একটু ছাদে আসবে?
রাত প্রায় নয়টা।আম্মা টেবিলে খাবার দিতেই আমি চেয়ার টেনে বসে পড়লাম।অবশ্য বাইরে থেকে খেয়েই এসেছিলাম। তাই এখন আবার খাওয়ার কোন ইচ্ছেই ছিল না।কিন্তু যখন শুনলাম বিরিয়ানি রান্না হয়েছে তখন আর না করতে পারলাম না।শুধু ভাবলাম বিরিয়ানি আমার ভরা পেটে খাওয়াই পছন্দ।
আমি প্লেটে বিরিয়ানি নিতেই সুপ্তির মেসেজ।একটু ছাদে আসবে?অবশ্য আমি এই একটা মেসেজ দেখে বিরিয়ানি না খেয়ে যেতাম না।কিন্তু যখন আরেকটা মেসেজ দিয়ে বললো, খুব জরুরী তখন আর বিরিয়ানিতে হাত দিলাম না।টেনশন নিয়ে কোন কিছু খেতে পারিনা।তারউপর বিরিয়ানি।যত কম খাব তত লস।
আমি না খেয়েই বের হলাম।সাথে সদ্য কেনা চাদরটা গায়ে জড়িয়ে।শীত তেমন একটা পড়েনি।তবে বাইরে বেশ ঠান্ডাই আছে।আমি আর কিছু না ভেবে ছাদের দিকে গেলাম।
সুপ্তির সাথে আমার রিলেশন এই বছর দুয়েক হবে।তখন নতুন চাকরী পেয়ে নতুন বাসায় উঠি।তিনতলায় আমরা থাকতাম আর সুপ্তিরা আমাদের উপরে,চার তলায়।থাকতাম বললে ভুল হবে,বলতে হবে এখনও থাকি।
আমি ছাদে উঠতেই দেখি মেয়েটা এককোনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।এর আবার কি হলো।আমি সুপ্তির পাশে গিয়ে ওকে কাধে হাত রাখতেই মেয়েটা ঘুরে তাকালো।
চোখটা কেমন যেন ভেজা।মনে হচ্ছে এই মাত্র কেঁদেছে।সুপ্তির কান্না ভেজা চোখ দেখে আমার ভেতরটাও কেমন যেন কেঁদে উঠলো।আমি সুপ্তির চোখ মুছে দিয়ে বললাম,
-কি হয়েছে?
মেয়েটা আমার কথায় আমার বুকে মাথা রেখে আবার কান্না শুরু করে দিলো।সুপ্তির কান্না দেখে এটুকু বুঝতে পারলাম যে,যেটাই হয়েছে ভাল হয়নি।আমি কিছু বলার আগেই সুপ্তি কান্না জড়িত কন্ঠে বললো,
-বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।
সুপ্তির কথায় আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না।এটা তো খুশির কথা।খারাপ কিছু নয়তো।
আমি সুপ্তির চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,
-এটা আমি জানি।
আমার কথায় সুপ্তি কিছুটা অবাক চোখেই তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।হয়তো ভাবছে আমি জেনেও কেন আমার রিএকশন নেই।আমি কিছু বলার আগেই সুপ্তি বললো,
-কিভাবে জানো?খারাপ লাগছে না তোমার?
-খারাপ লাগবে কেন।সন্ধায় তোমার বাবা এসেছিল আমাদের বাসায়।হাতে মিষ্টির প্যাকেট ও ছিল।সাথে তোমার
বিয়ের কার্ড।বললো আমাদের দিয়েই নাকি কার্ড দেওয়া শুরু করবে।
-তারমানে তুমি সব জানো।আর এসব জানার পরও তোমার খারাপ লাগছে না?
-উঁহু, বেশ ভালই লাগছে।
আমার কথায় সুপ্তি এবার বেশ রেগে গেলো।আমি কিছু বলার আগেই সুপ্তি বললো,
-তুই দাড়া,আসছি আমি।
কথাটি বলেই মেয়েটা চলে গেলো।কি করবে কিছুই বুঝলাম না।এদিকে আমার অল্পতেই বেশ শীত লাগে।তার উপর ছাদে অনেক বাতাস।সামান্য বৃষ্টি হলেই আমার শীতের কাপড় পড়তে হয়।আর এখন তো শীত পড়েছেই।
এই নাও।
আজ চাদটা বেশ সুন্দর লাগছে।কেমন যেন সুপ্তির বিয়ের কথা শুনে চাদও বেশ খুশি হয়েছে।তাই এক মনেই চাঁদ দেখছিলাম।তখনি সুপ্তি কথাটি বললো।
আমি ঘুরে সুপ্তির দিকে তাকাতেই দেখি মেয়েটা হাতে ওর বিয়ের কার্ড আমার দিকে ধরে আছে।
আমি সুপ্তিকে কিছু বলার আগেই মেয়েটা বেশ রাগি ভাব নিয়ে বললো,
-এই নাও,আমিও দিলাম।দুটো কার্ডে বিরিয়ানি ডাবল খেতে পারবে।
সুপ্তির কথায় আমি কিছু বললাম না।কার্ড টাও নিলাম না।আমি সুপ্তির দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে ওর কাধে হাত রেখে বললাম,
-কথাটা মন্দ বলোনি।তোমার বাবার দেওয়া কার্ডটাও পড়া হয়নি।আর আমার মনে হয় কার্ডটা তুমিও খুলে দেখোনি।যদি একটু খুলে পড়ে শোনাতে তাহলে একটু সুবিধে হতো।
আমার কথায় সুপ্তির রাগটা এবার একটু বেড়েই গেলো।তবে কার্ড়টা ঠিকই বের করলো।
সুপ্তি কাপা গলায় কার্ডটা পড়তে শুরু করলো।কিন্তু শেষে এসে থেমে যেতেই আমি বললাম,
-হ্যা,বরের নামটা বলো।
আমার কথায় সুপ্তি কিছু বললো না।তবে আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন এখনই খেয়ে ফেলবে।সুপ্তির এরকম রাগি চেহারা দেখে আমি আর হাসি আটকে রাখতে পারলাম না।
হাসতে হাসতে মেয়েটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
-বরের নামটা বললে না।
-তুমি সবকিছু জেনেও আমার থেকে লুকিয়েছিলে কেন?
-সারপ্রাইজ।তার সবাইকেই বলে দিয়েছি তোমাকে কিছু না বলতে।
-এরকম সারপ্রাইজ আমি চাই না।জানো দুই পাতা ঘুমের ওষুধ কিনে এনেছি আমি।
-কি বলো।
-হ্যা,বিয়ের কথা শুনে আর তোমাকে হারানোর ভয়ে এটাই মাথায় এসেছিলো।
সুপ্তির কথায় আমি আর কিছু বললাম না।ওকে বেশ শক্ত করেই জড়িয়ে ধরলাম।সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে যেতাম।আজ যদি ওর সাথে এখানে কথা না হতো তাহলে হয়তো কাল ওকে আর এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখতে পারতাম না।পড়ে থাকতো ওর নিথর দেহ।
আমি সুপ্তির কপালে একটা চুমু একে দিয়ে ওর মিষ্টি মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম আর মনে মনে বললাম,
এরকম সারপ্রাইজ আর কোন দিন দেবো না।কোন ভাবেই না, কোন মতেই না।
(এমন কিছু করবেন না যেটাতে প্রিয় মানুষকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে যান)