ডিভোর্স পেপারটা সামনে নিয়ে মেয়েটার দিকে একবার তাকালাম। তখনো রাতু বেশ স্বাভাবিক। আরও বেশ কয়েকবার তাকালাম, কিন্তু রাতুর কোন পরিবর্তন দেখলাম না। হাতটা আজ বড়ই কাপছে। বার বার কলম হাত থেকে পরে যাচ্ছে। নির্লজ্জের মত আমিই প্রশ্ন করলাম,
সম্পর্কটা কী শেষ না করলেই নয়?
কথাটা বের হবে যে কতটুকু গলা কাপলো সেটা নিজেই টের পেলাম। মেয়েটার কাছ থেকে কোন উওর আসলো নাহ্। পেপারে সাক্ষর করার সময় এক ফোটা পানি পড়েছিলো কাগজে।
আড়াই বছরের সম্পর্ক নিমিষেই ভেঙ্গে চুর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো। বড্ড বেশি ঘৃর্ণা হতে লাগলো এই নিজের নিজেটাকে।। মনে হতে লাগলো এই দোষের ভাগিদার কেমলই আমি হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ কেবলই আমি। কেনই বা রাতুর সব আবদার মানলাম নাহ্, আর কেনই বা ওকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসলাম?
কোর্টের বারান্দা দিয়ে হাটছি। সাথে এক বন্ধু এসেছিলো বটে কিন্তু ওকে আগেই পাঠিয়ে দিলাম। জানি না এই ঝড় আমি সইবো কি করে আর আমার এই দূর্বল আচল দেহটাই বা কুলোতে পারবে তো সব বাধা? নাকি মুখ থুবড়ে পড়ে যাবো মাঝ পথে?তারপর হাজারো লোকের ভিড়ের পদতলে পিষ্ট হবে আমার এই দেহ? পায়ে হাটার শক্তিটা ক্রমেই বিকল হয়ে পড়ছে, এ যে কত দিনের ক্লান্তি কত দিনের।
মেয়েটা বড্ড জেদী ছিলো। যদি বলে হ্যাঁ তবে দুনিয়ার কোন শক্তি ওটাকে না করতে পারতো না। ওর মনে আমার জন্য ভালোবাসা যে ছিলো না তা নয়। ভালোবাসা ছিলো অগাধ ভালোবাাসা, এর থেকে বেশি আর ভালোবাসা যায় নাহ্। তবুও আজকের এই কর্কশ কাটা যুক্ত ফল আমাকে ভোগ করতে হলো আমাকে বললে বেশ স্বার্থপরেরর মত কথা বলা হবে বরং আমাদের ভোগ করতে হলো।
পায়ে হেটে বাসার পথটা মিনিট দশ হবে, কিন্তু পায়ে হাটার জোর নেই ভাই। ক্রমেই পা দুটো অবশ হয়ে আসছে, জানি না এটা বিরহে নাকি মুক্তির আনন্দে। রিক্সা পেয়ে গেলাম। রিক্সাতে উঠতেই সেই চেনা কন্ঠ ভেসে আসলো কানে, সেই চেনা সুরে ডাকছে আমাকে। বুকের হৃদস্পন্দনটা বাড়তে শুরু করলো যে এখনি বেরিয়ে আসবে।। পিছনে তাকালাম হ্যাঁ রাতু দাড়িয়ে আছে।
আবারও ডাকলো,,
সজীব।
রিক্সা থেকে নেমে পড়লাম ওর মুখের জিজ্ঞাসু চাহনিতে।
– আমি প্রথমেই বলে নিই আমি নীল সজীব নামটা সবার জন্য নাহ্। আমার বাবা মা আর সে যাই হোক এই তিন জন্য ছাড়া এই নামে কেউ ডাকে না। নীল বলে ডাকলেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করবো।
কাছে যেতে যেতেই কথাটা বললাম।
কথাটা শুনে রাতুর মুখের আর চোখের চাহনিতে যা ফুটে উঠেছিলো সেটা দেখে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো। বার বার বলতে ইচ্ছা করছিলো, হ্যাঁ রাতু আমিই সজীব আমি নীল না তোমার সজীব আমি। কিন্তু নিজেকে আরও কঠিন করে নিলাম। মেয়েটার ঠোট কাপছে, বার বার ঢোক গিলছে চোখটা ক্রমেই ছলছল করে উঠলো।
রাতুর যখন এই অবস্থা তখনি মুখে একটা কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বললাম,
হা হা হা তা এখন তো বেশ কাটবে দিন কাল তাই নাহ্? কোন বাধা নেই বিপত্তি নেই,নেই কোন উটকো শাসন হা হা হা হা।
হাসিটা হাসতে গিয়ে মনে হলো যেন আমি এক বড় মাপের অভিনেতা। নিজের ভিতর থেকে যতটুকু শক্তি ছিলো সব টুকু দিয়ে হাসিটা হাসতে বেশ কষ্টই হলো। তবে কী আমার ভিতরের সর্বস্ব শক্তি কমে গিয়েছে?
রাতু ছোট উওর দিলো…
– হুমমম।
কণ্ঠটা বেশ গম্ভীর।। কেমন যেন ভেজা ভেজা কণ্ঠ। হুমমম বলতে গিয়ে যে দুই তিনবার গলা আটকে গিয়েছিলো সেটা আমার খুব জানা। আর নিজেকে স্বাভাবিক করতেও বেশ একটা সময়ের প্রয়োজন হয়েছিলো সেটাও জানা।
আবার একটা হাসি হাসলাম তারপর বললাম,,,,
তা এখন তাইলে যাই কেমন? জানোই তো কত কাজ আমার হা হা হা হা।
বলেই পিছন ফিরে তাকালাম।ওর মুখের দিকে তাকাতে পারছি না, বড্ড মায়া লাগছে ওর কাদো কাদো চেহারাটা দেখতে বুকটা ফেটে খান খান হয়ে যাচ্ছে তবুও বুঝতে দিবো নাহ্। কেনই বা বুঝতে দিবো হ্যাঁ? আমার কথা একটা বারও ভাবলো? ভাবলো সব বন্ধুদের কথা। ওর মনে এটাই ছিলো যে আমিই ওর আর ওর বন্ধুদের মাঝে বড় সড় একটা দেয়াল। আর দেয়ালটাকে তো সরাতেই হতো তাই না?
যাক এতেই যদি ও ভালো থাকে তবে থাকবে আর রাতু যদি ভালো থাকতে পারে তবে আমার তাতে আপত্তিই বা থাকবে কেন? প্রত্যেকটা মানুষের ভালো থাকার স্বাধীনতা আছে। কেউ সেটা প্রকাশ করে আবার কেউ করে নাহ্ এই তফাৎ।
-সজীব..
আবারও পিছন থেকে ডাক শুনলাম।
মুখে একটা স্মীতত হাসি নিয়ে বললাম,
উহু নীল, নীল আমার নাম। তা কিছু বলবে?
-কিন্তু আমি তো সজীব ছাড়া ডাকতে পারি না।
রাতুর মুখে বেশ হতাশা ফুটে উঠলো।
– দরকার নেই তো আর তাছাড়া এখন কী সেটা খুব জরুরি?
উওরের অপেক্ষা করাটা আমার জন্য বেশ বোকামী হবে। কারণ আমি অভিজ্ঞ কোন অভিনেতা তো নয়। যে কোন সময় ধরা পড়ে যাবো আর নিজের সব রাগ আর ঘৃর্ণাকে জলান্জলি দিয়ে বুকে টেনে নিতে মন চাইবে। আর আমি সেটা কখনোই চাই না। বুঝতে খুব এএকটা সমস্যা হলো না যে, মেয়েটা এখনো দাড়িয়ে আছে।ঠিক ততক্ষন থাকবে যতটা সময় আমি ওর চোখের আড়াল না হই।। তারপর দুচোখের পানি মুছে নিবে। শুরু হবে পথ চলা। রাতে যে দুই একবার ফোন আসবে সে আমি জানি। জানতে হয় হাজার হলেও পাক্কা ভালোবাসা ছিলো। এইটুকু না জানলে ভালোবাসার অবমাননা করা হয়,অবমাননা।