রাজু সবেমাত্র ৮ম শ্রেণীতে উঠেছে। যদিও বয়সের তুলনায় আরো কয়েক শ্রেণী উপরে পড়ার কথা।
কিন্তু মাঝখানে ৩বছর পড়ালেখা বাদ দেয়ার কারণে তা হয়ে ওঠেনি। তাই ক্লাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছাত্র সেই।
এবছর তাদের ক্লাসে নতুন এক ছাত্রি ভর্তি হয়েছে। যার মুখের দিকে একবার তাকালে চোখ ফেরানো যায় না।
মেয়েটার নাম আখি। যে কোনো ছেলে আখিকে ১ম দেখেই প্রেমে পড়ে যাবে।
রাজুর বেলায়ও তার ব্যাতিক্রম হলোনা। আখিকে ১ম দেখেই রাজু তার প্রেমে পড়ে গেলো। আখি ক্লাসের মধ্যে সবচেয়ে শান্ত প্রকৃতির ছাত্রি।
দরকার ছাড়া কারো সাথেই তেমন কথা বলে না। প্রেম ভালোবাসা সম্পর্কে সে কিছুই বোঝেনা।
এদিকে রাজু আখিকে কিভাবে তার প্রেমের জালে ফেলানো যায় সেই চিন্তা করছে। কোনো ভাবেই আখিকে তার প্রেমের কথা বলতে সাহস পাচ্ছেনা সে।
রাজু অনেকবার আখির বান্ধবীদের দিয়ে আখিকে তার ভালোবাসার কথা বলেছে। কিন্তু আখি রাজি হয়নি।
আখি বলেছে যে সে কখনও প্রেম করবেনা।
এরমধ্যে আখি, তার বান্ধবীরা এবং আরো কিছু মেয়েরা গনিত স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে শুরু করে দিয়েছে।
রাজুও তাদের সাথে পড়তে চাইলো। কিন্তু মেয়েদের ব্যাচে মেয়েরা তাকে নিতে নারাজ।
তবুও রাজু ও তার কয়েকজন বন্ধু স্যারকে বলে রাজি করিয়ে তাদের ব্যাচেই প্রাইভেট পড়তে লাগলো।
স্যার যখন অঙ্ক করাতো, রাজু তখন অঙ্ক না করে শুধুই আখির দিকে তাকিয়ে থাকতো।
আখি প্রতিদিনই লক্ষ করতো যে রাজু তারদিকে শুধু তাকিয়ে থাকে। ওদের মধ্যে তেমন বেশি কথা হতোনা।
মাঝে মাঝে শুধু পড়ালেখার ব্যাপারেই দুএকটা কথা হতো।এরমধ্যে আখিও ধীরে ধীরে রাজুর প্রতি কেমন যেন দূর্বল হতে লাগলো।
কিন্তু আখি সেটা কউকে বুঝতে দিতো না। আখি স্বাভাবিক ভাবেই রাজুর কাছ থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতো।
আখি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে যে সে কখনও প্রেম করবে না।
একদিন প্রাইভেট শেষ করে আখি বাড়িতে যাচ্ছে। তখন রাজুও আখিকে কিছু না বলেই তার সাথে হাটা শুরু করলো।
আখি মাথা নিচু করে শুধু হেটেই চলেছে। কেউ কাউকে কিছু বলছেনা।
কিছুদূর যাওয়ার পর একটা ছোট্ট ব্রিজে গিয়ে রাজু আখিকে থামালো।
রাজু তার পকেট থেকে ১টা লাল টকটকে গোলাপ বের করে আখির দিকে হাত বাড়িয়ে তাকে প্রোপজ করলো।
আখি কিছুই বললোনা। এমনকি ফুলটাও নিলো না। কিছু না বলেই আখি আবার বাড়ির দিকে রওনা হলো।
রাজু আগের জায়গাতেই ফুল হাতে চুপ করে দাড়িয়ে রইলো। সেদিন আর কিছু বললো না।
এরপর আরেকদিন রাজু আখিকে ভালোবাসার কথা বলে। সেদিনও আখি কোনো সারা না দিয়ে চলে যায়।
এরপর রাজু ঠিকমতো ক্লাসে আসতো না, প্রাইভেট পড়তো না।
আখি তার বান্ধবীদের কাছ থেকে জানতে পারলো যে রাজু তার জন্য খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
সে যদি রাজুর সাথে প্রেম না করে, তাহলে নাকি রাজু নিজের ক্ষতি করবে।
তখন আখি তার নিজের প্রতিজ্ঞার কাছে হেরে গেলো। আখি তার বন্ধবীদের কাছে বলল রাজুকে বলতে যে সেও তাকে ভালোবাসে।
তারপর আখি আর রাজুর প্রেম শুরু হলো। আখির বান্ধবীরা তাদের প্রেম করতে সহযোগিতা করতো।
আখির নিজস্ব ফোন না থাকায় ও বান্ধবীদের ফোন দিয়ে রাজুর সাথে কথা বলতো।
ভালোই চলতে লাগলো তাদের প্রেম। রাজু মাঝে মাঝে আখি ও তার বান্ধবীদের নিয়ে ফুসকা, আইসক্রিম খেতে নিয়ে যেত।
এরমধ্যে রাজু আখিকে দূরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বললো। কিন্তু আখি যেতে অস্বীকা করলো।রাজুর মাথায় খারাপ চিন্তা ভাবনা ভর করলো। রাজু ভাবলো যে যদি একবার আখিকে নিয়ে রুম ডেট করা যায়, তাহলে আখি তাকে কখনই ছেড়ে যাবে না।
আখিকে কিছু না জানিয়ে রাজু গোপনে সবকিছুর ব্যবস্থা করতে লাগলো। রাজু আখির বান্ধবীদেরকে টাকা পয়সা খাইয়ে তাদের হাত করে ফেললো।
এরপর একদিন রাজু আখিকে বলল যে তার সাথে ঘুরতে যেতে। আখি যেতে না চাইলে তার বান্ধবীরা তাকে জোর করিয়ে রাজি করালো।
তারা বললো আমরাও তোর সাথে যাব। তোর কোনো ভয় নেই। আখি অবশেষে তার বান্ধবীদের কথায় ঘুরতে যেতে রাজি হলো।
বান্ধবীদের উপর আস্থা রেখে একদিন দূরে ঘুরতে গেলো। রাজু আগে থেকেই সেখানে একটা রুম ঠিক করে রেখেছে।
আখি সেগুলোর কিছুই জানেনা। আখির বান্ধবীরা আখির সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করলো।
রাজু, আখি ও তার ২জন বান্ধবী সিএনজিতে করে সেই স্থানে গিয়ে পৌছালো। নদীর পাশের একটা গ্রামে গেলো তারা।
যাওয়ার সময় অনেক খাবার কিনে নিয়ে গেলো।
নদীর ধার দিয়ে সেগুলো খেতে খেতে তারা হাটতে লাগলো।
কিছুদূর যাওয়ার পর একটা নির্জন বাড় দেখিয়ে রাজু বললো যে ঐটা আমার ফুফুর বাড়ি।
সবাই চলো আমার ফুফুর সাথে দেখা করেই আমরা চলে যাব। আখি বললে যাবেনা। তখন আখির বান্ধবীরা বলল-
“যাবিনা কেন? রাজু এতো করে বলছে, গেলে সমস্যা কি? চল যাই”
আখি তার বান্ধবীদের কথায় যেতে রাজি হলো। তারপর সেই বাড়িতে তারা গেলো। বাড়িটার আশেপাশে কোনো বাড়ি নেই।
খুবই নির্জন জায়গা। বাড়িটাতে ঢুকতে আখির ভয় করতে লাগলো। সাথে বান্ধবীরা আছে, তাই কিছুটা সাহস পেলো।
বাড়িতে ঢুকে দেখলো ২টা ঘর। বাইরে রাজুর সমবয়সী একটা ছেলে বসে আছে। রাজু ছেলেটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
বলল যে এটা আমার ফুফাতো ভাই। আখি সেটাই বিশ্বাস করলো।
তারপর একটা ঘরে তাদের সবাইকে বসতে দেয়া হলো। রাজুর ফুফাতো ভাই রূপি ছেলেটা বলল যে “তোমরা সবাই এই ঘরে বসো।
মা ঐ পাড়ায় গেছে একটা কাজে। আমি মা কে ডেকে নিয়ে আসি। তোমরা বসে গল্প করো”
এটা বলেই ছেলেটা চলে গেলো। তারপর সবাই বসে কিছুক্ষন গল্প করলো।
আখির এক বান্ধবী বলল যে “তোরা থাক, আমি একটু বাথরুমে যাবো” সাথে আরেক বান্ধবী বলল যে আমিও যাব।
এটা বলে আখির ২বান্ধবীই ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।
এখন ঘরে শুধু আখি আর রাজু। আখির অনেক ভয় করতে লাগলো। রাজু আখির পাশে গিয়ে বসলো এবং আখিকে জড়িয়ে ধরলো।
তখন আখি নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে দরজার কাছে গেলো।
দরজার কাছে গিয়ে দেখলো দরজা বাইরে থেকে নক করা। আখি জোরে চিৎকার করতে গিয়েও ভয়ে চিৎকার করতে পারলোনা।
এরপর রাজু জোর করে আখিকে খাটের উপর ফেলে দিলো। রাজু জোর করে আখির ওড়না কেড়ে নিয়ে আখির দুহাত বেধে ফেললো।
আখি কেঁদে কেঁদে রাজুর কাছে ক্ষমা চাইলো। আখির কান্নায় যেন রাজু আরো নরপশু হয়ে গেলো। রাজু জোর করে আখিকে ধর্ষন করলো।
আখির তখন কান্না করা ছাড়া কিছুই করতে পারলো না।
আখি কেঁদে কেঁদে বললো:
“এটাই কি তোর ভালোবাসা? আমি অনেক বিশ্বাস করেছিলাম তোকে, আর তুই এতো বড় বিশ্বাস ঘাতকতা করলি আমর সাথে?
আল্লাহ তোর বিচার করবেন একদিন” এগুলো বলে আখি জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
রাজু তার কাজ শেষ করে আখির মুখে পানি ছিটিয়ে আখির জ্ঞান ফেরালো। তারপর আখিকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
সারাটা পথ আখি শুধু চোখের পানি ফেলেছে। কারো সাথে কথা বলেনি।
কথা বলবেই বা কার সাথে, যে বান্ধবীদের সে এতোটা বিশ্বাস করতো, শেষ পর্যন্ত তারাও তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করলো?
ঐ ঘটনার পর থেকে আখি অনেক দিন স্কুলে আসলোনা। আখি রাজুর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলো।
তার বেইমান বান্ধবীদের সাথেও সম্পর্ক ছিন্ন করলো। আখি অনেকদিন মন মরা হয়ে থাকলো।
কিছুদিন পর থেকে আখি সবকিছু ভুলে গিয়ে আবার নিজের মতো করে বাঁচতে শুরু করলো।
তারপর jsc পরিক্ষার পর আখি তার পরিবারের সাথে দূরে কোথাও চলে গেলো।
[গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। একটা সত্য ঘটনা অবলম্বে গল্পটা লেখা। গল্পের রাজু নাম হলো ছদ্মনাম। সে নিজেই তার নিজের মুখে তার কুকর্মের কথা বর্ননা করেছে। আখি দূরে চলে যাওয়ার পর রাজু তার নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।তারপর এই ঘটনা বলেছে।
আর এভাবে হাজারো আখির জীবন কিছু রাজুর মতো পশুর দ্বারা নষ্ট হচ্ছে। তাই সকল মেয়েদের এই গল্প থেকে শিক্ষা নেয়া উচিৎ।আর আখির বান্ধবীদের মতো মানুষদের থেকে দূরে থাকা উচিৎ]