রক্ত টা যে ওর নিজের

রক্ত টা যে ওর নিজের

অয়ন, এই অয়ন, অয়ন, বাবুসোনা আমার, উঠো বাবা, দেখো কত্তসকাল হয়ে গিছে, তোমার ত কোচিং এ যেতে হবে তাই না সোনা

অয়ন কিছুটা আলসেমো করে অন্যদিক হয়ে ঘুমালো,
অয়ন বাবু আমার এমন করে না, সোনা আমার উঠো সোনা।

কি শুরু করলা তুমি হ্যা?? দেখছো ছেলে টা ঘুমাচ্ছে আর সেই কখন থেকে ডেকেই চলেছো, আর কোচিং ত ৭ টার সময় এখন ত বাজে ৫.৩০ টা এত সকালে ওকে ডাকছো কেনো??

ইশিতা খানিকটা রাগি লুক করে তন্ময়ের দিকে তাকালো,

তুমি চুপ থাকো, নিজেতো জীবনে ২ন্ড ক্লাস ছাড়া ১ম ক্লাসের ও মুখ দেখোনি আবার বড় বড় লেকচার, হুম। আর এত সকালে এই জন্য ডাকছি যাতে এখন উঠে ফ্রেস হয়ে আধা ঘন্টা পড়বে। তারপর কোচিং এ যাবে।

ছেলেটাকে কি একটু রেষ্ট দিবানা?? সব সময় শুধু পড়ার উপরেই রাখছো, ওর মাথার সমস্যা হয়ে যাবে ত এমন করলে। আর আমি শুনেছি তুমি নাকি ওকে আহাদের সাথে খেলতে দাও না। কেনো কিসের জন্য?

এত কিছুর কৈফিয়ত ত আমি তোমাকে দিবো না, আর আহাদ একটা উশৃঙ্খল ছেলে, ওর সাথে থেকে আমার বাবুটাও যদি এমন হয়ে যায়? উহ বাবা ভাবতেই ভয় লাগে

তন্ময় কিছুটা ব্যঙ্গ ভাবে মুখ ঘুরায়ে আবার বললো আহাদ কিন্তু খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট যদি আহাদের সাথে তুমি ওকে ঘুড়তে দাও ত ও কিন্তু আহাদের থেকে কিছু শিখতে পারবে ইভেন আহাদের রোল ১ টাও ও নিয়ে নিতে পারে।
ইশিতা কিছুটা ভেবে খুশিতে তন্ময় এর হাত ধরে, ঠিক বলছো, আমিতো এটা খেয়াল ই করি নি। তোমাকে এত্তগুলান থ্যাংক্স। বলেই উঠে চলে গেলো।

তন্ময় ওর ছোট অয়ন সোনাটার কপালে একটা চুমু একে দিলো,

বাবা আমি তোমার কথা রেখেছি সোনা। তুমি আমাকে বলেছিলে না যে, আহাদের সাথে তোমার থাকার ব্যবস্থা করে দিতে, আমি করেছি সোনা। সাথে সাথে অয়ন চোখ খুলে।

সত্যি বাবা( খুশি ওর ছোট্ট মুখ টাতে লেপ্টে আছে)
হ্যা বাবা ৩ সত্যি,

অয়ন ওর বাবা তন্ময় কে খুশিতে জড়িয়ে ধরে গালে তে চুমু দেয়, i love u baba

i love u too sona…
বাসায় এখন তন্ময় একা, ইশিতা ওর ছেলে কে নিয়ে স্কুলে গিছে। আসবে ১২ টার সময়,ছেলেকে সাথে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা, এটা প্রতিদিনের রুলস। কিছুসময় পরে ও অফিসে যাবে। বেলকুনিতে গিয়ে দাড়িয়ে আছে আর ভাবছে, আমার ছেলেটার ছোট্ট মাথা টার উপর অনেক চাপ পরে যাচ্ছে। এটা ঠিক না। সবে ত প্লে আর নার্সারি শেষ করে ক্লাস ১ এ উঠেছে, এতেই ওকে সারাদিন পড়াশোনার মধ্যে রাখাটা ঠিক না। বিকেলে ত ইশিতা ওকে মাঠেও যেতে দেয় না। বলে যে বান্দরগুলার সাথে মিশে বান্দর হয়ে যাবে। এমন ভাবে কারর সাথে মিশতে না দিলে ত আমার বাবুটা নিশ্চুপ হয়ে যাবে..উউফফফফ কি করি বলে, তন্ময় ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখে ৯ টা কুড়ি,
ওহ সিট বলে তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে গাড়িটাতে চেপে বসলো,

আস্তে আস্তে ড্রাইভ করছে আর ভাবছে, ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম যাতে বউ এর আদর পায়, অফিসে আসার আগে টাই বেধে দিবে, আমি ওর চুলের ঘ্রান নিবো, হাহ! পুড়া কপাল আমার, বলেই কপালে একটা বাড়ি দিলো।
বিকেলেঃ

অয়ন তখন থেকে বেলকুনিতে গিয়ে দাড়িয়ে আছে, প্রতিদিন ই দাড়ায়ে থাকে। অয়নদের বাড়ির ছাদ আর অয়নদের রুম থেকে কাছের মাঠ টা স্পষ্ট দেখা যায়। ওখানে খেলাধুলা করা ছোটাছুটি করা বাচ্চাদের দেখে অয়ন ওখান থেকেই হাসে তবে মাঝে মাঝে মন খারাপ ও করে।

বাবু কি করছো তুমি?

পেছনে আম্মির ডাকে তাকায়ে আবার সামনে তাকালো অয়ন তারপর মাকে বললো,
আচ্ছা আম্মি আমাকে তুমি ওদের মতো খেলতে দাও না কেনো??

বাবু সোনা ওরা ত ভালো না। ওরা শুধু মারামারি করে আর তুমি ত বই তে পড়েছো যে মারামারি করা ভালো না আর তাদের সাথে থাকতেও নেই তাই না সোনা?? বলেই অয়নের মুখে হাত বুলিয়ে দিলো।

অয়ন হ্যা সম্মত মাথা টা নাড়ালো তারপর আবার মাঠের দিকে তাকালো দেখলো রিফাত ও ওদের সাথে খেলছে। রিফাত ওর সাথেই পড়ে, মনে মনে ভাবতে লাগলো, তাহলে কি রিফাত ও খারাপ?

বাবু সোনা এখন চলো ত তোমার ক্লাসের পড়াগুলো শেষ করতে হবে।
কিন্তু আম্মি আমিতো শেষ করেছি,

আচ্ছা সোনা কিন্তু ওগুলো ত তুমি ভুলে যেতে পারো তাই না?? এই জন্য আবার পড়বা হুম। চলো আম্মি তোমাকে পড়াবে.

অয়ন আর কিছু না বলে পেছনে আরেক টি বার তাকায়ে রুমে চলে গেলো।
সন্ধায় বাবার সাথে ঘুরতে বেরোলে রিফাতের সাত্থে দেখা,
অয়ন, কোথায় যাও??
অয়ন কিছু না বলে ওর বাবার পিছনে দাড়ায়ে যায়।
কিরে, কিছু বলিস না যে,

তন্ময় অয়নের এমন আচরন দেখে অবাক হয়ে যায়, পরিস্থিতি টা সামলে নেউয়ার জন্য রিফাতের সাথে তন্ময় কথা বললো তারপর রিফাত চলে গেলে,

তুমি রিফাতের সাথে কথা বললা না কেনো??
রিফাত ত ভালোনা, ও খারাপ ছেলেদের সাথে থাকে, মারামারি করে
অয়ন অবাক হয়ে কথাগুলো শুনে তারপর ছেলেকে বলে, এই কথা তোমাকে কে বলেছে??
আম্মি বলেছে..

তন্ময়ের চোখেমুখে রাগ দেখা যাচ্ছে। আমার বাচ্চাটার কি কোন স্বাধীনতা থাকবে না, আর ইশিতা ওকে এগুলো কি শিখাচ্ছে?

কিছুসময় থাকার পরে অয়নের নাকি শীত করছিলো। এই গরম এর সময় শীত কেনো করবে,তাই তাড়াতাড়ি করেই বাসায় চলে এলো।

রাত্রে অয়নের প্রচুর পরিমানে জ্বর এলো। জ্বরের লেভেল টা ১০৩ ও ছুই ছুই হয়ে গেলো, রাত্রেই ডাক্তার আংকেল কে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলে তন্ময়। ডাক্তার এসে মেডিসিন দিলে, মেডিসিন গুলার জন্য পরের দিন কিছু টা সুস্থ হই অয়ন, সকালে ইশিতা অয়ন কে স্কুলে যাওয়ার কথা বললে তন্ময় ইশিতা কে একটা থাপ্পর দেয়। আর বলে,
তুমি দেখছো আমার বাচ্চাটা অসুস্থ দুর্বল। ও এই শরীর নিয়ে কিভাবে যাবে স্কুলে?? আরো অনেক কথা শুনায়ে ও চলে এলো।

ইশিতা চড় খেয়ে আর কিছু বললো না।

অয়ন ভাবলো ওর জন্য বাবা মাকে মারলো, একা একাই রেডি হলো স্কুলে যাওয়ার জন্য তারপর মায়ের কাছে গিয়ে, আম্মি আমি স্কুলে যাবো।

ইশিতা খুশি হয়ে গেলো, ছেলেকে বুকে জড়ায়ে নিলো, তারপর কোলে নিয়ে তন্ময়ের সামনে দিয়ে স্কুলে নিয়ে গেলো।
তন্ময় কিছু বললো না, শুধু তাকিয়ে ছিলো আর ভাবলো ছেলেটা আমার অনেক বুদ্ধিমান হবে। বলতেই চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো,

কিছুদিন পরে অয়নের ক্লাস পরীক্ষার রেজাল্ট দিলো, তবে রেজাল্ট টা পাওয়ার পর থেকেই ইশিতা অয়ন কে বকেই চলেছে। অয়ন মাথা নিচু করে চুপ করে আছে, ইশিতার অয়নকে বকার কারন অয়ন ২ রোল থেকে ৩ রোলে চলে গিছে আর রিফাত ২ অর্থাৎ তন্ময়ের রোল টা রিফাতের দখলে। বকা দিতে দিতে শেষ পর্যায়ে ইশিতা ছেলেকে চড় বসিয়ে দেয়। স্কুলের প্রতিটা মানুষ ইশিতার দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষ গুলোর মধ্যে তন্ময়ের বন্ধুর স্ত্রী ও ছিলো, যে বাসায় গিয়ে ওনার স্বামী কে বললে, ওনার স্বামী অর্থাৎ তন্ময়ের বন্ধু তন্ময় কে বলে দেয় স্কুলে ঘটা সব কথা।
তন্ময় অফিস থেকে বাসায় চলে আসে। রুমে ঢুকে দেখে অয়ন পড়ার টেবিলে বসে কান্না করছে।

তন্ময় গিয়ে নিজের ছেলেকে পড়ার টেবিল থেকে উঠায়ে কোলে নেই, তন্ময় দেখে ছেলের মুখের ডান গালটাতে ৫ আঙ্গুল বসে গিছে।আর মুখ টা গরম হয়ে গিছে। ছেলের এমন অবস্থা দেখে তন্ময়ের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে, এই সময় পেছন থেকে ইশিতার কথা শুনতেই তন্ময়ের চোখ রাগে লাল হয়ে যায়,

পেছনে ঘুড়েই ইশিতার গালে তন্ময় চড় বসিয়ে দেয়,
তোমার সাহশ হই কি করে আমার ছেলেরর গায়ে হাত উঠানোর??
ইশিতা গালে হাত দিয়ে, তুমি আমায় মারলে??
বলতে না বলতেই আর একটা চড় পড়লো একই গালে,

ইশিতার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আর কিছু না বলে রুমেতে থাকা যাবতীয় কাপড় লাগেজে নিয়ে রুম থেকে বেরোয়ে এলো আসার আগে তন্ময় ইশিতা কে বলে দিলো, এই বাসায় আর কোন দিনো আসবা না।
ইশিতা কথাটা শুনে কান্না করতে করতে চলে এলো।

ঈশিতা চলে যাওয়ার পরে তন্ময় অয়ন কে কোলে নিয়ে অয়নের গালেতে চুমু দিলো, আমার কলিজা এইটা, আর আমার কলিজার গায়ে হাত তুলে ও।

অয়ন নিজের চোখের সামনে এগুলো দেখে খুব কষ্ট পায়। শুধু ভাবে আমার জন্য আজ আম্মি বাসা ছেড়ে চলে গেলো।

এরপর থেকে কাজের বুয়াই অয়নের দেখাশুনা করতো, আর স্কুলে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা সব তন্ময় নিজেই করতো, তবে অয়ন টা দিন দিন কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে, খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করে না, চোখের নিচে কালো হয়ে গিছে যেটাতো রাত জাগার কারনে হই কিন্তু তন্ময় ভাবে আমিতো নিজে অয়নকে ঘুম পারায়ে তারপর ঘুমায়,তাইলে কিভাবে!

প্রতিদিনের মতো অয়ন ঘুমালে তন্ময় নিজেও ঘুমিয়ে যাওয়ার অভিনয় করে। কিছু সময় পরে তন্ময় অনুভব করতে থাকে ওর পাশ থেকে অয়ন উঠে যাচ্ছে, তন্ময় এক চোখ খুলে দেখছে অয়ন কোথায় যায়?? তন্ময় অবাক হয়ে দেখে অয়ন ইশিতার ছবির ওখানে গিয়ে কান্না করছে, তন্ময়ের বুকের ভেতরে মোচর দিয়ে উঠলো,

পরের দিন তন্ময় নিজে ইশিতা কে নিয়ে আসতে গেলো, রাত্রে ঘটা কথা, ইভেন ইশিতাকে চড় মারার জন্য ক্ষমা অবধি চাইলো তারপরেও ইশিতা নিজের জেদ ধরে রাখলো, ওর এক কথা ও তন্ময়ের বাসায় যাবে না।

তন্ময় আর কিছু না বলে চলে আসলো কারন অয়ন কে স্কুল থেকে নিয়ে আস্তে হবে। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গিছে আর ব্যাস্ত রাস্তায় যদি অয়ন একা নেমে আসে, স্কুল থেকে বাসা বেশি দুরে না, তন্ময় ড্রাইভ করে অয়নদের স্কুলের সামনে আসতেই দেখে স্কুলের সামনে অনেক লোকের ভীড়, অয়ন বুঝতে পারে না কি হয়েছে?? একজন লোকের থেকে জিগাইলে লোকটি বলে স্কুলের একটা ছেলেকে বাস এসে একদম পিষে দিয়ে গিছে। কথাটা শুনতেই তন্ময়ের কলিজার ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠে, আমার বাচ্চা টা কোথায় আছে? বলেই গাড়ি থেকে নেমে খুজতে থাকে এত লোকের ভিড়ে নিজের ছেলেকে খুজতে থাকে, কিন্তু কোথাও পায় না শেষে স্কুল ম্যাম কে ওর ছেলে কোথায় প্রশ্ন করলে ম্যাম অবাক হয়ে যায় আর ম্যামের চোখ থেকে পানি পড়ে। ম্যামের চোখ থেকে পানি পড়তেই তন্ময়ের মনে পড়ে এক্সিডেন্ট স্পট ছাড়া অয়ন কে সব জায়গায় খুজেছে, তন্ময় ছুটে যায় সেখানে, ভিড় থেকে ভিতরে যেয়েই একটা ধাক্কা খায়, অয়ন বলেই নিজের ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নেই, তন্ময়ের কান্না আর হাহাকারে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে, অয়নের ডান হাতে আর মাথার ডান পাশ টা একদম নেই বললেই চলে। কেউ একজন পাশ থেকে বললো, ছেলেটা রাস্তা দিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে হাটছিলো আমি ছেলেটাকে ডাক দিতেই ছেলেটা আমার দিকে তাকালো, আমি ছেলেটাকে রাস্তার পাশে আসতে বলছিলাম ছেলেটাও হইতো বুঝতে পারছিলো অন্যমনস্ক ভাবে রাস্তার মাঝখানে চলে গিছে তাই আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে রাস্তার পাশে আসতে নিলেই রাস্তার পাশে আসার আগে দ্রুতগামী একটা বাস এসেই। লোকটি আর কিছু বলতে পারলো না।

রক্তের একটা উটকো গন্ধে সবাই সবার নাকে রুমাল দিয়ে চেপে ধরেছে একমাত্র তন্ময়ের নাকেই সেই গন্ধ টা যাচ্ছে না, কারন রক্ত টা যে ওর নিজের।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত