একাকীত্বর জীবন

একাকীত্বর জীবন

– হ্যালো (আমি)
– কি খবর কেমন আছো? (জুমা)
– এইতো ভালো। কে আপনি?
– এতটাই পর হয়ে গেলাম যে এখন আর আমাকে চিনতেও পারতাছো না?
-পারছি না বললে ভুল হবে, তবে চেনার চেষ্টা করছি না।
– ভালো, তা কি খবর তোর? অনেক দিন যাবত ক্যাম্পাসে দেখা যাচ্ছে না।
– এমনিতেই, ক্যাম্পাস টা মনে হয় আমার জন্যে না, বেশ অপরিচিত মনে হয় ইদানীং।
– তা কোথায় আছো?
– জানি না, হয়তো বাংলাদেশই আছি। তবে মানুষ এর দৃষ্টির অগোচরে
– আমি কেমন আছি জানতে চাইবি বা?
– ইচ্ছা ছিল না, তাও যখন বলতে চেয়েছ, বল তাহলে কেমন আছো?
– সত্যি বলবো?
– হ্যা।
– বেচে আছি এইটা সত্যি, কিন্তু কেমন আছি তা জানি না।
– মানে কি?
– কিছু না।
– নবীন সত্যি কি তুই আমায় ভুলে গেছো?
– দেখ জুমা আমি তোরে ভুলি নাই, তুই নিজেই আমায় ভুলে গেছো দুরে ঠেলে দিয়েছ আমায়।
বাদ দে, ফোন রাখবো আমি।
– কি করবি এখন?
– এইতো কিছু না, সিগারেট এর দোয়া উড়াবো।
– নবীন একটা অনুরোধ করবো?
– হুম
– রাখবি?
– রাখার হলে রাখবো।
– তুই আর সিগারেট খাস না পিলিজ।
– পারলাম না রাখতে, ভালো থাক।
জুমা আমার সব থেকে কাছের বান্ধবী, যখন আমি অস্টম শ্রেণীতে পরি তখন থেকে ওর সাথে পরিচয়, আমরা একি স্কুলে পরতাম।

ওর সাথে কথা হওয়ার প্রথম দিন টা আমার জন্যে কষ্টের হলেও বেশ মজার ছিলো।
প্রথম দেখায়ি ওকে দেখে কেমন যেনো একটা ভালো লাগা কাজ করছিলো।
কিন্তু কখনো বলা হয় নাই।
যখন স্কুলে পরতাম তখন বলতে গেলে প্রতিদিনই ওর সাথে ঝগড়া হতো।
দুজনের সমর্পক ছিলো সাপ আর বেজি, কখনওই মিলতো না আমাদের।
তবে প্রথম থেকেই আমার প্রতি জুমার অনেক দরদ ছিলো।
স্কুল লেভেলে থাকা কালিন সময় আমাদের তেমন ভালো কোনো সমর্পক ছিল না।
এস এস সি পরিক্ষা দিয়ে রেজাল্ট পাওয়ার আগ মুহূর্তের সময় টায় কোনো দেখা না থাকায় জুমাকে অনেক ফিল করি।
আমাদের কখনও ফোনে কথা হয় নাই।
আমাদের দুজনের নম্বরই দুজনের কাছে ছিল। কিন্তু কখনও ফোন করা হয়ে ওঠে নি।
ও এক দিন আমায় এস এম এস করছিলো মিচ ইউ লিখে।
তার পর থেকেই আমাদের প্রতিনিয়ত কথা বলা শুরু হয় যা অনার্স প্রথম বর্ষ অব্ধি চলছে।।
আমি সব সময় ওকে খুব আপন ভাবতাম। এক সঙ্গে ৫টা বছর কাটিয়ে দিলাম। কখনযে ৫টা বছর কেটে গেল টেরই পেলাম না।
এই ৫টা বছরে আমি কখনো কোনো রিলেশন করিনি।। জুমাও করে নি।
আমরা অনেক হ্যাপি ছিলম।
জুমা আমাকে ভালবাসতো কিন্তু কখনো বুজতে দেয় নি। আমি কোনো মেয়েদের দিকে তাকালে ও অনেক অভিমান করতো।
একদিন খুব সকালেই জুমার ফোন।
– নবীন আজ একটু তারাতারি ক্যাম্পাসে আয়তো খুব দরকার আছে।
– ওকে আসতাছি।
তারাতারি ফ্রেশ হয়ে ক্যাম্পাসে চলে গেলাম।
– তোর আসতে এতো সময় লাগে?? না আসলেও হতো।
– সরি সরি, এত রাগ করো ক্যান? মেয়েদের এতো রাগ মানায় না।
– লেকচার থামা, আমি চলে যাবো।
– আরে ধরে রাখছে কে? জা! তবে যাওয়ার আগে কথা গুলা বলে যা।
– নবীন আমার আর তোর সাথে দেখা হবে না, কথা ও হবে না। আমি আর এই ক্যাম্পাসে আসবো না।
– মানে কি?? কি বলছিস এ সব??
– ঠিকি বলছি। আর কথা হবে না।
– পাগল হয়ে গেছিস নাকি?? আমি কি করে থাকব??
– এখন যেভাবে আছো তেমনি থাকবি।
– পছিবেল না। আমি মরে যাবো। তুই ছারা আমায় আর কেউ বুজতে চায় না, আর কেউ নাই আমার, আমি পাগল হয়ে যাবো তোকে ছারা।
– ক্যানা পাগল হবি? আমি তোর কে হই??
– কে হও তা জানি না তবে তোকে ছারা থাকতে পারবো না।
– না পারলেও কিছু করার নাই। ভালো থাক।। গেলাম আমি।
– জুমা! জুমা! জুমা কথা শোন আমায় একা করে যাসনা।
জুমা আর তাকালো না। চলে গেলো। আমিও কিছুক্ষন হতোবম্ভ হয়ে বাসায় গিয়ে ওকে ফোন দিলাম কিন্তু ওকে ফোনে পেলাম না।
ওর বাসার নম্বরে ফোন দিয়েও কোনো কাজ হলো না।
একটানা ৮দিন অনেক চেষ্টা করেও জুমার সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারলাম না।

এই কয় দিন আমি জীবন এর সব থেকে খারাপ সময় পার করছি একটা মুহূর্তের জন্যেও ভালো থাকতে পারি নাই,

সারা ক্ষন সুধু ওকেই মনে পরে, এই সময় টায় ওরে অনেক বেশি ফিল করি। হয়তো আমি ওকে ভালবেসে ফেলেছি।

ওর সাথে যে আমাকে কথা বলতেই হবে ওকে জে আমার মনের কথা গুলা বলতেই হবে।
আমি ওর সাথে কথা বলতে না পেরে ইতি মধ্যে
সিগারেট খাওয়া শুরু করেছি।
অনেক চেষ্টার পরে ৯দিন এর দিন জুমার সাথে কথা হলো। জুমা নিজেই ফোন দিলো।
– হ্যালো
– নবীন তোর সমস্যাটা কোথায়? বাসার নম্বরে ফোন দেও ক্যান?
– ফোন দেওয়ার অধিকার টাও কি নেই?
– নাহ নেই, আর আমি ভাবতেও পারি না যে তোর মতো একটা বিড়ী খোর বন্ধু আমার ছিল
– কে বলছে তোরে এই সব?
– নবীন তোর সাথে কথা না হলেও আমি তোর সব খবর রাখি।
– বাহ ভালোই, অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে খবর রাখো,
– মানে কি?
– জুমা আমি তোরে কিছু বলতে চাই, জুমা তোরে ছারা আমি আমার ভিতর নিজেকেই খুজে পাই না,

এই কয় দিন যে আমার কিভাবে গেছে তা শুধু আমিই জানি। জুমা তোরে ছারা আমার চলবে না।

আমার সাথে এমন করিস না পিলিজ। আমি তোকে ছারা থাকতে পারবো না।
– সম্ভব না, তুই আর আমায় ফোন দিশ না। ভালো থাক, আমার পরিবার থেকে চায় না যে আমি আর তোর সাথে মিশি,

সো তুই তোর মতো করে থাক,
– পারবো না আমি, তুই আমার রক্তে মাংসে মিশে গেছো আমি চাইলেও আর তোকে ছারতে পারবো না। আমায় ছেরে যাসনা।
– সরিরে দোস্ত, আর পারলাম না আমি তোর সাথে থাকতে, কিছু চাওয়া চাওয়াই থেকে যায় তা পূরণ হয় না, ভালো থাক..
– জুমা জুমা জুমা শোন, জুমা……জুমা ফোন টা রেখে দিলো,

অনেক চেষ্টা করেও আর ওর সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারলাম না।

বলতে পারলাম না যে জুমা আমি তোকে ভালবেসে ফেলেছি, না পাওয়ার বেদনা নিয়েই একাকীত্বর জীবন শুরু করতে হলো।
হয়তো জুমাও আমায় ভালবাসতো, ওর পরিবার এর জন্যে আর হয়ে উঠলো না।
এভাবেই দুরে চলে যায় হাজারো নবীন এর জুমা,

হয়তো তখন তারা সিগারেট এর ধোয়ার মাঝে একটু সুখ খুজে পায়, নিকোটিন টাকেই আপন করে নেয়

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত