নিতুর জন্যে

নিতুর জন্যে

আজও ভাত আর ডিম ভাজি খেতে হবে তাসফি কে।অবশ্য তাসফি সেটাই শুধু পারে।আর কিছুই রান্না করতে পারে।

স্কুল থেকে এসেই রান্না ঘরে গেল ও।খুদায় ছেলেটার অবস্থা একেবারে নাস্তানাবুদ।

চট করে পেঁয়াজ আর মরিচ কেটে ডিমাটা ভাজি করে ফেলল তাসফি।

ভাত সকালেই রান্না করেছে ও। প্লেট নিয়ে রান্না ঘরেই ফ্লোরের উপরে বসে পড়ল তাসফি। ও টেবিলে বসে খাবে না।

টেবিলে বসে খেলেই নিতুর কথা মনে পড়ে যায় তাসফির।নিতু!নিতুর কথা মনে হতেই তাসফির খারাপ লেগে উঠে।

সেই যে খেয়েছি ওর হাতের রান্না। এর পর থেকে আর ভালো মন্দ খাওয়া হয় নি।কথাটা মনে হতেই চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে।

কিছু কষ্ট আবার নাড়া দিয়ে উঠে।বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে। তাসফি মনে মনে নিতুর কথা ভাবছে আর মুখে ভাত নিচ্ছে।

তাসফি বড় হতেই ওর বাবা মা মারা যায়।এজন্যে ছেলেটা মাস্টার্সটাও কম্পলিট করতে পারল না। কিছু টাকা ছিল ব্যাংকে।

কিন্তু এই টাকা দিয়ে আর কয়দিনই বা যাবে? তাই চাকরি খোঁজা শুরু করে দিল।একদিন একটা দোকানে বসল চা খেতে।

হাটতে হাঁটতে একেবারে ঘেমে গিয়েছে ছেলেটা।কত খুঁজেছ চাকরি। কিন্তু এই পড়ালেখা দিয়ে  কি  আর চাকরি পাওয়া যায়?

যত ভালো ছাত্রই হোক না কেন।চাকরি পাওয়া এত সহজ না।হঠাৎই ওর চোখ গেল সামনের দোকানের দিকে।

দোকানের মালিক খবরেরকাগজ পড়ছিল।তাসফি চায়ের কাপ খালি করে সেই দোকানের দিকে গেল।লোকটার বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে।

কিছুটা কালো।যাকে শ্যামলা বলা হয়।দোকানে বসে থাকতে থাকতে লোকটার বুড়ি বেরিয়ে গেছে।

তাসফি সেদিকে খেয়াল না করে লোকটার সামনে গিয়ে অনুনয় করে বলল,
: ভাই খবরের কাগজটা একটু দিবেন? পড়ব।
লোকটা কিছু না বলে একটা হাই তুলে পেপারটা বাড়িয়ে দিল তাসফির দিকে।
একটু খোঁজার পরেই তাসফি ওর কাংখিত জিনিসটা পেয়ে গেল। প্রাইমারি স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির জন্যে আবেদন করার জন্যে বলা হয়েছে।

তাসফি আরেকটু ভালো করে দেখল মুক্তিযোদ্ধা কোটা থেকে দেওয়া যাবে কি না।হ্যাঁ পেয়েছে ও।দেওয়া যাবে।

ওর বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।মারা যাওয়ার বেশ কিছুদিন আগে তার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ওকে দিয়ে গেল।

এগুলোই এখন একমাত্র সম্বল তাসফির।
দিন তারিখ একবার দেখে নিল।পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে কয়েকটা ছবিও তুলে নিল ও।

একদিন খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গে তাসফির। কেন জানি আজ খুব ভালো লাগছে ওর।মনে মনে আনন্দ আনন্দ ভাব।

উঠেই নামাজটা পড়ে হাঁটতে বেরিয়ে গেল।খুব ভোর বেলার স্নিগ্ধ বাতাসটা গায়ে লাগতেই বেশ ভালো লাগে তাসফির।

যেন হাজারো শান্তি জড়িয়ে যাচ্ছে গায়ে।হৃদয়ে আনন্দের দোলা লাগছে।সূর্য যখন অনেকটাই উঠে গেছে তাসফি তখন ভাবল যে বাড়ি চলে আসবে।

কিন্তু কি মনে করে হুট করে সামনের একটা দোকানে বসে গেল।হ্যাঁ।ও এক কাপ চা পান করবে।এই সময়ে চা না হলেই নয়।

চা খাওয়ার সময় দেখল পাশ দিয়ে এক লোক পত্রিকা নিয়ে যাচ্ছে।
ডাক দিল তাসফি।
লোকটা ওর পাশে এসে দাঁড়াল।
তাসফি পত্রিকা টা নিয়ে বাড়ি ফিরে এল।ঘরে ঢুকে পত্রিকাটা রেখে রান্না ঘরের দিকে যাবে ঠিক তখনই ওর ফোন আসে।

ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল তাসফি। ভাবছে, মামা এত দিন পর কি বুঝে ফোন দিল।অবশ্য এত দিন না।

পনেরো বিশ দিন পর একবার ফোন করেন তিনি।শেষ যখন মা মারা যায় তার কিছুদিন পর মামা বলে তাদের বাড়িতে থাকার জন্যে।

এখন কই থাকব, কি খাব এ নিয়ে তিনি খুব চিন্তা করতেন।তাই আমাকে বললেন তাদের সাথে থাকতে।আমি বললাম কিছুদিন যাক।

তারপর সব গুছিয়ে চলে আসব।আমি ঠিকই গিয়েছি।মামা আমাকে ঠিকি তাদের সাথে রেখেছে নিজের ভাগ্নে হিসেবে, কিন্তু মামি তা মেনে নেয় নি।

পুরো বাসার একজন চাকর বানিয়ে দিল আমাকে। প্রথম প্রথম কি ভালো ব্যবহারই না দেখাত তারা।

কিন্তু দিন কয়েক যাওয়ার পরেই কেমন জানি লাগত আমার ও বাড়িতে।মামি যেন অন্য চোখে দেখে, কেমন জানি পর পর।

অথচ মা থাকা কালিন যত দিন এসেছি ততদিন সেকি আপ্যায়ন করতেন তিনি।

কত হাসির গল্প বলতেন, খুব ভালোবাসাতেন আমাদের আরও কত কি?

আমার এখন সব অভিনয় মনে হচ্ছে। মামা কিছু না বললেও আমি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছি যে মামার উপর কি রকম ধকল যাচ্ছে।

তাই সে বাড়ি থেকে আবার নিজের বাড়ি চলে আসি।স্বাধীন ভাবে বাঁচার জন্যে।কারো কথার নিচে থাকাটা আমার কেন জানি ভালো লাগত না।

তাই চলে এলাম।মামা বুঝতে পারলেও কিছু বললেন নি।
আবার ফোনটা বেজে উঠল। তাসফি ভাবনা থেকে বের হয়ে ফোনটা ধরল।যাক! মামা তবুও খোঁজ খবর নেয়।

আর আপন কেউ আছে বলে মনে হয় না।অথচ বাবা মা থাকাকালীন আপন লোকের অভাব ছিল না।যাক!

যা চলে গেছে।তা নিয়ে কথা না বলাই ভালো।
তাসফি কথা বলতে বলতে রান্না ঘরে গেল।কারন ওকে এখন নাস্তা বানাতে হবে।

না।আজকের পত্রিকায় তো প্রাইমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিয়গের কোন খবরই দেয় নি।বেপার কি?

আজকেই তো রেজাল্টটা দেওয়ার কথা।তাসফি মনে মনে কথা গুলো ভাবে।
তাসফি চায়ে এক চুমুক দিয়ে আবার পত্রিকায় নজর দিল।না।এখানে তো নেই।তাড়াতাড়ি ফোনটা বের করল।

কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজ থেকে বলল,
ও আজ সেই কাংখিত চিঠি খানা দিবে।তবে আমার তো রেজাল্টটা দরকার।তাসফি ভাবে।

কিছুক্ষণ পর ভেবে বের করল যে পুরোন পত্রিকা খুঁজতে হবে।

এমন ওর বাসার কলিংবেল বেজে উঠে। বেশ কয়েকবার বাজানোর পর তাফসি কিছুটা বিরক্ত হয়ে উঠে গেল।

দরজা খুলতেই দেখল এক লোক দাঁড়িয়ে আছে।হাতে কয়েকটা চিঠি।প্যান্ট ও শার্ট দুটোই এক কালারের। বোধ হয়ে পোষ্ট অফিস থেকে আসছে।
তাসফি সাইন করে ওই লোকটাকে বিদায় দেয়।
খামের উপর নিজের নাম দেখতে পেল ও।এক পাশ দিয়ে ছিড়ে কাগজটা বের করল।তাসফি কেমন জানি বিস্ময় নিয়ে চিঠিটার দিকে তাকিয়ে আছে।

নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না ও।হ্যাঁ! ওর চাকরি হয়েছে।খুশিতে ছেলেটা একেবারে কেঁদেই দিল।কাকে দিবে এই খবর।

কে শুনে একটু খুশি হবে।তাসফির আনন্দের ভাগ কে নিবে? কেউই তো নেই।যারা ছিল তারা তো পরপারে চলে গেছে।
বাবা মায়ের জন্যে দোয়া করাল তাসফি।সাথে তাদের কবরও জিয়ারত করে আসল ও।তারপর মামাকে খবরটা জানাল ও।
চাকরি পাওয়ার বেশ কিছুদিন পর মামা আমাকে বিয়ে করতে বললেন।আমিও নারাজ হই নি।আর কত একা একা কষ্ট করব।

একা একা কত কান্না করব।কেউ আসুক, আমার কষ্টের ভাগ নিক।সুখের ভাগ নিক।তাই ওর মামাকে হ্যাঁ বলে দেয়।

ছোট খাট একটা আয়জন করে বিয়ে হয়ে যায় তাফসির। তাসফির বিয়েতে ওর মামিও আসল এবং পেট ভরে খেয়ে গেল।

তাসফির বিয়েতে ওর বন্ধুরাই যা কাজ করল।মামা কাজ দেখিয়ে দিত আর ওর বন্ধুরা সেটা করত।

ছোট অনুষ্ঠান হওয়াতে এমন খাটতে হয় নি কাউকে।
খুব দ্রুতই নিতুর সাথে বিয়েটা হয়ে যায় তাসফির।নিতুর যে বিয়েতে অমত ছিল সেটা কিন্তু না।বরং তাসফিকে বেশ ভালোই লাগেছে ওর।
তাসফি চাকরি পাওয়ার কয়েক মাস পরেই যে স্কুলে ওর চাকরি হয়েছে সে স্কুল থেকে বদলি হয়ে নিজের এলাকার স্কুলে আসে।

এতে অবশ্য বেশ খাটতে হয় ওকে।

: এই উঠ! সকাল হয়ে গেছে।উঠ!
: উমম! আরেকটু ঘুমাই না।
: আরে বেলা সাড়ে সাতটা বাজে।আর তুমি বলচ আরেকটু ঘুমাবে।উঠ! উঠ বলছি।
: আচ্ছা।তুমি যাও।আমি উঠছি।
: জলদি উঠ।আমার রান্না অনেকটাই ঘনিয়ে এসছে।
এই বলে নিতু চলে যায়।
কিছুক্ষণ পরে এসে দেখে তাসফি এখনও ঘুমিয়ে আছে।এবার খুব বিরক্ত হল ও।মেজাজটা খানিকটা গরম হতে থাকল।

এগিয়ে গিয়ে বলল,
: অ্যাই।অ্যাই তাসফি! এই তোমার উঠা?
:…..
: তুমি উঠবে নাকি আমাকে অন্য ব্যাবস্থা নিতে হবে।
আমি ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসল।বলল,
: এই তো উঠছি।
: তোমার এই উঠার ঠিক নেই।দাড়াও।
এই বলে তাসফির হাত ধরে টানতে লাগল।তাসফি বাধ্য ছেলের মত উঠল।তারপর নিতু ওকে ফ্রেশ হতে বলল।
তাসফি ভাবে কত ভালো মেয়েটা। আমার কত কেয়ার করে।এমন একটা দিনের জন্যেই তো অপেক্ষায় ছিলাম।

এই বলে মনে মনে হাসে তাসফি।এটা মনে হতেই খারাপ লাগল যে মেয়েটাকে তেমন কিছু দিতেও পারি না।কিন্তু আমি কি করব।

টাকা হাতে আসলেই যেন বিদ্যুৎ গতিতে চলে যায়।

রহিম চাচার দোকানে বাকি হয়ে যায়, অমুক লোকের দেনা দেওয়া এগুলো করতেই যেন টাকা গুলো হাত থেকে চলে যায়।

তাসফি কিছু একটা ভেবে আবার হেসে উঠে।মনে মনে।

: আচ্ছা তুমি এত ভালো রান্না কর কিভাবে?
খাবার টেবিলে নিতুকে কথাটা বলল তাসফি। নিতু লজ্জা পেয়ে বলল,
: মা শিখিয়েছে। যান, আমার মায়ের হাতের রান্না না খুব স্বাদ।
: হা হা হা।আমি জানি।এইত সেদিনই তো খেয়ে আসলাম।আসলেই অসাধারণ।
এটা শুনার পর নিতুর মুখটা কালো হয়ে গেল।তবে কিছু বলল না।তাসফি হয়ত বুঝতে পেরেছে।

তাই ও নিতুর দিকে তাকিয়ে বলল,
: তোমার হাতের রান্না কিন্তু তোমার মায়ের রান্না থেকেও বেশ ভালো হয়।
এই বলে তাসফি মৃদু হাসল।নিতু মাথা তুলে তাসফির দিকে তাকাল।একটু হাসল। আবার লজ্জাও পেল।
যাওয়ার সময় তাসফির পিছন পিছন নিতু দরজা পর্যন্ত আসল।বলল,
: দুপরে ঠিক চলে এস।এক সাথে খাব।
: আচ্ছা।
তাসফি নিতুর দিকে তাকাতেই দেখল মেয়েটার মুখটাতে মলিন হয়ে আসছে।হয়ত কিছুক্ষণ একা থাকবে।

তাসফি এগিয়ে এসে নিতুর কপালে একটা চুমু খেল।নিতু একটু প্রশান্তির হাসি দিল।

দিন দিন নিতু কেমন জানি বদলে যাচ্চে।আগের মত আর তেমন আচরণ করে না।অল্প কিছুতেই রেগে যায়।খারাপ ব্যবহার করে।

সারাদিন মোবাইল টিপবে।কি জানি কি করে।তাসফি কথা গুলো ভাবে।কেমন জানি হয়ে গেছে।ঘুমাতে আসে রাত করে।

আমি কিছু বললে কোন একটা বাহানা বানিয়ে দেয়।আমি ওর এমন আচরণে খুব অবাক হই।

বিয়ের ছয়মাস পেরুতেই এমন পরিবর্তন মেনে নিতে পারছে না তাসফি। তবুও অগাত বিশ্বাস রাখে ওর পর।

কারন একটাই ভালোবাসে নিতুকে ও।খুব ভালোবাসে।

: কি বেপার তুমি কই গেছিলা?
দুপরে ভাত খেতে আসে তাসফি। এসে দেখে ঘরে তালা মারা।নিতুকে ফোল দিতেই বলল আসছি।কিন্তু ও যাবে টা কই?

ওর তো বাইরে যাওয়ার তেমন কোন প্রয়োজন নেই।
নিতু তালা খুলতে খুলতে বলল,
: আরে আমার এক বন্ধু আসছিল।ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
: তোমার তো কোন বন্ধু এখানে থাকে না?
: তো? তো কি হয়েছে।ও আসছে এখানে। আমার সাথে দেখা করতে।আর কত ঘরে বসে থাকা যায়।
: রাগ কেন? তুমি উনাকে তো ঘরে নিয়ে আসতে পারতে।
নিতু কিছুটা ধিক্কার দিয়ে বলল,
: তোমার যে ঘর? কাকও তো আসে না।
এই বলে ও ঘরে ঢুকে গেল।আরে ওর এই জুতা তো আমি কিনে দেই নি।জুতা দেখে তো মনে হয় খুব দামি।

জিজ্ঞেস করব? নাহ।থাক।পরে আবার মেজাজ গরম হয়ে যাবে পাগলির।

আমাদের সাংসারিক অবস্থা খারাপ হতে লাগল।দিনে প্রায় অনেকবার ঝগড়া হত।

তার মধ্যে ও আমাকে অপমান করত।কি আছে? এই প্রশ্ন তুলত।
সবকিছু উলটপালট হতে লাগল।পরশু ওর জন্ম দিন।ওর জন্যে একটা দামি শাড়ি কিনেছে আর একটা সোনার চেইন বানিয়েছি।

পাগলির জন্মদিনে উপহার দিব।অবশ্যই খুশি হবে ও।খুশি হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরবে।এগুলো মনে পড়তেই আনমনে হেসে উঠিল ও।

শাড়ি আর চেইনটা লুকিয়ে রেখেছে।কেকও অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে।তাসফি শুয়ে আছে।একপাশ হয়ে।

নিতু এখনও আসে নি।তাই ডাক দিল ওকে।ও শায় দিয়ে বলল,
: আসছি।তুমি শুয়ে পড়।
: তাড়াতাড়ি আস।
নিতু আসতেই নিতুকে বুকে নিয়ে শুয়ে পড়ল তাসফি। যেন হাজার শান্তি এর মাঝে বিরাজ করে।নিতুও চুপচাপ শুয়ে আছে।

সকাল হতেই তাসফি দেখল নিতু ওর পাশে নেই।হয়ত রান্না ঘরে আছে।কিন্তু আমাকে ডাকল না কেন? ভুলে গেল নাকি?
তাসফি ডাক দিল,
: নিতু কে।এই নিতু!
ওপাশ থেকে কোন শাঁড়া পেল না ও।কেমন জানি বুকটা ধক করে উঠল ওর।

বিছানা থেকে নামার সময় দেখল নিতুর বালিশের উপর একটা কাগজ রাখা।সাথে একটা কলমও।
ডিভোর্স লেটার।তাসফি বুকের ভেতর কেমন জানি শুন্যতা টের পেল। এ কার ডিভোর্স পেপার? নিচে চোখ যেগেই দেখল নিতুর ছোট্ট স্বাক্ষর খানা।

একটা ছোট কাগজ পেল ভিতরে।ওটাতে লিখা, তাসফি! তোমাকে প্রিয় লিখার অধিকার আমার এখন আর নেই।আমার প্রিয় অন্য কেউ।

সে তোমার মত এমন দু’চার জনকে বিনা কষ্টে খাওয়াতে পারবে। প্রথম প্রথম তোমার সাথে আমি খুব ভালোই ছিলাম।

কারন আমি আগে গরিব ছিলাম।তাই তোমাকে মেনে নিয়েছি।কিন্তু শাকের আমার জিবনে আসার পর থেকে আমার সব কিছু পাল্টে গেল।সব।

নিজেকে চিনলাম তখন।তখনই মনে হল তোমার মত এমন লোকের সাথে আমার বিয়ে মেনে নেয়াই যায় না।

শাকেরের সাথে আমি ভালো থাকব।এবং আমি ওকেই বিয়ে করব।ভালো থেক।….নিতু।

তাসফি কিছুক্ষনের জন্যে কেমন জানি বোবা হয়ে যায়।একদৃষ্টিতে কাগজটার দিকে তাকিয়ে থাকে।খুব দ্রুত চোখ থেকে পানি পড়া শুরু করে দেয়।

বেশ কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর কাগজটা মুঠোর ভিতর ভাজ করে ছুড়ে মারে।চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করে তাসফি।

পাগলের মত ছুটে যায় ফোনের কাছে।ফোন দিতেই বন্ধ পেলল ফোন।বেশ কয়েকবার দিয়ে ফেলে।কিন্তু মহিলাটা বার বার এক কথাই বলে।

ছুড়ে মারে মোবাইটা। দেয়ালের সাথে বাড়ি খেয়ে ভেঙ্গে কয়েক ভাগ হয়ে যায়।দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে মাথায় হাত দিয়ে খুব কান্না করে ছেলেটা।

কিন্তু সে কান্না কেউ শুনে না।কেউ এগিয়ে আসে না ওকে শান্তনা দিতে।তাসফির যেন সব কিছু গুলিয়ে গেছে।কেমন জানি চিৎকার করে কান্না করছে।
…….’
ভাত মুখেই কেঁদে উঠল তাসফি। চোখ দিয়ে আজও জল গড়িয়ে পড়ে। ভাত কান্নার এক পর্যায়ে শুকনো ভাত গুলো গলা দিয়ে নামার চেষ্টা করে।

কিছুদুর যেতেই আটকে যায় ভাত গুলো।তাসফি দ্রুত পানি খোঁজে। কিন্তু ও আজ ভুলে পানি নিয়ে আনেনি।

পানি টেবিলে আছে।ওখানে গিয়ে আনতে হবে।

তাসফি উঠার চেষ্টা করল।কিন্তু হাত পা সব অবশ হয়ে আসল।শ্বাস নিতে পারছে না।মাটিতে শুয়ে গেল ও।চোখ গুলো বড় হয়ে গেল।

চিৎকার আসছে না গলা দিয়ে।কেমন জানি আওয়াজ করছে।এই বুঝি মারা যাবে ও।চোখের সামনে নিতুর চেহারাটা ভেসে উঠল।

আর ভাবল,আমি আসছি মা।বাবা আমি আসছি।তোমার একা গেলে কেন? আমাকে নিয়ে যেতে।বড্ড কষ্ট হয় মা।আমার বড্ড কষ্ট হয়।

কথা গুলো ভাবে ও।ভাত গুলো এখনও লেগে অাছে গলায়।নামছে না।কাশিও আসছে না।চোখ দুটো ক্রমশ লালা হতে লাগল।ককিয়ে উঠল ও।

গলায় হাত দিয়ে হাত পা নাড়তে লাগল।গলা ছেড়ে হাত নাড়াতে লাগল ও।বাঁচার চেষ্টা করছি ।কিন্তু কেন? কে আছে আমার? কেউ নেই।

সবাই স্বার্থপর। সবাই সময় বন্ধু। সবাই।কথা গুলো ভাবল ও।শক্তি ক্রমশ কমে আসছে।আর পারছে না।লালা বেরিয়ে আসছে ওর মুখ দিয়ে।

কষ্টে হাত পা নাড়াতে লাগল। এমন সময় হাতে সয়াবিন তেলের বতলটা বাড়ি খেল।প্রথম ধরতেই ওটাতে হাত লাগল না।

দ্বিতীয় বার ধরে অনেক কষ্টে বতলের মুখ খুলার চেষ্টা করল।হাত কাঁপছে ওর।কাপা হাতে বতলের মুখ খুলে এক বতল তেল মুখে ডেলে দিল ও।

তেল গুলো গিলার সাথে সাথে ভাত নেমে গেল।সাথে সাথে বেরিয়ে এল ওর আর্তনাদ। চাপা আওয়াজ বেরিয়ে এল মুখ দিয়ে।

কিছুক্ষণ পর কেশে উঠল ও।বেঁচে গেল তাসফি। তেল খেয়ে।
‘ওখান থেকে কাঁপা কাঁপা পায়ে হেঁটে টেবিলের দিকে এগুলো ও। টেবিলে গিয়ে কয়েক গ্লাস পানি খেয়ে নিল।তারপরেই কান্না শুরু করে দিল।

বলতে লাগল, কেন এমন করলে নিতু।কেন? কেন আমায় এত কষ্ট দিলে।আজ তুমি থাকলে হয়ত এমনটা হত না।জানো,আমার কর কষ্ট হচ্ছিল?

জানো?না।তুমি জানো না।কারন তুমি স্বার্থপর। বড় স্বার্থপর।

কিছুটা ভালো লাগার পর উঠে গিয়ে শাড়ি আর চেইনটা বের করল ও।কয়েকটা ছবি তুলে নিতুর নাম্বারে পাঠিয়ে দিল।লিখল,
দেখ! তোমার জন্যে কেনা শাড়ি।দেখ চেইনটাও ঠিক আছে।কিন্তু তুমি ঠিক নেই।মনে রেখ অন্যায় খোদাও সহ্য করতে পারে না।

আজ তুমি থাকলে এগুলো তোমার হত।কিন্তু খোদার কি বিচার আজ তোমার এগুলো তো দুরে থাক।কোথাও মাথা গুঁজবার জায়গাটুকুও নেই।

সাথি হারানোর কষ্ট কি বুঝতে পারছ এখন।পারছ?
মেসেজটা দিয়ে সিমটা ভেঙ্গে ফেলে ও।তারপর ব্যাগটা কাঁদে নিয়ে কোথায় যেন চলে যায় ও।হারিয়ে যায় তাসফি। এই অভাগা শহর থেকে।

মেসেজটা পেতেই ফোন দেয় নিতু।কিন্তু বন্ধ পায়।আবারো কান্না শুরু করে।বলে,
ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটাও বুঝি দিলে না।এই বলে কান্না করে ও।খুব কান্না।কেউকে ঠকানোর কান্না।

সত্যি কারের ভালোবাসা হারিয়ে কান্না করছে ও।
দেহ লোভি শাকেরের প্রতারণার জন্যে কান্না করছে ও।করুক কান্না।এটাই ওত উপযুক্ত শাস্তি।

কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ে ও।মারাত্মক রোগে আক্রান্ত করে ওকে।মারাত্মক।
…………****…………

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত