু চিকন আর কালো হয়ে গেছে। ইরা তোমার সাথে একটা কথা ছিলো। দেখলাম ও কেমন চমকে উঠলো। শুধু আমার দিকে চেয়ে আছে। আচ্ছা ওকে আমি তো ফকি এমন সময় হাতটা চেঁপে ধরলো। কিছুই বলতে পাড়ছে না, গাছ থেকে কয়টা কদম পেরে ওর সামনে দিয়ে বললাম, আমাকে একটু ভালোবাসবা। হঠাৎ পাগলিটা কেঁদে উঠলো, শুধু বলতে লাগলো সাহরিয়া সাহরিয়া। এখানে আসার আগে ভাবছিলাম ইরার উপরে আগের প্রতিশোধটা নিবো।
কিন্তুু এখন আর কিছু না ভেঁবে পাগলিটাকে জরিয়ে ধরলাম, ও শুধু কাঁপছিলো আর কাঁদছিলো ওর বুকের সাথে আমার বুকটা লেগে থাকাই বুঝতে পাড়ছিলাম ওর হৃদস্পন্দনটা বেড়ে গেছিলো মনে হয় এতদিন আমার অপেক্ষাই ছিলো পাগলিটা তখন আরো জোরে জরিয়ে ধরে বললাম কখনো ছেঁড়ে যাবে নারে পাগলি তোকে। ইরার কান্নাটা আরো বেড়ে গেলো এটা হয়তো কাউকে পাওয়ার কান্না।।
সমাপ্ত