তিন বছর আগে ঠিক এই দিনে ওকে হারিয়ে ফেললাম।হারিয়ে ফেললাম বললে ভুল হবে।নিয়তি আমার কাছ থেকে ওকে কেড়ে নিলো।আজকে তাঁর চলে যাওয়ার দিন।এই দিনটা আমার কাছে বড্ড কষ্টের।কেনই বা জীবনে এলো আবার কেনই বা জীবন থেকে চলে গেলো?এসব হিসেব নিকেশ অমিল। ওর সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত স্মৃতিময় আজ।
–
ওর সাথে পরিচয়টা হয়েছিলো ঠিক তিনবছর আগে।আমি সদ্য পড়াশুনা শেষ করে জবে ডুকলাম।সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো।হঠাৎ তখন একদিন মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো।আমি অফিস থেকে এসে ই ওনাকে নিয়ে হসপিটাল গেলাম।ওনার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিলো।ডাক্তার দেখে ই মা’ কে হসপিটালে ভর্তির কথা বললেন।আমিও দেরী না করে মা’কে ভর্তি করিয়ে দিলাম। দু’দিন খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিলাম।অফিস আর হসপিটাল।হঠাৎ খেয়াল করলাম একজন ডাক্তার মায়ের খুব দেখাশুনা করছে।মা ও খুব খুশি ডাক্তারের সেবা পেয়ে।তারপর আমি খোঁজ নিয়ে জানলাম, মেয়েটা সদ্য ডাক্তারি পাশ করলো।এখন ইন্টার্নি করছে।হয়ত রোগীর প্রতি তাই এতো যত্নশীল। যাই হোক তখন মা’য়ের সুস্থতাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।প্রায় সাতদিন মা হসপিটালে ছিলো।আমার সাথে ঔ ডাক্তারের টুকটাক কথা হয়েছিলো।তাও মায়ের চিকিৎসার কারণে কথা বলতে হয়েছিলো।
–
এরপর মাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।আসার পর খেয়াল করলাম মা প্রায়শই ঔ ডাক্তারের কথা বলতো।আপু সহ আলাপ করতো।আমাকেও বলার চেষ্টা করতো কিন্তু আমি এড়িয়ে যেতাম।নিজের জব নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম।সবসময় এটা মনে করতাম আগে নিজের ক্যারিয়ার। তারপর অন্যকিছু। তাই মা আমাকে কিছু বলার সাহস পেতো নয়।বেশকিছু দিন যাওয়ার পর মা’কে চেকআপ করাতে আবার সেই হসপিটালে গেলাম।চেম্বারে বসে অপেক্ষা করছি ডাক্তারের জন্য।হঠাৎ ইন্টার্নি করা সেই ডাক্তার মেয়েটাকে দেখতে পেলাম।আমাদের দেখে এগিয়ে আসলো।আর মাকে বললো ” কেমন আছেন আন্টি”?
মা ও বললো ” ভালো আছি মা”।বেশ কথাবার্তা হলো ওনাদের মাঝে।আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে সাহায্য করলো ডাক্তার দেখানোর কাজে।বাসায় ফেরার পর বারবার কেন জানি ইন্টার্নির কথা মনে পড়ছে।ওর মায়াবী মুখ খানা ঔ দিন খুব ভালো ভাবে খেয়াল করলাম।কি যেন আছে।পাওয়ার ওয়ালা চশমার ভিতর থেকে চোখ গুলো আমি বেশ খেয়াল করলাম।চোখের ভাষাটা বুঝতে চেষ্টা করলাম।
–
এরপর কোন কাজ ছাড়াই একদিন হসপিটাল গেলাম।শুধু ওকে একবার দেখবো বলে।ধরা খেয়ে গেছিলাম ওর কাছে।নিজেকে আর লুকাতে পারলাম না।নিজের মনের কথাটা ওকে বলে দিলাম।ইন্টার্নি হেসে হেসে বলে ” মশাই তাই তো বলি মা’কে নিয়ে আসলে কেন আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা হতো”। আমি বললাম “তুমি ই তো দেখো, না হলে কি করে বুঝলে”? তারপর যখনই সময় পেতাম আমরা দেখা করতাম।ইন্টার্নির সাথে সময় গুলো খুব ভালো কাটতো।ওর নামটা ছিলো কাজল।তবে আমি ওকে ইন্টার্নি ডাকতাম।ও খুব হাসতো এটা শুনে।রাস্তা পার হতে ও খুব ভয় পেতো।আমি ওর হাতটা ধরেই সবসময় রাস্তা পার করাতাম।
–
বেশকিছু দিন যাওয়ার পর আমাদের দু’পরিবার আমাদের রিলেশনের কথা জেনে যায়।আর খুব সহজে মেনে নেয়।আমার মা সবসময় এমন একটা মেয়েই চেয়েছিলেন।ওনি তো প্রথমে ই ওকে পছন্দ করেছিলেন।সেটা আমি বেশ বুঝতে পেরেছিলাম।তারপর দু’জনের এনগেইজমেন্ট হয়ে গেলো।দু’জনে স্বপ্নের জ্বাল বুনছিলাম।স্বপ্নের সাগরে বিভোর ছিলাম।আমরা আমাদের ভবিষৎ টা তৈরী করার কাজে নেমে গেছি।আমি সবসময় চাইতাম কাজল বড় একজন ডাক্তার হোক।ওর স্বপ্নটা আমার কাছে সবার আগে ছিলো।কিন্তু হঠাৎ করে একটা ঝড় এসে সবকিছু তছনছ করে দিবে ভাবতেও পারিনি।সে’দিন আমরা বিয়ের গহনা কিনতে যাবো।আমি আগেই এসে ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।তারপর কাজল আসলো।রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে।আমি ভাবছি ও কি করে রাস্তা পার হবে?খুব টেনশনে পড়ে গেছিলাম।আমার কোন কথা না শুনেই কাজল রাস্তা পার হচ্ছে।আর যা ভাবছিলাম সেটাই হলো।কাজলের দেহ টা রাস্তার একপাশে ছিটকে পড়ে গেলো গাড়ীর ধাক্কায়।মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু শেষ হয়ে গেলো।
–
আমি দিকবিদিক ছুটছি। আমার কাজলকে বাঁচাতে।কোনরকম ওকে কোলে করে হসপিটাল আনলাম।আমার সারাশরীরে ওর রক্তে ভরে গেছে।আমি আমার সাথে ছিলাম না।যে হসপিটালে কাজল রোগী দেখতো আজ সে নিজেই সে হসপিটালে নিথর দেহ নিয়ে পড়ে আছে।আমার পরিবার কাজলের পরিবার সবাই হসপিটালে এসেছে।আমি এক কোণে ওর ডাকার অপেক্ষায় বসে আছি।তারপর দিন ডাক্তার এসে বললো।ওরা নাকি আমার কাজলকে বাঁচাতে পারেনি।আমি কি করে বিশ্বাস করবো?আমার কাজল আর নেই।কাঁদতে পারছিলাম না।তবুও গাল বেয়ে পানি পড়ছে।চোখের আর কি দোষ।আমি তো বাধা দিতে পারি না।চোখের কাজ চোখ করবেই।ওর রক্তমাখা আমার গায়ে শার্ট টা এখনো পরে আছি।কাজলের পড়ে থাকা নিথর দেহ টা নিজ চোখে দেখতে পারছিলাম না।আমাদের তো সুখের সংসার বাঁধার কথা ছিলো।কিন্তু কেন এমন হলো?কাজলকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি।বড্ড একা হয়ে গেছিলাম।
–
গত তিন বছরে মা বারবার আমাকে বিয়ে করতে বলেছে।শুধু মা না সবাই বলতো।কিন্তু পারিনি কাজলকে ভুলে নতুন করে অন্য কাউকে নিজের সাথে জড়াতে।হয়ত আরও সময় লাগবে।ভুলতে আমি কখনোই পারবো না।কাজল আমার প্রথম ভালোবাসা।তাঁর সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত আমার কাছে মূল্যবান। কি করে সব স্মৃতি ভুলে যাবো?চাইলেও কি পারা যাবে।সবাই এক রকম না।সবার ভালোবাসা একরকম না।তবে প্রিয় মানুষ কে হারানোর কষ্ট একরকম। এটা সহ্য করা যায় না। আসলে সত্যিকারের ভালোবাসায় কখনো মিথ্যে প্রতিশ্রুতি থাকে না।থাকে না মিথ্যে আশা।ভালেবাসার মানুষ কে হারানোর কষ্ট মেনে নেওয়া যায় না।আমিও মানতে পারছি না।ওর স্মৃতি আমার হৃদয় জুড়ে।
–
আমি, কাজল আর ওর স্মৃতি।
–
ওর সাথে পরিচয়টা হয়েছিলো ঠিক তিনবছর আগে।আমি সদ্য পড়াশুনা শেষ করে জবে ডুকলাম।সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো।হঠাৎ তখন একদিন মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো।আমি অফিস থেকে এসে ই ওনাকে নিয়ে হসপিটাল গেলাম।ওনার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিলো।ডাক্তার দেখে ই মা’ কে হসপিটালে ভর্তির কথা বললেন।আমিও দেরী না করে মা’কে ভর্তি করিয়ে দিলাম। দু’দিন খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিলাম।অফিস আর হসপিটাল।হঠাৎ খেয়াল করলাম একজন ডাক্তার মায়ের খুব দেখাশুনা করছে।মা ও খুব খুশি ডাক্তারের সেবা পেয়ে।তারপর আমি খোঁজ নিয়ে জানলাম, মেয়েটা সদ্য ডাক্তারি পাশ করলো।এখন ইন্টার্নি করছে।হয়ত রোগীর প্রতি তাই এতো যত্নশীল। যাই হোক তখন মা’য়ের সুস্থতাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।প্রায় সাতদিন মা হসপিটালে ছিলো।আমার সাথে ঔ ডাক্তারের টুকটাক কথা হয়েছিলো।তাও মায়ের চিকিৎসার কারণে কথা বলতে হয়েছিলো।
–
এরপর মাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।আসার পর খেয়াল করলাম মা প্রায়শই ঔ ডাক্তারের কথা বলতো।আপু সহ আলাপ করতো।আমাকেও বলার চেষ্টা করতো কিন্তু আমি এড়িয়ে যেতাম।নিজের জব নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম।সবসময় এটা মনে করতাম আগে নিজের ক্যারিয়ার। তারপর অন্যকিছু। তাই মা আমাকে কিছু বলার সাহস পেতো নয়।বেশকিছু দিন যাওয়ার পর মা’কে চেকআপ করাতে আবার সেই হসপিটালে গেলাম।চেম্বারে বসে অপেক্ষা করছি ডাক্তারের জন্য।হঠাৎ ইন্টার্নি করা সেই ডাক্তার মেয়েটাকে দেখতে পেলাম।আমাদের দেখে এগিয়ে আসলো।আর মাকে বললো ” কেমন আছেন আন্টি”?
মা ও বললো ” ভালো আছি মা”।বেশ কথাবার্তা হলো ওনাদের মাঝে।আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে সাহায্য করলো ডাক্তার দেখানোর কাজে।বাসায় ফেরার পর বারবার কেন জানি ইন্টার্নির কথা মনে পড়ছে।ওর মায়াবী মুখ খানা ঔ দিন খুব ভালো ভাবে খেয়াল করলাম।কি যেন আছে।পাওয়ার ওয়ালা চশমার ভিতর থেকে চোখ গুলো আমি বেশ খেয়াল করলাম।চোখের ভাষাটা বুঝতে চেষ্টা করলাম।
–
এরপর কোন কাজ ছাড়াই একদিন হসপিটাল গেলাম।শুধু ওকে একবার দেখবো বলে।ধরা খেয়ে গেছিলাম ওর কাছে।নিজেকে আর লুকাতে পারলাম না।নিজের মনের কথাটা ওকে বলে দিলাম।ইন্টার্নি হেসে হেসে বলে ” মশাই তাই তো বলি মা’কে নিয়ে আসলে কেন আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা হতো”। আমি বললাম “তুমি ই তো দেখো, না হলে কি করে বুঝলে”? তারপর যখনই সময় পেতাম আমরা দেখা করতাম।ইন্টার্নির সাথে সময় গুলো খুব ভালো কাটতো।ওর নামটা ছিলো কাজল।তবে আমি ওকে ইন্টার্নি ডাকতাম।ও খুব হাসতো এটা শুনে।রাস্তা পার হতে ও খুব ভয় পেতো।আমি ওর হাতটা ধরেই সবসময় রাস্তা পার করাতাম।
–
বেশকিছু দিন যাওয়ার পর আমাদের দু’পরিবার আমাদের রিলেশনের কথা জেনে যায়।আর খুব সহজে মেনে নেয়।আমার মা সবসময় এমন একটা মেয়েই চেয়েছিলেন।ওনি তো প্রথমে ই ওকে পছন্দ করেছিলেন।সেটা আমি বেশ বুঝতে পেরেছিলাম।তারপর দু’জনের এনগেইজমেন্ট হয়ে গেলো।দু’জনে স্বপ্নের জ্বাল বুনছিলাম।স্বপ্নের সাগরে বিভোর ছিলাম।আমরা আমাদের ভবিষৎ টা তৈরী করার কাজে নেমে গেছি।আমি সবসময় চাইতাম কাজল বড় একজন ডাক্তার হোক।ওর স্বপ্নটা আমার কাছে সবার আগে ছিলো।কিন্তু হঠাৎ করে একটা ঝড় এসে সবকিছু তছনছ করে দিবে ভাবতেও পারিনি।সে’দিন আমরা বিয়ের গহনা কিনতে যাবো।আমি আগেই এসে ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।তারপর কাজল আসলো।রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে।আমি ভাবছি ও কি করে রাস্তা পার হবে?খুব টেনশনে পড়ে গেছিলাম।আমার কোন কথা না শুনেই কাজল রাস্তা পার হচ্ছে।আর যা ভাবছিলাম সেটাই হলো।কাজলের দেহ টা রাস্তার একপাশে ছিটকে পড়ে গেলো গাড়ীর ধাক্কায়।মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু শেষ হয়ে গেলো।
–
আমি দিকবিদিক ছুটছি। আমার কাজলকে বাঁচাতে।কোনরকম ওকে কোলে করে হসপিটাল আনলাম।আমার সারাশরীরে ওর রক্তে ভরে গেছে।আমি আমার সাথে ছিলাম না।যে হসপিটালে কাজল রোগী দেখতো আজ সে নিজেই সে হসপিটালে নিথর দেহ নিয়ে পড়ে আছে।আমার পরিবার কাজলের পরিবার সবাই হসপিটালে এসেছে।আমি এক কোণে ওর ডাকার অপেক্ষায় বসে আছি।তারপর দিন ডাক্তার এসে বললো।ওরা নাকি আমার কাজলকে বাঁচাতে পারেনি।আমি কি করে বিশ্বাস করবো?আমার কাজল আর নেই।কাঁদতে পারছিলাম না।তবুও গাল বেয়ে পানি পড়ছে।চোখের আর কি দোষ।আমি তো বাধা দিতে পারি না।চোখের কাজ চোখ করবেই।ওর রক্তমাখা আমার গায়ে শার্ট টা এখনো পরে আছি।কাজলের পড়ে থাকা নিথর দেহ টা নিজ চোখে দেখতে পারছিলাম না।আমাদের তো সুখের সংসার বাঁধার কথা ছিলো।কিন্তু কেন এমন হলো?কাজলকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি।বড্ড একা হয়ে গেছিলাম।
–
গত তিন বছরে মা বারবার আমাকে বিয়ে করতে বলেছে।শুধু মা না সবাই বলতো।কিন্তু পারিনি কাজলকে ভুলে নতুন করে অন্য কাউকে নিজের সাথে জড়াতে।হয়ত আরও সময় লাগবে।ভুলতে আমি কখনোই পারবো না।কাজল আমার প্রথম ভালোবাসা।তাঁর সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত আমার কাছে মূল্যবান। কি করে সব স্মৃতি ভুলে যাবো?চাইলেও কি পারা যাবে।সবাই এক রকম না।সবার ভালোবাসা একরকম না।তবে প্রিয় মানুষ কে হারানোর কষ্ট একরকম। এটা সহ্য করা যায় না। আসলে সত্যিকারের ভালোবাসায় কখনো মিথ্যে প্রতিশ্রুতি থাকে না।থাকে না মিথ্যে আশা।ভালেবাসার মানুষ কে হারানোর কষ্ট মেনে নেওয়া যায় না।আমিও মানতে পারছি না।ওর স্মৃতি আমার হৃদয় জুড়ে।
–
আমি, কাজল আর ওর স্মৃতি।
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক