ফোনটা কানে ধরতেই ওপাশ থেকে সায়নের উত্তেজিত গলা শুনতে পেলাম হ্যালো, তিতির! আমি বেডসাইড ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে ঘড়িতে দেখলাম রাত প্রায় আড়াই টা বাজে। ধড়মড় করে উঠে বসে বললাম কি হয়েছে?! প্রমা আজ বলে, আমি নাকি সিক্ এন্ড কোন মেয়েরই আমার সাথে রিলেশন রাখা সম্ভব না এটা কোন কথা ” ভেরী গুড ! প্রমা মেয়েটা বুদ্ধিমতী। আর কিছু? ওর সাথে আমার ব্রেক আপ হইসে। তোর একটা ভালোবাসা,আর তেইল্যাচুরাও পাখি, এইটা বলতে রাত আড়াইটা বাজে ফোন দিয়া আমার ঘুম ভাঙ্গাইসিস্! মর শালা কত কষ্ট করে ওর জন্য তুফান মাথায় করে বৃষ্টিতে ভিজে একটা গিফ্ট নিলাম। আর ও যা তা বলে অপমান করলো কষ্টের কোন বেইল ই দিলো না! এইবার আমি একটু উৎসাহী হলাম। সায়নের গিফ্ট দেয়ার সেন্স বরাবরই খারাপ।
যতবার নতুন গার্লফ্রেন্ড জোটায়, ততবারই আজগুবি সব কান্ডকারখানা করে ছেলেটা! লাস্টবার মিতু বা নীতু নামে কাউকে প্রপোজ করার সময় বেকুবটা কবি বনে গেছিলো বেমালুম! মুখে দাঁড়ি-গোফের জঙ্গল নিয়ে সারাদিন উদাস ভঙ্গিতে ঘুরে বেড়ায়। আর কেউ প্রশ্ন করলে, জঙ্গলে ঘ্যাচ্ঘ্যাচ্ শব্দ তুলে চুলকাতে থাকে। মা ব্যাপারটা খুব উপভোগ করলেন। আমাকে একদিন ডেকে বললেন “সায়নের কি হয়েছে রে ? সেদিন আমার কাছে এসে বললো আন্টি দাঁড়িতে উকুন হয়েছে। কি দিলে উকুন যাবে ?”আমি যেই বললাম“দাঁড়ি রাখসিস ক্যান ? কেটে ফেললেই তো আর উকুন থাকে না ” ওমনি ও ঘ্যাঁচঘ্যাঁচ করে গাল চুলকাতে চুলকাতে উদাস ভঙ্গিতে বললো“আন্টি দাঁড়ি কাটা যাবে না। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার আছে এর পিছনে ”এরপর দাঁড়ির শানে নুযুল ব্যাখ্যা না করেই উধাও! রাগে আমার মাথার তালু জ্বলতে লাগলো। আমি ভর দুপুরে সায়নের বাসায় গিয়ে উঠলাম। ব্যাটা তখন কি যেন লিখছে।
আমাকে দেখেই বলে উঠলো“কি গরম পড়েছে দেখসিস্ ? রাস্তায় নামলেই নিজেকে বারবিকিউ হিউম্যান মনে হয় বরফ ওয়ালা লেবুর শরবতের উপর কোন রকম বেঁচে আছি ”আমি ওর কথার ধার দিয়েও গেলাম না, সরাসরিই বললাম “তুই দাঁড়ি কাটবি কিনা বল্ ”সায়ন আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো“একটা কবিতা লিখেছি, তোকে শোনাই কবিতার নাম“একশ ওয়াটের লাইট”“মেয়ে তোমার প্রেমে পড়ে হইলাম আমি ম্যাড, এইটাই তুমি বুঝলানা, হাউ স্যাড! হাউ স্যাড!! তুমি আমার আন্ধার ঘরে একশ ওয়াটের লাইট তোমার জন্য সবার সাথে করতে পারি ফাইট ”আমি রাগে অন্ধ হয়ে গেলাম।
ফুঁসতে ফুঁসতে বললাম“তোর কবিতা আর কবিগিরির গুষ্টি কিলাই। তুই তোর উকুনের জঙ্গল কাটবি নাকি খাবলায় তোর মাথার একমুঠা চুল তুলে নিব “সায়ন উদাস গলায় বললো “খাবলানোর দরকার কি? ফোন করে বললেও তো হতো। চুল কাটায় নিতাম “ধুম করে অফ্ হয়ে গেলাম। ঝগড়ার বদলে ঝগড়া হলেই না মজা! এতো সহজে মেনে নিয়েছে দেখে বিরক্তিতে গা জ্বলে গিয়েছিলো। সায়ন দিব্যি গুনগুন করতে করতে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। যাওয়ার সময় বললো “তুই বস আমি আসছি ”সেবার কোনমতে কবিগিরি ছুটিয়েছি। দু’দিন পরপরই ও উদ্ভট একেকটা কান্ড করবে। বেশিরভাগ সময়ই দেখে হাসবো না কাঁদবো ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। আমি এবারও তাই খুব উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি নিসিলি ওর জন্য? বডি স্প্রে। তুই সিরিয়াসলি প্রমারে বডি স্প্রে গিফ্ট করসিস! ব্যাটা বেকুব! বেকুবীর কি করলাম? তুই ওরে প্রপোজ করার সেকেন্ড ডে তে বডি স্প্রে গিফ্ট করসিস ! তোরে তো ব্যাটা মিউজিয়ামে রাখা দরকার। মেয়েদের কি পছন্দ আমি কি অত জানি নাকি ? দুই দিন পর পর প্রেম তো ঠিকই করতে পারো।
ব্রেক-আপ করসিস,এনার্জি লস্ হইসে। হরলিক্স খায়া ঘুমা এখন। আমার মাথা খাইস না। ওই সাইডে ফোঁপানির মত আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম “কাঁদছিস নাকি? তুই তো ব্যাটা আসলেই ওয়ার্থলেস্ ” আরে ধুর! কান্দমু ক্যান? সর্দি লাগসে। আমি ফোন রাখলাম। প্লীজ ফোন কানে ধরে নাক ঝাড়বি না। বলতে বলতেই সায়নের নাক ঝাড়ার আওয়াজ কানে এলো। গা টা ঘেন্নায় রি রি করে উঠলো। আমি চেঁচিয়ে উঠে বললাম,“ব্যাটা খাচ্চর ! খবিস!” দোস্ত,প্রমা মেয়েটা ভালো ছিলো। অবশ্যই ভালো ছিলো। তুই একটা খবিস! এই কথাটা কোন মেয়ের প্রথম দিনেই ক্যান ধরা পড়ে না,আল্লাহই জানে। রাগে গজগজ করতে করতে ফোনটা কেটে দিলাম। অসহ্য লাগছে। নেহায়েত মাঝ রাত বলে বদমাইশটা ছাড়া পেয়ে গেছে। এই মূহুর্তে সামনে থাকলে খামচি মেরে গালের মাংস তুলে নিতাম। পুরা গাধা একটা ছেলে। “আই অ্যাম সো খুল” টাইপ ভাব নেয়ার চেষ্টায় হাস্যকর সব গাধামী করে। চড়ানো দরকার বেকুবটারে।
মাঝে মাঝে ভেবে কুল পাই না, দুনিয়ায় এতো মানুষ থাকতে এইরকম অপদার্থ একটা ছেলের সাথেই বন্ধুত্ব হলো কিভাবে আমি ছোটবেলা থেকেই টমবয় টাইপ। যে বয়সে মেয়েরা কুতকুত অথবা সাতচারা খেলা নিয়ে ব্যাস্ত, আমি তখন মাঠে ভাঙ্গা কাঠের টুকরা নিয়ে ক্রিকেট খেলি! কাজেই সায়নের সাথে আমার পুরো ছোটবেলা কেটেছে ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলে! বুঝতে শেখার আগের ও পরের পুরো সময়টার বেশিরভাগই আমাদের একসাথে কেটেছে। সায়ন অবশ্য আমার থেকে বছর দু’একের বড়। তাতে কি ? আমি ছোটবেলা থেকে আজ অবধি দিব্যি “তুই-তোকারি” করে চালাচ্ছি। মা অবশ্য মাঝে মাঝেই সায়নের আম্মুর সামনে বিব্রত ভঙ্গিতে বলতো “সায়নকে ভাইয়া ডাক, গাধী মেয়ে, ও তোর বড় ” আমি মুখ ভেংচি মেরে জবাব দিতাম, “এহ আসছে! কচুর বড় আমার ”ছোটবেলা থেকেই প্রায় এটা-ওটা নিয়ে আমাদের খুনসুটি লেগেই থাকতো। বড়বেলায়ও অবস্থার তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। আমার দিন শুরু হতো সায়নের সাথে কোন না কোন বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে।
যখন ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা দেই,আম্মু একদিন আমাকে এসে বললো,“তুই সায়নের কাছ থেকে সাজেশন নিলেও তো পারিস! ভার্সিটিতে পড়ে, নিশ্চয়ই বলতে পারবে,কি কি পড়তে হবে ”আমি চট্ করে আম্মুকে বললাম,“ওইটা আমারে কি পড়াবে ? খবরদার্ আম্মু,আমারে বলসো, বুঝছি! সায়নের কানে গেলে তোমার খবর আছে ”কদিন পরেই সায়ন দেখি, আমার পড়ার রুমে এসে বসে আছে। অবাক হয়ে বললাম,“এই তুই চশমা পরিস্ কবে থেকে ”ও গম্ভীর গলায় বললো, “চশমা ছাড়া বইয়ের লেখার দিকে বেশিক্ষণ তাকায় থাকতে পারি না মাথা ধরে ” তুই আমার বাসায় বই পড়তে আসছিস! না তোকে পড়াতে আসছি। আন্টি তোকে কিছু বলে নাই ? বুঝলাম আম্মুরে বলে কিছু লাভ হয় নাই। সায়ন সত্যি সত্যি আমাকে পড়াতে চলে এসেছে। আমি ভেবেছিলাম, ওর কাছে পড়তে বসলেই আচ্ছামতোন হাসাহাসি করবো। যাতে লজ্জায় পড়ে দুইদিনেই ভেগে যায়। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম,উলটো আমি সায়নকে একটু ভয় পেতে শুরু করেছি। ওই ব্যাটা জীবনে আমার একটা উপকারেই এসেছে। ভার্সিটিতে টিকিয়ে ছেড়েছে। এর কিছুদিন পরই আবার টের পেলাম, সায়ন আবার গাধার লেভেলে নেমে গেছে।
একদিন আমারে হঠাৎ এসে বলে,“তোর প্রেমে পড়ে গেছি মনে হচ্ছে,বুঝলি ”আমি কিছুক্ষণ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে হুঙ্কার ছেড়ে বললাম,“কি বললি ? কি বললি তুই ”সায়ন বললো,“তোর প্রেমে পড়েছিকেন ? মানা আছে ? ”আমি হাউমাউ করে বলে উঠলাম,“খবরদার বললাম আরেকবার ফাজলামি করলে দিব খামচি ”সায়ন চুপ মেরে গেলো। আমিও হতভম্ভ হয়ে খেয়াল করলাম, সায়নের এ রুপ আমার কাছে নতুন। আমি ইনিয়ে বিনিয়ে নানাভাবে বোঝার চেষ্টা করলাম, আসলে কাহিনী কোথায় প্যাঁচ খেয়েছে। অবশ্য এতো খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন ছিলো না। আমি মোটামুটি এক হাজার পার্সেন্ট শিওর ছিলাম আর যা হোক, এই গাধার প্রেমে পড়ে নিজেকে গাধী সম্প্রদায়ে যুক্ত করার মতো বেকুব আমি না। সায়ন এ কথা দ্বিতীয় বার বলে নি। আমি নিঃসন্দেহ হলাম, ব্যাটা আসলে ফাইজলামিই করেছে।
দুইদিন পরপরই যে ছেলে প্রেমে হাবুডুবু খায়, তার আবার ভালোবাসা! কিন্তু আমার হলো অন্য জ্বালা! দুদিন পরপরই ওর প্রেমের কিচ্ছা কানে আসে। যতবারই ওর হৃদয় নামক প্রেমের বাগানে ফুল ফোটে,কিভাবে যেনো মালী হিসেবে ও আমাকে নিযুক্ত করে দেয়। কোন মেয়েকে কি দিতে হবে, কাকে কোন প্রশংসামূলক কথা বললে কতটুকু খুশি হবে, এইসব আজাইরাপাতি প্রশ্ন করে আমার জীবন অতিষ্ট করতে লাগলো! আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, ওর হৃদয় পৃথিবীর একমাত্র বাগান যেখানে বার মাস বসন্ত থাকে ! সে যা হোক, পরদিন সায়নের বাসায় গেলাম, ওর খোঁজ নিতে। আবার জ্বর-টর না বাঁধালেই হয়। বাসায় উকি দিতেই আন্টি বললো “সায়ন তো সকালেই বেরিয়েছে কার একটা ফোন আসলো,এরপর আর নাস্তাও করে নি ”আমি বাসায় এসে রেডী হয়ে ভার্সিটিতে রওনা হলাম। বাইরে টুপটাপ বৃষ্টি হচ্ছে। একবার ভাবলাম ফিরে যাই। পরে চিন্তা হল, ভার্সিটিতে গেলে সায়নের সাথে দেখা হবে নিশ্চয়ই। ওর সাথে শুধু শুধুই রাতে চেঁচামেচি করেছিলাম। দেখা হলে একসাথে বাসায় ফিরে আসা যাবে।
ক্লাসের করিডোরে গিয়ে হঠাৎ করেই সায়নকে আবিষ্কার করলাম, জুনিয়র ব্যাচের প্রিয়াঙ্কার সাথে। এবারের নতুন ব্যাচের কাউকেই খুব ভালো করে না চিনিনা। তবে মেয়েটাকে চিনি। ভর্তি হওয়ার দুইদিনেই পিচ্চি মেয়েটা ভার্সিটি তার ব্যাগের পকেটে নিয়ে ঘুরছে। প্রিয়াঙ্কার সামনে চোখে সানগ্লাস দিয়ে উজবুকটা যা একটা ভঙ্গি করছে। আমি হাসিমুখে সায়নকে ডাক দিলাম। একি! ও প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে উলটা দিকে হাঁটা দিয়েছে। প্রিয়াঙ্কা একবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে আওয়াজের উৎস খুঁজতেই, সায়ন প্রায় জোর করে ওকে নিয়ে হাঁটা দিলো। আমি বেকুব বনে গেলাম। সায়নের মেয়েটার সাথে এতো কি কথা,যে আমার সামনে বলা যাবে না ! রাগে কেমন চোখ জ্বালাপোড়া করছে। একবার ভাবলাম পিছু নিই। পরে এমন হাস্যকর চিন্তা করায় নিজেকে দুটা চড় মারার ইচ্ছা করছিলো। বহুকষ্টে দমালাম। ক্লাসে করা উচিৎ, সেটাই ভালো। কিন্তু কি যন্ত্রনা! স্যারের লেক্চারে কোনভাবেই মন বসাতে পারছি না।
ক্লাস শেষে আবিষ্কার হলো প্রায় পুরোটা সময়টাই খাতায় অনর্থক আঁকাঝোকা করেছি। সায়নের জন্য এটা নতুন কিছু না। প্রেমে পড়া ওর জন্য ডাল-ভাত। কিন্তু কোন মেয়েকে নিয়ে এভাবে আমার সামনে থেকে চলে যাবে,এটা কি কথা হলো? ভার্সিটি থেকে বাসায় ফেরার পথে ঝুম বৃষ্টি নামলো। এবারের বর্ষাকালটায় অদ্ভুত! সারাদিন থেকে থেকে ঝুপঝাপ বৃষ্টি। ছাতা মাথায় নিয়ে রিকশার প্লাস্টিকের পিছে লুকিয়েও সকালে আধাভেজা হয়ে ভার্সিটিতে এসেছি। এখান থেকে বাসায় হাঁটা পথে প্রায় আধাঘন্টার রাস্তা। আমি ছাতা ব্যাগে ঢুকিয়ে হাঁটা দিলাম। বাসায় যখন পৌঁছালাম, তখন ঠান্ডায় আমার ঠোঁট নীল হয়ে গেছে। আবিষ্কার করলাম, মুখে কথাও জড়িয়ে যাচ্ছে। ব্যাগ থেকে বই মোবাইল টাকা কিছু বের করিনি। ভেজা কাপড় পালটে মাথা মুছে কম্বল গায়ে নিয়ে শুয়ে পড়লাম। বুঝতে পারছি ঝাঁপিয়ে জ্বর আসছে! রাগ হচ্ছে, প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।
সায়ন এটা কি করলো ? বুঝতে পারলাম প্রচন্ড হিংসা হচ্ছে প্রিয়াঙ্কা মেয়েটাকে। লজ্জায় কুকড়ে গেলাম। শেষমেষ সায়ন বিকেলে ঘুম ভাঙতেই আবিষ্কার করলাম, অস্থির রকমের মাথা ব্যাথা হচ্ছে। মাথাটা একটু তুলতেই দেখি, আম্মু আর সায়ন চিন্তিত ভঙ্গিতে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে। আমাকে পিটপিট করে তাকাতে দেখে কিছুটা ধমকের সুরেই সায়ন বললো,“এইসব ঢং কোত্থেকে শিখসিসস্? পুরা রাস্তা নাকি বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আসছিস? ছাতা নিসিস কি জন্যে, ক্রিকেট খেলতে ” আমি মাথাটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে ফেললাম। চোখে পানি চলে এসেছে। কি লজ্জার ব্যাপার! পাশ থেকে আম্মু সায়নকে বললো,“তুই বকে দে তো আচ্ছা মতোন মেয়েটা দিন দিন কি হচ্ছে খোদা ই জানে এইসব জ্বালা আর ভাল্লাগে না, আমি কিছু নিয়ে আসি দেখি খাওয়াতে পারি নাকি ”সায়ন চেয়ার টেনে বসলো।
বিরক্ত ভঙ্গিতে বিড়বিড় করে বলছে প্রিয়াঙ্কার সাথে ফুচ্কা খেয়ে ফিরছিলাম। মেয়েটাকে বাসায় পোঁছে দিব,এমন সময় আন্টির ফোন। তোকে নাকি ডাক্তারের কাছে নিতে হতে পারে। আমার ডেটের চৌদ্দটা বাজিয়ে এখন এখানে বসে আছি। তুই যা। অ্যাঁ ? তুই গেলি আমার চোখের সামনে থেকে ? কি আশ্চর্য! তুই কাঁদিস ক্যান ? তুই যা! তোর প্রিয়াঙ্কাকে বল, আবার ভার্সিটিতে আসতে। সানগ্লাস পরে আরো কিছুক্ষণ ফুচ্কার প্লেট নিয়ে রং-ঢং কর। তারপর ওকে বাসায় পোঁছে দে। খবরদার, আমার সামনে আর জীবনেও আসবি না। এরপর কোনভাবে বিছানায় ভর দিয়ে উঠতে গেলাম। উদ্দ্যেশ্য ছিলো ওকে ধাক্কিয়ে রুম থেকে বের করা। কনুইয়ে ভর দিয়ে হাতটা বাড়াতেই ও খপ্ করে হাতটা ধরে ফেললো।
বললো “চুপ্! একদম চুপ্ ”এক মূহুর্ত সায়নের সাথে চোখচোখি হলো। তারপরেই আমি জ্ঞান হারালাম! সুস্থ হয়ে ওঠার পর আমি সায়নের সামনে পারতপক্ষে পড়তাম না। বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম আসলে হচ্ছেটা কি? ভালো সমস্যায় পড়া গেছে। সায়নকে সম্ভবত ভালোবেসে ফেলেছি। তার চেয়ে বড় সমস্যা, এই কথা ওকে বলা যাবে না। সবসময় ওর প্রেমে পড়া নিয়ে হাসাহাসি করেছি। এখন নিজেই হাস্যকর অবস্থায় ফেঁসে গেছি। কোন দুঃখে যে বেকুবের মতো প্রপোজ করার সময় ওরে থ্রেট দিসিলাম! নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছা করছে এখন। অনেক ভেবে ঠিক করলাম, সায়নকে সব বলা দরকার। নাহলে ওর উর্বর প্রেমিক হৃদয়ে ফুল ফোটাতে কোন মেয়ের দেরী হবে না। যেই ভাবা সেই কাজ। সায়নকে ফোন দিয়ে খুব গম্ভীর গলায় বললাম,“বিকেলে ছাদে থাক তোর সাথে কথা আছে ”এরপর অপেক্ষা আর শেষ হয় না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শখানেকবার প্র্যাকটিস্ করে ফেললাম,কি বলা যায়।
আমার মুখের অবস্থা বরাবরই খারাপ। ছোটবেলা থেকে ঠাশ-ঠুশ মুখে যা আসতো বলে ফেলতাম। কিন্তু এখন তো আর এভাবে বলা যাবে না। লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে কথা বলতে হবে। বিকেল হতে সামান্যই বাকী। আমি জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াই। ঘরের ভেতর উথাল-পাথাল বাতাস। আকাশে আবার অন্ধকার হয়ে মেঘ জমছে। জমুক! ভালোবাসার মেঘটা আরেকটু গাঢ় হোক অন্যরকম ভালোলাগা ঘিরে থাকে আমাকে। আমি ল্যাপটপে চালিয়ে দেই মাতাল করা গান “আমার মন কেমন করে কে জানে, কে জানে, কে জানে কাহার তরে অপেক্ষার পালা শেষ হয়। আমি ছোট ছোট পা ফেলে ছাদে উঠি। রেলিং এর কাছে সায়ন দাঁড়িয়ে।
ওর দিকে এগুতে এগুতে দস্যি মেয়ে থেকে প্রেয়সীর রুপান্তরটা খুব গোপনে অনুভব করতে থাকি। কিন্তু কি আজব! ওর কাছে পৌঁছতেই ও বলে উঠলো,“কি বলবি তাড়াতাড়ি ব? কথা শেষ হলে প্রিয়াঙ্কাকে ফোন দিতে হবে ”এতো রাগ লাগছে। গোছানো কথার গুষ্টি কিলাই। ভাবলাম বলবো,“শোন এতো ঢং-ঢাং এর মধ্যে আমি নাই। তোকে ভালোবাসি। প্রিয়াঙ্কা-ফিয়াঙ্কা সব বাদ। জীবনে আর কোন মেয়ের নাম মুখে নিলে খামচি মেরে গালের মাংশ তুলে ফেলবো ”আবিষ্কার করলাম, কথা বলবো কি? বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্না শুরু করেছি। ফুঁপিয়ে কান্না না। রীতিমত হাউমাউ কান্না। চোখ মুছলেই আবার চোখ ভর্তি করে পানি জমে। সায়নের দিকে অসহায় ভঙ্গিতে তাকাতেই দেখলাম, ও মিটিমিটি হাসছে। লাইফে সম্ভবত প্রথম ও শেষবারের মতো বেকুব প্রমানিত হলাম।
ও বললো,“এতো সহজ ব্যাপারটা বুঝিসনি এতোদিন? প্রিয়াঙ্কা নোট নিতে আমার সাথে দেখা করেছিলো। আমার কপালে আর প্রিয়াঙ্কা কই বল ”এরপর একটা মেকি দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই আমি ওর উপর ঝাপিয়ে পড়লাম। ও প্রস্তুত ছিলো না। ছাদের রেলিং ধরে কোনমতে তাল সামলে বললো, “আরেকটু হলেই তো মারা পড়তাম আমি এতো তাড়াতাড়ি তো মরতে চাই না ” আমি কোন কথা বলি না। দেখা যাবে বোকার মতো কিছু একটা করে বসে আছি। এর চেয়ে ভালো, চুপ করে অনুভব করি দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া হৃৎস্পন্দন।
সমাপ্ত