মিরা কান্না

মিরা কান্না

-মিরা, তুমি কি আমায় সত্যি ভুলে
যাবে! আমায় ছেড়ে চলে যাবে! যেও না প্লীজ| বড্ড একা হয়ে যাবো আমি|

আমি চোখে একগাদা জল নিয়ে সামনে বসে থাকা ফর্সা মুখওয়ালা মিরা নামক মেয়েটার দিকে তাকাই| তার চোখে মুখে প্রচন্ড বিরক্তি মিশে আছে| ভ্রু জোড়া এলোমেলোভাবে কুছকে আছে কপালের সাথে| গোলাপি রঙে আবৃত ঠোট দুটোও যেন আমায় চরম ভাবে প্রত্যাখান করে| আমি প্রথমবারের মত চমকে উঠে মিরার চাহনিতে আমার জন্যে তীব্র অবহেলা দেখি| চট করেই যেন সন্ধ্যায় নেমে আশা একগাদা বিষন্নতা আমায় আঁকড়ে ধরে| নীল আকাশের কালো মেঘ গুলো যেন

হুট করেই আমার চেহারায় ভেসে উঠে| আমি কষ্ট পাই ভীষন| ভ্রু জোড়া সরল করে চোখে মুখে তীব্র অসহায়ত্ব নিয়ে আমি মিরার দিকে তাকাই|সে যেন পাথর হয়ে গিয়েছে| আমার এমন আবেগমাখা কথা গুলো তার মাঝে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলে না। বরং সে যেন বিরক্ত হচ্ছে। পাহাড় সমান বিরক্ত তার চাহনিতে| আমার অসহায়
চাহনি দেখেও তার মন গলে না|সে ভ্রু কুছকে আমার দিকে তাকায়। বলে,

-তোমায় ভুলে যাবো আমি। মনে রাখবো না। আমি মনে রাখতেও চাই না। তোমার সাথে আমার ভালোবাসা-বাসি এখানেই শেষ। আমাদের পথ চলা এতদূর ছিল। এর বেশি নয়। আমি এর বেশি চাই না আর। আমাকে ভুলে যেও।
আমার কথা তার মাঝে প্রভাব না ফেললেও তার কথা গুলো আমার মাঝে চরমভাবে প্রভাব ফেলে। প্রতিটা শব্দ যেন এক একটা তীক্ষ্ণ তীরের মত আমার হৃদয় পল্লিতে গিয়ে আমার কোমল হৃদয়ে আঘাত করছে। একা আঘাত করছে

না। তীরের মাথায় অনেক গুলো কষ্ট লেগে থাকে। সেগুলো আমার হৃদয়ের রক্তে মিশতেই গা কাটা দিয়ে উঠে। সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন হয়। ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত কোষে কোষে। রক্ত একা যায় না। সঙ্গে করে নিয়ে যায় একগাদা কষ্ট। প্রতিটা কোষে রক্ত মিশ্রিত কষ্ট যায়। আমার কষ্ট বাড়ে এবার। পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়া কষ্ট আমায় একটু একটু করে কষ্ট দিতে থাকে। চোখে জল জমে। গড়িয়ে পড়ে না। আমি জল ভরা চোখ নিয়ে তীব্র আকুতি নিয়ে মিরার দিকে তাকাই। মিরা অন্য দিকে তাকিয়ে। আমি আলতো করে তার হাত ধরি। সে চমকে উঠে প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে এক ঝটকায় আমার হাত সরিয়ে দেয়। এবার জল পড়ে চোখ থেকে গাল বেয়ে। বলি,

-কি হয়েছে বল! কোনো ভুল করেছি আমি। তোমার কোন কথা শুনি নিই। সিগারেট ছেড়েছি অনেকদিন হল। রাতবিরেত আড্ডা দেওয়া বন্ধ করেছি। রাত জাগা হয় না আর। তুমি যা বলেছো তাই করেছি। এখন! এখন কি হল! কি ভুল হয়েছে আমার দ্বারা। বল কি করতে হবে! তুমি যা বলেছো তাই করেছি, এখন যা বলবে তাই করবো। তবুও প্লিজ

আমাকে ছেড়ে যেও না। আমার কষ্ট হবে। ভীষন কষ্ট হবে। প্লিজ যেও না! প্লিজ…
এতটুকু বলে মিরার হাত ধরি আমি। অনুনয় করি। তার বিরক্তি বাড়ে। বলে,

-সম্ভব নয়। তোমার সঙ্গ ভালো লাগছে না আমার। আমি তোমাকে চাই না আর!

-চাও না! মিরা, এইতো গেল মাসের কথা। এই পার্কের এই ছোট্ট বেঞ্চিটাতে বসে তুমি আমার হাত চেপে ধরে খুব করে চেয়েছো আমায়। আমায় পাবার আশায় তোমার তোমার দুচোখ সেদিন কেঁদেছিল। আজকে একি পার্ক,একই বেঞ্চিতে বসে সেই তুমিই বলছো তুমি আমায় চাও না। তোমার চোখ আজ আমায় তীব্রভাবে প্রত্যাক্ষান করে। কেন মিরা! কেন!

-বিরক্ত! আমি আজ তোমার উপর চরম বিরক্ত। তোমায় ভালোবাসতে ইচ্ছে হয় না আমার। একগেয়েমিতে ভরে গেছে সব। তোমার ভালোবাসা আজ ফিকে হয়ে গিয়েছে। সব কিছুই যেন আদিখ্যেতা মনে হয় আমার কাছে। তুমি,তোমার সঙ্গ,তোমার উপচে পড়া ভালোবাসা আজ আমার কাছে ন্যাকামি মনে হয়। সহ্য হয় না।
আমি মিরার দিকে তাকিয়ে থাকি এক দৃষ্টিতে। তার চোখ বলছে সে মিথ্যা বলছে না। তার বলা প্রতিটি শব্দ সত্য। তাহলে! তাহলে মিরা কি সত্যিই আমায় ভালোবাসে না!

-তাহলে এতদিন যা ছিল আমাদের মাঝে এসব কি! সব কি মিথ্যা! এই পাঁচ বছরের গড়ে তোলা একটা সম্পর্ক তুমি পাঁচ মিনিটেই শেষ করে দিচ্ছো। তাও আবার একটা ছোট্ট কারণে। আমার কিসে এত বিরক্ত তুমি! কি পছন্দ নয় আমার! বল মিরা বল! তোমার এত অবহেলা আমি নিতে পারি না। সহ্য হয় না একদম।
মিরা আমার চোখে চোখ রাখে। বলে,

-পাঁচ বছর তোমায় ভালোবেসেছি। তুমি বেসেছো। আমার একটুর জন্যে মনে হয় নিই তুমি একদিন আমার বিরক্তের কারণ হবে। তোমায় অবহেলা করতে হবে এটা আমি ভাবতেও পারি নিই। বরং তোমায় অন্য কোন মেয়ের সাথে দেখলে কষ্টে বুক ফেটে যেত। যেন তোমায় হারিয়ে ফেলছি। কান্না আসতো খুব। কিন্তু আজকাল সেটা আর হচ্ছে না। তোমায় নিয়ে অনুভূতি জাগে না এ মনে। খারাপ লাগে না। আমি জানি না এমন কেন হচ্ছে। তবে তোমার সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। মোটেও না। আমি পারছি না আর।

-এটা হয় না মিরা! এমন একটা কারণে তুমি আমার পাঁচ বছরের ভালোবাসাকে শুকনো পাতার মত রাস্তার সাথে মাড়িয়ে দিতে পারো না।এটা অন্যায়। বড় অন্যায়। প্লিজ মিরা! একটু ভাবো। আমাদের কতগুলো স্বপ্ন ছিল। একটা ভালোবাসার ঘর ছিল। আমি ছিলাম, তুমি ছিলে,আমাদের বাবু ছিল। মিরা তুমিই তো সেদিন বলেছিলে ঘর এভাবে সাজাবে। উত্তর মুখী বারান্দা তোমার পছন্দ। বারান্দায় তোমার লতাবাহার গাছ থাকবে। আরো কত…
আমাকে বলতে দেয় না মিরা। নিজে বলে উঠে,

-এসব বলো না। আমার খারাপ লাগে পুরনো সেই আবেগের কথা গুলো মনে পড়লে। আমি মনে করতে চাই না আর। আমি চাই তুমি আমায় ভুলে যাও। আমিও তোমায় ভুলে যাবো।

-ভুলে যাবে। মিরা তুমি আমায় ভুলে যাবে। পারবে?
-হু। খুব পারবো!

-কিভাবে! কি দিয়ে মুছবে? মোছার মত কিছু আছে মিরা!
মিরা কথা বলে না। চুপ করে থাকে। আমি বলি,

-মিরা তুমি আমায় তোমার মন থেকে মুছতে পারবে না। কখনই না। নিজের ভালোবাসার প্রতি এমন বিশ্বাস আমার আছে। শুনো ভালোবাসা মুছে ফেলার কোন যন্ত্র আজো তৈরি হয় নিই। কোন না কোন ভাবেই হৃদয়ে ভালোবাসার দাগ থেকে যায়। থাকবে। আজীবন থাকবে। কলমের কালী সাদা ফ্লুয়িড দিয়ে মুছে ফেললেও সেই সাদা, মোটা হয়ে থাকা অংশটা বলে দিবে যে এখানে আগে লিখা ছিল। কারো নাম লেখা ছিল। যেটা মুছে ফেলার বৃথা চেষ্টা করা হয়েছে। আমি আমার নাম তোমার হৃদয়ে খুব যত্ন করে লিখেছি। যে তোমায় পড়বে,তোমার চোখ পড়বে,তোমার মন পড়বে সে ঠিকই টের পেয়ে যাবে তুমি অন্য কারো “তুমি” ছিলে। কেউ একজনকে তীব্রভাবে ভালোবেসেছো তুমি। মিরা তুমি অনেক চাইবে ভুলে যেতে। পারবে না। তোমার চোখ মুখ বলে দিবে যে তুমি স্বার্থপরের মত নিজের পাঁচ বছরের ভালোবাসাকে কোরবানি করেছো কেবল নিজের ভালোর জন্যে। বিয়ের পর একটা সুন্দর জিবন হবে এই ভেবে। মিরা সুন্দর জিবন হয়তো তোমার হবে,কিন্তু তুমি চাইলেই আমাকে ভুলতে পারবে না। এমনি এক বিষন্ন

বিকেল তোমায় আমার কথা জানিয়ে দিবে। বর্ষার তুমুল বর্ষণে যখন মানুষ একাজে ওকাজে ব্যস্ত হয়ে থাকবে তখন তুমি ব্যস্ত হয়ে আমার কথা ভাববে। একটু হলেও ভাববে। বিকেল বেলা পার্কে বসে দুজনের করা হাজারো গল্পের কথা ভাববে যখন তুমি নিজের স্বামীর সাথে গল্প করতে বসবে। মিরা তখন তোমার কষ্ট হবে। ভীষণ কষ্ট হবে। আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও। একটু বিরক্তি ভেবে আমাকে তাড়িয়ে দিয়ে ভালো থাকবে না তুমি। তুমি ভালো না থাকলে আমি ভালো থাকব না। প্লিজ মিরা একটু বুঝার চেষ্টা কর! আমি তোমাকে অসুখী রাখবো না। ভালোবাসার অভাব হবে না। মিরা তুমি বিয়ে করে ভালোবাসার অভাবে দিনদিন কষ্ট পাবে আমি সেটা দেখতে পারবো না মোটেও। তুমি তো জানই তোমার কষ্ট আমার সহ্য হয় না একদম। প্লিজ মিরা, প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না। প্লিজ!

আমি কান্না আটকে রাখার চেষ্টা করেও আটকে রাখতে পারি নিই। দুচোখ বেয়ে কষ্ট ঝরে আমার। জল মিশ্রিত কষ্ট। বড্ড অসহায় আজ আমি। কেউ আজ আমায়,আমার ভালোবাসা কে নিজের ভালো হবে ভেবে অপমান করে তাড়িয়ে দিচ্ছে এটা সহ্য হয় না আমার। আমি কান্না করতে থাকি। নিঃশব্দে কাঁদি। মিরা আমার দিকে তাকায় না। তার মুখের কাঠিন্যতা একটুর জন্যে কমে নিই। আমি চূড়ান্ত ভাবে অবাক হয়। মিরার মাঝে আমি নেই আর। আমি হারিয়ে গিয়েছি। মিরা আর আমাকে চায় না। আমার ভালোবাসা আজ ফিকে হয়ে গিয়েছে। শুকনো পাতার মত শুকিয়ে গাছ থেকে ঝরে পড়ে গিয়েছে। আমার ভালোবাসা আজ তাকে প্রচন্ড বিরক্ত করে। কারো বিরক্তির কারন হয়ে আমি আমার ভালোবাসাকে অপমান করতে চাই নিই। হেয় করতে চাই না। খুব নিরবে ফিরে যেতে হবে আমায়। নিজেকে আড়াল করতে হবে। অনেক হয়েছে! আর না। যে আমাকে চায় না, আমি কেন তাকে চাইবো। শেষ একটা প্রশ্ন করার বাকি ছিল আমার। দ্বিধা না করে বললাম,

-ছেলেটা কি করে?

মিরা যেন চমকে উঠে। যেন বিশ্বাস হচ্ছে না তার। চট করেই আমার দিকে তাকায়। আমি তার দিকে তাকাই নিই আর। ওই চোখের দিকে তাকালে নিজেকে আমি ঠিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। মিরা তাকিয়ে থাকল আমার দিকে। একটু নিরাবতায় কাটল কিছু সময়। মিরা চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে,

-একটা প্রাইভেট ব্যাংকে জব করে।

আমার বুকের ভেতর মুছড়ে উঠে। ভীষন কষ্ট হতে থাকে। তাহলে আমি যা ভেবেছি তাই। মিরার বিয়ে হচ্ছে । কোন ব্যাংকারের সাথে। ভালো বেতন নিশ্চই। আমি চুপ করে থাকি। চোখের কোনা বেয়ে চট করেই ক’ফোটা জল মাটিতে পড়ে। মিরা দেখে না। আমি বলি,

-বিয়ে কবে?

মিরার যেন চূড়ান্ত ভাবে অবাক হয় এবার। যেন বিশ্বাস করতে পারছে না কিচ্ছু। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। মিরার চোখে চোখ রাখি। সে চট করেই চোখ নামিয়ে নেয়। আমার চোখ দেখতে চায় না সে আর। কথাটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না। কোন মতেই নিজের মনকে মানিয়ে নিতে পারছি না। আমি মিরার দিকে তাকিয়ে থাকি ঘোর লাগা দৃষ্টিতে। চোখ সরাতে ইচ্ছে হয় না আমার। সে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। বলে,

-কথা বার্তা চলছে।

আমি চুপ করে থাকি কিছু সময়। খুব অনুনয় করে মিরার দিকে তাকাই। বলি,

-হাতটা একবার ধরি? কেবল একবারের জন্যে! প্লিজ না করো না। ফাঁসির আসামীরও শেষ ইচ্ছেটা পূরন করা হয়। আমি তো ফাঁসির আসামী না। একজন ব্যার্থ প্রেমিক। আমার শেষ ইচ্ছেটা কি পূরন হবে না? শেষ বারের মত আমার এই ইচ্ছেটা অপূর্ণ রেখো না। প্লিজ!

মিরা আমার দিকে তাকায়। কি দেখে জানি না সে আমার আবদারটা রাখল। আমার চোখের জমে থাকা জল দেখে নিশ্চই। আমি মিরার হাত ধরে থাকলাম কিছুক্ষণ। তারপর ডুকরে কেঁদে উঠলাম। অদ্ভুত একটা কষ্টে বুক ফেটে কান্না আসছে আমার। আমি কান্না করতে থাকি। মিরা চট করেই নিজের হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। বলে,

-ভালো থেকো। আসি…

মিরা চলে যায়। আমার পাঁচ বছর রাস্তার সাথে পিশে যায় সে। আমার কষ্ট হয়। মিরা যত দূরে যেতে থাকে আমার কষ্ট যেন বাড়তে থাকে তীব্র ভাবে। যেন কিছু একটা নেই।অদ্ভুত শূন্যতা বিরাজ করছে আমার হৃদয় পল্লিতে। মেঘ জমেছে সেথায়। কষ্টের মেঘ। মিরা চলে যায়। আমি একঝাক কষ্টের ভোজা, পাঁচ বছরের এক দীর্ঘ সৃতির পাণ্ডুলিপি নিয়ে বাসায় আসি। সৃতির পাণ্ডুলিপি বড় ভয়ংকর। দিন রাত ভাবিয়ে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কষ্ট দিয়ে কাউকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে। আমি মরে যাব, আমি জানি। মিরার কথা ভাবতে ভাবতে আমি মরে যাবো। একদিন খুব সকালে সূর্য ঠিকই উঠবে। কিন্তু আমি উঠব। পাগলের মত ঘুমাবো। জিবনেও উঠা হবে না। কেউ চাইলেও উঠাতে পারবে না। মিরাও না।

আমার অবস্থা প্রচন্ড রকমে খারাপ হতে থাকে। দিন রাত শূন্যতার কষ্টে ভুগি আমি। নিকোটিনের ধোঁয়াও শান্তি পাই না। ঘুমের ট্যাবলেট খাচ্ছি। রাত কি দিন, কেবল ঘুমিয়েই যাচ্ছি। মাঝ রাতে হুট করেই ঘুম ভেঙ্গে যায় মিরার কথা ভেবে। মিরা স্বপ্নে আসে আমার। জড়িয়ে ধরে। কত কথা বলে! আমি মুগ্ধ হয়ে শুনি। কেবল শুনেই যাই। যখনই মিরার হাত ধরতে যাই ঠিক তখনই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। চমকে উঠে নিজেকে বিছানায় দেখি। সে রাতে আর ঘুম হয় না। রাত যায়, দিন যায়, যাচ্ছে চলে,এদিকে মিরার বিয়েও ঠিক হয়। আমার কষ্ট যেন আরো দ্বিগুণ হয়। আমি বেশ বুঝতে পারছি যে আমি তলিয়ে যাচ্ছি। কোন এক অতল, ঘন অন্ধকার গুহায় হারিয়ে যাচ্ছি। যেখান থেকে ফিরে আসা বড্ড মুশকিল।

এক মাস পরঃ

পার্কটার নাম দিয়েছি বিচ্ছেদ পার্ক। এই পার্কেই আমার আর মিরার বিচ্ছেদ হয়। খুব ভালোবাসতাম মেয়েটাকে।
এখনো বাসি। সেই আগের মতই। হ্যাঁ বড্ড অভিমান জেগেছে তার উপর। রাগ হয় ভীষন। তবুও কি আর করার। ভালো তো তাকেই বেসেছি। সবটা দিয়ে।

সৃতির টানেই আবার সেই চিরচেনা পার্কটাতে আসা। ভেতরে ঢুকতেই ভীষন ভাবে অবাক হলাম। একটা মেয়ে বসে আছে। সেই বেঞ্চিতেই। মেয়েটাকে আমি চিনি। খুব করে চিনি। এই মেয়েটা আমার অন্তর আত্মা পড়তে পরে। আমাকে পড়ার ক্ষমতা রাখে মেয়েটি। একা একা বসে আছে। খুব বিষন্ন তার চাহনি। চোখের নিচে জমে আছে কষ্টের কালি। কান্না করেছে খুব। চোখ মুখ বেশ ফোলা। আশ্চর্য! ওর তো হ্যাপি থাকার কথা। এমন অবস্থা হওয়ার তো কথা নয়। তাহলে কি মিরা বিয়ে করে নিই? করে নিই! আমি যেন খুশি হলাম। পরানে যেন প্রান ফিরে এল। হুট করেই

নিজেকে পৃথিবীর সেরা সুখি মনে হতে থাকল আমার। আমি জানতাম ও বিয়ে করবে না। আমাকে রেখে ও কখনই বিয়ে করতে পারবে না। আমি এক বুক আশা নিয়ে সেদিকে এগুলাম। যখন খুব কাছাকাছি গিয়ে পৌছালাম ঠিক তখনই দেখলাম একটা ছেলেকে। ওর দিকে এগিয়ে আসছে। সুদর্শন ছেলে। ঠোটে হাসি লেপ্টে আছে। হাতে দুটো আইস্ক্রিম। মিরার পছন্দের আইস্ক্রিম। ছেলেটা এসে ঠিক ওর পাশে বসল। একটা আইস্ক্রিম মিরার দিকে বাড়িয়ে দিল। আমি কেবল অবাক হয়ে সেই দৃশ্যটা দেখলাম। থমেক দাঁড়িয়ে আছি। নড়তেও পারছি না। শরীর যেন শীতল হয়ে আসছে। সাথে কষ্ট গুলো যেন চারদিক থেকে জমাট বেঁধে আমার দিকে তেড়ে আসে। আমার কষ্ট বাড়ে। চোখে

জল জমে। তাহলে কি আমি ভুল ছিলাম। মিরার বিয়ে হয়েছে। স্বামীর সাথে ঘুরতে এসেছে নিশ্চই। নাহ! আর থাকা যাবে না। আমি চলে আসব ঠিক এই সময়ে কেউ একজন আমায় সৃতির টানেই আবার সেই চিরচেনা পার্কটাতে আসা। ভেতরে ঢুকতেই ভীষন ভাবে অবাক হলাম। একটা মেয়ে বসে আছে। সেই বেঞ্চিতেই। মেয়েটাকে আমি চিনি। খুব করে চিনি। এই মেয়েটা আমার অন্তর আত্মা পড়তে পরে। আমাকে পড়ার ক্ষমতা রাখে মেয়েটি। একা একা বসে আছে। খুব বিষন্ন তার চাহনি। চোখের নিচে জমে আছে কষ্টের কালি। কান্না করেছে খুব। চোখ মুখ বেশ ফোলা। আশ্চর্য! ওর তো হ্যাপি থাকার কথা। এমন অবস্থা হওয়ার তো কথা নয়। তাহলে কি মিরা বিয়ে করে নিই? করে নিই! আমি যেন খুশি হলাম। পরানে যেন প্রান ফিরে এল। হুট করেই নিজেকে পৃথিবীর সেরা সুখি মনে হতে থাকল আমার। আমি জানতাম ও বিয়ে করবে না। আমাকে রেখে ও কখনই বিয়ে করতে পারবে না। আমি এক বুক আশা

নিয়ে সেদিকে এগুলাম। যখন খুব কাছাকাছি গিয়ে পৌছালাম ঠিক তখনই দেখলাম একটা ছেলেকে। ওর দিকে এগিয়ে আসছে। সুদর্শন ছেলে। ঠোটে হাসি লেপ্টে আছে। হাতে দুটো আইস্ক্রিম। মিরার পছন্দের আইস্ক্রিম। ছেলেটা এসে ঠিক ওর পাশে বসল। একটা আইস্ক্রিম মিরার দিকে বাড়িয়ে দিল। আমি কেবল অবাক হয়ে সেই দৃশ্যটা দেখলাম। থমেক দাঁড়িয়ে আছি। নড়তেও পারছি না। শরীর যেন শীতল হয়ে আসছে। সাথে কষ্ট গুলো যেন চারদিক থেকে জমাট বেঁধে আমার দিকে তেড়ে আসে। আমার কষ্ট বাড়ে। চোখে জল জমে। তাহলে কি আমি ভুল ছিলাম। মিরার বিয়ে হয়েছে। স্বামীর সাথে ঘুরতে এসেছে নিশ্চই। নাহ! আর থাকা যাবে না। আমি চলে আসব ঠিক এই সময়ে কেউ একজন আমায় ঢাক দিল।

-তাসফি সাহেব! কই যাচ্ছেন?

খুব অবাক হলাম। সুদর্শন যুবকটি আমায় ঢাকছে। তাও আবার নাম ধরে! আমাকে চেনে নাকি? তার সাথে চোখাচোখি হতেই সে হাসল। বলল,

-আশ্চর্য ব্যাপার! নিজের প্রেয়সীর বরকে না দেখেই চলে যাচ্ছেন! এটা কোন কথা হল?

আমার চামড়াটা যেন জ্বলে গেল। হৃদয়ের মাঝে যেন ঝড় বয়ে গেল। যুবকটির প্রতি আমার রাগ হচ্ছে। প্রথমত সে আমার সামনে নিজেকে মিরার বর বলে পরিচয় দিচ্ছে। যেখানে মিরার পাশে আমি কোন ছেলেকেই সহ্য করতে পারি না। দ্বিতীয়ত সে আমার কাটা গায়ে নুনেরছিটে দিচ্ছে। খুব খারাপ মানুষ। আমার রাগ বাড়তে থাকল। কাছে গিয়ে কয়েকটা দিতে ইচ্ছে হল আমার। যুবকটি আবার বলল,

-এদিকে আসুন!

আমি ধীর পায়ে সেদিকে এগুলাম। বুকের বাঁ পাশের ধপ ধপ শব্দটা যেন প্রতিযোগিতা করে বাড়ছে। কষ্ট গুলো যেন তীব্র বেগে বেড়ে চলেছে । জল জমছে চোখে। আমি চোখ মুছে নিলাম। যুবকটি তাকিয়ে থাকল আমার দিকে। চোখের জল মুছে ফেলার দৃশ্য দেখল সে। দেখলে দেখুক। আমার কষ্ট দেখে সে মজা পাবে নিশ্চই। আমি তার পাশে বসলাম। তার চোখে চোখ পড়তেই আমি অবাক হলাম। কি আশ্চর্য! তার চোখে আমি আমার জন্যে তীব্র বেদনা দেখছি। যেন আমার কষ্টেও সে কষ্ট পাচ্ছে। এমন তো হওয়ার কথা না! যুবকটি বলল,

-আমি সাদিক। আমাকে আপনি না চিনলেও আপনাকে চিনি। খুব ভালো করেই চিনি। আপনার গল্প শুনেছি অনেক। মিরা বলেছে। আপনার মত মানুষ সত্যিই হয় না। এ যুগে তো নাই। এত ভালোবাসতে পারেন কিভাবে শুনি! আমি কিছু বললাম না। চুপ করে থাকলাম। সুদর্শন যুবকটি আসলেই মিরার জন্যে উপযুক্ত। কি সুন্দর করে কথা বলে! ভালো হয়েছে। আমাকে ছেড়ে মিরা সত্যিই ভালো করেছে। ছেলেটি আবার বলে উঠল,

-আচ্ছা থাকুন আপনারা । কথা বলুন। আমি আসছি।

আমার অবাক হওয়ার যেন সীমা থাকল না। যুবকটি চলে গেল। কেন গেল? আমাদের কথা বলার সুযোগ করে দিল। কেন?

এই মুহূর্তে আমি বসে আছি মিরার পাশে। আমাদের দুজনের মাঝের দূরত্ব প্রায় দেড় হাত। এত কাছাকাছি থেকেও আমরা আজ অনেক দূরে। যেখান থেকে ধরা ছোঁয়া যায় না। আমি চুপ করে থাকলাম। মিরার দিকে একবারের জন্যে তাকাই নি। তাকাতে ইচ্ছে হয় না। প্রচুর অভিমান আমার মাঝে। রাগও আছে। মিরাই কথা বলা শুরু করল।
-বিরক্ত! শব্দটাকে প্রচুর ঘৃণা করতে শুরু করছি আজকাল। শব্দটার জন্যে আমি একজনের ভালোবাসাকে তীব্রভাবে অপমান করেছি। অবহেলা করেছি। কষ্ট দিয়েছি। এর জন্যে একজনই দায়ী। যে দায়ী সে আমার খুব আপন। এই তৃতীয় ব্যাক্তির কারনেই আমি মানুষটার ভালোবাসাকে হেয় করেছি। তৃতীয় ব্যাক্তিটা আমার খুব আপন একজন। আমার ভাবি। তার সাথে কথা বলি না আর। ঘৃণা করি ভীষণ। দিনরাত তার ফুফাতো ভাইয়ের গুনগান গেয়ে আমাদের

পরিবারের সবাইকে মানিয়ে নিয়েছে। আমাকেও বলেছে অনেক গল্প। আমি শুনে যাই। ভাবিকে আমি আমার ভালোবাসার কথা জানাই। কেউ একজন আমাকে তীব্রভাবে ভালোবাসে এটা ভাবি বিশ্বাস করেন নিই। নিজের মতই ফুফাতো ভাইয়ের গল্প শুনাতো। আর আমার ভালোবাসাকে বারবার অপমান করতেন। ছোট করতেন। বলতেন,

“এসব প্রেম কত এসে যাবে। বাদ দে। ফালতু প্যাঁচাল। বিয়ের পরে তুই কতটা সুখে থাকবি এটাই হল মূল কথা। দেখ তোর প্রেমিক এখনো চাকরি পায় নি। পেলেও বেতন আর কতইবা হবে। তুই একবার সাদিকের কথা ভেবে দেখ। ঢাবি থেকে পাশ করে এখন একটা প্রাইভেট ব্যাংকে জব করে। বেতনের কথা বলব না। কারণ সেটা তুই জানিস। আবার প্রমোশনে বেতন বাড়বে। সবে জয়েন করেছে। একবার ভেবে দেখ। জীবনটা রঙিন হয়ে যাবে। কত ভালো কাটবে তোর সাংসারিক জিবন। এসব প্রেম টেম বাদ দে।”

ভাবির কথা বিশ্বাস করতে থাকি। তারপরেই বিরক্তি আসে। মানুষটার প্রতি। তার পাঁচ বছরের ভালোবাসার প্রতি। একদিন সব ভেঙ্গে চুরে চলে আসি সুখে থাকব বলে। কিন্তু বিশ্বাস কর তাসফি আমি সুখে ছিলাম না। একটুও ভালো ছিলাম না।

আমি মিরার দিকে তাকাই। তার চোখ জল। অনেকদিন পর তার সাথে চোখাচোখি হয়। আমি চমকে উঠে লক্ষ্য করি আমি আর আমার মধ্যে নেই। সকল রাগ,অভিমান যেন পানি হয়ে গেল। আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ও বলতে থাকল,

– তুমিই ঠিক বলেছো। তোমার বলা প্রতিটা শব্দ সত্য। তাসফি, আমার বিষন্ন বিকেল আমায় তোমার কথা জানিয়ে গিয়েছে কেবল। সন্ধ্যার অন্ধকার কেবল তোমার গল্প বলে গিয়েছে আমায়। রাতের কোমল বাতাস ফিসফিস করে তোমায় মনে করিয়ে দিয়েছে। আমাদের গড়া স্বপ্ন গুলোর কথা ভাবলেই আমার চোখের ঘুম উধাও হয়ে যেত। তোমার সাথে গল্প করা, সময় কাটানো, সব কিছুকেই আমি ভীষণ মিস করতে থাকি। তোমার শূন্যতায় কাঁদতাম কেবল। একপ্রকার অপরাধবোধ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল আমায়। বিয়ে ক্যান্সেল করে দেই। এই বিয়ে করা সম্ভব না। মোটেও না। তোমাকে ছাড়া আমি আমার পাশে অন্য কাউকেই ভাবতে পারি না। কষ্ট হয় আমার। মুখ লুকিয়ে কান্না করা ছাড়াও উপায় নেই। লজ্জায় তোমার কাছে যেতে পারতাম না। তবে কদিন পরে ঠিকই যেতাম। আমি থাকতে পারছিলাম না আর। তোমায় ছাড়া আমি সত্যিই বাঁচবো না তাসফি!

এই বলে মিরা কান্না করতে থাকল। খুব শব্দ করে কান্না করতে থাকল। আমার মনটাও যেন কেঁদে উঠল। অস্থির হয়ে উঠল। মিরা কান্না

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত