আমরা ৩ ভাই ২ বোন। আমি ছিলাম মেঝো (দ্বিতীয়) সবাই পড়ালেখায় খুব ভাল ছিলো। শুধু আমি এই ছিলাম একটু দুর্বল। এর কারনটা হল পড়া আমার সহজে মনে থাকতো আর বেশিখন বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখে ঝাপসা দেখতাম, মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা ও হতো। যখন খারাপ লাগতো পড়া বাদ দিয়ে বই রেখে চুপচাপ বসে থাকতাম, আর তখন এই হুট করে কোথা থেকে জেনো আম্মু চলে আসতো সবাই পড়ে আর আমি বসে। তাই আম্মু রাগারাগি করতো।
যদি বলতাম মাথা ব্যথা/চোখে একটু সমস্যা তাই ভাল লাগছে না , তখন আম্মু আরো রেগে যেতো আর বলতো টিভি দেখার সমস্যা মাথা ব্যথা করে। টিভি দেখার কথা বলার কারন হলো আমার সব ভাই বোনের তুলনায় আমি একটু টিভি বেশী দেখতাম, টিভি দেখলে চোখে /মাথায় তেমন একটা সমস্যা হতো না। তাই আম্মু কথায় কথায় টিভির কথা বলতো। আর আব্বু সব সময় আমার উপর রেগে থাকতো কিছু হলেই বলতো আমার দাড়া কিছু হবে। আমার সমস্যা কেউ বুঝতো না বা বুঝার চেষ্টা ও করতো না। আমি সব সময় সত্যি কথা বলি আর কেউ আমার সাথে মিথ্যা কথা /মিথ্যা অপবাদ দিলে আমি সহজেই অনেক রেগে জেতাম। এতে অবশ্য আমার এই বেশি সমস্যা হতো।
আমার ৫ ভাই বোন একজন আর একজনের পিছনে সব সময় লেগেই থাকতো। কোনো কাজের কথা বললে একজন আরেক জনের কথা বলতাম। আর সবার একই কথা আমি পারবো তোমার অন্য ছেলে মেয়ে আছে তাকে বলো, আমার কাজ আছে। খেলাধুলা ও এইটা ওইটা নিয়ে মাঝে মাঝে ঝগড়া আমাদের মাঝে ঝগড়া ঝাটি মারামারি লেগেই থাকতো। ঝগড়া / মারামারি হলে আম্মুর হাতে মাইর আমার কপালেই বেশি জুটত। কারন সবাই খুব সহজেই সত্যি মিথ্যা বলে নিজেদের বাঁচিয়ে নিতো। আর সব দোষ আমার হতো। আমি ওদের মতো এতো সহজে সত্যি-মিথ্যা মিলিয়ে দূরত্ব কথা বলতে পারাতাম না। আম্মুকে বুঝতে চাইতাম কিন্তু আম্মু বুঝতে চাইতো না আমার দোষ না থাকলে ও আমার উপর দোষ চাপাইয়া দেওয়া হতো। যখন বুঝতে চাইতো না তখন আমি রেগে যেতাম, আর আম্মু কে রাগের মাথায় দুই এক কথা বলে ফেলতাম তার পুরস্কার হিসেবে মাইর খেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হতো। আর মাঝে মাঝে মাইরের হাত থেকে বাঁচার জন্য অর্ধ রাত্রি বাহিরে কাটাতে হতো মশা বাহিনীর সাথে এইভাবে চলতে চলতে আমি এখন ক্লাস ১০ পড়ি।
আর আমার সাথে সাথে আমার চোখ ও মাথা ব্যথার ও উন্নতি হইছে। আগের থেকে এখন পড়াও আরো কম মনে থাকে। ৪দিন পর আমার SSC পরীক্ষা হটাৎ আমার জ্বর মাথা ব্যথা ।২ দিন হয়ে গেলে কিন্তু কিছুতেই জ্বর কমতেছে না। উল্টো আরো বারছে, ডক্টর দেখাইলাম তার পর জ্বর কমতে ছিলো না। আমার অবস্থা অনেক খারাপ আর এই দিকে আমার পরীক্ষা চলছে।আবার ডক্টরের কাছে গেলাম কিছু টেস্ট দিলো। টেস্টে ট্রায়ফেট ধরা পরলো। ১ সপ্তাহ পর আমি মোটামুটি সুস্থ। কিন্তু আমার কোমরে একটু সমস্যা দেখা দিলো। তাই আমি কিছুখন বসে থাকলেই কোমরে ব্যথা হতো। আবার ডক্টর দেখালাম। ডক্টর বল্লো ভয়ের কিছু নাই ট্রায়ফেট এর কারনে এমন হইছে একটু সময় লাগবে ঠিক হয়ে যাবে। আমার আর পরীক্ষা দেওয়া হলো সুস্থ হইলাম কিন্তু চোখ আর মাথায় সমস্যা এখন ও আছে । তার উপর পরীক্ষা ও দেওয়া হলো না। (যদি ও ভাল রেজাল্ট আমার দাড়া সম্ভব না কোনো রকম পাশ করতাম আর কি) মন টাই ভেংগে গেলো। পড়ার টেবিল এ মন আর বসলো না।
আমার পড়া লিখা এখানেই ইতি টানলো আর এটাই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো টুক টাক করে ৫/৬ মাস কেটে গেলো। আর ৫/৬ মাসে আমার ভাই বোনদের সাথে আমার সম্পর্কটা আর আগের মতো নাই অনেক টা দূরত্ব বেড়ে গেছে। তার জন্য আব্বু আম্মু এই দায়ী। আর আব্বু আম্মু কেমন জেনো হয়ে গেছে। আমার কাছে এখন তাদের ব্যবহার এটা মনে আমি জেনো আব্বু আম্মু দুই জনের এই সৎছেলে। আমার সব ভাই-বোনের কোনো কিছু আবদার করা মাত্র পূরণ করা হয়। আর আমি কিছু আবদার করলেই তা পরুন হতো না। আর বার বার বললে রেগে জেতো, তবে আমি কোনো কিছুর খুব বেশি দরকার না হলে সহজে আবদার করতাম না তার পর ও পূরণ হতো। আর টুকটাক যা কাজ থাকে আমাকেই করতে হয়। এইভাবে চলতে চলতে এক সময় বাড়ির কাজের ছেলের জায়গাটা দখল করতে বেশি একটা সময় লাগেনি। এখন বাড়ির সব কাজ এই আমার করতে হয় শুধু রান্নাবান্না ছাড়া। পারলে মনে হয় মাঝে মাঝে এটা ও করতে হতো।
আমাকে ঠিক মতো পকেট খরচ এর টাকা ও দেওয়া হতো না।এইভাবেই কাটতে থাকলো আমার দিন কাল আমি কখনো ভাবিনী আমার জিবনে এমন একটি দিনও আসবে। ঘরে দরজা বন্ধ করে ইচ্ছা মতো কান্না করলাম সব এই ভাগ্য। সকালে আম্মু ৫০০০ টাকা দিলো বাজার করার জন্য। দোকানদার থেকে কিছু জিনিষ নিয়ে তাকে টাকা দেওয়ার জন্য পকেটে হাত দিতেই আমি অবাক পকেটে টাকা নাই। তার মানে রাস্তায় ওই লোক টা এই কাজ করছে। মানে বাজারে আসার সময় এক অপরিচিত লোকের সাথে ধাক্কা লাগে তার মানে ওই লোকটা পকেটমার ছিলো। দোকানদার আমার দিকে তাকিয়ে বলো কোনো সমস্যা ভাই। আমি হ্যা ভাই এই গুলো রেখে দেন আমার কাছে টাকা নাই পকেটমার টাকা নিয়ে গেছে। দোকানদার ভাই নিয়ে যান পরে টাকা দিয়ে দিয়েন। ভাই পরে যদি মনে না থাকে, দোকানদার আপনি তো অনেক দিন ধরে আমার দোকান থেকে কেনা কাটা করেন, আপনাকে দেখে অমন মনে হয়না আর আমারা দেখলে ও কমবেশি বুঝি কে কেমন। বাসায় আসলাতেই আম্মু আর বাজার কোথায়। আমি আম্মু একটু সমস্যা হয়ে গেছে। কি সমস্যা আমি ভয়ে ভয়ে বললাম আম্মু টাকা গুলো পকেটমার এ নিয়ে গেছে। আর এই গুলো এক দোকান থেকে বাকি আনছি।
এর মাঝে আব্বু এসে হাজির। আব্বু সব শুনার পর বল্লো তোমার ছেলে টাকাটা মেরে দিয়ে মিথ্যা কথা বলছে। বিশ্বাস করো আম্মু আব্বু আমি সত্যি বলছি টাকাটা আমি নেই নি পকেটমার নিয়ে গেছে। আব্বু বল্লো এই গুলো নাকি আমার সাজানো গল্পো। আমি আর কথা বাড়ালাম না আমার ঘরে এসে কান্না করলাম। আর আব্বু আম্মু এমনটা ভাবার কারন হলো ২ দিন আগে আম্মুকে বললাম আমার ৩০০০ টাকা লাগবে না করে দিলো অনেক অনুরোধ করার পর বল্লো তোর আব্বু কে বলে দেখি কি বলে। আব্বু ও না করে দিলো দিতে পারবে না,আমি আর কিছু বললাম না। এখন তাদের ধারনা টাকা না দেওয়ায়, আমি এই কাজ করছি।আমি বিষয়টা কিছুতেই মানতে পারছিলাম না তাই চোখের জল মুছে এক বন্ধুকে কল দিলাম দোস্ত আমার একটা উপকার করবি। কি হইছে বলবিতো, আমার ৫০০০ টাকা লাগবে।
কখন লাগবে আমি এখন হলে ভাল হয়। আর টাকাটা ফেরৎ দিতে একটু দেরি হবে আচ্ছা সমস্যা নাই। বাসায় চলে আয় আমি টাকা নিয়ে আবার বাজারে গিয়ে ওই দোকানদারে টাকা দিয়ে। বাকি বাজার গুলো করে বাসা আসতেই আমার হাতে বাজার গুলো দেখে আম্মু আমার দিকে একটু অন্য রকম ভাবে তাকালো। আমি ভাবতে পারিনি এখনো আমার জন্য অবাক করার মতো কিছু অপেক্ষা করছে । বাজার করে এনে জেনো আরো বড় বিপদে পরলাম। আম্মু আব্বুকে ডেকে বল্লো দেখে যাও তোমার ছেলের কাণ্ড। আমি যে বল্লাম টাকা ও এই মেড়ে দিছিলো, আবার তো বিশ্বাস হলো এখন তো বুঝলা আর ওই টাকা দিয়ে এখন বাজার গুলো করে নিয়ে আসছে আরো অনেক কথা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হজম করতে হলো।
আমি আর কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পেলামনা। শুনচ্ছি মানুষ নাকি বেশী কষ্টে পাথর হয়ে যায় আমার ও এক এই অবস্থা আমার চোখ দিয়ে আর এক ফোটা ও জল বের হলো না। দুপরে আর খাওয়া হলো না কারন কথা গুলো শুনে পেট এতোটাই ভরে গেছে যে মনে হয় ২/১ দিন না খাইলেও খুদা লাগবে না। আমি চাই না আর এইভাবে বাঁচতে আমার ও ভবিষ্যৎ আছে। আমাকে কিছু একটা করতে হবে। পড়ালেখা তো আমার দাড়া হলো তাই চাকরী কে দিবে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ব্যবসা শিখবো। তাই এক বন্ধুকে ফোন দিলাম, ওর বাবা ব্যবসা করে। দোস্ত সামনে তো ঈদ তোদের দোকানে লোক লাগে না। হয়তো লাগবে আব্বুকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে হবে। কেনোরে, আমি ব্যবসা শিখতে চাই। ও এইকথা আচ্ছা লোক লাগুক না লাগুক আমি আব্বুকে বলে ব্যবস্থা করে দিবো। ধন্যবাদ দোস্ত। কাল তুই আব্বুর সাথে দেখা করিস। পরেরদিন সকালে কিছু না খেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পরলাম আঙ্কেলের সাথে দেখা করে পরিচয় দিলাম অনেক্ষন কথা হলো। কথা শুনে বুঝতে পারলাম আঙ্কেল খুব ভাল মানুষ।
আমার দিকে তাকিয়ে বল্লো মনে হয় সকালে কিছু খাও নাই আর আমি খাই নাই চলো নাস্তা করে আসি। আর শেষ একটা কথাই বল্লো তুমি আমার ছেলের বন্ধু মানে আমার ছেলের মতোই তোমার যে কোনো সমস্যা আমাকে জানাবে কোনো সংকোচ করবে না। দোকানের অন্য লোকদের বলে দিলো আমার যাতে কোনো সমস্যা না হয় ওই দিকে লক্ষ রাখতে বললেন। দোকানের সব লোক গুলো ই খুব ভালছি।তাই তাদের আর আঙ্কেলের সহযোগিতায় অল্পদিনে ভাল দোকানদারী শিখে গেছি। ধীরে ধীরে কোথা থেকে কিভাবে মাল কালেকশন করতে হবে সব এই দেখাইয়া দিলেন। এখন আমি ব্যবসা করার মতো উপযুক্ত কিন্তু সমস্যা হলো টাকা। যেভাবেই হউক আব্বু আম্মু কে বুঝাতেই হবে।রাতে বাসায় এসে আব্বু রুমে গেলাম আম্মু একা আব্বু এখনো বাসায় আসেনি থাকলে ভাল হতো এক সাথে দুই জনকে বুঝাতে পারতাম। আম্মু কে বুঝাতে পারলাম না কিছুতেই আম্মুর এক কথা যা বলার তোর আব্বু কে বল। আব্বুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। আব্বু আসলো দেখে মনে হচ্ছে মনটা ভাল যাক ভালই হলো।
আব্বু ;- কি ব্যাপার তুমি এখানে কিছু বলবে।
আমি :- জি আব্বু
আব্বু :- হ্যা বলো কি বলবে
আমি :- আম্মু ব্যবসা করতে চাই
আব্বু :- ভাল কথা। ব্যবসা করতে হলে অনেক টাকার দরকার টাকা পাবে কোথায় পাবে
আমি :- আব্বু টাকার বেপারে কথা বলতে চাচ্ছি তোমারা না দিলে কে দিবে আমাকে
আব্বু:- আমার পক্ষে টাকা দেওয়া সম্ভব না। এমনি তোমার ভাই বোনের পিছনে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। জানোইতো তোমার বড় ভাই ডাক্তারি পড়তেছে, তোমার ছোট টা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে, সাথে তোমার বোনদের পিছনে ও কম খরচ হচ্ছে না।
আমি :- তারপর ২০/৩০ মিনিট আব্বু কে অনেক বুঝালাম কিছুতেই আব্বুকে বশ করতে পারলাম না। আচ্ছা আব্বু আমি যদি পড়ালেখা করতাম তাহলে তো আমার পিছোনে এতো দিনে তোমার কম করে হলেও ৭/৮ লক্ষ টাকা খরচ হতো
আব্বু :- হ্যা তাতো হতোই
আমি :- তাহলে মনে করেন টাকা টা আমার পড়ালেখা পিছনেই খরচ করছেন মনে করে টাকা আমাকে দেন। আর তা না হলে হাওলাদ হিসাবে টাকা আমাকে দিন। আমি ব্যবসা করে টাকা টা আমি আপনাকে ফেরৎ দিয়ে দিবো।
তারপর ও আব্বু টাকা দিতে রাজি হলো না। আব্বুকে এতো করে বলার কারন আমি জানি আব্বুর কাছে টাকা আছে, ইচ্ছে করলেই আব্বু আমাকে টাকা দিতে পারতো আর আমাকে টাকা দিলে ও ভাই-বোনের খরচ চালাতে সমস্যা হতো না কিন্তু দিলো না। সত্যি বলতে আমাকে নিয়ে তাদের কোনো সপ্ন নেই। যা সপ্ন তা ভাই-বোনদের নিয়ে। আমি তাদের কাছে অবহেলার পাত্র। তাদের ধারনা আমার দাড়া কিছু হবে না।
কিছুদিন পর আম্মু অনেক অসুস্থ হয়ে পরলো। ডক্টর বল্লো ভালো হয়ে যাবে কিন্তু অনেক সময় লাগবে তাকে বিশ্রামে থাকতে বলছে আর সুস্থ হওয়ার পরে ও ভারি কোনো কাজ করতে পারবে না । আম্মুর দেখা শুনা জন্য লোক ও বাড়ির কাজের জন্য একটা লোক দরকার। কাজের লোক আছে কিন্তু সে তো আর সব সময় থাকে না। তাই আব্বু সিদ্ধান্ত নিলো বড় ভাইকে রেখে আমাকে বিয়ে করাবে। ( বড় ভাইকে রেখে আমাকে বিয়ে করানোর কারন ভাই পড়ালেখা এখনো শেষ হয় নাই) ওইদিন এর পর (৫০০০ টাকা চুরির অপবাদ) থেকে আর বাড়ি থেকে টাকা নেই নি। আর আমি আঙ্কেলের দোকানেই আছি আর সে আমকে বেতন ধরে দিছে। তা দিয়ে আমার ভালই চলে যাচ্ছে। কিন্তু এই বেতন দিয়ে বউয়ে খরচ চালতে কষ্টে হয়ে যাবে। তাই আমি চাইছিলাম আগে ব্যবসা করে ভাল পজিশনে গিয়ে পড়ে বিয়ে করবো। তা আর হবে না আব্বু কোনো কথাই শুনছে না। আব্বু একটাই কথা বউ যা যা লাগবে তা আমার বুঝবো। তুই নিজে চলতে পারলেই হবে। আমি বললাম আমাকে কিছু টাকা দিন আমি ব্যবসা করি। কিন্তু টাকা দিতে রাজি হলো না, কি এমন পাপ করলাম যার জন্য আমার উপর আস্থা রাখতে পারছে না। আমাকে কি তাদের ছেলে না। আমি ভাল কিছু করি ভাল থাকি এটা তারা কেনো ভাবে চায় না। অন্য ছেলে মেয়ের মতো যদি আমার ও সঠিক যত্ন নিতো, আমার সমস্যা গুলো কে নিয়ে ভাবতো তাহলে হয়তো আমি ও আজ ভাল কিছু করে দেখাতে পারতাম। সব এই কপাল।
আব্বু শেষ কথা আমাকে বিয়ে করতেই হবে। আম্মু কথা ভেবে রাজি হতে হলো। তবে আমার আমার প্রছন্দের কেউ আছে বলতেই সবার চোখ জেনো কপালে উঠে গেলো। মেয়ের ঠিকানা চাইলো। দেওয়ার পর বল্লো মেয়ে সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে আমাকে জানবে। পরেরদিন আব্বু আমাকে বল্লো এই মেয়ে কে এই বাড়ির বউ করে আনা সম্ভব না। আমি কারনটা জানতে পারি কেনো সম্ভব না। এই মেয়ে মডার্ন মেয়ে আর আমাদের সাংসারিক মেয়ে দরকার। ও খুব ভাল মেয়ে,আপনারা যা ভাবছে তেমনা, আর ওর মা নেই ওর বাড়ির সব কাজ ও একাই করে। মা ছাড়া মেয়ে কেমন হবে তা আমাদের ভালই জানা আছে। এই মেয়ে কে এই বাড়ির বউ করা সম্ভব না। আমার যেখানে বিয়ে করতে বলবো সেখানেই তোমাকে বিয়ে করতে হবে। কাল রেডি থেকো তোমাকে নিয়ে এক জায়গা যাবো।
আমি কি করবো কিছুই বুঝতে ছিলাম না। তাই বাসা থেকে বের হয়ে মিতুকে কল দিলাম।মিতুকে সব খুলে বললাম। আর বললাম মিতু তুমি আমার জন্য তোমার মডার্ন বেশ ছেড়ে সাংসারিক হতে পারবে না।
মিতু :- এটা কোনো বেপার হলো আমি তোমার জন্য সব কিছু করতে পারবো আর তুমি চাইলে হাসতে হাসতে জিবনটা ও দিয়ে দিতে পারবো।
আমি :- তা হলে চলো কাল আমারা বিয়ে করে ফেলি। ( বিয়ে কথা বলার কারন আমার দুজন দুজকে পাগলের মতো ভালবাসি। মিতু আমাকে এতোটাই ভালবাসে যে কোনো কারনে যদি যে আমাকে না পায়। তাহলে নাকি জিবনে বিয়েই করবে না অনেক দিন আগেই আমাকে কথাটা বলছে।)
মিতু :- কাল এই কেনো করতে হবে।
আমি :- আমার অনেক ভয় করছে কারন আব্বু কাল আমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবে, যদি জোর করে বিয়ে করিয়ে দেয়।
মিতু :- আরে পাগল গেলেই বিয়ে হয়ে যায় নাকি
আমি :- তাহলে তুমি জেতে বলছো
মিতু :- হ্যা এতো ভয় পেলে চলে নাকি
আমি :- আচ্ছা তুমি বলছো যখন একটু সাহস পেলাম
মিতু :- সত্যি তুমি একটা পাগল
পরেরদিন আব্বুর সাথে আমি আর আমার দুই বোন গেলাম। ওই বাড়িতে গিয়ে তো আমি পুরাই অবাক আত্মীয় সজন অনেক এই বাড়িতে। আমার কাছে বেপার টা বেশি একটা ভাল মনে হলো না। আমাদের একটা রুমে নিয়ে গেলো। বিভিন্ন রকম এর খাবার দেওয়া হলো খাওয়া শেষে। আব্বু মেয়ে বাবা কে বললেন বিয়াই সাহেব মেয়েকে নিয়ে আসেন। আমি তো মনে মনে বিয়ের আগেই বিয়াই কি হচ্ছে এই সব। মেয়ে আনা হলো কিন্তু আমার অই দিকে লক্ষ নেই, কারন আমার মনেটা পরে আছে মিতুর কাছে।
বোন খোঁচা দিয়ে বল্লো মেয়েটার দিকে তাকাতে আর মেয়েটার দিকে তাকাতেই ওর মুখে মিতুর চেহারা টা ভেসে উঠল জদিও মেয়েটার সাথে মিতুর চেহারার কোনো মিল নাই। কিছুক্ষণ পর মেয়েটাকে পাশে রুমে নিয়ে গেলো। আর আব্বু বল্লো বিয়াই সাহেব বাকি কাজ শুরু করেন। বলার সাথে সাথেই একটা দাড়িওলা লোক কিছু কাগজ পত্র নিয়ে রুমে আসলো। আসেই লিখালিখি শুরু করে দিলো !কিছুখন পরে সব পরে শুনিয়ে লোক বল্লো বাবা বলো কবুল। আমি দূর মিয়া কি কন এই সব কবুল বলবো কেনো আমি কি বিয়ে করতে আসছি নাকি। সবাই তো আমার কথা শুনে হা করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়ের বাবা বিয়াই সাহেব কি বলে এই সব আপনার ছেলে মাথায় সমস্যা আছে নাকি। না মানে বিয়াই সাহেব সত্যি বলতে কি ওকে বিয়ের কথা বলে এখানে আনা হয় নাই।
আপনি আমার সাথে বাইরে চলেন সব বলছি আপনাকে কে। কিছুখন পর আব্বু আসলো, আপনার একটু বাইরে জান ওর সাথে আমার কিছু কথা আছে। আমাকে অনেক বুঝাইলো কিন্তু আমি।কিছুতেই রাজি হলাম না। আমি আব্বু উপর আজ প্রথম উল্ট রেগে গেলাম কেনো আমার সাথে এমন করলো। আব্বু আজ আর আমার উপর রাগ হলো না। সুন্দর করে আমাকে বুঝতেই লাগলেন, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়ে যা নয়তো আমার মানসম্মান কিছুই থাকবে, আমি তাদের কথা দিছি, এখানে কথার বরখেলাপ হলে আমি আর কাউকে মুখ দেখাতে পারবো, তুই কি চাস আমি এখান থেকে অপমানিত তো হয়ে যাই । তুই তো ভাল করেই জানিস আমি জিবনে কাউকে কথা দিয়ে কথার বরখেলাপ করি নাই আমার আর এখান থেকে অপমানিত হয়ে গেলে আমার মরন ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না একটা শর্ত আছে আমি ওকে কোখনো বউ হিসেবে মর্যাদা দিতে পারবো না। আচ্ছা টা পরে দেখা যাবে এখন তো আগে মানসম্মান বাঁচা। বউ নিয়ে বাড়ি চলে আসলো।
আমি গাড়ি থেকে নেমে বাসায় না ডুকে। মিতুর বাড়ি সামনে গিয়ে। মিতুকে কল দিয়ে বাইরে আসতে বললাম। মিতু আমার চেহারা দেখি বুঝছে কিছু একটা হইছে। এই কি হইছে আপনার। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না কান্না করে দিলাম মিতুর দিকে তাকিয়ে। আমি মিতুকে সব বললাম। মিতুর বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো। আল্লাহ যা করে ভালর জন্যই করে। যা হবার তো হয়েই গেছে শুভ কামনা রইলো দোয়া করি সুখী হন। আজ আপনাদের বাসররাত যান বাসায় যান বলে চলে গেলো। ( কথা গুলো বলার সময় ওর চোখ দিয়ে বৃষ্টির মতো পানি পরছলো অন্ধকারেও আমার বুজতে সমস্যা হয়নি ) আমি ওর বাসার সামনেই দাড়িয়ে রইলাম মূর্তির মতো ঘণ্টা খানেক পর ও আবার বাইরে আসলো কি বেপার আপনি এখনো যাননি। যেতে ইচ্ছা করছে না আর ওই বাড়িতে জাওয়ার ইচ্ছা ও নাই।
এই কি বলছে এই সব আপনার মাথা ঠিক আছেতো। না নাই থাকলে তো জিবনের মানে টাই অন্য রকম হতো। ও আমাকে অনেক বুঝাতে লাগলো কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না তাইপর ও বুঝাতেই লাগলো বুঝাতে বুঝাতে প্রায় ফজর এর সময় হয়ে আসছিলো কিন্তু তারপরও পর ও কাজ হলো না। আপনি যদি এখন বাড়ি না যান তাহলে আমার মরা মুখ দেখবেন, হয়তো বিশ্বাস করবেনা তাই আপনাকে ছুঁয়ে বললাম। ভালবাসার মানুষকে ছুঁয়ে কেউ মিথ্যা বলে না এটাতো জানেন। ওকে আমি যাচ্ছি তবে যাওয়া আগে বলে যাচ্ছি। আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করলে আমিও কিছু একটা করে বসবো । বলে চলে আসলাম বাসায় ডুকেই আব্বু সাথে দেখে সারা রাত কোথায় ছিলে । আর তোমাকে কতো গুলো কল দিচ্ছি রিসিভ করনাই কেনো। মোবাইল বের করে দেখি ৩১ কল। আমি কিছু না বলেই আমার রুমে চলে আসলাম। আসতেই মেয়েটা উঠে বসলো। দেখেই বুঝা যাচ্ছে রাতে ঘুমায় নেই।
আমি :- আপনি মনে হয় ঘুমাননি এখন ঘুমিয়ে পরুন ।
মেয়েটা:- নিজের বউকে কেই আপনি করে বলে। (বউ কথাটা শুনা মাএ জেনো মাথা গরম হয়ে গেলো)
আমি :- কে বউ কোথাকার বউ কে বউ আমার কোনো বউ ঠুউ নাই। আমার কথা শুনে মেয়েটা স্তব্ধ হয়ে গেলো।
মেয়েটা :- কিছুখন পর মেয়েটা আচ্ছা একটা কথা বলবো যদি কিছু মনে না করেন। (মেয়েটা চোখের দিকে চোখ পরতেই দেখলাম চোখের কোনে জল জমে আছে। এই অবস্থা দেখে আমার খারাপ লাগলো আর মাথা ও ঠাণ্ডা হয়ে গেলে।)
আমি :-হ্যা কি বলবে বলো।
মেয়ে :- আমাকে কি আমার পছন্দ হয়নি। আর না হয়ে থাকলে তাহলে বিয়ে কেনো করলেন। আমি কি বলো কিছুই বুঝতে ছিলাম না। কারন মেয়েটার কথায় যুক্তি আছে মেয়েটা তো কোন দোষ করেনি। আমি জেনো আমার সমস্ত কথা হারিয়ে ফেলছি। কিছুখন পর আমি আল্লাহ সবাইকে সুন্দর করেই তৈরি করছে, আর তুমি যথেষ্ট সুন্দরী, তোমাকে পছন্দ করবে না এমন ছেলে কম এই আছে। আর বিয়েটা আমার ইচ্ছায় হয় নাই ।আমি একজনকে ভালবাসি তার সাথেই জিবনের শেষ দিনটা পর্যন্ত কাটাতে চাইছিলাম। সবকিছু ওকে খুলে বললাম। যাই হউক সবই আমাদের ভাগ্য। আর আজ ভাগ্য আমাদের নিয়ে খেলা করছে।
আপনি আমকে বউয়ের মর্যাদা না দেন সেটা আপনার বেপার। আমি আপনাকে কবুল বলার সাথে সাথে আমার স্বামি হিসেবে মেনেনিছি। আর আমি চাইনা আমার কারনে আমার বাড়ি লোক অশান্তিতে থাকুক। তাই আপনাকে একটা কাজ করতে হবে। কি কাজ। কাল আমাদের বাড়ি থেকে আমাদের নিতে আসবে আর আপনাকে এমন ভাবে অভিনয় করতে হবে। যাতে আমাদের বাড়ি কেউ বুঝতে না পারে যে আপনি আমাকে মেনে নেননি। আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম। আচ্ছা তোমার নামটা জেনো কি।
মেয়েটা দির্ঘ একটা নিশ্বাস ছেড়ে আমার নাম নূর। অনেক সুন্দর নাম। হ্যা তাই তো ভুলে গেছে। আমি স্তব্ধ (মনে মনে নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছিলো আমার কারনে একটা মেয়ের জিবন নষ্টে হতে চলছে)৩ দিনপর আজ ওদের বাড়ি থেকে চলে আসলাম। সবাই বলে শশুর বাড়ি নাকি মধুর হাড়ি। আমার কাছে মনে হচ্ছে কষ্টের হাড়ি। তবে নূর আমাকে যথেষ্ট ভাল রাখার চেষ্টা করছে। আর ও আমাকে যতো ভাল রাখার চেষ্টা করছে তোতোই আমি আরো বেশি কষ্টে ছিলাম কারন আজ নূররে জায়গা মিতুর থাকার কথা ছিলো। ভালোলাগা মুহূর্ত গুলোতে আমি মিতুকেই মিস করতা মনে মনে। মিতু আমার রক্তে প্রতিটি শিরা উপশিরায় মিশে আছে ওকে ছাড়া আমি জেনো অর্থহীন।
নূর আম্মু দেখা শুনার পাশাপাশি রান্নাবাড়া থেকে শুরু করে বাড়ি সব কাজ বুঝে নিতে লাগো। কাজ ছাড়া জেনো সে কিছুই বুঝে না, খুব তারাতারি বাড়ি আদর্শ বউয়ের মতো সব দায়িত্ব পালন করতে লাগলো । তবে আমি স্বামীর দায়িত্ব পালন না করলে ও নূর বউ হিসেবে তার সব দায়িত্ব পালন করে গেছে। বাড়ি সবাই ভাবতো সব ঠিক হয়ে গেছে শুধু আমরা তিনজন (আমি, মিতু,নূর) এই জানতাম নুর আর আমি এক বিছানায় ঘুমালেও দূরত্বটা ঠিক আগের মতোই আছে। প্রতিদিন এই নূর অনেক কথা জিজ্ঞাসা করতো আমি শুধু ওর উওর গুলো দিতাম। মাঝে মাঝে উওর দিতে দিতে ঘুমিয়ে যেতাম। তবে আমি কখনো ওর থেকে কিছু জানতে চাইনি এমনকি ও ভাল আছে কি না, এই বাড়িতে ওর কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তাও না। মিতুর সাথে আমার প্রতিদিন এই মোবাইলে কথা হয়। মিতু আমাকে অনেক বুঝাতো যা হবারতো হয়েই গেছে। নূর খুব ভাল মেয়ে ও আমাকে সুখে রাখবে সব কিছু মেনে নিয়ে নতুন করে নূরের সাথে জিবন সাজাতে। হটাৎ করে আজ মিতু বলো আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবেন কিছু কথা ছিলো। আচ্ছা ঠিক আছে….
মিতু :- আমার কথা রাখবেন
আমি:- হ্যা বলো রাখার মতো হলে রাখবো।
মিতু :-না আগে কথা দিতে হবে
আমি :- -আচ্ছা কথা দিলাম বলো। এবার বলো…
মিতু :- আপনি আমাকে ভুলে গিয়ে। আর আমার জায়গা টাতে নূরকে বসাবেন। আপনার কাছে আমার এই টুকোইই চাওয়া…..
আমি :- কিছুখন চুপ থাকার পর। হ্যা কথা যেহেতু দিছি রাখতে তো হবেই। মনের ঘরে কউকে একবার জায়গা দিলে ভুলা যায় কিনা তা আমি জানিনা, কাউকে একবার বসালে তাকে তুলে দেওয়া যায় কিনা তাও আমার জানা নাই… পারবো কিনা জানিনা চেষ্টা করে দেখতে। তবে….
মিতু :- তবে কি….???
আমি :- যেদিন তুমি আমাকে ভুলে গিয়ে আমার জায়গা টাতে অন্য কাউকে বসাবে পারবে। ওই দিন থেকে আমিও চেষ্টা করবো। তুমি যদি পারো তা হলে হয়তো আমি ও পারবো। আমি ওই দিনটার অপেক্ষায় থাকলাম বলে চলে আসলাম এই ভাবেই চলতে থাকলো। মাঝে মাঝে বিভিন্ন জায়গা থেকে মিতু কে দেখতে আসে। কিন্তু মিতু বিয়েতে রাজি হয়না। আমিও অনেক বুঝাই কিন্তু ওর এক কথা জিবনে বিয়েই বসবে না। সারা জিবন এই ভাবেই কাটাইয়া দিবে বড় ভাই পড়া শেষ করে বাড়ি আসলেন।
এখন সে একজন ডাক্তার। কিছুদিন পর আব্বু বিয়ের কথা বলতেই বলো। সে একজন কে ভালবাসে বিয়ে করলে তাকেই করবে। জদিও মেয়েটা অনেক মডার্ন বাড়ি অবস্থাও অনেক ভাল। তাই আব্বু আর কিছু বললেন না রাজি হয়ে গেলেন। বিয়েতে বাড়ির সবাই গেলেও আমার আর নূরের জাওয়া হয় নাই। তবে নুরের জাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিলো। না যাওয়ার কারন টা হলো, আমি আর নূর দুজনের শিখা গতো যোজ্ঞতা তেমন একটা ছিলো না।তার উপর আবার আনস্মাট আমার বউ গ্রেও ভুত। অনেক নামিদামি ব্যক্তিগন আসবে যদি উল্টা পাল্টা কিছু একটা করে বসি। তাই একবার বলা হয় নি আমাদের যাওয়ার জন্য। ওই দিন রাতে বাসায় ডুকার সময় শুনলাম আমাকে আর নুরকে নিয়ে কথা হচ্ছে। আড়ালে কিছুখন দারিয়ে ছিলামসবাই বিয়েতে গেছে। আর নূর বাড়িতে একা মন খারাপ করে বসে আছে।
তাই নূরকে নিয়ে বিকেলে ঘুরতে বেড় হলাম। জিজ্ঞসা করলাম ওর কিছু লাগবে কিনা। আমার কিছু লাগবে না আমাকে নিয়ে ঘুরতে বেড় হইছেন তাতেই আমি অনেক খুশি। আমার পছন্দ মতো কিছু কেনাকাটা করে দিলাম, পছন্দ হবে কিনা জানিনা। বাসায় আশার সময় কিছু একটা বলতে গিয়েও বল্লো না। আমি বললাম কি কোনো সমস্যা। নূর না মানে ফুল গুলো সুন্দর তাই না। আমি কিছু না বলে রিক্সা থামিয়ে ফুলের দোকানে চলে আসলাম। কিন্তু এখানে তো অনেক রকম ফুল কোনটা ওর কাছে ভাল লাগলো তা জানা হয় নাই। তাই সব ধরনের ফুল এই নিলাম কম-বেশি করে। ফুল গুলো নূরের হাতে দিতেই মনে হলো ও জেনো আকাশের চাঁদ হাতে পাইছে। ওর বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো যে আমি ওর জন্য ফুল নিয়ে এসেছি সপ্নের মতো মনে হচ্ছিলো আজকের দিন টা নূরে কাছে।নূর ভাবছিলো আমি হয়তো কিছুটা পরিবর্তন হইছি। আমি শুধু আজকের জন্য ওর একাকীত্ব ও মন ভাল করার চেষ্টা করছি মাএ।
তার একমাস পর ছোট ভাই এক মেয়ে নিয়ে বাড়িতে হাজির। পরে জানতে পারলাম মেয়েটা কে নাকি বাড়ি থেকে জোড় করে বিয়ে দিচ্ছিলো। তাই বাড়ি থেকে পালাইছে। তাই বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসেছে। এতো আরো মডার্ন
আজ মাঝা রাস্তায় আসতেই প্রচুর বৃষ্টি নামতে শুরু করলো। এমনি ও আজ একটু দেড়ি হয়ে গেছে তাই কোথাও না দাঁড়িয়ে ভিজতে ভিজতে বাসায় চলে আসলাম। বৃষ্টিতে ভেজার কারনে রাতেই জ্বর চলে আসছে। সকালে কিছুতেই বিছানা থেকে উঠতে পারছিনা জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে ঠাণ্ডা প্রচুর মাথা ব্যথাও। একটু পর নূর আসলো আপনি উঠবেনা আপানর গায়ে অনেক জ্বর । যা করার আমি করছি।
আমি তোমার কষ্টো করতে হবে না আমি পারবো। দেখুন কোখনো আপনাকে কিছু বলিনি। আর আপনি যতোখন পর্যন্ত না সুস্থ না হবেন আমাকে আমার কাজ করতে দিবে কোনো বাধা দিবেনা । এইটুকোই আপনার কাছে আমার অনুরোধ। আমি কিছু বললাম না। নিজে হাতে ব্রাশ করে দিলো, নিজের হাতে খাইয়ে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বল্লো এখন একটু ঘুমান । নূর কাজ দেখে নিজেকে বাচ্চা বাচ্চা মনে হচ্ছে। আমি বুঝতে পারলাম আমি না ঘুমানো তে ওর কাজে সমস্যা হচ্ছে। তাই ঘুমের ভান করে থাকলাম দেখি ও কি করে। একটু পর পর রুমে এসে কপালে হাত দিয়ে দেখে যাচ্ছে জ্বর কমছে কিনা। বাড়িতে চিল্লাচিল্লি এর মাঝে কি আর ঘুমানো যায় তাও ঘুমের ভান করে থাকলাম। তবে একটা জিনিষ লক্ষ করলাম একটু পর পর কেউ না কেউ নূরকে ডাকছে।কোনো না কোনো কাজে, একটা কাজের মানুষকে ও মানুষ এতো ডাকে না। আমি চুপচাপ দেখে যাচ্ছি কি হচ্ছে বাসায়।
আমি সকালে ৮/৯ যাই আর রাতে১০/১১ বাসায় আসি। তাই দিন ভর বাসায় বর্তমানে কি হয় না হয় আমার তা জানা নাই। আর কখনো জানার দরকার ও মনে করিনি। কিন্তু আজ জানতে খুব ইচ্ছে করছে। তাই ঘুমের ভান করে সব জানার ও বুঝার চেষ্টা করছি। আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যা শুনলাম দেখলাম উপলব্ধি করলাম তাতে আমার বুঝতে একটুও অসুবিধা হলো না, যে নূর শুধু নামেই বাড়ির বউ। সত্যি তো এটা যে সে বাড়ির বউ হয়ে কাজের মেয়ের ভূমিকা পালন করছে আর ছোট ভাইয়ের বউ নূরের ছোট হওয়া সত্যেও নাম ধরে ডাকে। তারপর ও তার কোনো অভিযোগ নেই। সবার মন জয় করতে সে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত তার মাঝে ক্রান্তিবোধ নেই। একটা মানুষ কিভাবে পারে নিজে কে আন্যের মাঝে এইভাবে বিলিয়ে দিতে আমি ভেবে দিশেহারা।
তিন দিনপর আজ আমি সুস্থ। আর এই তিন দিনে আমি বুঝে গেছি নূর আমাকে কতোটা ভালবাসে। আর এই তিন দিনে কি এই না করছে আমার জন্য দিন ভরে এতো খাটাখাটি করেও সারা রাত না ঘুমিয়ে আমার মাথার কাছে বসে থাকতোআমি নূর কে ঠকাচ্ছি আর আজ আমার কারনে বাড়ির লোক গুলো কাছে কাজের মেয়ে হয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তাকে। আমাকে কিছু একটা করতেই হবে। তাই আবারো বেহায়ার মতো আব্বুর কাছে ব্যবসা করার জন্য টাকা চাইতে গেলেম। আব্বু কে অনেক বুঝালাম, বললাম না হয় হাওলাদ হিসেবে দেন আমি ফেরৎ দিয়ে দিবো পায়ে পর্যন্ত ধরছি কোনো কাজ হলো। এক পর্যায় আমি রেগে গিয়ে কথা কাটাকাটি করে চলে আসি। রুমে আসতেই নূর টার সমস্ত গয়না আমার হাতে দিয়ে বল্লো এই গুলো বিক্রি আপনি ব্যবসা করেন। আমি আপনার আর বাবার কথা সব শুনচ্ছি। এই গুলো বিক্রি করে যে টাকা পাবো তাতে ব্যবসা কিছুই হবে না।
আমাদের বাড়িতে বলে আরো কিছু টাকা ব্যবস্থা করে দিবো, আমি জানি বাবা না করবে না যে করেই হউক ব্যবস্থা করে দিবেন। না হয় এখন ছোট করেই ব্যবসা শুরু করেন। আল্লাহ চাইলে এই ছোট ব্যবসা আর একদিন ছোট থাকবে না। নূরের কথা শুনে নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরলো (মনে মনে ভাবলাম যাদের করার কথা তারাই করলো না, আর যাকে কিছুই দিতে পারিনি বউয়ের অধিকার টুকোও দেই নাই। আজ সে তার সর্বশ আমাকে দিয়ে দিচ্ছে) এর মাঝে মিতু ফোন। আমি বাইরে চলে আসলাম। আমার কথা শুনেই মিতু বুঝে পারলো আমার মন খারাপ। মিতু সমস্যা কারন জানতে চাইলো। মিতুকে সব খুলে বললাম, সাথে নূরের গয়না ও টাকা ব্যবস্থা করে দিতে চাইলো তাও বললাম। সব শুনে মিতু বল্লো আমার ছোট মামা ব্যাংকে চাকরী করে। মামা আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালবাসে মামাকে বলে একটা লোনের ব্যবস্থা করে দিবো। মাঝ রাতে আবার মিতুর ফোন। হ্যা বলো। একটু আগে মামার সাথে আপনার বেপারে কথা হইছে। কাল মামা আপনাকে দেখা করতে বলছে। আর ১৫/২০ দিনের ভিতর লোনের ব্যবস্থা হয়ে যাবে । চিন্তা করবেননা এখন ঘুমান।
নূর, মিতু ও আঙ্কেলের(বন্ধুর বাবা, যার দোকানে থাকতাম) সহযোগীতায় ১ মাস পর আজ ব্যবসা শুরু করলাম। আঙ্কেল আমার জন্য অনেক কিছু করছে, অনেক বাবাও তার ছেলের জন্য এতো টা করে না। ব্যবসার কথা বাসা কেউ জানে না আর নূর কে ও জানাতে না করছি। আজ আমি অনেক খুশি। বাসা আসার সময় নূরের জন্য ওর পছন্দের ফুল নিয়ে আসলাম। রুমে দুকতেই নূর কে অন্যমনস্ক মনে হলো, মনটাই খারাপ হয়ে গেলো ।(বড় ধরোনের কিছু একটা হইছে নয়তো ওকে এমন দেখাতো না) কি হইছে তোমার। কই কিছুনা আপনি কখন আসলেন। এইতো, কি হইছে সত্যিটা বলো আর না বললে। অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হবে। না মানে বড় ভাবি। কি বড় ভাবি। বড় চা দিতে বল্লো আর মা ও অই দিকে ডাকছিলো।
তাই তাড়াহুড়ো করে ভাবীর হাতে চা দিতে গিয়ে ভাবির হাতে একটু চা পরতেই ভাবি রেগে গিয়ে আমাকে চড় মেড়ে বসেন। সাথে অনেক গুলো কথাও শুনিয়ে দিলেন। শুনেই মাথা গরম হয়ে গেলো আমি রুম থেকে বেরুতেই। নূর আমার পা জরিয়ে ধরে বসে পরলো যা হবার হয়ে গেছে এই টা নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করবেনা, আর যাই হউক দোষটা আমার এই হবে আপনি এই বিষয়টা বাদ দেন আছা ঠিক আছে। তবে আমার আর এ বাসায় থাকবো না। সকালে তোমাকে কিছুদিনের জন্য তোমার বাবার বাড়িতে দিয়ে আসো। আমি আলাদা বাসা ঠিক করে তোমাকে গিয়ে নিয়ে আসবো। বাবা মা কি ভাববে আর আমি তো এখানেই ভালই আছি। তাদের নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে। তুমি বাবা মা, বোন ভাবলে কি হবে তারাতো আর তোমাকে মেয়ে ভাবেনা,বোন ভাবে না। যে দিন মেয়ে ভাবতে পারবে ওই ভেবে দেখবো। তোমার সব কিছু গুছাইয়া রাখো এই বাড়িতে আর থাকবো না এটা আমার শেষ কথা।
নূরকে দিয়ে আসার ৫/৬ দিন পর আব্বু গিয়ে বুঝে বাড়ি নিয়ে আসে। আমি আসার পর জানতে পারছি। আমি আসার আগে জানলে আসতে দিতামনা। আমি জানি ২/১ দিন হয়তো ভাল যাবে, তারপর আবার সেই আগের যায়গা ওর স্থান হবে। কয়েক দিন পর থেকে আবার সবাই আগের মতোই করতে লাগলো ১ বছর পর নূর মা হতে চলেছে। আমার ব্যবসাও আল্লাহ রহমতে অনেক ভাল চলছে। আর মিতু সাথে এখন আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিদিন এই কথা হয়। কারো প্রতি কারো ভালবাসা এখনোও চুল পরিমানও কমে নি। শুধু সপ্ন গুলো ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু মিতুএখনো বিয়ে বসেনি। অনেক বুঝাইছি আমিতো সংসার করতে ছি, তুমি কাউকে বিয়ে করে সংসারী হও। ওর এক কথা যাকে চাইলাম তাকেই পাইলামনা, আমার দাড়া আর এই সব হবে না।
দুই বছর পর আজ নূরের দেওয়া গয়না গুলো ছাড়িয়ে আনলাম সাথে আমার পছন্দ মতো আরো কিছু গয়না নিলাম। আমি গয়না গুলো বিক্রি করিনি ওই গুলো বন্ধক রাখছিলাম। আগেই ছাড়াতে পাড়তাম কিন্তু মাঝে একটা জমি কেনার কারনে ছাড়াতে পারিনি। অনেক দিন ধরে নূরকে শুধু রাত ছাড়া আর সময় দেওয়া হয় না। তাই ভাবলাম গয়না গুলো দিয়ে আজকের বাকি দিনটা নূরের সাথে কাটাবো।তাই চলে আসলাম। বাসায় ডুকতেই চিক্কার করে কান্না আওয়াজ বাবাগো মা গো কেউ আমারে বাচাও আমি মরে গেলাম। তাড়াহুড়ো করে ঘরে ডুকে দেখি নূর ফ্লোরে পড়ে আছে সারা ফ্লোর রক্তে একাকার হয়ে গেছে। আমি নূরকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি।মিতুকে ফোন দিয়ে হাসপাতালে আসতে বললাম।
যেতে যেতে জিজ্ঞাসা করলাম কিভাবে এই সব হলো। ফ্লোরে পানি পরা ছিলো আমি খিয়াল করিনি পারা দিয়ে পরে গেছি। আধাঘণ্টার উপরে আমি হবে আমি এই ভাবে ফ্লোরে পরে আছি। কেউ আমাকে একটু ও সাহায্য করে নাই। কতো ডাকলাম বড় ভাবি আর ছোট কে অনেক খন পর আসলে ও আমার সাথে রক্ত দেখে কেউ আমার সাহায্য করলো না অনেক অনুরোধ করলাম আমাকে একটু তুলে আমার রুমে একটু দিয়ে আসুন চিঁ চিঁ করে দুই জন এই যার যার রুমে চলে গেলো। (ওর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না তারপর ও অনেক কষ্টে কথা গুলো বল্লো) ওর কথা গুলো শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরছে আমি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছি। একটা মানুষ কিভাবে পারে এতো টা সারথ্য পর হতে, যেখানে একটা মানুষের জিবন মরণ প্রশ্ন। তা দেখার পর ও কিভাবে পারে একটা মানুষ ঘরের দরজা লাগিয়ে বসে থাকতে। এরা কি মানুষ না অন্য কিছু আমার জানা নাই।
আজ আমার জন্য ওর এই অবস্থা। ওকে অনেক বলছি তোমাকে তোমার বাবার বাড়ি দিয়ে আসি। কিন্তু নূর শুধু আমার জন্য যেতে রাজি হয় নাই। কারন এতো দিনে সব কিছু ঠিক ঠাক মতো চলছে। যদি আমাকে হারিয়ে ফেলে শুধু এই ভয়ে। তাছাড়া নূরকে আমি অনেক বার বলছি তাহলে দোকানের কাছে একা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। কিন্তু নূর বাবা-মা আর এই পরিবারকে ছেড়ে আলাদা থাকতে কিছুতেই রাজি হয় নাই। ওকে নিয়ে আমার সব সময় ভয় হতো আর আজ তাই হলো।
নুরকে জরুরী বিভাগে নেওয়া হলো। একটু পর ডাক্তার আমাকে ডাকলেন আপনি কি রুগীর husband। হ্যা। তাহলে আমার সাথে ভিতরে চলুন। আপনাকে ছাড়া রুগীকে শান্ত করা যাচ্ছেনা বার বার আপনার কথা বলছে। আমি গিয়ে মাথায় হাত দিতে অনেকটা শান্ত হয়ে গেলো। আর একটা কথাই বলো আমি মনে হয় বাঁচবোনা। আমার কিছু হয়ে গেলে আপনি মিতু আপাকে বিয়ে করে নিয়েন আপনার কাছে আমার এই টুকোই অনুরোধ। কিন্তু ওর চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে অনেক কষ্টো হচ্ছে ওর।
একটু পর ডাক্তার প্রচুর রক্তখরনের কারনে মা ও বাচ্চা দুজনের অবস্থাই আশংকাজনক হতো যে কোনো একজনকে বাঁচানো যেতে পারে । ডাক্তার আমার বাচ্চার দরকার নাই যেভাবেই হউক আপনি নূরকে বাঁচান। এখন এই অপারেশন করতে হবে আল্লাহ কে ডাকুন। বলে নূরকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলো। ২ ঘন্টা পর ডাক্তার বের হলেন। ডাক্তার কি অবস্থা আমার নুরের Sorry অনেক চেষ্টা করেও কাউকে বাঁচাতে পারেনি।কথাটা শুনার পর আমি পাগলের মতো হাসতেছিলাম। কিন্তু আমার ভিতোর টা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিলো। নুরকে আমার কেনা জায়গায় কবর দিয়ে। আমি আর বাড়ি ফিরি নি, আমি নূরকে হারিয়ে অনেকটা পাগলের মতো হয়ে গেছি। সারাদিন নূরের কবরে পাশে বসে থাকতাম। আর মিতু জোড় করে রাতে ওদের বাসায় নিয়ে যেতো।
মিতু আমাকে অনেক বুঝাতো এইভাবে ৬ মাস কেটে গেলো।আমি এখন কিছুটা স্বাভাবিক। এর মাঝে আশেপাশে মানুষ আমাকে আর মিতুকে নিয়ে নানান কথা বলতে শুরু করলো। এইভাবে আরো ৬ মাস কেটে গেলো। এখন আমি পুরোপুরি ঠিক। লোকের কথা আর কতো শুনবে। তাই মিতু বাবা বাদ্ধ হয়ে আজ আমার আর মিতুর বিয়ে দিয়ে দিলেন। মিতুকে পেয়ে আমার খুশি হওয়ার কথা কিন্তু না আমি খুশি হতে পারিনি। নূরে সাথে যখন থাকতাম তখন মিতুর স্মৃতি আমাকে কুড়ে কড়ে খেতো, আর এখন মিতুকে কাছে পেয়ে নূরের স্মৃতি আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। আর নূরের কবরটার প্রতিও একটা মায়া জম্মাইয়া গেছে । ওর কবরটা না দেখলে নিজে কে ঠিক রাখতে পারতাম না। তাই ওই খানে বাড়ি করলাম যাতে মন চাওয়া মাএ কবর টা দেখতে পারি। আর কবরে পাশে বসার মতো জায়গা বানালাম। প্রতিদিন রাতে ওই খানে বসে নূর(নূরের কবর) ,আমি, মিতু আড্ডা দিতাম। সবার কাছে ওইটা কবর মনে হলেও আমার কাছে তা মনে হতো না। আমার কাছে মনে হতো নূর আমার সামনে ঘুমিয়ে আছে। আমি যতো বার এই কবরটা দিকে তাকাইছি, আমি মাটি দেখিনি আমি শুধু দেখছি নূরের ঘুমন্ত মায়াবী চেহারাটা।
মাঝ রাতে আম্মুকে নিয়ে একটা দূর সপ্ন দেখে ঘুম ভেংগে গেলো। তাই সকালে মিতুকে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য বাড়ি পাঠিয়ে আমি দোকানে চলে আসলাম। আমি না যাওয়ার কারন নূর মরার পর আমি সিদ্ধান্ত নিছি ওই বাড়িতে আমি কখনো আর পা রাখবো না। দুপরে বাসা এসে দেখি আব্বু আম্মু বাসায় আজ দেড় বছর পর আব্বু আম্মুর মুখ দেখলাম। কিন্তু আম্মু অনেক অসুস্থ। তাদের দেখা শুনার লোক নাই। তাই মিতু সাথে নিয়ে আসছে। আর আমিও মিতুর কাজে অনেক খুশি হলাম।
আব্বুকে বললাম আপনাদের এই অবস্থা কেনো আমি আদর্শ ছেলে আর নূর কাজের মেয়ের মতো থেকেও আদর্শ বউ হতে পারে নি। কিন্তু আপনার আদর্শ দুই ছেলে আর ছেলের বউ থাকতে আপনাদের তো ভালোই থাকার কথা। কিছুখন চুপ থাকার পর এক এক করে সব এই বললেন। ছোট ভাই বউ নিয়ে ফিনল্যান্ড চলে গেছে। জায়গা -জমি বিক্রি করে বড় ভাইকে টাকা দিছে ক্লিনিক খোলান জন্য। দুই জন এই খুব ভাল আছে। প্রথম প্রথম দুই জনেই খোঁজ খবর নিতো। পরে ধিরে ধিরে দুজনেই যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আর বাড়ির অর্ধে বিক্রি করে দুই বোনের বিয়ে দিছে। তারাও ভালই আছে।
মিতুর সেবা যত্নে আম্মু এখন সুস্থ। আমি আর তাদেরকে আর বাড়ি যেতে দেই নি, আমার কাছেই রেখে দিলাম। আর যে মিতুকে একদিন মডার্ন বলে তারা মেনে নেননি। আজ এই মিতু এই তাদের কাছে মেয়ের থেকেও বড় কিছু। আর মিতুও তাদের নিজের বাবা-মার থেকে ও তাদের বেশি ভালবাসে। মাঝখান থেকে একটি নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে পরলো। এখন প্রতি রাতেই আমি নূর (নুরের কবর),মিতু আড্ডা দেই। হয়তো এই আড্ডা মৃতুর আগপর্যন্ত এই ভাবেই চলতে থাকলো।
সমাপ্ত