অসমাপ্ত ডায়রী

অসমাপ্ত ডায়রী

সাকিব মারা যাওয়ার পর থেকে রুমটা লক করাই থাকে,

চাবী টা থাকে তার মায়ের কাছে যাতে তিনি ছাড়া ছেলের রুমে কেউ ঢুকতে না পারে।

প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে রুমে ঢুকবেন একটা ঝাড়ু নিয়ে রুম ঝাড়ু দিবেন,

রুমের এক কোনায় পরে থাকা ক্রিকেট ব্যাট আর বলটা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছবেন।

সাকিব আল হাসানের নামের সাথে তার নামের মিল থাকার কারনে সাকিব ও স্বপ্ন দেখতো বড় খেলোয়াড় হওয়ার।

দেয়ালে ঝুলে থাকা প্যান্ট, শার্ট ঝাড়া দিয়ে ধুলো তাড়িয়ে আবার রেখে দিলেন তিনি।

বিছানার চাদর, বালিশ গুছানোই আছে তবুও চাদর টেনেটুনে ঠিক করছেন।

পড়ার টেবিল, চেয়ার আর বই গুলো একটা একটা করে আঁচল দিয়ে পরিস্কার করছেন, 

আর এভাবেই প্রতিদিন সকাল শুরু হয় সাকিবের মায়ের ……

তারপর টেবিলের উপরে পরে থাকা ডায়রী টা নিয়ে বিছানার এক কোনে গিয়ে ডায়রী টা পড়তে শুরু করেন প্রতিদিনের মত।
.
কয়েকদিন ধরে শরীরে প্রচন্ড জর তবে খারাপ লাগছে না কারন,

মা কয়েক ঘন্টা পর পর এসে মাথায় পানি ঢালছেন পাশে বসে মাথায় হাত দিয়ে জর দেখছেন আর মাঝে মাঝে বকা ঝকা করছেন

“এত বার বলছি এত গরমে বাহির থেকে আসার পরে গোসল করবি না, কে শুনে কার কথা, পোলাপান গুলা যদি একটু ও মা বাবার কথা শুনতো।

এখন ফ্রিজের পানি দিয়ে গোসল করালে ঠিক হবে। ”
.
বাস থেকে নেমে দেখি সেমিস্টার পরীক্ষার ফী টাকা পকেটমার নিজের মনে করে নিয়ে গেল।

ভার্সিটি তে গিয়ে রায়হান কে বললাম বেপারটা সে বলল, টেনশন করিস না আমাদের সমাজ সেবিকা শায়লা আছে।

ও কে গিয়ে আমরা বললাম । সে বলল তোরা একটু দাড়া আমি ব্যবস্থা করে আসছি আধা ঘন্টা পর সে টাকাটা নিয়ে এলো ।

আমি তাকে বললাম “তোর এই ঋণ কোন দিন শোধ হবে না এভাবে আমাদের পাশে আজীবন থাকিস”।

সে বলল নারে দোস্ত টাকাটা দিয়ে দিস আমার ব্যাংক ব্যালেন্স অনেক কমে আসছে।আমি বললাম ঠিক আছে দিব তবে একটু দেরী হবে।
.
রাজিব ওর একটা টিউশনি কয়েক দিন আগে জোর করে ধরিয়ে দিয়ে গেল।

কোটিপতি বাবার মেয়ে,২৪ ঘন্টা ফেসবুক নিয়ে থাকে।তার নাকি ২০০০+ ফলোয়ার।পড়ার চেয়ে ফেসবুকের গল্পই বেশি করে।
-ভাইয়া, আপনার কি ফেসবুক আইডি আছে?
.
-কেন? তোমার কি নিজের আইডিতে হচ্ছে না? আমার আইডি টাও লাগবে?
.
-ভাইয়া, আপনি রাগ করছেন কেন? আপনাকে রিকু পাঠাতাম তাই জানতে চাচ্ছি।
.
টিউশন থেকে বের হয়ে রাজিব কে ফোন দিলাম।
.
-কিরে তুই এই কোন পাবলিক আমার ঘারে চাপিয়ে দিলি?
.
-দোস্ত, আমি জানি তুই পারবি এই মেয়েকে তুই ঠিক করতে পারবি তাই তোকে দিলাম পড়াতে।
রাগ করে লাইন টাই কেটে দিলাম।
.
আজ মায়ের জন্মদিন মায়ের মনে থাকে না প্রতিবার আমিই মনে করিয়ে দেই।
-মা, এই শাড়ী টা তোমার জন্য।
-কেন রে তুই আবার এটা আনতে গেলি?
-আজ যে তোমার জন্মদিন, তুমি যে আমার মা এবং বন্ধু দুটাই তাই এটা তোমার গিফট।
মা চেয়ারে বসে ছিলেন আর আমি নিচে বসে মাথাটা তার পায়ের উপর রাখলাম আমার মা হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল মাথায়।
.
সাকিবের মা ডায়রীটা বন্ধ করে চোখ মুছতে থাকেন প্রতিদিন এতটুকু পর্যন্তই তিনি পড়েন আর সামনের দিকে এগুতে পারেন না ।

ডায়রীটা রেখে দেন আগের জায়গায় ।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত