অটিস্টিক শিশু

অটিস্টিক শিশু

আমার একটা ভাগনি আছে,

নাম নূর রাইয়্যান। ক্লাস থ্রি তে পড়ে। আর আট দশটা বাচ্চার মত না। হ্যাঁ, আসলেই ও আর আট দশটা বাচ্চার মত না৷ ছোট থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করতো। আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম ও অটিজমে আক্রান্ত অটিস্টিক শিশু।
এই রোগের তেমন কোন চিকিৎসাও নেই। আবার যে চিকিৎসা আছে তাতে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেও চলে। এই রোগে আক্রান্ত বাচ্চারা স্বাভাবিক বাচ্চাদের মত আচরণ করতে পারে না।

রাইয়্যান ও ঠিক তেমনই। যেমন,

ও নিজের মত চলতে ভালোবাসে। কোন একটা দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে৷ আপনি ডাকলেও তা কর্ণপাত করে না। এরা ইশারা একদমই বুঝে না। রাইয়্যানও তাই।

তবে অটিস্টিক আক্রান্ত বাচ্চারা ট্যালেন্টেড হয়। রাইয়্যানও তার বিপরীত না।

ক্লাস থ্রি তে পড়ে অথচ লেখা সিক্স সেভেনে পড়া ছেলেমেয়েদের থেকে ভালো বলা চলে। কোন বিষয়ে লেটার মার্কস ছাড়া পায়ই না। ক্লাস টু তে ফাইনাল পরীক্ষায় শুধুমাত্র বাংলায় ৯৯ পাওয়ায় এমন কান্না ধরছিলো যা বলার মত না। অবশেষে স্যারেরা ওকে বাংলাতেও ১০০ ই দিয়েছিলেন।

স্যারদের কাছে ও অসাধারণ একটা ছেলে। আবার মাঝে মাঝে বিরক্তিকরও।

আসলে এরা অনেকটা বোঝার মতই। নির্বোধ আচরণ, না বুঝে এটা সেটা করায় প্রায় লোকই ওকে পাগল বলে। আমি দেখেছি আপুর কান্না।

নিজের ছেলে যেমনই হোক না কেন তাকে পাগল বললে মায়ের শুনতে কতটা খারাপ লাগে তা মা না হলে বুঝবেন না।

ক্লাস থ্রি তে পড়ে। অথচ যে কোন পড়া ঠোঁটস্থ।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করে এখনই। আমি দেখেছি, এইতো মাস খানেক আগে সন্ধ্যায় কি ঝড়টাই না হলো। যেখানে সবাই ঘরে দুয়োর দিয়ে বসে আছে সেখানে ও লাইট আর ছাতা নিয়ে মসজিদে চলে
গেলো। আপু শুধু বলেছিলো যাস না নূর। আপুকে বলেছিলো,

নামাজ না পড়তে দিলে মরে যাবো। একটা কথাও বলে নি আর আপু।
বয়স কত হতে পারে নিশ্চয় আন্দাজ করেছেন।
সূরা আল বাকারা কুরআনের সব’চে বড় সূরা। সেই সূরার অনেকগুলো আয়াত এখনই ওর মুখস্থ।
জুম্মার দিন মসজিদে ওকেই সবার আগে প্রথম কাতারে দেখা যায়।
ওকে এলাকার এক হুজুর আরবি পড়াতে এসেছিলেন। একদিন বলেছিলেন,
আমি কি পড়াবো? এ তো নিজেই আমাকে পড়ায়। এই ছেলে একদিন অনেক বড় হবে, অনেক বড়।

আমি সেদিনও আপুর চোখে জল দেখেছি। নাহ, সেদিনের জল কষ্ট, হতাশার ছিলো না। সেদিনের জল ছিলো আশার, পূর্ণতার।

আপু বলেছিলো, নূর তুমি বড় হয়ে অনেক বড় ডাক্তার হবে।
ও মুখের উপরই বলেছিলো,

না হবো না। আমি হুজুর হবো। আমি সবাইকে আরবি পড়াবো মসজিদে।
আপু সেদিনও কেঁদেছিলো।

এখন আর আপু মানুষের কথায় কষ্ট পায় না। এখন আর আপু রাইয়্যানকে নিয়ে হতাশ হয় না।
আপু এখন স্বপ্ন দেখে সেই দিনের। যেদিন এই অস্বাভাবিক, অটিস্টিক, সবার কাছে পাগল হওয়া ছেলেটাই অনেক বড় কিছু করবে।

তাই বলছি কি, একটা শিশু অস্বাভাবিক হতেই পারে। কোন মা তো চায় না তার ছেলে/মেয়ে আলাদা হোক। হয়ে যায়।

তাদের বোঝা না মনে করে সাপোর্ট দিন। ভালোবাসুন।

তাহলে দেখবেন ওই অস্বাভাবিক শিশুটাই যে অসাধ্য সাধন করেছে তা আমি আপনি ভালো হয়েও পারি নি।
দোয়া করি সে সব অস্বাভাবিক শিশুদের জন্য আল্লাহ ওদের সহায় হোক। দোয়া করি আমার বোনের মত সেসব মায়েদের জন্য, আল্লাহ তাদের ধৈর্য দান করুক।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত